1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

৪০ হাজার টন সয়াবিন তেল মজুদ করে সংকট সৃষ্টি!

৯ মে ২০২২

দেশে যথেষ্ট সয়াবিন তেল থাকা সত্ত্বেও ঈদের আগে-পরে তা দোকানে আসেনি৷ এতে ১০ দিনে ৪০ হাজার টনের মতো সয়াবিন তেল মজুদ হয়েছে বলে ধারণা করছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর৷ দেশের বিভিন্ন গুদামে অভিযানের পর এই দাবি তাদের৷

https://p.dw.com/p/4B0z5
দোকানিরা আগে কেনা তেল বাড়তি দামে বিক্রি করছে কি না, তা দেখতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কারওয়ান বাজারের অভিযানে৷ছবি: bdnews24.com

ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের খবর অনুযায়ী, রোববার সারাদেশে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন দোকান-গুদাম থেকে মজুদ করা সয়াবিন তেল উদ্ধারের পর সার্বিক চিত্র সম্পর্কে এমন একটি ধারণা দেন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা৷

তারা বলছেন, একদিকে মিল থেকে তেলের সরবরাহ ও অন্যদিকে ভোক্তারা তেলের নাগাল না পাওয়া সাপ্লাই চেইনের অন্তত ১০ দিনের তেল মজুদ হয়েছে৷ দৈনিক ৫ হাজার টন চাহিদা বিবেচনায় প্রায় ৪০ হাজার টন তেল মজুদ করা হতে পরে৷

বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে বেশ কয়েকবার মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্ত হয়েছিলেন ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী মিল মালিকরা৷ তবে নতুন করে তা বাড়াতে রাজি হয়নি সরকার৷

উল্টো তেলের উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করে দাম কিছুটা কমিয়ে আানার চেষ্টাও সরকারের পক্ষ থেকে করা হয়েছে৷ পাশাপাশি রোজা চলাকালীন সময়ে দাম না বাড়ালেও ঈদের পর বাজার পর্যালোচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে৷

এই মাসের শুরুতে ঈদের আগে খুচরা বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় দেশের রান্নার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সয়াবিন তেল৷ এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সায় নিয়ে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪০ টাকা বাড়িয়ে ২০০ টাকার কাছাকাছি নির্ধারণ করেন মিল মালিকরা৷

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘যেই তেল লিটার ১৬০ টাকা বিক্রি করার কথা, এখন ভোক্তাদের জিম্মি করে, বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা সেটা ৪০ টাকা বেশি ‍মুনাফা করবেন৷ এতে করে বাজার থেকে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা মজুদদারদের পকেটে চলে যাবে বলে প্রাথমিক হিসাবে দেখা যাচ্ছে৷”

তবে এটা কোনো প্রামাণ্য হিসাব নয় বলে মানলেও তিনি বলেন, ‘‘তবে এধরনের ঘটনা যে ঘটছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷”

Bangladesch | 40.000 Tonnen Sojabohnenöl an die Händler geliefert
ছবি: bdnews24.com

রোববার চট্টগ্রামের ষোলশহরে এক দোকানের গুদামে এক হাজার লিটার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল খুঁজে পায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর৷ আরও কয়েকটি স্থানে ঘটেছে এমন উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে৷

সয়াবিন তেলের দাম  বেড়ে লিটার ২০০ টাকার কাছাকাছি গেছে ঈদের পর৷ দোকানিরা আগে কেনা তেল বাড়তি দামে বিক্রি করছে কি না, তা দেখতে রোববার কারওয়ান বাজারে অভিযানে যায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা৷

ভোক্তা অধিকারের একজন কর্মকর্তা জানান, দেশে প্রতিদিন গড়ে চার হাজার টন থেকে পাঁচ হাজার টন সয়াবিন ও পাম তেলের চাহিদা রয়েছে এবং তা মিল পর্যায় থেকে পূরণও করা হয়৷ ঈদের সময় যখন বাজারে তেলের সংকট তখনও মিল থেকে তেল সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা হয়েছিল৷ ২৮ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল ঈদের ছুটি শুরু হয়ে যাওয়ার সময়ও বিভিন্ন কোম্পানির মিল থেকে তেল সরবরাহ করার তথ্য পাওয়া গেছে৷

