1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাগরের মা কি প্রতিজ্ঞা রাখতে পারবেন?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ৬ বছর পেরিয়ে গেছে৷ তদন্তে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি৷ র‌্যাব আদালতে মামলার তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলে ব্যর্থ হয়েছে ৫৪ বার৷ সাগরের মা'র প্রশ্ন ‘এত ব্যয়বহুল তদন্তের অগ্রগতি নেই কেন?'

https://p.dw.com/p/2sTXY
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি৷ হত্যাকাণ্ডের সময় ওই বাসায় ছিল তাদের একমাত্র শিশুপুত্র মাহির সরোয়ার মেঘ৷ এরপর ৬ বছর বছর কেটে গেছে৷

দু'বার হাত বদল হয়ে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্ত করছে র‌্যাব৷ তারা আদালতে মামলার তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলে ব্যর্থ হয়েছে ৫৪ বার৷ ১লা ফেব্রুয়ারি তারা নতুন করে সময় নিয়েছে৷ অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী তারিখ ১৩ মার্চ৷

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রবিবার সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দাবি করেন সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে অগ্রগতি আছে৷ র‌্যাব শিগগিরই আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে জানিয়েছেন তিনি৷

এই মামলায় তদন্তকারীরা এ পর্যন্ত আটজনকে আটক করেছেন৷ তারা হলেন,তানভীর রহমান, বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুন, পলাশ রুদ্র পাল, তানভীর ও আবু সাঈদ৷ তবে এখন পর্যন্ত তাদের কাছে হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানাতে পারেননি তদন্তকারীরা৷ তারা সবাই বর্তমানে জামিনে আছেন৷ এদেরমধ্যে পাঁচজন ঢাকার মহাখালীতে বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নিতাই হত্যা মামলার আসামি৷ আটকদের কেউ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়নি৷

‘হত্যাকারীরা কি প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও শক্তিশালী?’

এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহমেদ এখন সংবাদ মাধ্যমেকে এড়িয়ে চলছেন৷ দু'দিন ধরে তার সঙ্গে যোগাযোগের নানা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন ডয়চে ভেলেসহ অন্যান্য গণমাধ্যম কর্মীরা৷ তবে আগে তিনি দাবি করেছিলেন, সন্দেহভাজন ১৩০জন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে মামলার তদন্ত চলছে৷ ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোন উদ্ধারে বিটিআরসির সহায়তা নেয়া হচ্ছে৷''

মামলার তদন্ত দ্রুত ও সঠিক করতে আদালতের নির্দেশে সাগর-রুনি হত্যার ৭৫ দিন পর ২০১২ সালের বছরের ২৬ এপ্রিল কবর থেকে লাশ তুলে দ্বিতীয় দফা ময়না তদন্ত এবং ভিসেরা আলামত নেয়া হয়৷ সাগর-রুনি হত্যা রহস্য জানতে র‌্যাব সাগর-রুনি ছাড়াও ২১ জনের ডিএনএ পরীক্ষা করিয়ে এনেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ল্যাব থেকে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত তাতে কোনো ফল মেলেনি৷

সাগর সরওয়ার মা সালেহা মনির ‘‘আমাকে র‌্যাব বলেছিল সাড়র-রুনি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত একটি ব্যয়বহুল তদন্ত৷ আমরা দেশের বাইরে থেকে অনেক টাকা খরচ করে ডিএনএ টেস্ট করাচ্ছি৷ আমার প্রশ্ন হল তদন্তে যদি এত টাকা খরচ হয়, এটা যদি ব্যয়বহুল তদন্তই হয় তাহলে হত্যাকারীরা কেন ধরা পরছে না৷ তারা কি সব কিছু জেনেও গোপন করছে? আমি জানতে চাই এই ব্যয়বহুল তদন্তের উদ্দেশ্য কী, কার স্বার্থে৷''

‘এই মামলার তদন্তে র‌্যাব ব্যর্থ হয়েছে’

তিনি বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত সাগর-রুনির হত্যাকারীদের নাম দেশের মানুষ একদিন জানতে পারবে৷ হয়তো সেদিন আমি থাকবো না৷ আমি জানি না ৪৮ ঘণ্টা কবে হবে৷ প্রধানমন্ত্রীও তখন হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন৷ কিন্তু আমার প্রশ্ন হত্যাকারীরা কি প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও শক্তিশালী? তাই যদি না হয় তাহলে তাদের ধরা যাচ্ছে না কেন? সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড কোনো ক্লুলেস মার্ডার নয়৷ অনেক তথ্য, অনেক আলামত৷ তারপরও মামলা ডিটেক্ট হয় না৷ কত হত্যাকাণ্ডে বিচার হল৷ নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের বিচার হল, বিশ্বজিৎ হত্যার বিচার হল৷ কিন্তু সাগর-রুনি হত্যার কেন বিচার হয়না!''

সাগর-রুনি হত্যা মামলার বাদি সাগরের ভাই নওশের রোমান৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা স্পষ্ট যে এই মামলার তদন্তে র‌্যাব ব্যর্থ হয়েছে৷ আমরা চাই তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের চিহ্নত এবং বিচার করা হোক৷'' তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে মামলার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে তদন্তকারীরা অনেক দিন হয় কোনো যোগাযোগ করেন না৷ আমরাও আর তাদের সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি৷ জানতে চাইলে তারা ওই একই কথা বলে, আমরা আশাবাদী৷''

সাগর-রুনির একমাত্র সন্তান মেঘের বয়স এখন সাড়ে ১১ বছর৷ চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে৷ নওশের জানান,‘‘মেঘ স্বাভাবিক শিশু হিসেবেই বড় হচ্ছে৷ নিয়মিত পড়াশুনা করে৷ খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ আছে৷''

মেঘ প্রসঙ্গে সাগরের মা সালেহা মনির বলেন,‘‘প্রধানমন্ত্রী মেঘের সব দায়িত্ব নেয়ার কথা বলেছিলেন৷ কিন্তু তার বাস্তবায়ন এখনো আমরা দেখতে পাইনি৷'' 

সালেহা মনির তাঁর সন্তান সাগর আর পুত্রবধু রুনির কবর জিয়ারত করতে যাননি একদিনও, মৃত্যুবার্ষিকীতেও না৷ তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হলে তবেই তিনি তাদের কবর জিয়ারত করবেন৷

তবে সেই প্রতিজ্ঞা তিনি রাখতে পারবেন কিনা এ নিয়ে তাঁর মধ্যেই দেখা দিয়েছে সংশয়৷

আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