1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘শ্যুট ফ্রম হোম’ নিয়ে বিবাদ স্টুডিওপাড়ায়

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৫ জুন ২০২১

‘শ্যুট ফ্রম হোম' অর্থাৎ বাড়ি থেকে শ্যুটিং ঘিরে স্টুডিওপাড়ায় শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ প্রযোজকদের সঙ্গে টেকনিশিয়ানদের সংঘাত চরমে৷

https://p.dw.com/p/3uTIA
Kalkutta, Westbengalen
ছবি: DW/Payel Samanta

একপক্ষের মতে, বাড়ি থেকে শ্যুটিং করলে লাভ নেই কলাকুশলীদের‍৷ আর বিরোধীদের বক্তব্য, কাজ বন্ধ রাখলে ক্ষতি বিনোদন শিল্পেরই৷

পশ্চিমবঙ্গসহ পুরো ভারত জুড়েই চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ৷ রাজ্যে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে যা কার্যত লকডাউনের সামিল৷ জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত জারি থাকবে এমন বিধিনিষেধ৷ এর ফলে বেসরকারি দফতর থেকে শুরু করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান, অধিকাংশই বন্ধ৷ এমন পরিস্থিতিতে টলিপাড়ার প্রযোজকদের একাংশ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা বাড়ি থেকেই শ্যুটিং-এর কাজ চালাবেন৷

অর্থাৎ অভিনেতা নিজের বাড়ি থেকে মূলত মোবাইল ক্যামেরায় শ্যুট করে পাঠিয়ে দেবেন৷ তাদের দাবি, প্রোডাকশন ফ্লোরে শ্যুটিং হলে মেকআপ আর্টিস্ট থেকে ক্যামেরাপার্সন কিংবা আলোর শিল্পীদের পাশাপাশি অনেক সাধারণ কর্মী প্রয়োজন হয়৷ সেই সব কাজ একজন অভিনেতা-অভিনেত্রী বাড়ি থেকে করবেন৷ এ নিয়ে শিল্পী, কলাকুশলীদের সংগঠন ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ানস এবং ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সঙ্গে ঝামেলা তৈরি হয়েছে প্রযোজকদের৷

টেলিভিশন ধারাবাহিকের প্রযোজকদের সঙ্গে টিভি কর্তৃপক্ষের আগে থেকে চুক্তি করা থাকে৷ তাছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান প্রচারের দায়বদ্ধতাও থাকে৷ প্রযোজকদের বক্তব্য, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধারাবাহিকের এপিসোড জমা দিতে হয়৷ গত বছর করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় শ্যুটিং বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ সেসময় টিভিতে বিভিন্ন সিরিয়ালের পুরোনো এপিসোড প্রচার করা হয়েছিল৷ ফলে টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ও উভয়েরই ক্ষতি হয়েছে৷

এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত৷ ইতিমধ্যে জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ তাই এবার বিনোদন শিল্পের ক্ষতি এড়াতে বাড়ি থেকে শ্যুটিংয়ের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে প্রযোজকদের একাংশ জানিয়েছেন৷

প্রযোজকদের সংগঠন প্রোডিউসার্স গিল্ডের সুশান্ত দাস বলেন, ‘‘প্রযোজকরা শ্যুটিং করতে না পারলে, যাদের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে, তাদের মাসিক মাইনে কোথা থেকে দেবে? শ্যুটিং ফ্লোরের ভাড়াও তো আমাদের দিতে হয়৷ সেই টাকাই বা কোথায় পাব?''

টলিপাড়া সূত্রের খবর, ফেডারেশনের পক্ষ থেকে একাধিক প্রযোজককে কড়া ভাষায় চিঠি লেখা হয়েছে৷এমনকি ফেডারেশন থেকে শ্যুটিংয়ের প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে৷ বাড়ি থেকে শ্যুটিং করার কথা থাকলেও অনেকে হোটেল, গুদামঘরে বা বাড়ি ভাড়া করে শ্যুটিং করছেন৷ ফলে বাদ পড়ে যাচ্ছেন টেকনিশিয়ানরা৷

‘এখন কাজের মানের দিকে না তাকিয়ে প্রাণে বাঁচতে হবে’

এমন পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র অভিনয়শিল্পীদের কথা ভেবে শ্যুটিং চালিয়ে যাওয়া ঠিক নয়৷ কোনো আলোচনা না করেই এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে৷

সংগঠনের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, ‘‘কলাকুশলীদের অন্ধকারে রেখে ধারাবাহিকের মান নামিয়ে ফেলা হয়েছে৷ দর্শকরাও তাতে রুষ্ট হচ্ছেন৷ এভাবে ওইসব প্রযোজক ও পরিচালকরা এই শিল্পের ভবিষ্যতকেও বিপদের মুখে ফেলছেন, পাশাপাশি বিপদের মুখে ফেলছেন কলাকুশলীদের নায্য অধিকার ও তাঁদের আত্মমর্যাদাকে৷''

এই বিতর্কে কী অবস্থান অভিনেতা-অভিনেত্রীদের? দীর্ঘদিনের সফল অভিনেত্রী চৈতি ঘোষাল সিরিয়ালে অভিনয় করতে গিয়েই করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ তার মতে, ‘‘রাজ্যের পরিস্থিতি অনুযায়ী যেটা সবাই ঠিক করবে সেটাই হবে৷ বিষয়টা আমি একরকম ভাবছি বা অন্য কেউ আলদা ভাবছে তা নয়৷ এটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই৷''

এদিকে ‘শ্যুট ফ্রম হোমকে' সমর্থন করে আর্টিস্ট ফোরামের সম্পাদক অভিনেতা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘করোনাবিধি মেনে বাড়ি থেকে শ্যুট হলে রাজি৷ পাশাপাশি সিরিয়ালে যতজন টেকনিশিয়ান অন্তর্ভুক্ত আছেন, তাঁরা কাজ করতে পারুন বা না পারুন, তাঁদের টাকা মিটিয়ে দিতে হবে৷''

বাড়ি থেকে শ্যুটিং করলে টেলি-সিরিয়ালের গুণগত মান যে খারাপ হবে তা বোঝাই যায়৷ কিন্তু চ্যানেল কর্তৃপক্ষ বলছে, লকডাউনে মানুষের কাজ কম, তাই টেলিভিশনের সামনে দর্শক বেশি৷ যে কারণে নতুন এপিসোড পৌঁছে প্রচার করাটা জরুরি৷ তা না হলে দর্শক বিনোদনের অন্য রাস্তা খুঁজে নেবেন৷

অভিনেতা দেবদূত ঘোষের বক্তব্য, ‘‘প্রযোজকরা বলেছেন সব কলাকুশলীকেই ১২-১৩ দিনের হিসেবে টাকা দেওয়া হবে৷ সে জন্য আমি দুশ্চিন্তা করছি না৷ এখন কাজের মানের দিকে না তাকিয়ে প্রাণে বাঁচতে হবে৷ তাই শ্যুট ফ্রম হোমকে সমর্থন করছি৷’’