1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার সময়ের দাবি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে৷ আন্দোলনকারীরা কোটা ৫৫ ভাগ থেকে কমিয়ে ১০ ভাগ করার দাবি জানিয়েছেন৷ আর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ব্যানারে আরেক গ্রুপ তাদের কোটা কমানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে৷

https://p.dw.com/p/2tIpf
Bangladesch Dhaka Wahlkommission Gebäude
ছবি: DW

বাংলাদেশে সরকারী চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা প্রচলিত৷ অনগ্রসর শ্রেণিকে এই সুবিধা দিয়ে সমতা বিধানের লক্ষ্যে এই কোটার প্রবর্তণ করা হয় স্বাধীনতার পরেই৷ কিন্তু মোট কোটার পরিমাণ শতকরা ৫৫ ভাগেরও বেশি৷ সরকারি চাকরির অর্ধেকেরও বেশি কেটার দখলে, মেধার দখলে অর্ধেকেরও কম শতকরা ৪৫ ভাগ৷

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা ৩০, জেলা ১০, নারী ১০ এবং উপজাতি কোটা ৫ শতাংশ৷ এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে এক শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী নিয়োগের বিধান রয়েছে৷ তবে সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, আধা-স্বায়ত্বশাসিত, বিভিন্ন করপোরেশন ও দফতরে সরাসরি নিয়োগে জেলার জনসংখ্যার ভিত্তিতে জেলাওয়ারি কোটা পুনঃনির্ধারণ করা হয়৷ সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২০ ডিসেম্বর জেলাওয়ারি কোটা নির্ধারণ করা হয়েছিল৷

‘কোনো কোটা বাতিলের দাবি করিনি, কোটা ব্যবস্থার সংস্কার দাবি করছি’

রবিবারও ঢাকাসহ সারাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ এবং অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থী এবং চাকরিপ্রার্থীরা৷ এক সপ্তাহ আগে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে কোটা সংস্কার ও সংস্কার বিরোধীদের মধ্যে ঢাকায় সংঘর্ষও হয়েছে৷

রবিবারের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকাসহ সারাদেশের জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে কোটা সংস্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে৷ তাতে সরকারি চাকরিতে কোটা কমিয়ে সর্বোচ্চ ১০ ভাগ রাখার দাবি করা হয়েছে৷

কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহেদুল আনোয়ার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা কোটা বাতিল নয়, সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করছি৷ কোটা আমাদের সংবিধানেই আছে৷ তবে কোটা যেখানে বৈষম্য দূর করার জন্য করা হয়েছে সেখানে এখন কোটা ব্যবস্থাই বৈষম্যের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘এখন মোট কোটা ৫৬ শতাংশ৷ এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য মোট কোটা সংরক্ষিত ৩৬ শতাংশ৷ কিন্তু তারা বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ২.৬৩ শতাংশ৷ জেলা এবং নারী কোটা আছে মোট ২০ শতাংশ৷ তাহলে মেধার জন্য সুযোগ কই? এরকম হলে তো যারা মেধাবী, যারা যোগ্য, তারা বঞ্চিত হচ্ছে৷ আমরা চাই কোটা থাকুক, তবে তা কোনোভাবেই যেন সব মিলিয়ে ১০ শতাংশের বেশি না হয়৷''

‘২৪ বছর যদি বন্ধ রাখা না হত, তাহলে এখন মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রয়োজন থাকতো না’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিল বা সংস্কারের দাবি করি নাই৷ আমরা পুরো কোটা ব্যবস্থার সংস্কার দাবি করছি৷''

অন্যদিকে কোটা বহাল রাখার পক্ষে অবস্থানকারী মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড-এর সাধাররণ সম্পাদক সেলিম রেজা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরাও কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চাই৷ কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের কোটা বাতিলের দাবির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান৷ কারণ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে এই কোটা মুক্তিযোদ্ধাদের উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট তাতে সপরিবারে হত্যার পর এই কোটা বাতিল করা হয়৷ ২৪ বছর মুক্তিযোদ্ধাদের এই কোটা দেয়া হয়নি৷ ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের জন্য আবার কোটা চালু হয়৷ ২৪ বছর যদি কোটা বন্ধ না রাখা হত তাহলে এখন আর মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রয়োজন থাকতো না৷ আমাদের যে বঞ্চিত করা হয়েছে তাতো পুষিয়ে দিতে হবে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল চেয়ে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে আপত্তিকর কথা বলছে, কটুক্তি করছে তাদের বায়োডাটা আমাদের কাছে আছে৷ তারা কারা আমরা জানি৷ সংবাদ সম্মেলন করে আমরা তাদের পরিচয় প্রকাশ করব৷''

‘মেধার চেয়ে সংরক্ষিত কোটা বেশি হতে পারেনা’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে এখন কোটার যে অবস্থা তা ন্যায় নীতির পরিপন্থী৷ কারণ মেধার চেয়ে সংরক্ষিত কোটা বেশি হতে পারেনা৷ বাংলাদেশের সংবিধানে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সমতা নীতির কথা বলা হয়েছে৷ তবে সংবিধানে এও বলা হয়েছে অনগ্রসর সম্প্রদায়কে অগ্রসর করতে কোনো বিধান করতে সরকারকে ওই(সমতা) বিধান বাধাগ্রস্ত করবেনা৷ তবে প্রশ্ন হল মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা বলেই কি অনগ্রসর? আর আরো যারা অনগ্রসর কোটা সুবিধা পাচ্ছেনা তারা এখনো অনগ্রসর আছেন কিনা৷''

তিনি বলেন, ‘‘সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি এখন নতুন করে পর্যালোচনা করা দরকার৷ এটার সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে৷ কোনোভাবেই কোটা শতকরা ৫০ ভাগের বেশি হওয়া উচিত না৷ আর যখন ১৯টি জেলা ছিল তখন সেখানে কোটা বিন্যাস করা সম্ভব ছিল৷ এখন ৬৪ জেলায় কোটা বিন্যাস অবাস্তব৷''

কোটা পদ্ধতি নিয়ে আপনার মন্তব্য কী? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান