1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আরএসএস-এর অনুষ্ঠানে প্রণব মুখোপাধ্যায়?

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২ জুন ২০১৮

নাগপুরে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস-এর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের যোগ দেওয়ার খবরে কংগ্রেসের ভেতরে ও বাইরে শুরু হয়েছে গুঞ্জন৷ দলের এত বড় মাপের নেতা আরএসএস-এর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি?

https://p.dw.com/p/2ynuE
ছবি: picture-alliance/dpa

আগামী ৭ই জুন নাগপুরেহিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএস-এর সদর দপ্তরে নতুন প্রচারকদের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে উপস্থিত থাকছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি তথা কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়৷ এ যে দেখি জলে ভাসে শিলা! ব্যাপারটা অনেকটা সেই রকম৷ রাষ্ট্রপতি পদে না থাকলেও প্রণব মুখোপাধ্যায় গত ৫০ বছর ধরে তাঁর দল কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার মতাদর্শকে লালন পালন করে এসেছেন, নিজের সন্তানের মতোই৷ অনেক জলঝড় সামলাতে হয়েছে তাঁকে এই কাজে৷ আরএসএস-এর মতো সংঘ পরিবারের কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের থেকে শত হাত দূরে থেকেছেন৷ হিন্দু মৌলবাদীদের সন্ত্রাসী বলতেও বাকি রাখেননি৷ ২০১০ সালে প্রণববাবুই সর্বভারতীয় কংগ্রেস অধিবেশনে সংঘ পরিবারের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের যোগ আছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখতে বলেছিলেন ইউপিএ সরকারকে৷ কী এমন হলো যে ৮২ বছরে এসে তিনি তাঁর মতাদর্শ পালটাবেন?

‘প্রণববাবু এখন কংগ্রেসের লোক নন’

এই নিয়ে অবশ্য নানা তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টা করা হচ্ছে কংগ্রেস শিবিরের ভেতরে ও বাইরে৷ কংগ্রেসের মধ্যেই এই নিয়ে বিভাজন স্পষ্ট৷ যদিও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব এখনও পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি৷ তবে কংগ্রেসের কিছু নেতা বলছেন, সংঘ পরিবারের অনুষ্ঠানে যোগ দিলেই প্রণববাবুর মানসিকতা বদলে গেছে, এ কথা মনে করার কারণ নেই৷ রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন তিনি দলমত নির্বিশেষে সকলের সঙ্গেই সুসস্পর্ক বজায় রেখেছিলেন৷ আরএসএস-এর প্রধান মোহন ভাগবত বেশ কয়েকবার রাষ্ট্রপতি প্রণববাবুর সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন৷ রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হবার পরেও ভাগবত কয়েকবার তাঁর বাসভবনে গিয়েছিলেন৷ একটা মসৃণ সম্পর্ক বজায় ছিল উভয় তরফে৷ যদিও রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসর নেবার পর কংগ্রেস নেতাদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো কমে গিয়েছিল৷ কেন কমে গিয়েছিল সেটাও একটা প্রশ্ন৷

পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরিকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, ‘‘প্রণববাবু দলের প্রতিনিধি হয়ে বা রাষ্ট্রপতি হয়ে যাচ্ছেন না৷ যাচ্ছেন এক বিশিষ্ট হিসেবে৷ ব্যক্তি হিসেবে তিনি কোথায় যাবেন না যাবেন, সেটার ব্যক্তিগত ব্যাপার৷ তবে প্রণববাবু সারা জীবন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বলে এসেছেন৷ সাম্প্রদায়িক শক্তি হিসেবে বিজেপি এবং সংঘপরিবারের সমালোচনা করে এসেছেন৷ এখন সেখানে তিনি কী বলবেন না বলবেন সেটা জানার আগে কি করে বলবো? প্রণববাবু এখন কংগ্রেসের লোক নন৷ আগে মন্ত্রী ছিলেন, রাষ্ট্রপতি ছিলেন৷ এখন একজন ব্যক্তিবিশেষ৷ এখন যদি তাঁর মতাদর্শ পালটান সেটা তাঁর ব্যাপার৷''

প্রবীণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ট বন্ধু ড. অমল মুখোপাধ্যায়ের কাছে এর তাত্পর্য কী জানতে চাইলে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কেউ কেউ হয়ত এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন৷ প্রদেশ কংগ্রেসের কোনো কোনো নেতারাও প্রশ্ন তুলেছেন৷ প্রণব আমার ঘনিষ্ট বন্ধু৷ সংবাদপত্রে খবরটা পড়ে আমি প্রণবের সঙ্গে যোগাযোগ করি৷ ব্যাপারটা কি জানতে চাই৷ উত্তরে উনি আমায় বললেন, রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সব দল এবং সংগঠনের প্রতি নিরপেক্ষ ছিলেন উনি৷ সে সময় আরএসএস তাঁকে তাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল৷ পদ থেকে সরে আসার পর, তাই সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন৷''

