1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হত্যার উদ্দেশ্যেই হামলা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৪ মার্চ ২০১৮

ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারীর আদর্শিক পরিচয় নিশ্চিত হতে না পারলেও হামলার ধরন দেখে তদন্ত চলছে৷ র‌্যাব বলছে, হত্যার উদ্দেশ্যেই জাফর ইকবালের ওপর হামলা হয়েছে৷ আর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যারা ঘটনাগুলো ঘটায়, তারা ‘ধর্মান্ধ’৷

https://p.dw.com/p/2tfPG
Bangladesch Protest gegen Pakistan 19.12.2013
ছবি: DW/M. Mamun

সিলেটে ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা করা হয় ছুরি দিয়ে প্রকাশ্যে৷ তার মাথায় চারটি এবং পিঠে ও হাতে একটি করে আঘাতের চিহ্ন আছে৷ ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপপাতালের (সিএমএইচ) চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে, জাফর ইকবাল এখন আশঙ্কামুক্ত এবং সুস্থ আছেন৷ তবে বাসায় ফিরতে কয়েকদিন লাগতে পারে৷

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শনিবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে(শাবিপ্রবি) ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ফেস্টিভ্যাল চলছিল৷ এক পর্যায়ে বিকেল ৫.৩৫-এ ৫ মিনিটের বিরতি দেয়া হয়৷ ওই সময় জাফর ইকবাল মঞ্চেই ছিলেন৷

‘আমার ওপর যে ছেলেটি হামলা করেছে সে কেমন আছে?’

বিরতি দেয়ার প্রথম মিনিটেই হামলার ঘটনা ঘটে৷ হামলাকারী আগে থেকেই মঞ্চে উঠে গিয়েছিল৷ সে জাফর ইকবালের পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিল৷ মঞ্চে শিক্ষার্থীরা ছিলেন৷ মঞ্চের একদিকে চারজন পুলিশও ছিলেন। এ অবস্থার মধ্যেই জাফর ইকবালের ওপর হামলা হয়৷ হামলার মধ্যেই তাকে ধরে ফেলা হয়৷

এ বিষয়ে সিলেটের সাংবাদিক তুহিনুল হক বলেন, ‘‘মঞ্চে থাকা পুলিশ প্রতিরোধে এগিয়ে গেলে হামলাকারী পালানোর লাফ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে৷ তখন একজন পুলিশ কনেস্টবল তাকে ধরে ফেলে৷''

ডয়চে ভেলের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে তুহিন আরো বলেন, ‘‘হামলার পর ড. জাফর ইকবালের জ্ঞান ছিল৷ তিনি এরপর মোবাইলেও কথা বলেন৷ তবে কিছুক্ষণ পর জ্ঞান হারান৷ ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর তার জ্ঞান ফেরে৷ তখন তিনি বলেন, আমি ভাল আছি তোমরা চিন্তা কোরো না। আর আমার ওপর যে ছেলেটি হামলা করেছে সে কেমন আছে? তাকে তোমরা মারধোর কোরো না৷''

হামলাকারী যুবক ফয়জুর হাসান ওরফে ফয়জুল ওরফে শফিকুরকে আটকের পর পুলিশ তাকে সিলেট র‌্যাব-এর কাছে হস্তান্তর করে৷ এরপর র‌্যাব তাকে ঢাকা থেকে যাওয়া পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করে৷

তাকে এখন সিলেটেই জিজ্ঞাসাবদ করা হচ্ছে৷ সিলেট র‌্যাব ৯-এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আলী হায়দার আজাদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হামলাকারী গণপিটুটিনির শিকার হয়৷ তাই প্রথমে আমাদের কাজ ছিল তাকে সুস্থ করে তোলা৷ আমরা সিলেট সিএমএইচ-এ নিয়ে তাকে চিকৎসা দেই৷ কিছুটা স্টেবল হওয়ার পর আমরা তাকে অল্প সময়ের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করি৷ পরে আমরা তাকে আবার পুলিশের হাতে তুলে দিই৷''

‘হত্যার উদ্দেশ্যেই হামলা করেছে’

তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে যে হত্যার উদ্দেশ্যেই হামলা করেছে৷'' তিনি জানান, সে জঙ্গিবাদী ধারণায় উদ্বুদ্ধ

আরেক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব কমান্ডার বলেন, ‘‘সে তার কোনো যোগাযোগের কথা স্বীকার করেনি৷ সে দাবি করেছে যে, বিভিন্ন বইপত্র পড়ে এবং ইউটিউবে অনেক প্রোগ্রাম দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছে৷''

