1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সব মানুষকে কি অরগ্যানিক খাবার খাওয়ানো সম্ভব?

ইরেনে বানোস রুইজ/এসি২২ অক্টোবর ২০১৭

পরিবেশকে বাঁচাবে নাকি অরগ্যানিক ফুড৷ ওদিকে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় হাজার কোটিতে৷ অরগ্যানিক পদ্ধতিতে চাষ করে কি তাদের সকলের ক্ষুধা মেটানো যাবে?

https://p.dw.com/p/2mFSt
Afrika Bauer Symbolbild German food partnership
ছবি: Imago

জার্মানির মতো দেশে অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, অরগ্যানিক ফার্মিং হলো সেই মহৌষধি, যা দিয়ে একাধারে জলবায়ু ও পরিবেশকে বাঁচানো যাবে, অপরদিকে ব্যাপক জনসংখ্যা বৃদ্ধির সমস্যার সমাধান করা যাবে৷

বিশ্বের কৃষিভূমির মাত্র এক শতাংশ জমিতে অরগ্যানিক ফসলের চাষ হয়৷ তাহলে সারা দুনিয়ার মানুষকে অরগ্যানিক খাদ্য খাওয়ানো সম্ভব হবে কী করে?

অরগ্যানিক ফার্মিংয়ের সমর্থকরা সে কথা ভালোভাবেই জানেন, কিন্তু তাঁদের বক্তব্য হলো, বিশ্বের সামগ্রিক খাদ্য ব্যবস্থায় একটা বড় পরিবর্তন প্রয়োজন, যার সূচনা হবে ভূমি ও অপরাপর সম্পদের যোগ্য ব্যবহার ও সেই সঙ্গে অপচয় রোধ৷

সমালোচকদের মতে, শুধুমাত্র অরগ্যানিক কৃষি পরিবেশের উপর প্রথাগত কৃষির চেয়েও অধিকতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷

Infografik Bio Landwirtschaft Agrarfläche 1999-2015 ENG

সম্পদের সুযোগ্য ব্যবহার

বিশ্বব্যাপী অরগ্যানিক ও প্রথাগত কৃষির মধ্যে উৎপাদনের ফারাক গড়ে প্রায় ২৫ শতাংশ৷ এর মূল কারণ অরগ্যানিক কৃষি বিভিন্ন প্রকৃতিদত্ত উপাদানের উপর অনেক বেশি নির্ভর৷ গিসেন-এর ইউস্টুস লাইবিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অরগ্যানিক কৃষি বিষয়ের অধ্যাপক আন্ড্রেয়াস গাটিংগারের মতে কিন্তু খাদ্যের অপচয় বন্ধ করে ও প্রকৃতিদত্ত কীটনাশক ব্যবহার করে শুধু হাজার কোটি কেন, বারোশ' কোটি মানুষকেও খাওয়ানো সম্ভব৷

এক্ষেত্রে গাটিংগার ‘ল্যান্ড শেয়ারিং'-এর উপর জোর দেন, যার মূলমন্ত্র হলো একই জমি কৃষি, বন্যপ্রাণী ও জলবায়ু সুরক্ষার কাজে ব্যবহার করা৷ তাঁর মতে, অরগ্যানিক ফার্মিং ঠিক সেই কাজই করে৷

Infografik Greenhouse gas emissions from organic versus conventional farming ENG

পরিবেশবান্ধব?

অরগ্যানিক ফার্মিংয়ে কৃত্রিম কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না বটে, কিন্তু সমালোচকরা বলেন, বহু প্রকৃতিদত্ত কীটনাশক পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকর নয়৷ যেমন তামা বিশেষভাবে পরিবেশ দূষণ করে ও স্বাভাবিকভাবে ক্ষয়ে যায় না৷ অপরদিকে এ-ও সত্যি যে, অরগ্যানিক কৃষিতে একমাত্র ব্যাপকভাবে কীট লাগার সমস্যা দেখা দিলেই তামা ব্যবহার করা হয়৷

গাটিংগারের মতে, অরগ্যানিক ফার্মিং জমির জীব ও উদ্ভিদবৈচিত্র্য বাড়ায়, জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে, এমনকি জমির প্রবল বৃষ্টিপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে৷ এছাড়া অরগ্যানিক ফার্মিং ছোট চাষিদের নানা ধরণের ফসলের চাষ করে ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, কেননা, ‘‘কীটপতঙ্গ একটি ফসল বিনাশ করলে, (চাষি) অন্য ফসলগুলি থেকে জীবনধারণ করতে পারবে'' – আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল আইএফএডি'র ওয়াফা এল-খুরি ডয়চে ভেলেকে এ কথা বলেছেন৷ এছাড়া অরগ্যানিক ফার্মিংয়ে কীটনাশক বা সার অনেক কম লাগে বলেও তিনি জানান৷ 

Infografik CO2 Fußabdruck englisch

সংজ্ঞা বদল

অরগ্যানিক কৃষিপণ্য একবার শিল্পায়িত খাদ্য সরবরাহ প্রণালীর অঙ্গ হয়ে পড়লে, অরগ্যানিক চাষের সব পরিবেশগত সুযোগ-সুবিধাগুলি বানচাল হয়ে যায় বলে এল-খুরি মনে করেন৷

‘‘খাদ্য প্রণালী নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে এবং আমরা যা কিছু খাই, তার সবটার ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য, শুধু অরগ্যানিক খাদ্যের ক্ষেত্রে নয়,'' বলেন এল-খুরি৷ ‘‘অরগ্যানিক খাদ্য খাচ্ছেন কি না খাচ্ছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি উদ্বেগজনক হলো, খাদ্যের অপচয় ও অরগ্যানিক পণ্য সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব৷'' এক কথায়, লোকে জানেন না, তারা কী কিনছেন, আর অরগ্যানিক সার্টিফিকেট থাকার অর্থই এই নয় যে, সেই পণ্য পরিবেশের জন্য অধিকতর মঙ্গলজনক৷

অরগ্যানিক পণ্য জাহাজ বা ট্রাকে করে বিশ্বের অপর প্রান্ত থেকে আসতে পারে; সারা বছর ধরে গ্রিনহাউসে সে ধরণের পণ্যের চাষ চলে৷ এ ধরনের পণ্য প্রকৃতির ঋতুচক্রের ধার ধারে না, পরিবহণের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ ঘটে সমান হারে৷ ‘‘গ্রাহকরা যদি নিজেদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ নিয়ে চিন্তিত হন, তবে তাদের ভাবতে হবে, সমগ্র খাদ্য সরবরাহ প্রণালী কিভাবে কাজ করে,'' বলেন এল-নুরি৷

গাটিংগারেরও তাই মত৷ প্রথাগত কৃষি সত্ত্বেও যখন বিশ্বের প্রতি দশজন মানুষের মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছেন, তখন অরগ্যানিক ফার্মিং কবে বিশ্বের ক্ষুধা মেটাতে পারবে, তা নিয়ে বিতর্ক করে কি কোনো লাভ আছে? দেখা যাচ্ছে, দুই ধরনের কৃষির কোনোটাই বিশ্বের ক্ষুধা মেটাতে সক্ষম নয়৷ তাহলে কি অন্তত যে প্রণালীটি পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকারক, সেটাই বেছে নেওয়া উচিৎ নয়?