1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সংসদে আমরা আরো তরুণ প্রতিনিধি দেখতে চাই’

সমীর কুমার দে ঢাকা
১৭ ডিসেম্বর ২০১৮

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটারের প্রায় ৪০ ভাগই তরুণ৷ তা তরুণরা নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছেন? ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এসব বিষয়েই কথা বলেছেন সফল তরুণ উদ্যোক্তা, জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করভী রাকশান্দ৷

https://p.dw.com/p/3ACIr
Korvi Rakshand
ছবি: privat

ডয়চে ভেলে: এবার তো সোয়া কোটি নতুন ভোটার৷ অনেকাংশেই নির্ণায়কের ভূমিকায় থাকবেন তাঁরা৷ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এই তরুণ ভোটারদের প্রত্যাশা কি হতে পারে?

করভী রাকশান্দ : প্রথমত যারা এই প্রথম ভোটার হয়েছেন তাঁদের প্রথম চাওয়া তাঁরা যেন তাঁদের ভোটটা দিতে পারেন৷ এটা তাঁদের আশা৷ একই সাথে তাঁরা চিন্তা করে যে, শুধুই কি ভোটটা দিলে হবে? নতুন যে সরকার আসবে, তারা কি তরুণদের কথা মাথায় রাখবে? বর্তমানে ৪০ শতাংশ ভোটারই কিন্তু তরুণ৷ ২০৩০ সালের মধ্যে এটা হয়ে যাবে ৭০ ভাগ৷ আমাদের এই মানুষগুলোকে নার্সিং করতে হবে৷ সরকার এমন সব পলিসি হাতে নিক, যেখানে এত তরুণ, তাঁদের কর্মক্ষেত্র হোক, ব্যবসাক্ষেত্র হোক, তাঁরা যেন চান্স পায়৷ তারা যেন ব্যুরোক্রেসির মধ্যে না পড়ে যায়৷ আমরা যাঁদের সাথে কাজ করি, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই কথা বলে জেনেছি, তাঁরা আশা করেন সামনে যে নির্বাচন, তাতে যেন কোনো সহিংসতা না হয়৷ কারণ, ভোটে আসলেই সহিংসতা হয়৷ তরুণরা কিন্তু এই ধরনের সহিংসতা পছন্দ করে না৷ তাঁরা মনে করেন, আমরা আমাদের ভোটটা যাঁরা ন্যয্য মানুষ, তাঁদের দেবো৷ এটাই তাঁদের আশা৷  

‘তরুণরা নিজের ভোটটা দিতে পারে না’

এবারের নির্বাচন নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?

একটা জিনিস খুব ইন্টারেস্টিং৷ এবার নির্বাচনে প্রত্যেকটা দলই আসছে৷ আমরা যেটা দেখছি, সবাই নির্বাচনে আছে৷ এবারের ইলেকশনে আমরা কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সহিংসতা দেখিনি৷ সাধারণত যে ধরনের সহিংসতা হয়, এবার সেটা কিন্তু হচ্ছে না৷ এবার যদি ভায়োলেন্স-ফ্রি একটা ইলেকশন হয়, তাহলে এগুলো নিয়ে আমাদের আর ভবিষ্যতে কথা বলতে হবে না৷ তখন আমরা ইলেকশনে ভোট দেয়ার বিষয়ে না, সিরিয়াস ম্যাটারগুলোতে আমরা নজর দিতে পারব৷ মেজরিটি ভোটার যেখানে তরুণ, দেশের একটা বড় অংশই তরুণ, আমরা নিজেরাও চাই যে, সহিংসতামুক্ত একটি ইলেকশন হোক৷ এবং তরুণরা অন্যদিকে ফোকাস করুক৷ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু বা বিশেষ করে নির্বাচনি ইশতাহারের দিকে তাঁরা নজর দেয়ার সুযোগ পাক৷

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তরুণদের আগ্রহ কেমন?

এবার প্রচুর তরুণ ভোটার এবং সবার একটাই এক্সপেকটেশন যে, আমি যেন ভোটটা দিতে পারি৷ অনেক সময় দেখা যায় যে, তরুণরা নিজের ভোটটা দিতে পারে না৷ অনেক ঝামেলার কারণে এটা হয়৷ অনেক সময় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখে তার ভোট দেয়া হয়ে গেছে বা সহিংসতা দেখলে তারা সেদিকে যেতে চায় না৷ যা-ই হোক, তরুণরা এবার কিন্তু বলছে, তারা ভোট দিতে চায়, আমাদের বড় যে দুটো পলিটিক্যাল পার্টি আছে, তারা কিন্তু অনেক তরুণকে নির্বাচনের মাঠে এনেছে৷ নতুন চেহারার প্রার্থী তারা দিচ্ছেন, তরুণরাও চায় এগুলোর পার্ট হতে৷ আমাদের পলিটিক্যাল পার্টিগুলো যদি তরুণদের কাজে লাগায়, তা-ও কিন্তু একটা বড় ব্যাপার হবে৷ এখানে কিন্তু কর্মী হতে হবে এমন নয়, তাঁদের মেধা কাজে লাগিয়ে তাঁদের রাজনৈতিক পার্টও করে, তাহলেও তরুণরা রাজনীতিতে অনেক বেশি সক্রিয় হবে৷

যে দল বা জোটই সরকার গঠন করুক তরুণদের জন্য তাদের কী করা উচিত হবে?

প্রথমত, দুটো জিনিস আমাদের দেখতে হবে৷ এত তরুণ প্রতিদিন বের হচ্ছে, সরকার তো সবাইকে চাকরি দিতে পারবে না৷ এটা সম্ভব না৷ এটা কোনো দেশেই হয় না৷ সেই জায়গাটায় আমরা যদি তরুণদের উদ্যোক্তা বানাতে পারি, তারা নিজের জন্য জব ক্রিয়েট করতে পারবে৷ আমরা কিন্তু অনেক তরুণকে এমন উদ্যোগ নিতেও দেখছি৷ ‘পাঠাও'-এর মতো কোম্পানি প্রচুর মানুষকে চাকরি দিয়েছে৷ চাল ডাল ডটকম, সেবা'র মতো অনেক প্রতিষ্ঠান কিন্তু তরুণরাই করেছে৷ সরকার যদি এই জায়গাটা করতে পারে, তাহলে কিন্তু বড় কাজ হবে৷ আর আমরা আমাদের ‘জাগো' থেকে যে স্কুল চালাই, আমরা নিজেরা রিয়্যালাইজ করলাম, চাকরির জন্য যে স্কিল দরকার, কারিকুলামের সঙ্গে তার একটা বিশাল তফাৎ রয়েছে৷ সরকার এদিকে যদি একটু চিন্তা করে, আমরা তাহলে ছেলে-মেয়েদের চাকরির জন্য অনেক বেশি প্রিপেয়ার্ড করে তৈরি করতে পারব৷ এখানে শিক্ষাক্ষেত্র একটা ব্যাপার আছে, স্পেশালি ঢাকার বাইরে আমাদের চিন্তা করতে হবে৷ যে দলই ক্ষমতায় আসবে, শুধু ঢাকাকে দেখলে হবে না, পুরো বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে৷ 

রাষ্ট্র কি আমাদের তরুণদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারছে?

এটা আসলে একটা কঠিন প্রশ্ন৷ আমি রাষ্ট্র কথাটা বলতে চাই না, শুধু সরকার যদি বলি, তাহলেও এটা শুধু সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না৷ আমাদের সিভিল সোসাইটি, প্রাইভেট সেক্টর, এনজিও যারা আছে, সবাই মিলে এটা করতে হবে৷ এখানে সরকারকে একটি স্ট্রং ভূমিকা রাখতে হবে৷ আমাদের সরকার যদি সাপোর্ট করে, তাহলে পুরো দায়িত্ব তাদের নিতে হবে না৷ আমরা কাজ করতে গিয়ে কখনো কখনো আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ি৷ এগুলো যদি সরকার মাথায় রাখে, তাহলে সবাইকে রাষ্ট্রের চাকরি দিতে হবে না৷ দেখেন, সবাই তো বড় লোক পরিবার থেকে আসে না৷ গ্রামের কথা আমাদের ভাবতে হবে৷ ছোট ছোট এন্টারপ্রেইনারদের যদি রাষ্ট্র থেকে একটু সাপোর্ট দেয়া হয়, তাহলে তারাও এগিয়ে আসতে পারবে৷ তারা নিজেরাই নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারবে৷

বর্তমান প্রজন্মের এই তরুণরা চাকরি নিয়ে কতটুকু ভাবে?

দেখেন ওয়ার্ল্ডওয়াইড একটা ফেনোমেনা চলছে যে, আমি চাকরি করব না, আমি চাকরি দেবো৷ আবার একই সঙ্গে আমরা দেখছি যে, আমাদের তরুণদের আইটিতে স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে৷ এর বাইরেও কিন্তু অনেক সেক্টর আছে৷ শুধু কি আমরা আইটিতে কাজ করতে পারব, এর বাইরে কি আর কোনো জায়গা নেই? আমাদের বাংলাদেশ একটা কৃষি নির্ভর দেশ৷ যাঁরা কৃষিকাজ করছেন, তাঁদের এক্ষেত্রে কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সেটাও ভাবতে হবে৷ একজন কৃষকের ছেলে সে যদি এ ব্যাপারে এগিয়ে আসে, তাকেও সহযোগিতা করতে হবে৷ অনেকেই এখন আর চাকরি করতে চায় না৷ একজন তরুণ চিন্তা করছে, ‘আমি নিজে একটা কিছু করব, একই সঙ্গে একজন তরুণকে হেল্প করব৷' যেমন ধরেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৪০০ মানুষের আমরা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি৷ তারা চাকরি করে এবং তাদের সবার বয়স ২৫ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে৷ এরকম যদি আরো অর্গ্যানাইজেশন তৈরি হয়, তাহলে আমাদের বিশাল সমস্যা বেকারত্ব দূর হয়ে যাবে৷

আপনার প্রতিষ্ঠান যে এত দূর এসেছে তাতে রাষ্ট্রের ভূমিকা কতটুকু?

