1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সোমালিয়া সংকট

১২ মে ২০১২

‘হর্ণ অফ আফ্রিকা’ বলে পরিচিত অঞ্চলে জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে জার্মান নৌ-বাহিনী যে অভিযান চালাচ্ছিল, তার আওতায় এবার সোমালিয়ার ভূখণ্ডের উপরেও হামলা চালাতে পারবে জার্মানি৷

https://p.dw.com/p/14txp
ছবি: picture-alliance/dpa

২০০৮ সালের শেষের দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুদের বিরুদ্ধে এক অভিযান শুরু করে৷ তাতে কিছুটা কাজও হয়েছে৷ জাহাজের উপর বোম্বেটেদের হামলার ঘটনা কিছুটা কমেছে৷ তবে তারা পুরোপুরি দমে যায় নি৷ ভেঙে পড়া রাষ্ট্রীয় কাঠামোর দেশ সোমালিয়াতে ঘাঁটি গেড়ে জলদস্যু ও তাদের মদতকারীরা দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে৷ গোটা ভারত মহাসাগর জুড়েই তাদের দাপট৷

এবার তাদের কাজ আরও কঠিন করতে ইইউ'র সামরিক অভিযান সম্প্রসারণ করা হচ্ছে৷ শুধু সমুদ্র নয়, প্রয়োজনে সোমালিয়ার ভূখণ্ডে জলদস্যুদের ঘাঁটিও ধ্বংস করার ম্যানডেট দেওয়া হচ্ছে ইইউ বাহিনীকে৷ তবে বাড়তি এই ক্ষমতার সঙ্গে দুটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে৷ উপকূল থেকে শুধু ২,০০০ মিটার গভীর পর্যন্ত হামলা করা যাবে এবং একমাত্র আকাশ থেকে হামলা চালানো যাবে, সৈন্যরা সোমালিয়ার ভূখণ্ডে পা রাখতে পারবে না৷

জমির উপর সংঘর্ষের আশঙ্কা

কাগজে-কলমে জমির উপর সংঘর্ষের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এমন পরিস্থিতি যে তৈরি হবে না, তা হলফ করে বলা কঠিন৷ ফলে জার্মানির বিরোধী দলগুলির অনেক সাংসদ এই বর্ধিত অভিযানে জার্মানির অংশগ্রহণের প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন৷ নতুন ম্যানডেট'এর আওতায় সৈন্যদের ঝুঁকি যে বেড়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ হেলিকপ্টার ও নজরদারি বিমান ধ্বংস করা তেমন কঠিন কাজ নয়৷ জমি থেকে গোলাগুলি বা রকেট চালিয়েই তা করা সম্ভব৷

গৃহযুদ্ধে জর্জরিত সোমালিয়ায় এমন অস্ত্রশস্ত্রের কোনো অভাব নেই৷ তাছাড়া বালির ঝড়ে পড়ে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণেও অনেক হেলিকপ্টার ভেঙে পড়েছে, এমন ঘটনা বিরল নয়৷ তখন আবার কম্যান্ডো বাহিনী পাঠিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়৷ এভাবে জার্মান সেনাবাহিনীর কম্যান্ডোরাও সরাসরি জমির উপর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে৷ ১৯৯৩ সালে সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিশু'তে এক হামলায় একটি মার্কিন হেলিকপ্টারের আরোহীদের কী দশা হয়েছিল, তা তুলে ধরা হয়েছে ‘ব্ল্যাক হক ডাউন' নামের এক চলচ্চিত্রে৷ ভয়াবহ সেই দৃশ্য ভোলা কঠিন৷ এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷

বাড়তি ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্ন

তাছাড়া আসল প্রশ্ন হলো, এত বড় ঝুঁকি নিয়ে সেনাবাহিনী যে বাড়তি ক্ষমতা পাচ্ছে, তাতে আদৌ কী লাভ হবে? অতীতেও দেখা গেছে, জলদস্যুরা নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের কতটা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে৷ যখন উপকূলবর্তী এলাকায় সামরিক নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, তখন তারা তাদের কাজের ক্ষেত্র আরও ছড়িয়ে দিয়েছিল৷ এবার জমির উপর হামলার আশঙ্কা দেখলে তারা দিব্যি উপকূল ছেড়ে দেশের আরও ভিতর দিকে ঘাঁটি সরিয়ে নিয়ে যাবে৷ অতীতেও তারা তেমন কোনো সমস্যা ছাড়াই পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ চালিয়ে গেছে৷

এই অভিযানের আরও একটি বিপজ্জনক দিক রয়েছে৷ উপকূলবর্তী এলাকায় বিমান হামলা থেকে বাঁচতে জলদস্যুরা নিরীহ মানুষকে বর্ম হিসেবে ব্যবহার করতে পারে৷ ইউরোপীয় সৈন্যরা তখন সব জেনেশুনে আর হামলা চালাতে পারবে না৷ জলদস্যু দমন করতে গিয়ে নিরীহ মানুষের হত্যাযজ্ঞের ঝুঁকি নিতে পারে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ তার উপর একই অভিযানের আওতায় সোমালিয়ার হতদরিদ্র মানুষের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেবার লক্ষ্যও রয়েছে৷

অনিশ্চিত পরিণতি

ভবিষ্যতেও জলদস্যুদের মোকাবিলা করতে হবে, এবিষয়ে কোনো বিতর্ক বা সন্দেহ নেই৷ কিন্তু তার আরও কার্যকর পদ্ধতি রয়েছে৷ যেমন সোমালিয়ার নিজস্ব এক শক্তিশালী উপকূলরক্ষী বাহিনী গড়ে তোলা অথবা জলদস্যুদের আর্থিক লেনদেনের পথ বন্ধ করে দেওয়া৷ তাছাড়া এটাও ভুললে চলবে না, যে জলদস্যুদের নেপথ্যে যারা কলকাঠি নাড়ে তারা বেশ আটঘাট বেঁধে এই ব্যবসায় নেমেছে৷ তারা একেবারেই চায় না, যে সোমালিয়ার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হোক৷

ইউরোপের স্বার্থ এর ঠিক বিপরীত৷ শুধু বাণিজ্যিক জাহাজের সুরক্ষার খাতিরে নয়, ‘ফেলড স্টেট' বা ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে সোমালিয়া যে ইসলামি সন্ত্রাসবাদীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটাও ইউরোপের স্বার্থের ক্ষতি করছে৷ এই সব দুষ্কৃতিরাও চায়, ইউরোপীয় সৈন্যরা তাদের জমিতে সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়ুক৷ এর মাধ্যমে সোমালিয়ার সাধারণ মানুষের মনে বিদেশি সৈন্যদের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি ভেঙে দিয়ে তাদের মধ্যে ঘৃণা সৃষ্টি করা সম্ভব হবে৷ বাস্তবে সত্যি এমনটা ঘটলে বর্ধিত এই সামরিক অভিযানের ফলে ইউরোপের কোনো লাভই হবে না৷

প্রতিবেদন: ডানিয়েল শেসকেভিৎস/সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য