আলী হায়দার আরো বলেন, ‘‘হামলাকারী বেশকিছু বিভ্রান্তিকর তথ্যও দিয়েছে৷ সে তার নাম ও গ্রামের বাড়ির ঠিকানা একেক সময় একেক রকম বলেছে৷ পরে অবশ্য আমরা তার ঠিকানা নিশ্চিত হয়েছি৷''

অধ্যাপক জাফর ইকবালকে এর আগে একাধিকবার হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে৷ ২০১৫ সালের মে মাসে অধ্যাপক জাফর ইকবালসহ দেশের ১০ বিশিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি দেয় আনসার উল্লাহ বাংলা টিম-১৩৷ আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-১৩ গ্রুপের পাঠানো চিঠিতে বলা হয় ‘মাস্ট উইল প্রিপেয়ার ফর ডেথ'৷

২০১৬ সালের ১২ অক্টোবর স্ত্রীসহ জাফর ইকবালকে মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়৷ এ ঘটনায় সিলেটের জালালবাদ থানায় ১৫ অক্টোবর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি৷

হুমকি পাওয়ার দিন স্ত্রীসহ ঢাকায় বনানীর ডিওএইচএসে অবস্থান করছিলেন৷ ওইদিন রাত সোয়া ১২টায় ইয়াসমিন হকের মোবাইল ফোনে একটি এসএমএস আসে৷ এসএমএসে লেখা হয় ‘welcome to our new top list! Your breath may stop at anytime. abt.' (আমাদের নতুন শীর্ষ তালিকায় স্বাগতম, যে কোনো সময়ে আপনার জীবনের ইতি ঘটতে পারে৷)

‘তারা হামলা করে জানান দিতে চায়, ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়’

পরে রাত আড়াইটায় জাফর ইকবালের মোবাইল ফোনেও একটি এসএমএস আসে। সেখানেও তাঁকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়৷

বাংলাদেশি জঙ্গিবাদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলার এ পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে আমরা মনে হয় এটা সারাবিশ্বে জঙ্গিদের একাকি হামলার যে নতুন ট্রেন্ড সেরকমই৷ এরা সাধারণত নিজেরাই উদ্বুদ্ধ হয়৷''

নূর খান আরো বলেন, ‘‘তাদের কোনো লিংক থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে৷ সে যে উগ্রবাদী তাতে কেনো সন্দেহ নেই৷ এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সে আইএস না আল-কায়েদার ভাবধারার অনুসারী৷ সেটা আসলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই জানা যাবে৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এই ধরনের ছোট ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলার কারণ হলো, তারা মনে করে এতে হামলা সহজ হয় এবং সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে৷ আর প্রকাশ্যে হামলার কারণ হল, তারা হামলা করে জানান দিতে চায় এবং ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়৷ তারা যে কোনো পরিবেশে যেকোনো অবস্থায় হামলা করতে পারে৷''

Sheikh Hasina
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ফাইল ছবিছবি: Reuters

হামলাকারী ফয়জুলের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের কলিয়ারকাপন গ্রামে৷ ফয়জুল স্থানীয় ধল মাদ্রাসায় প্রথমে শিক্ষাজীবন শুরু করে৷ পরে সে সিলেটের বিভিন্ন মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে৷ তিন ভাইয়ের মধ্যে ফয়জুল ও তার এক ভাই সিলেটে থাকে৷ অন্য ভাই প্রবাসী৷ তার বাবা এলাকায় মাওলানা হিসেবে পরিচিত৷

পুলিশ সিলেটে তাদের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তারা মামাসহ তিনজনকে আটক করেছে৷ তার মামা ফজলুল রহমান সুনামগঞ্জ জেলা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বলে গেছে৷

এদিকে, এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা এই ঘটনাগুলো ঘটায়, তারা ‘ধর্মান্ধ’ এবং ভুল ধারণার বশবর্তী৷ 

রবিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘যারা এই ঘটনাগুলো ঘটায়, তারা মনে করে, একটা মানুষ খুন করলেই বুঝি তারা বেহেশতে চলে যাবে৷’’ 

তিনি সন্তানদের অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে দূরে রেখে সচেতন করে গড়ে তুলতে অভিভাবক-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান৷

এদিকে, ঘটনায় ধৃত ফয়জুলসহ অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে শাবি প্রশাসন৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য