এখানে রাষ্ট্র বলব না, আমাদের সরকার হলো বিগ এলিফ্যান্টের মতো৷ তাদের নড়তে চড়তে বা চিন্তা করতে অনেক সময় লাগে৷ তাদের অনেক রিস্ক থাকে৷ তারা মনে করে এটা করবে কি করবে না৷ আমরা তো প্রথম ৭-৮ বছর সরকার থেকে কোনো সাপোর্টই পাইনি৷ আমাদের নিজেদের করতে হয়েছে৷ গত বছর যখন আমরা ইউনেস্কো থেকে স্বীকৃতি পেলাম, তখন কিন্তু সরকারের মাথায় বিষয়টি এসেছে৷ আমরা যে ঢাকায় বসে একটি গ্রামের স্টুডেন্টকে পড়াচ্ছি, গ্রামে যে সরকারি স্কুলগুলো আছে, সেগুলোতেও তো এভাবে পড়ানো সম্ভব৷ এখন কিন্তু সরকার এগিয়ে আসছে৷ এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে৷ সরকারের যে ইয়াং মন্ত্রী আছেন, তাঁরা কিন্তু অনেক বেশি ওয়েল-কানেক্টটেড আমাদের সঙ্গে৷ আমরা  আরো বেশি বেশি তরুণ প্রতিনিধি পার্লামেন্টে দেখতে চাই, মিনিষ্ট্রিতেও দেখতে চাই, যাতে তাঁদের সঙ্গে আমরা কানেক্ট করতে পারি৷ 

‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ চান প্রবাসীরা

তরুণদের স্বপ্ন লালন পালন এবং বাস্তবায়নে দেশের সার্বিক পরিবেশ কতটা সহায়ক?

এই জায়গাটায় এখনো কিছু কিছু ট্যাবু আমাদের আছে৷ যেমন, আমাদের অভিভবাবকরা এখনো চিন্তা করেন যে, তাঁর সন্তান একটা সরকারি চাকরি নেবে, জীবনটা সেট হয়ে যাবে৷ কিন্তু এর বাইরেও যে আরো লাইফ আছে, একটা ছেলে বা মেয়ে যদি ছোট বেলা থেকে চিন্তা করে যে, আমি একটা বিজনেস শুরু করব, তখন কিন্তু বাবা মায়েরা এগিয়ে আসেন না৷ তাঁরা মনে করছেন, বিজনেস একটা রিস্ক৷ এখানে বাবা-মা হিসেবে আমাদের সেই রোল প্লে করতে হবে, যাতে তারা উৎসাহ পায়৷ দুইবার তিনবার তারা ফেল করবে, তারপর তো শিখবে৷ আমি নিজেই যখন ‘জাগো' নিয়ে কাজ শুরু করি, তখন অনেকেই বলেছেন, ‘‘২১ বছর বয়সেই কেন এসব করতে হবে? একটা ভালো চাকরি করো, তারপর ৫০ বছর পার হলে ভালো কাজ শুরু করো৷'' আমি বলব যে, আমাদের সিনিয়ররা এখনো পুরোপুরি বদলাননি৷ তবে সুন্দর সুন্দর উদাহরণ আমাদের সামনে আছে ‘পাঠাও', ‘সেবা'৷ সেখানে কিন্তু তরুণরা এগিয়ে এসেছে এবং ভালো কাজ করছে৷ আমাদের অভিবাবকরা যদি সন্তানদের এদিকে আগ্রহী করেন, তাহলে অনেক তরুণ এদিকে আসতে পারবে এবং ভালো ভালো কাজ করতে পারবে৷

তরুণ ভোটারদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী হবে?

সামনের নির্বাচন ঘিরে তরুণ ভোটারদের একটাই কথা বলবো– যাকেই তারা ভোট দিক তারা যেন চিন্তা করে ভোটটা দেয় যে কাকে দিচ্ছে, কেন দিচ্ছে৷ ভয় দেখিয়ে যদি তাদের কাছ থেকে কেউ ভোট নেয় তাহলে কিন্তু হতাশ হবো৷ আমরা চাই ভালো রিপ্রেজেন্টেটিভ আসুক৷ আমরা চাই ক্রিয়েটিভ মানুষ এখানে আসুক৷ এবার যেহেতু এখনো সহিংসতা নেই, তাই তরুণরা যদি ভালো মানুষকে ভোটটা দিতে পারে, তাহলে একটা নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়ে যাবে৷ এভাবে আমাদের তরুণরা সমাজকে পাল্টে দিতে পারে৷ আমি শেষে একটা রিকোয়েষ্ট করবো সবাইকে– আমরা যে যেখানে আছি, সেখান থেকে যদি দেশকে একটু হেল্প করতে পারি, এটা শুধু অর্থনৈতিক হতে হবে তা কিন্তু না, যদি একটা ভালো কাজ করতে পারি, তাহলে কিন্তু এই দেশটাকে পাল্টে দেয়া সম্ভব৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য