1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘হর্ণ অব আফ্রিকা'য় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা

১৪ জুলাই ২০১১

আফ্রিকার মানচিত্রটি খেয়াল করুন৷ দেখুন, ডানপাশটা দেখতে কেমন যেন একটু গরুর শিং'এর মতো মনে হচ্ছে৷ এটাকে বলা হয় ‘হর্ণ অব আফ্রিকা' অর্থাৎ আফ্রিকার শিং৷ বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র এই অঞ্চলটিতে এবার দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ৷

https://p.dw.com/p/11uQp
কেনিয়ায় দুর্ভিক্ষের চিহ্নছবি: Picture-Alliance/dpa

হর্ণ অব আফ্রিকায় রয়েছে চারটি দেশ - সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, জিবুতি ও ইরিত্রিয়া৷ এর মধ্যে ইথিওপিয়ায় গত আশির দশকের মাঝামাঝি এক দুর্ভিক্ষে মারা গিয়েছিল প্রায় দশ লক্ষ মানুষ৷ তবে জাতিসংঘের এই হিসেব ঠিক নয় বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ৷ তাদের মতে মৃতের সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি হবে৷ ইথিওপিয়া ছাড়াও ইরিত্রিয়াতেও ঐ দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছিল৷

Kenya: drought leaves dead and dying animals in northen Kenya, Afrika
পশুপাখিও ছাড় পাচ্ছে না দুর্ভিক্ষের কবল থেকেছবি: CC / Brendan Cox / Oxfam

এবার আবারও সেই পরিণতির আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ৷ সংস্থার মহাসচিব বান কি-মুন বলছেন, হর্ণ অব আফ্রিকার প্রায় এক কোটি বিশ লক্ষ মানুষের জন্য জরুরি খাদ্যের প্রয়োজন৷ এই বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য চলতি বছরের শেষ নাগাদ খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে বলে জানান তিনি৷ আর তা না হলে বহু মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন মহাসচিব বান কি-মুন৷

তবে সংস্থার এক ঊর্ধ্বতন অর্থনীতিবিদ শুকরি আহমেদ বলছেন, ইথিওপিয়ার মতো পরিস্থিতি হওয়ার সম্ভাবনা এবার কম৷ কেননা আন্তর্জাতিক বিশ্ব এবার বেশ সচেতন এবং দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাষ জানার ক্ষেত্রেও আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে৷ এছাড়া অক্টোবর থেকে যে বর্ষাকাল শুরু হচ্ছে সেসময় বীজ বোনার জন্য পর্যাপ্ত বীজ দরকার যেন তারা পরবর্তী বছরের জন্য খাবার নিশ্চিত করতে পারে৷

Äthiopien unterernährtes Kind mit Mutter
ইথিওপিয়ায় অভুক্ত মা-শিশুছবি: picture alliance/dpa

মূলত দুটি কারণে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷ এক, খরা এবং দুই, দ্বন্দ্ব৷ খরাটা চলছে পুরো অঞ্চল জুড়ে৷ আর দ্বন্দ্ব চলছে সোমালিয়ায়৷ সেখানে সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আল-শাবাব বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ চলছে৷ যে কারণে ভয়ে লোকজন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে৷ বেশিরভাগই যাচ্ছে কেনিয়ায়৷ আর কিছু লোক যাচ্ছে ইথিওপিয়ায়৷

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে কেনিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে প্রায় চার লক্ষ সোমালীয় শরণার্থী জড়ো হয়েছে৷ তাদের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন৷ সংস্থার প্রধান আন্টোনিও গুটেরেশ বলছেন, যেসব সোমালীয় শরণার্থী কেনিয়ার ক্যাম্পে রয়েছেন তারা গরিবের চেয়েও গরিব৷ এবং তারা বিশ্বের সবচেয়ে অসহায় মানুষ৷

Flüchtlingslaager Dadaab
দাদাব শরণার্থী শিবিরছবি: Picture-Alliance/dpa

এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থার প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন৷ পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, মোট ১৬০ কোটি ডলারের সহায়তা চাওয়া হয়েছে৷ তবে এখন পর্যন্ত মিলেছে মাত্র অর্ধেক৷

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক জোজেট শিরান হর্ণ অব আফ্রিকায় প্রকল্প চালুর জন্য ৪৭৭ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা চেয়েছেন৷

এদিকে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলছে, ঐ অঞ্চলের প্রায় পাঁচ লক্ষ শিশুর জীবন ঝুঁকির মুখে রয়েছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সোমালিয়ায় প্রতি ১১ জন শিশুর একজন তাদের প্রথম জন্মদিন পালনের আগেই মারা যায়৷ আর প্রতি সাতজনের একজন মারা যায় তাদের পঞ্চম জন্মদিন পালনের আগেই৷ সংস্থার একজন মুখপাত্র বলছেন হর্ণ অব আফ্রিকার দুটি দেশ জিবুতি ও ইথিওপিয়ার শিশুদের মধ্যে ইতিমধ্যে হাম ও কলেরা ছড়িয়ে পড়েছে৷ এছাড়া তিনি বলছেন, সোমালিয়া-কেনিয়া সীমান্তের শরণার্থী শিবিরে থাকা হাজার হাজার শিশুকে জরুরি ভিত্তিতে হাম ও পোলিও'র টিকা দিতে হবে৷

প্রতিবেদন: জাহিদুল হক

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক