1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সরকারি অফিস পুরোপুরি খোলার সিদ্ধান্তে আতঙ্ক

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৭ আগস্ট ২০২০

করোনার এই পর্যায়ে বাংলাদেশে স্বাভাবিক নিয়মে সরকারি অফিস খুলে দেয়াকে ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এই ঘোষণায় সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

https://p.dw.com/p/3gcbx
Bangladesch Dhaka | Coronavirus | Test-Zentrum
ছবি: Reuters/M.P. Hossain

তাছাড়া সরকারের এই সিদ্ধান্তে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও উদ্বুদ্ধ হলে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে

বিষয়টি নিয়ে  কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা- কর্মচারী কথা বললেও তারা নাম প্রকাশ করতে চাননি। তারা বলেন, সচিবালয়ে সাধারণত উপ-সচিব থেকে তার উপরের পদ মর্যাদার কর্মকর্তাদের বসার জন্য আলাদা কক্ষ আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিনিয়র সহকারি সচিবরাও এই সুবিধা পান। বাকিরা একই রুমে বসেন বা ডেস্ক শেয়ার করেন। ফলে সবাই অফিসে গেলে কোনোভাবেই সামাজিক দূরত্ব রেখে কাজ করা সম্ভব হবে না। সেভাবে বসার জায়গা তৈরি করা হয়নি। আর যে পরিমাণ জায়গা আছে তাতে সামাজিক দূরত্ব মেনে বসার ব্যবস্থা করা সম্ভবও নয়। ঢাকার বিভিন্ন সরকারি অফিস এবং অধিদপ্তরেরও একই অবস্থা।

আর ঢাকার বাইরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও সামাজিক দূরত্ব মেনে সবার পক্ষে এক সঙ্গে অফিস করা সম্ভব নয়।

একজন কর্মচারী বলেন, ‘‘আমরা তো কিছু বলতে পারছি না। কিন্তু এই ঘোষণায় আমাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই পরিবেশে কাজ করে আমরা তো বাসায় ফিরবো। আমাদের পরিবারের সদস্যরাও ঝুঁকির মুখে পড়বেন।”

ডা. লেলিন চৌধুরী

উপ-সচিব পদ মর্যাদার নীচের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের  গাড়িও নেই। তাদের পাবলিক যানবাহনে করেই অফিসে যেতে হবে । এটাও নতুন আরেকটি ঝুঁকি তৈরি করবে। আর পুরোদমে অফিস খুলে গেলে বাইরে লোক সমাগমও বেড়ে যাবে।

ঢাকার একটি বেসরকরি আইটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শাহেদ আহমেদ বলেন," আমরা এখন পর্যন্ত হোম অফিস করছি। কিন্তু সরকারের এই সিদ্ধান্তে যদি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ উদ্বুদ্ধ হয়, তাহলে আমরাও বিপদে পড়ে যাবো।”

সরকারি প্রতিষ্ঠানে এতদিন রোস্টার করে কাজ হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে যত জনের কাজ করা সম্ভব ততজনই রোস্টার অনুযায়ী অফিসে এসেছেন। বাকিরা বাসায় বসে অফিস করেছেন। পালাক্রমে তারা এভাবে কাজ করেছেন।  কিন্তু রবিবার থেকে এই সুবিধা থাকছে না। সবাইকে ৯টা-৫টা অফিস করতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও প্রিভেন্টিভ মেডিসিনের চিকিৎসক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, কর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি অফিস স্বাভাবিক নিয়মে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া কোনোভাবেই ঠিক হয়নি। বাংলাদেশে চলমান করোনার দ্বিতীয় পর্যায় চলছে। টেস্ট কমানো হলেও আক্রান্তের হার এখনো ২১ ভাগ। পরিস্থিতি ভালো না। বিশেষ করে কোরবানির পশুর হাট এবং ঈদ যাত্রার কারণে করোনা এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গেছে। আর এখন অফিস স্বাভাবিক নিয়মে খুলে দিলে করোনা আরো বিস্তৃত হবে। তিনি বলেন,‘‘ ঐতিহ্যগতভাবেই বাংলাদেশে অফিসে বসার ব্যবস্থা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আর সামাজিক দূরত্ব মেনে বসার মতো স্পেসও নেই। ফলে অফিস হয়ে উঠতে পারে করোনা সংক্রমণের হট স্পট।”

করোনা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে নেয়ার দাবী উঠছে প্রথম থেকেই। এজন্য জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটিও আছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তাদের সাথে পরামর্শ না করেই প্রশাসনিকভাবে এই সিদ্বান্ত নেয়া হয়েছে

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘শুধু অফিস খুলে দেয়া নয়, কোভিড চিকিৎসকদের আবাসন-সুবিধা বাতিল করে ভাতার সিদ্ধান্ত, করোনা টেস্ট কমানো-এই সব সিদ্ধান্তই নিচ্ছেন আমলারা। ফলে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। এই সব সিদ্ধান্তে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করা হচ্ছে না।”

ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী

"কোভিড চিকিৎসকদের আইসোলেটেড রাখা একটা বৈজ্ঞানিক বিষয়। এখন তাদের আলাদা আবাসনের সুবিধা বাতিল করে প্রতিদিন দুই হাজার টাকা ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারা কি এখন পরিবারে সাথে থেকে করোনা ছড়াবেন?”, প্রশ্ন এই চিকিৎসকের। আর করোনা প্রতিরোধের প্রথম শর্তই হলো যত বেশি পারা যায় টেস্ট বাড়ানো। কিন্তু আমলাদের সিদ্ধান্তে তা কমানো হচ্ছে। টেকনিক্যাল কমিটির মতামত উপেক্ষা করা হচ্ছে।

একই প্রক্রিয়ায় সরকারি চাকরিজীবীদের সবার স্বাভাবিক নিয়মে অফিস করার যে আদেশ জারি হয়েছে, তা-ও একটি ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে গত ২৪ ঘন্টায় করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১২ হাজার ৬৯৯টি। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১২ লাখ ৩৭ হাজার ৮২৩টি। এখন শনাক্তের হার ২১.১০ ভাগ। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গড়ে ১০-১২ হাজারের মতো নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর আগে এটা ছিল গড়ে ১৫ হাজার।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন ২৭ জন। এ পর্যন্ত মোট মারা গেছেন তিন হাজার ৩৩৩ জন।