1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘‘সরকার বসে থাকতে পারে না’’

২৯ জুলাই ২০১৩

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এনএসএ প্রিজম কর্মসূচির মাধ্যমে জার্মান নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করে চলেছে, এই অভিযোগের মুখে সরকারের প্রতি জার্মানির মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে৷ সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞ হর্স্ট দ্রায়ার এর মূল্যায়ন করেছেন৷

https://p.dw.com/p/19FBA
Der Professor für Rechtsphilosophie, Staats- und Verwaltungsrecht, Horst Dreier, aufgenommen am 17.01.2008 in der Alten Universität in Würzburg (Unterfranken). Der 53-jährige soll nach Informationen von "Spiegel" und "Frankfurter Rundschau" Vizepräsident des Bundesverfassungsgerichts in Karlsruhe werden. Foto: Daniel Karmann dpa/lby +++(c) dpa - Report+++
ছবি: picture-alliance/dpa

ডিডাব্লিউ: আড়ি পাতার কর্মসূচি ‘প্রিজম'-কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ও নাগরিক অধিকার নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বান্স পেটার ফ্রিডরিশ বলেছেন, নিরাপত্তা হলো ‘সুপার মৌলিক অধিকার'৷ তাহলি কি কিছু মৌলিক অধিকার বাকি অধিকারগুলির তুলনায় আরও উঁচু স্থানে থাকতে পারে?

হর্স্ট দ্রায়ার: না, সে রকম কিছু নেই৷ বরঞ্চ বিপরীতটাই ঠিক৷ সংবিধান সংক্রান্ত শিক্ষার মূল ভিত্তিই হচ্ছে, অধিকারের ব়্যাংকিং হতে পারে না৷ একটি মাত্র ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ঘটতে পারে, আর সেটা হলো যখন মানবিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ সে ক্ষেত্রে বিষয়টিকে মৌলিক অধিকার হিসেবে দেখা হয়, সংবিধানে উল্লিখিত কোনো সাধারণ নীতি হিসেবে নয়৷ জার্মান সংবিধানে মানুষের মর্যাদার স্থান সবার উপরে৷

তাহলে যে সব মৌলিক অধিকারের মধ্যে পারস্পরিক সংঘাত রয়েছে, সে সব ক্ষেত্রে কী করা উচিত? বর্তমানে অনেক রাজনীতিক বলছেন, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের কিছুটা নজরদারির প্রয়োজন রয়েছে৷ তথ্য সংরক্ষণের তুলনায় তা নাকি অনেক বেশি জরুরি৷

সাধারণভাবে বলতে গেলে যে কোনো ক্ষেত্রেই বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করতে হবে৷ পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি খাড়া করতে হবে৷ তারপর একটা ভারসাম্য খুঁজতে হবে৷ তবে এটা করে স্পষ্ট ফলাফল পাওয়া যায় না৷ তবে দায়িত্বটা স্পষ্ট হয়ে যায়৷

আমার মনে হয়, বিষয়টির পেছনে সম্পূর্ণ আলাদা একটা দৃষ্টিকোণ রয়েছে৷ তাকে ঠিক ‘সুপার মৌলিক অধিকার' বলা উচিত নয়৷ সেটা হলো নিরাপত্তা চিরকাল রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল এবং আছে৷ যে কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্বের মৌলিক ও কেন্দ্রীয় বৈধতার পেছনে রয়েছে দেশের ভিতরে ও বাইরে শান্তি রক্ষা করার শর্ত৷ আধুনিক রাষ্ট্রের তত্ত্বের জনক টোমাস হবেস তা বলে গেছেন৷

তার মানে কি এই যে রাষ্ট্র তার দায়িত্ব পালনের দোহাই দিয়ে নাগরিকদের অধিকার খর্ব করতে পারে?