‘যাঁরা এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, প্রণব তাঁদের একটু অপেক্ষা করতে বলেছেন’

ড. মুখোপাধ্যায় আরো বলেন, ‘‘যাঁরা এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, প্রণব তাঁদের একটু অপেক্ষা করতে বলেছেন৷ আরএসএস-এর অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি কী বলেন, সেটা যেন তাঁরা লক্ষ্য করেন৷ তাহলেই তাঁরা বুঝবেন যে তিনি মূল মতাদর্শ থেকে  সরে আসেননি৷ উদাহরণ হিসেবে প্রণববাবু ১৯৬২ সালে আরএসএস-এর সভায় নেহেরুর যোগদানের কথা উল্লেখ করেন৷ কাজেই আরএসএস-এর অনুষ্ঠানে গেছেন বলেই তিনি বিজেপি হয়ে যাননি৷'' এ কথা প্রণববাবু স্বয়ং জানিয়েছেন তাঁর বন্ধু ড. অমল মুখোপাধ্যায়কে৷

অবশ্য কংগ্রেস নেতা বীরাপ্পা মইলির মতে, কংগ্রেসের মতাদর্শের প্রতি বিশ্বস্ত হলে আরএসএস-এর অনুষ্ঠানে তাঁর যাওয়া অনুচিত৷ অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতা সলমন খুরশীদ মনে করেন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির ওপর দলের আস্থা রাখা উচিত৷ ভারতের আদর্শের প্রতি অনুগত তিনি৷ দলের বিজ্ঞ নেতা তিনি৷ তাই তাঁকে রাষ্ট্রপতি পদে বসানো হয়েছিল৷

বিজেপি নেতা সুব্রামনিয়াম স্বামী বলেন, মনে রাখতে হবে, ইন্দিরা গান্ধীও ১৯৭৭ সালে আরএসএস আয়োজিত বিবেকানন্দ শৈল স্মারক সৌধের আবরণ উন্মোচন করেছিলেন৷ সেই প্রসঙ্গে আরএসএস-এর প্রশংসাও করেছিলেন৷ প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু আরএসএসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন৷ অতীতে মহাত্মা গান্ধীসহ একাধিক ব্যক্তিত্ব আরএসএস অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন৷ যেমন সর্বোদয় নেতা প্রভাকর রাও, লোকমান্য জয়প্রকাশ নারায়ণ, মহাকাশ বিজ্ঞনী কস্তুরি রঙ্গন প্রমুখ৷

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিতিন গডকড়ির মন্তব্য, আরএসএস তো আর নিষিদ্ধ সংগঠন নয় বা পাকিস্তানি সংগঠন নয়৷ তাহলে গেলে সমস্যা কোথায়?

পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, একটি স্বীকৃত সংগঠনের অনুষ্ঠানে এক সম্ভ্রান্ত নাগরিক হিসেবে তিনি যাবেন, সেখানে ভাষণ দেবেন...গণতন্ত্রের তো এটাই দস্তুর৷ তাঁর গভীর ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি প্রশ্নাতীত৷ আরএসএস-এর অনুষ্ঠানে তিনি কী বলবেন, সেটা পরের কথা৷ বহুত্ববাদী ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বললে সেটা সংঘ পরিবার মানবে কিনা, সেটাও পরের কথা৷ কিন্তু সংঘবাদীদের ধর্মীয় গোঁড়ামি বা মতাদর্শের ভুলভ্রান্তি কোথায় – সংঘের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেটা তিনি বলতেই পারেন৷ তাতে বাধা কোথায়? প্রথম ইউপিএ সরকারে কংগ্রেসের সবথেকে যোগ্য নেতা হিসেবে প্রণববাবুরই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু তাঁকে পাশ কাটিয়ে সাবেক কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী বেছে নিয়েছিলেন মনমোহন সিংকে৷ অনেকের অনুমান, এতে প্রণববাবুর মনে নাকি একটা চাপা অভিমান রয়ে গেছে৷

বন্ধু, আরএসএস-এর অনুষ্ঠানে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের যাওয়া কি ঠিক হবে? জানান মন্তব্যের ঘরে৷