1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাইবার ক্রাইম: মামলা বাড়লেও সাজা কম

সমীর কুমার দে ঢাকা
৩ অক্টোবর ২০২০

বাংলাদেশে বাড়ছে প্রযুক্তির ব্যবহার৷ একই সঙ্গে বেড়ে চলছে সাইবার ক্রাইম বা প্রযুক্তিগত অপরাধও৷ সাইবার অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দিন দিন মামলার সংখ্যা বাড়লেও নিষ্পত্তির সংখ্যা খুব একটা বাড়ছে না৷ 

https://p.dw.com/p/3jNtY
Symbolbild Cybermobbing
ছবি: picture-alliance/dpa

গত প্রায় ৮ বছরে সাইবার ট্রাইব্যুনালে ১২৪টি মামলার রায় হয়েছে৷ এর মধ্যে সাজা হয়েছে মাত্র ২৯টি মামলায়৷ এই সময়ে নিষ্পত্তি হয়েছে এক হাজার ১০০ মামলার৷ বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দুই হাজারের মতো৷

সাইবার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা চলাকালে অনেক অভিভাবক এসে বলেন আমার মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে সে সুখে শান্তিতে আছে৷ আমরা আর মামলা চালাতে চাই না৷ এমনকি উপজেলা চেয়ারম্যান বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে আসেন৷ তারাও সাক্ষ্য দেন এই মামলা চালালে মেয়ের ক্ষতি হতে পারে, তার সংসারে অশান্তি তৈরী হতে পারে তাই তারা মামলা প্রত্যাহার করে নিতে চান৷ ফলে অনেক মামলা প্রত্যাহার হয়৷’’

নজরুল ইসলাম

তিনি জানান, ট্রাইব্যুনাল থেকে রায় হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে নারীদের হয়রানি, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ফেসবুকে আপত্তিকর স্ট্যাটাসসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে করা বিভিন্ন মামলা রয়েছে৷

সাইবার অপরাধ ট্রাইব্যুনালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে গত ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১২৪টি মামলার রায় ঘোষণা করেছে সাইবার ট্রাইব্যুনাল৷ এর মধ্যে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ২৯টি মামলায় আসামির সাজা হয়েছে৷ আর অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় ৯৫টি মামলায় আসামিরা বেকসুর খালাস পেয়েছেন৷ এর বাইরে অভিযোগ গঠনের শুনানির দিনেই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন ২০০টিরও বেশি মামলার আসামিরা৷

জানা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশের বিভিন্ন থানা থেকে বিচারের জন্য সাইবার ট্রাইব্যুনালে মোট মামলা এসেছে দুই হাজার ৬৪২টি৷ প্রতিবছরই মামলার সংখ্যা বেড়েছে৷ ২০১৯ সালে ৭২১টি, ২০১৮ সালে ৬৭৬টি, ২০১৭ সালে ৫৬৮টি, ২০১৬ সালে ২৩৩টি, ২০১৫ সালে ১৫২টি, ২০১৪ সালে ৩৩টি এবং ২০১৩ সালে এসেছে ৩টি মামলা৷ চলতি বছরে ২৫৬টি মামলা হয়েছে৷ এখন পর্ন্ত সরাসরি ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা হয়েছে ১ হাজার ৮২টি মামলা৷ এরমধ্যে ৪৪৭টি মামলায় বিভিন্ন সংস্থাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল৷ বাকি ৬৩৫টির প্রয়োজনীয় উপাদান না থাকায় আদালত খারিজ করে দেন৷ ৪৪৭টির মধ্যে ১৫০টি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ইতোমধ্যে আদালতে জমা হয়েছে৷ বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে সব মিলিয়ে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা দুই হাজার ২১টি৷

শুধু বিচার প্রক্রিয়া নয়, সাইবার মামলার তদন্তেও অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে৷ ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের উপ-কমিশনার আ ফ ম আল কিবরিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অনেক সময় তদন্তে অপরাধ প্রমান করা কঠিন হয়ে পড়ে৷ অনেক ভিকটিম দেরিতে রিপোর্ট করেন৷ তিনি হয়তো একটা স্ক্রিন শট রেখে দেন৷ এখন যে ডিভাইস দিয়ে অপরাধ হয়েছে অপরাধী যদি ওই ডিভাইসটা বদলে ফেলেন তাহলে কিন্তু সিআইডির ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রমাণ করা যায় না৷ দেরিতে আসার কারণে অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়৷ আবার অপরাধী দাবি করে বসেন, স্ক্রিন শটটি বানানো৷ সে হয়তো পোষ্টটা ডিলিট করে দিয়েছে৷ ফলে এমন কোন তথ্য উপাত্ত নেই যেটা দিয়ে প্রমাণ হয় অপরাধী আসলে অপরাধটি করেছে৷ ভার্চুয়াল বিষয়ের মামলাগুলোতে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বেই চ্যালেঞ্জ অনেক৷ পাশাপাশি দক্ষ জনবলের অভাব তো আছেই৷ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সংকট কাটানোর চেষ্টা চলছে৷’’

একই সঙ্গে প্রযুক্তি মামলাগুলোর সমাধান করতে বা সবগুলো মামলাকে এক ছাতার নিচে আনতে সৃষ্টি হচ্ছে সাইবার পুলিশ স্টেশন বা সাইবার থানা৷ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডির অধিনে এই থানার কার্যক্রম চলবে৷

আ ফ ম আল কিবরিয়া

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) রফিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘সাইবার থানার কাঠামোসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে৷ ইতিমধ্যে পুলিশ সদর দফতরে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে৷ সাইবার থানার কার্যক্রম শুরুর আগে সারাদেশে যে সব সাইবার মামলা হচ্ছে সেগুলো কাগজপত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে৷ কার্যক্রম শুরু হলেই মামলাগুলোর তদন্ত করবে সাইবার থানা৷ ভুক্তভোগীরা দ্রুত সেবা পাবে বলে আমরা আশাবাদী৷’’

সিআইডি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রস্তাবিত এই সাইবার থানার প্রধান হবেন একজন পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা৷ এছাড়া তিনজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ১২ জন সহকারী পুলিশ সুপার, ২৪ জন পুলিশ পরিদর্শক, ৭২ জন উপ-পরিদর্শক, ১৮ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক এবং ৪০ জন কনস্টেবল থাকবেন এই থানায়৷ প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন পুলিশ কর্মকর্তারা এখানে নিয়োগ পাবেন৷ পাশাপাশি প্রযুক্তি বিষয়ে তাদের একাধিক প্রশিক্ষণও হবে৷ ফলে যে ধরনের সাইবার অপরাধ হোক না কেন তারা সমাধান দিতে পারবেন৷ সাইবার মামলার চার্জশিট সরাসরি সাইবার ট্রাইব্যুনালেই দাখিল করবেন সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা৷

পুলিশের ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (সিডিএমএস) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সাইবার অপরাধের ঘটনায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ৩ হাজার ৬৫৯টি মামলা হয়েছে৷ এর মধ্যে ১ হাজার ৫৭৫টি মামলা সাইবার ট্রাইব্যুনালে গেছে৷ নিষ্পত্তি হয়েছে ৫২২টির৷ ২৫ মামলায় আসামিদের সাজা হয়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য