হ্যাঁ, আইনের ক্ষেত্রে হামেশাই এটা ঘটে তাকে৷ জার্মানির রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক বিকাশের ক্ষেত্রে কয়েক দশক ধরেই দেখা যাচ্ছে, যে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের এই পুরানো সংজ্ঞাকেও মৌলিক অধিকারের মধ্যে ফেলা হচ্ছে৷ আমাদের প্রশ্ন হলো, ‘‘এক নাগরিক অন্য এক নাগরিকের অধিকার খর্ব করতে গেলে রাষ্ট্র কী করতে পারে বা তাকে কী করতে হবে?'' আমি আপনাকে একটা উদাহরণ দিচ্ছি৷ ধরুন, যদি এমন হতো, যে অ্যামেরিকার এনএসএ নয় – জার্মানির কোনো বেসরকারি সংস্থা এভাবে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করতো, তখন বিষয়টি একেবারে স্পষ্ট হতো৷ বলা হতো, ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডারের উপর এমন হামলা অসহনীয় এবং একেবারে গ্রহণযোগ্য নয়৷ সেই সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নতুন কোনো আইনের প্রয়োজন হতো না৷

আদালতের বিচারকের অনুমতি নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো সাধারণ নিয়ম আছে কি?

শুধু সংবিধানের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে বিষয়টি একেবারে সহজ৷ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার খর্ব করতে হলে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তার আইনি ভিত্তি থাকতে হবে৷ সেই পদক্ষেপ নির্দিষ্ট মাত্রা ছাড়ালেও চলবে না৷ আগেই যেমনটা বলেছিলাম, কোনো বেসরকারি কোম্পানি এমনটা করলে কী হতো? কিন্তু বাস্তবে ঘটনাটা আলাদা৷ কাজটা করেছে বৈদেশিক রাষ্ট্রীয় একটি সংস্থা৷ সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞদের কাছে বিষয়টি একেবারে অন্য মাত্রা পেয়েছে৷ প্রশ্ন উঠছে, কোনো একটি রাষ্ট্রের মৌলিক অধিকার কি অন্য একটি রাষ্ট্রের মোলিক অধিকারের সঙ্গে খাপ খেতে হবে? বিষয়টি একেবারেই নতুন৷

অর্থাৎ আপনি বলতে চাইছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জার্মানির মৌলিক অধিকার খর্ব করতে পারে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়?

আমি অন্তত জানি না৷ অ্যামেরিকানরা এখনো পর্যন্ত যা বলেছে, তা যদি আমি বুঝে থাকি, তার মূল কথা হলো, ‘‘আমাদের নাগরিকদের উপর এমন নজরদারি চালাতে পারি না বটে, কিন্তু বিদেশিদের ক্ষেত্রে বিষয়টি আলাদা৷ যখন খুশি, যেভাবে খুশি তা করতে পারি৷'' এমনটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ জার্মানির সংবিধান মোটেই তার অনুমতি দেয় না৷

তাহলে কি নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় বিদেশ থেকে আড়ি পাতার বিরুদ্ধে জার্মানিকে আরও কড়া অবস্থান নিতে হবে?

আমার মত তো সেটাই৷ বিশেষ করে দায়সারা অবস্থান নিলে চলবে না৷ বললে চলবে না, অন্য কোনো রাষ্ট্র এ সব করছে, আমাদের কিছু করার নেই৷ অন্য নাগরিক নয় – অন্য একটি রাষ্ট্র নাগরিক ও মৌলিক অধিকার খর্ব করছে৷ তাহলে রাষ্ট্র নাগরিকদের সুরক্ষার মৌলিক দায়িত্ব পালন করছে কোথায়? জার্মানির সাংবিধানিক আদালত কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে বিস্তৃত ক্ষমতা দিয়েছে৷ আমার মতে, রাষ্ট্র সে ক্ষেত্রে নিষ্ক্রীয় হয়ে বসে থাকতে পারে না৷ তাকে কিছু করে দেখাতেই হবে৷

হর্স্ট দ্রায়ার ভ্যুর্তসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনি দর্শন এবং রাষ্ট্রীয় ও প্রসাসনিক আইনের অধ্যাপক৷ তিনি জার্মানির সংবিধানের বিশ্লেষণ করে তিন খণ্ডের একটি বই লিখেছেন৷

সাক্ষাৎকার: মার্কুস ল্যুটিকে / এসবি

সম্পাদনা: আরাফাতুল ইসলাম

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য