1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হাসিনা, খালেদা ও এরশাদের রাজনৈতিক জীবন

সমীর কুমার দে, ঢাকা২৭ ডিসেম্বর ২০০৮

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঘুরে ফিরে আসছেন প্রধান দুই নেত্রীই৷ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া৷ আর এই রাজনীতিতে তৃতীয় ব্যক্তি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ৷ চলুন নজর দেয়া যাক তাদের জীবনের দিকে৷

https://p.dw.com/p/GNct
ছবি: AP

শেখ হাসিনা

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে শেখ হাসিনা৷ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার সময় দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছিলেন জার্মানীতে৷ এরপর বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের হাল ধরেন সাজেদা চৌধুরী, জোহরা তাজউদ্দিন, আবদুর রাজ্জাকসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা৷ জিয়াউর রহমানের শাসনামলে আওয়ামী লীগ যখন প্রায় ধ্বংসের মুখে তখন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতেই দলের সভানেত্রী করা হয়৷

Bangladesch Wahlen 2008
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাছবি: Mustafiz Mamun

১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন৷ হাল ধরেন দলের৷ আস্তে আস্তে দলকে সংগঠিত করতে থাকেন৷ স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন৷ সামরিক শাসক তাঁকে গৃহবন্দী করে৷ কিছুদিন পর মুক্তি পান৷ ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ ৮৬টি আসন পায়৷ বিরোধী নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেন শেখ হাসিনা৷ এরপর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে সঙ্গে নিয়ে এরশাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু করেন৷ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বরে আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন এরশাদ৷

১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ৮ দলীয় জোটের নির্বাচনে নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা৷ ৯৪টি আসন পায় আওয়ামী লীগ৷ সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেন৷ ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলন শুরু হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে৷ এক পর্যায়ে বিএনপি ক্ষমতা ছেড়ে নতুন নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়৷ ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৮টি আসন পায়৷ পরে আসম আবদুর রব ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর দু'টি আসন নিয়ে গঠন করেন সরকার৷ প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা৷ ৫ বছর দেশ শাসন করেন৷ ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৬২টি আসন পায়৷ আবারও সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেন শেখ হাসিনা৷ এরপর থেকে বিভিন্ন আন্দোলন ও সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি৷ আসন্ন সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাঐক্যজোট অংশ নিচ্ছে৷

খালেদা জিয়া

রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এক সময় ছিলেন অনেকটা নিভৃতে গৃহবধূ হিসেবে৷ ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে একদল বিপথগামী সেনা সদস্যদের হাতে নিহত হলেও রাজনীতিতে নামতে চাননি খালেদা জিয়া৷ ১৯৮২ সালে বিচারপতি সাত্তারের অনুরোধে বিএনপির সাধারণ সদস্য হন তিনি৷ পরের বছরই বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হন খালেদা জিয়া৷ ওই বছরের শেষের দিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন৷ ১৯৮৪ সালে তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সন হিসেবে দায়িত্ব নেন৷

Wahlkampagne in Bangladesch
বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াছবি: Mustafiz Mamun

ওই বছরই শুরু করেন এরশাদ বিরোধী আন্দোলন৷ কিছুদিনের জন্য সামরিক শাসক এরশাদ তাঁকে গৃহবন্দী করেন৷ পরে মুক্তিও পান৷ ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে আন্দোলন করতে থাকেন৷ তিনি ১৯৯০ সালে শেখ হাসিনার সঙ্গে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন৷ চূড়ান্ত বিজয়ও পান৷ ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দলীয় জোট ১৩৯টি আসন পায়৷ জামায়াতের ১৮টি আসন থাকায় তাদের সঙ্গে নিয়ে গঠন করেন সরকার৷ প্রধানমন্ত্রী হন বেগম খালেদা জিয়া৷

দীর্য় ৫ বছর দেশ চালানোর পর ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করেন৷ কিন্তু সবগুলো রাজনৈতিক দল তা বর্জন করে৷ অল্প দিন স্থায়ী ওই সংসদে প্রধানমন্ত্রীও হন তিনি৷ এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তীব্র আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নতুন নির্বাচন দেন৷ ওই নির্বাচনে বিএনপি ১১৬টি আসন পায়৷ বিরোধী দলীয় নেত্রী হন খালেদা জিয়া৷

২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে জোট করে ২১৭টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে বিএনপি৷ প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া৷ ৫ বছর দেশ শাসনের পর ২০০৬ সালের অক্টোবরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেন৷ আসন্ন নির্বাচনে চারদলীয় জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন খালেদা জিয়া৷

হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ

১৯৯১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেননি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ৷ যুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানে ছিলেন৷ পরে দেশে ফেরেন৷ '৭১ থেকে '৮০ সাল পর্যন্ত অনেকটা চুপচাপই ছিলেন৷ জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর এরশাদকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান করেন৷ এর কিছুদিনের মাথায় জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করেন এরশাদকে৷ ১৯৮১ সালে বিপথগামী সেনা সদস্যদের জিয়াউর রহমানকে হত্যা করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন এরশাদ, এরকম অভিযোগের কোনপ্রমাণ পাওয়া যায়নি৷

Hossain Mohammad Ershad, Politiker, Bangladesch
জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদছবি: Harun Ur Rashid Swapan

জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর এরশাদ বিচারপতি সাত্তারকে অনেকটা বাধ্য করেন ক্ষমতা ছাড়তে৷ একপর্যায়ে '৮২ সালে এরশাদের কাছে ক্ষমতা দিয়ে বিদায় নেন বিচারপতি সাত্তার৷ সামরিক আইন জারি করে রাষ্ট্রপতি ও সামরিক আইন প্রশাসক হন তিনি৷

১৯৮৪ সালে ১৮ দফা ঘোষণা করে বাস্তবায়ন পরিষদ তৈরী করেন৷ ওই বছরই সিনিয়র রাজনীতিকদের নিয়ে গঠন করেন জনদল৷ কিছুদিন পর জনদল পরিবর্তন করে তৈরী করেন বর্তমানের জাতীয় পার্টি৷ ১৯৮৬ সালের পাতানো নির্বাচনে জাতীয় পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়৷ বিরোধী দল হয় আওয়ামী লীগ৷ '৮৮ সালে ওই সংসদ ভেঙে দিয়ে আবারও নির্বাচন দেন এরশাদ৷ কোন দল ওই নির্বাচনে অংশ না নিলেও অনুগত বিরোধী দল বানান আ স ম আবদুর রবকে৷ এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন শুরু করে এরশাদের বিরুদ্ধে৷

৯ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছেড়ে দেন এরশাদ৷ ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জিতে বিএনপি ক্ষমতা নেওয়ার পর গ্রেফতার করে এরশাদকে৷ দীর্ঘ সময় জেল খেটে বের হন৷ দুর্নীতির অভিযোগে কয়েকটি মামলায় তাঁর সাজাও হয়েছে৷ আরো কয়েকটি মামলা বিচারাধীন৷ এরশাদের জাতীয় পার্টি পরপর তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বেশ কয়েকটি করে আসনও পেয়েছে৷ ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ৷ এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের হয়ে লড়ছে জাতীয় পার্টি৷