1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্কুল ছেড়ে আবার ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুরা

সমীর কুমার দে ঢাকা
১২ জুন ২০২১

করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারের শিশুরা স্কুল ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ফিরে যাচ্ছে৷ বেসরকারি একটি সংস্থার জরিপে এমন চিত্র উঠে আসলেও সারাদেশে তাদের মোট সংখ্যা কত তার পরিসংখ্যান নেই কারো কাছে৷

https://p.dw.com/p/3unko
করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারের শিশুরা স্কুল ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ফিরে যাচ্ছে৷ বেসরকারি একটি সংস্থার জরিপে এমন চিত্র উঠে আসলেও সারাদেশে তাদের মোট সংখ্যা কত তার পরিসংখ্যান নেই কারো কাছে৷
ছবি: Sony Ramany/NurPhoto/picture alliance

বাংলাদেশে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নিয়মিত ৩১ হাজার শিশুকে মনিটরিং করে৷ এর মধ্যে প্রায় আট হাজার শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে সরিয়ে স্কুলে নিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি৷ কিন্তু প্রায় তিন হাজার শিশু আবারও স্কুল ছেড়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ফিরে গেছে৷

সংস্থাটির শিশু সুরক্ষা বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার রাফেজা শাহীন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের পক্ষেতো সারাদেশে সার্ভে করা কঠিন৷ তবে আমরা আটটি জেলায় সার্ভে করে দেখেছি, ৭৪ হাজার শিশু স্কুলে না গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে যুক্ত৷ আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ৩১ হাজার শিশুকে আমরা নিয়মিত মনিটরিং করি৷ এর মধ্যে সাত হাজার ৮০০ জন শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা থেকে সরিয়ে স্কুলে নিয়েছিলাম৷ করোনা পরিস্থিতিতে তাদের আর স্কুলে রাখা যায়নি৷ সর্বশেষ গত এপ্রিলে আমরা দেখেছি, এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার শিশু আবারও পুরনো কাজে ফিরে গেছে৷’’

করোনা পরিস্থিতিতে তাদের আর স্কুলে রাখা যায়নি

এই শিশুদের স্কুলে ফিরিয়ে নিতে সরকারি কোন উদ্যোগ আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে৷ কিন্তু সেগুলো খুব একটা কাজে আসছে না৷ যেমন ধরেন সরকার ২৮৪ কোটি টাকা ব্যায়ে একটি প্রকল্প নিয়েছিল৷ যেখানে এই সব শিশুদের অভিভাবকদের প্রণোদনা দেওয়ার কথা৷ সেই প্রকল্প খুব একটা কাজ করেনি৷''

সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের পরিচালক রিফাত বিন সাত্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ কিন্তু আসল সমস্যা তো অর্থিক অস্বচ্ছলতা৷ এই করোনা পরিস্থিতিতে দরিদ্র আরো দরিদ্র হয়েছে৷ হতদরিদ্র একটি শ্রেণী তৈরী হয়েছে৷ এখন পরিবারে স্বচ্ছলতা না থাকলে শিশুকে কিভাবে স্কুলে পাঠাবে? ফলে তারা শিশুকেও কোন না কোন কাজে লাগিয়ে দিচ্ছে৷ এই কাজটা কিন্তু সাধারণ কোন কাজ নয়, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ৷’’

কী পরিমান শিশু এখন স্কুলের বাইরে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আসলে আনুষ্ঠানিক খাতেতো শিশুশ্রম বন্ধ৷ শিশুরা কাজ করে অনানুষ্ঠানিক খাতে৷ সেখানে খুব একটা হিসাব সরকার রাখে না৷ ফলে আমরাও খুব একটা হিসাব জানতে পারি না৷ এই হিসাবটা না পাওয়া গেলে তাদের এখান থেকে বের করে আনাও কঠিন৷’’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৩ সালের জরিপে দেখা যায়, শিশুশ্রমে নিযুক্ত শিশুর সংখ্যা ১৩ লাখ৷ এটাই সরকারের সবশেষ জরিপ৷ চলতি বছর শ্রম মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য মাত্র এক লাখ শিশুকে শ্রমমুক্ত করা৷ ফলে নির্ধারিত সময়ে এই বিশালসংখ্যক শিশুকে শ্রম থেকে ফেরানো কঠিন হয়ে পড়বে৷

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা বেড়ে ১৬ কোটিতে পৌঁছেছে৷ যা গত চার বছরে বেড়েছে ৮৪ লাখ৷ কোভিড-১৯ এর প্রভাবের কারণে আরো কয়েক লাখ শিশু ঝুঁকিতে রয়েছে৷ মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী অতিরিক্ত ৯০ লাখ শিশু ঝুঁকির মুখে বলে সতর্ক করেছে আইএলও ও ইউনিসেফ৷ ১২ জুন বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে এমন শঙ্কার কথা বলা হয়েছে৷

‘হিসাবটা না পাওয়া গেলে তাদের বের করে আনা কঠিন’

শিশুশ্রম নিরসনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা খসড়া কমিটির আহ্বায়ক এবং বেসরকারি সংস্থা ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা একটা খসড়া ইতোমধ্যে তৈরি করেছি৷ এখন সেটা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়৷’’

তিনি বলেন, ‘‘সবশেষ শিশুশ্রম জরিপের সঙ্গে আগের জরিপের তুলনা করলে দেখা যায়, শিশুশ্রম অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে৷ তবে সে তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম কমার হার অনেক কম৷ মাত্র ১০ হাজার শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম থেকে সরানো গেছে৷ আমরা মনে করি, এই শিশুদের পরিবারকে সহায়তা না করা হলে তাদের এই কাজ থেকে সরানো কঠিন৷ পাশাপাশি শিশুকে স্কুলে পাঠালে পরিবারের সদস্যদেরও কিছু প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে৷’’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক ও শ্রম বাজারে ধাক্কা, মানুষের জীবিকার ওপর বিরাট প্রভাব ফেলছে৷ দুর্ভাগ্যবশত এই সংকট শিশুদের শিশুশ্রমের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ দারিদ্রের কারণে শিশুদের নামতে হচ্ছে কাজে৷ করোনা মহামারিতে স্কুল বন্ধ থাকায় নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো তাদের সন্তাদের কাজে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে৷ কারণ অনেক অভিভাবকেরই মোবাইল ডাটা কিনে সন্তানকে অনলাইনে ক্লাস করানোর সক্ষমতা নেই৷

জাতিসংঘ ২০২১ সালকে ‘আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম নিরসন বর্ষ' হিসেবে ঘোষণা করলেও বাংলাদেশে তা বাস্তবায়ন অনিশ্চিত৷ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালাম জানান, শিশুশ্রমমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছে সরকার৷ ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি খাত শিশুশ্রমমুক্ত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে৷ এরই মধ্যে আটটি খাত থেকে শিশুশ্রম নিরসন করা হয়েছে৷ এ ছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে এক লাখ শিশুর শিশুশ্রম নিরসন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এই প্রকল্প শিগগিরই শুরু হবে বলে তিনি আশা করেন৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান