1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হিংসার গুজবে দিল্লি বেহাল

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
২ মার্চ ২০২০

হিংসার গুজবে রবিবার দিনভর ত্রস্ত থাকল দিল্লি। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলল গুজব। সাম্প্রতিক হিংসার পর দিল্লির এই চেহারা একেবারেই অচেনা।

https://p.dw.com/p/3YiKb
ছবি: DW/S. Ghosh

রবিবার সন্ধ্যার পর থেকেই দিল্লি পুরো গুজব-নগরী। সংঘর্ষের গুজব, হাঙ্গামার গুজব, হিংসার গুজব। সামাজিক মাধ্যেমের কল্যাণে সেই গুজব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র।  সেই গুজবের এমনই তেজ যে, তা অনায়াসে গ্রাস করে ফেলল পুরো দিল্লিকে। সন্ধ্যা থেকে রাত। গুজবও বাড়তে থাকল। পুরো দিল্লিতে তখন আতঙ্ক। এই বুঝি প্রতিবেশী এলাকায় দাঙ্গা শুরু হল! তা এ বার ছড়িয়ে পড়বে নিজের এলাকায়। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ সহকর্মীর ফোন এল, ''বদরপুরে কিছু হয়েছে কি? খোঁজ নাও।'' কেন? সহকর্মীর জবাব, ''অটো করে আসছিলাম, অটো চালকের বাড়ি থেকে ফোন এল। বদরপুরে গণ্ডগোল হচ্ছে। রাতে বাড়ি আসার দরকার নেই।'' ফোন শুরু হল। পুলিশ, রাজনৈতিক নেতা, পরিচিত জনদের কছে। কিন্তু সব জায়গা থেকে একই জবাব, ''শুধুই গুজব। কোনও ঘটনা ঘটেনি।'' ভুল বললাম, একটাই ঘটনা ঘটেছে, আতঙ্ক ছড়িয়ে গিয়েছে সর্বত্র।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। চিত্তরঞ্জন পার্কে একের পর এক পুলিশের গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে ছুটছে। গাড়িগুলি যাচ্ছে কালকাজি ও গোবিন্দপুরীর দিকে। ইতিমধ্যে খবর এসেছে, বেশ কিছু মেট্রো রেলের স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে সেই খবর দ্রুত ছড়াল। কী হল? পুলিশ সূত্র জানাল, দিল্লি জুড়ে পুলিশ বাহিনী টহল দিচ্ছে। গুজবে কান না দেওয়ার জন্য মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে। লোককে ভরসা দেওয়ার জন্য পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ মহল্লার পর মহল্লা। চিত্তরঞ্জন পার্কের লাগোয়া এলাকা ডবল স্টোরিতে গুজব শুনে লাঠি হাতে লোকে রাস্তায় নেমে পড়েছিলেন। পুলিশ গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের সরিয়ে দিয়ে বলে, ''কোথাও কিছু হয়নি। বাড়ি যান। আমরা রাস্তায় আছি।''