অধিদপ্তরের মনিটরিং সেল থেকে জানান হয়, ঈদের ছুটি শুরুর পরও ২৮ ও ২৯ এপ্রিল ৭৮৮ টন সয়াবিন তেল ও ১৬৪১ টন পাম তেল সরবরাহ করেছে সিটি গ্রুপের (তীর ব্র্যান্ড) মিল৷ এমনকি ঈদের বন্ধের সময়ও ৩০ এপ্রিল থেকে ৪ মে এই পাঁচ দিনে ৯৪৩ টন সয়াবিন ও ৩৯২ টন পাম তেল বিপণন করা হয়েছে৷ একইভাবে মেঘনা গ্রুপের মিল থেকে ৭ মে তারিখে ২৫৪ টন সয়াবিন তেল সরবরাহ করা হয়েছে৷

মজুদদারদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়ে সফিকুজ্জামান বলেন, ‘‘আমরা খুব সহজেই এমনটি হতে দেব না৷ বাজার বাজারের গতিতে চলবে৷ পাশাপাশি কেউ যাতে পুরোনো দামের তেল নিয়ে কারসাজি করে অতি মুনাফা করতে না পারে তা ধরতে নানা ধরনের মেকানিজম করছি৷’’

আইন অনুযায়ী একজন ব্যবসায়ী কতটুকু তেল বা অন্যান্য পণ্য মজুদ করতে পারবেন- এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘এটা কোনো সংখ্যার হিসাব নয়৷ কোন পরিস্থিতিতে কার কাছে পণ্য রয়েছে৷ সেই পণ্য সে বিক্রি না করে ধরে রেখেছে কিনা? বিক্রি করার সময় পাকা রশিদ দিচ্ছে কিনা? এসব কিছু দেখেই আমরা অনিয়ম চিহ্নিত করব৷’’

রোববার ঢাকার কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুরসহ বেশ কয়েকটি বাজারে অভিযান শেষে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকার জেলা কার্যালয়ের প্রধান আব্দুল জব্বার মন্ডল জানান, প্রতিটি দোকানেই নতুন দরের সয়াবিন তেলের বোতল শোভা পাচ্ছে৷ সয়াবিন তেলের সংকট কেটে গেছে৷

‘‘একটি দোকানে আগের দামের তেল নতুন দামে বিক্রি করতে দেখে আমরা জরিমানা করেছি৷’’

সকালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে ভার্চুয়াল বৈঠকে সংস্থাটির ৬৪ জেলা ও বিভাগীয় শহরের প্রতিনিধিদের যুক্ত করা হয়৷ সেই বৈঠক থেকে প্রতিটি জেলায় তালিকাভূক্ত ডিলার ও পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে থাকা মজুদ ও কয়েক দিনের বিক্রির তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়৷

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, ‘‘আমরা মেঘনা গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল কোম্পানি, গ্লোব অয়েল ও বসুন্ধরা গ্রুপের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে মাঠের চিত্র মিলিয়ে দেখবো৷ যেখানেই তথ্যের গরমিল দেখা যাবে সেখানেই অভিযান চালানো হবে৷ ইতোমধ্যেই কয়েকটি অভিযানে বেশ কিছু পাইকারি বিক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতার অসাধু ব্যবসার বিয়ষটি চিহ্নিত হয়েছে৷’’

এছাড়াও চট্টগ্রামের তিনটি স্থানে গত দুদিনে ১৮ হাজার লিটারের বেশি সয়াবিন তেল পাওয়া গেছে৷

বাজারে ভোজ্য তেলের সংকট না কাটলেও চট্টগ্রামের পাহাড়তলি বাজারে একটি দোকানে ‘গোপনে মজুদ করে রাখা' ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেলের সন্ধান পেয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর৷

সোমবার দুপুরে নগরীর পাহাড়তলি বাজারে অভিযান চালিয়ে বিল্লি লেইনের সিরাজ সওদাগরের দোকানে ওই তেলের সন্ধান মেলে৷ চট্টগ্রামের তিনটি স্থানে গত দুদিনে ১৮ হাজার লিটারের বেশি সয়াবিন তেল পাওয়া গেল, যা দাম বাড়ানোর জন্য অবৈধভাবে মজুদ করে রাখা হয়েছিল বলে অধিদপ্তরের ভাষ্য৷

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফয়েজ উল্যাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘সিরাজ সওদাগরের দোকানে আমরা ১৫ হাজার লিটার সয়াবিন তেল পেয়েছি৷ আমাদের অভিযান এখনো চলছে৷ বিস্তারিত পরে জানাতে পারব৷’’

এর আগে রোববার বিকালে নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকার কর্ণফুলী মার্কেটের খাজা স্টোরের নিচে গুদামে রাখা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোট এক হাজার ৫০ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের সন্ধান পায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর৷

আর শনিবার রাতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় এক মুদি দোকানির বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুই হাজার ৩২৮ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করে স্থানীয় প্রশাসন৷

এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)