1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিশুদের জন্য ভূমিকম্প প্রস্তুতি

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২৬ আগস্ট ২০১৬

২০০৫ সালে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে ১৯ হাজার শিশু ভূমিকম্পে নিহত হয়৷ এদের অধিকাংশেরই প্রাণহানি ঘটে স্কুলভবন ধসে পড়ার ফলে৷ এর তিনবছর পর, চীনের সিচুয়ানে দু’টি বড় ভূমিকম্পের আঘাতে মৃত্যু হয় ৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর৷

https://p.dw.com/p/1JqJ9
ছবি: Getty Images/C.Furlong

এ সমস্ত পর্যবেক্ষণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, ভূমিকম্পে শিশুরাই সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে৷ বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা৷

গত চারবছর ধরে বাংলাদেশ বারবার ভূমিকম্পের মুখোমুখি হয়েছে৷ আর এ মুহূর্তে একটা বড় ধরনের ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ৷ রিশটার (বানানভেদে রিখটার) স্কেলে একটি ৯ মাত্রার ভূমিকম্প বাংলাদেশে ভয়বহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ তাই সার্বিক প্রস্তুতির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভূমিকম্প প্রস্তুতির বিশেষ প্রকল্পের কাজ চলছে বাংলাদেশে৷

সর্বশেষ ঢাকার অদূরে সাভারের ইয়ারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এ রকমই একটি ভূমিকম্প প্রস্তুতির মহড়া অনুষ্ঠিত হয়৷ সেই মহড়ায় স্কুলের ঘণ্টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটু গেঁড়ে বেঞ্চের নীচে বসে পড়ে ১৫ বছরের লাকি আখতারও৷ এরপর দ্বিতীয় ঘণ্টা বাজতেই বই ও ব্যাগ মাথায় নিয়ে আরও ৩০ জন শিক্ষার্থীসহ সে ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসে৷

এরপর লাকি আখতার সংবাদমাধ্যমকে জানায়, ‘‘এ ধরনের মহড়াগুলো গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ এর ফলে বাস্তবে এমন ঘটনা ঘটলে আমরা নিজেদের রক্ষা করতে পারবো৷''

সাভারের ইয়ারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেওয়ান মোহাম্মদ আবদুস সাত্তার বলেন, ‘‘গত তিনবছর ধরে প্রতিবছরই অন্তত একবার করে ভূমিকম্প হচ্ছে৷ চলতি বছর আমরা দু'বার কম্পন অনুভব করেছি৷''

তিনি বলেন, ‘‘একবার স্কুল চলাকালেই এ ধরনের কম্পন অনুভূত হয়েছিল৷ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে তখন৷ সোজা দৌড়ে শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে যায় অনেকেই৷ এরপর থেকে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে৷''

ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার এমনিতেই ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ৷ ‘নেচার জিও সায়েন্স'-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়ে, বাংলাদেশে ৯ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে জনগণের একটা বড় অংশ ঝুঁকির মুখে পড়বে৷

তাই ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ইতিমধ্যেই নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, হচ্ছে৷ দুর্যোগ প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশে কাজ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবিক সাহায্য ও নাগরিক সুরক্ষা কার্যক্রম৷ তারা বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে৷ এর বাস্তবায়নে ২০১৫ সালের মে মাস থেকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করছে ‘সেভ দ্য চিলড্রেন'৷

বাংলাদেশ এরইমধ্যে ৮৪টি প্রাথমিক এবং ৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মহড়া সম্পন্ন করেছে৷ এ সংক্রান্ত একটি ‘গাইডলাইন' চূড়ান্ত করতেও কাজ করছে সরকার৷ প্রায় ৬৬ হাজার প্রাথমিক এবং ৩২ হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ধরনের মহড়া পরিচালনা করাই এই গাইডলাইনের লক্ষ্য৷

মূলত টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে ভূমিকম্প হয়৷ আর বাংলাদেশ এ ধরনের তিনটি প্লেটের মধ্যে অবস্থিত৷ ভারতীয়, ইউরেশীয় ও মিয়ানমারে টেকটনিক প্লেটের মধ্যে অবস্থান করছে দেশটি৷ বাংলাদেশের নীচে জমে ওঠা টেকটনিক প্লেটে চাপ পড়ছে কম করে বিগত ৪০০ বছর ধরে৷

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘ভূমিকম্প সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশ সরকার একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষক নিয়োগ করছে৷ আগামী সেপ্টেম্বর থেকে তাঁর কাজ শুরু হবে৷''

বাংলাদেশে সেভ দ্য চিলড্রেন-এর স্কুল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ব্যবস্থাপক মনির উদ্দিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘বহু স্কুলেই শিক্ষার্থীদের আশ্রয় নেওয়ার জন্য চেয়ারগুলোর উচ্চতা বেশ কম৷''

সাভারের ইয়ারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেওয়ান মোহাম্মদ আবদুস সাত্তারের কথায়, ‘‘অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে আমরা এখন বেশি সংগঠিত৷ প্রতি তিনমাস পরপর আমরা এ ধরনের একটি করে মহড়া করব৷ তাহলে বাস্তব পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা এটি প্রয়োগ করতে পারবে৷''

মাকসুদ কামাল

২০১৩ সালে বাংলাদেশে রানা প্লাজা ধসের পর সাড়ে তিন হাজার ফ্যাক্টরির ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান প্রকৌশলীরা৷ তাঁরা ফ্যাক্টরি ভবনগুলোর কাঠামোগত পরিস্থিতির পর্যালোচনাও করেন৷ পর্যালোচনা শেষে তাঁরা জানান যে, ২৫ শতাংশ ভবনে আরও সংস্কারের প্রয়োজন আছে৷ বলেন, বাংলাদেশের স্কুল ভবনগুলোর অবস্থা আরো খারাপ৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম মাকসুদ কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনগুলো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ৷ কারণ এগুলো শুধুমাত্র ইট-সুরকির তৈরি৷ এমনকি পরবর্তীতে বানানো কিছু ভবন ‘এল শেপড', যেগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ৷ এগুলো সাত মাত্রার বেশি ভূমিকম্পেই ধসে পড়বে৷ আর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবনগুলোতে আছে ল্যাবরেটরি, যাতে নানারকম কেমিক্যাল থাকে৷ তাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প ঝুঁকির মধ্যে আছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘সরকারের উদ্যোগে এখন স্কুলগুলোতে ভূমিকম্প প্রস্তুতি মহড়া শুরু হয়েছে৷ তবে এটা প্রতিবছর চারমাস অন্তর অন্তর বা তিনবার হওয়া প্রয়োজন৷ শিক্ষার্থীদের জীবন রক্ষা এবং সচেতন করতে এটা খুবই জরুরি৷''

আপনার শিশুদের স্কুলেও কি ভূমিকম্পের মহড়া দেওয়া হচ্ছে? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য