রাত আটটা। সহকর্মী সম্যন্তক ঘোষ থাকেন সাকেতে। তাঁর বাড়িতে যিনি কাজ করেন, তিনি থাকেন সৈনিক কলোনিতে। বারবার সেই মহিলা ফোন করছেন, ''শুনছি, খানপুরায় হিংসা হচ্ছে। আমরা বাড়ির দরজা, জানালা বন্ধ করে বসে আছি।'' ফোনের মধ্যেই বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তিনি। আর অনুরোধ করছেন, ''আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান।'' রাত দুটো পর্যন্ত ফোন করে গিয়েছেন তিনি। আরেক সহকর্মী থাকেন দ্বারকাতে। তাঁর এক আত্মীয় গিয়েছিলেন সেলুনে চুল কাটাতে। এমন সময় সেখানে কিছু লোক এসে খবর দেয়, দাঙ্গাকারিরা সদলবলে আসছে।  মুহূর্তে বাজার বন্ধ করে যে যে দিকে পারেন পালালেন। দেখা গেল, সবই ভুয়ো আতঙ্ক। আরেক সহকর্মী জাভেদ আখতারের অভিজ্ঞতা আরও ভয়াবহ।  দক্ষিণ দিল্লিতে খাদাড় বলে একটি জায়গা আছে। গরিব এলাকা। শীলা দীক্ষিতের সময়, দিল্লির অনেক বস্তির লোকেদের সেখানে জমি দেওয়া হয়েছিল। সেখানে একজন চোর ধরা পড়ার খবর আসে। স্থানীয় লোক তাকে ধরে পেটাতে শুরু করে। অমানবিক কাজ, কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার এই ঘটনা ভারতে হামেশাই ঘটে। সেই পিটুনি ঘিরেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পৌঁছে যায় শাহিনবাগে। তবে উত্তেজনা ছড়ানোর আগেই পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বাটালা হাউসের জাকির নগরের অবস্থা আরও খারাপ। রবিবার সেখানে বাজার বসে। গুজবের চোটে মুহূর্তে বাজার ফাঁকা। সেই দোড়াদৌড়ির ফলে একজন নালায় পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যান। পরে তিনি মারা গিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যম 'আজ তক' জানাচ্ছে।

উত্তর পূর্ব দিল্লিতে দিন পাঁচেক ধরে যে ভয়াবহ হিংসা হয়েছে তার ছবি সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে সকলে দেখে ফেলেছেন। সেই আতঙ্ক এখনও গ্রাস করে রেখেছ দিল্লিবাসীকে। আতঙ্ক থেকেই ছড়াচ্ছে উত্তেজনা। ফলে গুজব আসতেই লোকে তা বিশ্বাস করে ভয়ে কাঁপছেন। তার ওপর লোকে এটাও জেনেছেন, কলকাতায় অমিত শাহের সভায় যাওয়ার পথে বিজেপি সমর্থকরা আবার স্লোগান দিয়েছে, 'দেশ কা গদ্দারো কো, গোলি মারো শালো কো।' লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, ''এটা কী হচ্ছে? পুরো হিন্দুস্তান তোমাদের শালা নয়। তোমরা কোন জামাইবাবু এসেছ? পুরো হিন্দুস্তানকে গুলি মারার কথা বলছ? হিন্দুস্তান গুলির জবাবে ভোট দেবে। এখানে রাম ও রহিম সকলের বাঁচার অধিকার আছে।''

রাত দশটা। এমনিতে খুবই শান্ত এলাকা চিত্তরঞ্জন পার্ক পুলিশে পুলিশে ছয়ালাপ। মোটর সাইকেল দেখলেই তল্লাশি হচ্ছে। রেড লাইটে গাড়ি আটকে পড়লেও পুলিশ বলছে, ''চলে যান। দাঁড়াবেন না।'' প্রশ্ন করে জানা গেল, সব শান্ত। কিন্তু গুজব এমনই প্রবল যে, লোকে ভয়ে আছেন। আর এই ফুলকি থেকে শুরু হয়ে যেতে পারে গণ্ডগোল। তবে এ দিন পুলিশের ভূমিকা ছিল খুবই সক্রিয়া। 

সোমবার সকাল। দিল্লি আবার স্বাভাবিক। আপাত শান্ত। তবে অশান্ত সংসদ। দিল্লির হিংসা নিয়ে বিরোধীদের হই হল্লায় লোকসভা ও রাজ্যসভা তিন ঘণ্টার জন্য মুলতুবি হল। রাহুল গান্ধী সহ কংগ্রেসের সাংসদরা সংসদ ভবন চত্বরে অমিত শাহের ইস্তফার দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলেন। তৃণমূলের সাংসদরা চোখে কালো ফেট্টি বেঁধে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলেন। অভিযোগ, ''সরকার অন্ধ। হিংসা থামাতে ব্যর্থ। তাই এই প্রতিবাদ।''