যেমন পাঠক পিয়াল মনে করেন, বিপথে মানুষ বহুপথেই যেতে পারে৷তাই বলে যে, ‘‘পিস টিভিতে জাকির নায়েকের বক্তব্য শুনে কেউ জঙ্গি হওয়ায় উদ্বুদ্ধ হতে পারে৷'' পিস টিভি বন্ধ করে দেওয়াটা খুবই হাস্যকর বলে মনে করেন পাঠক সমির পিয়াল৷ পিয়ালের প্রশ্ন, অনেক ধার্মিক বা রুচিসম্পন্ন শিক্ষিত মুসলমান পিস চ্যানেল দেখেন, তাহলে কি তারাও জঙ্গি ?
আর এমএ জলিল আহমেদের বক্তব্য এরকম, ‘‘যখন পিস টিভি ছিল না, তখন কি জঙ্গি, সন্ত্রাসী পৃথিবীতে ছিল না? মেনে নিলাম, জাকির নায়েকের বক্তব্য শুনে কেউ নাকি জঙ্গি কাজে অনুপ্রাণিত হয়েছে৷ কিন্তু যখন জাকির নায়েক নামের কেউ পৃথিবীতে ছিল না, তখন কার কথায় সন্ত্রাসী হামলা চলত? গুজরাট দাঙ্গা, বাবরি মসজিদ ধ্বংস, শিখ নিধনে কার যোগসুত্র ছিল? গুজরাট দাঙ্গার মূলহোতা এখন প্রধানমন্ত্রী, তাকে তো ভারতে আগে নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল, তার বদলে তাকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছে৷''
‘‘স্টার প্লাস ভারতীয় চ্যানেল যে মানসিক সন্ত্রাস আর যৌন সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে সেটার ব্যাপারে পদক্ষেপ কি?'' এই প্রশ্ন মোবাস্সর হোসেনের৷
-
ধর্মের রাজনীতি ও তরুণ প্রজন্ম
পিয়ান মুগ্ধ নবীর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের শিক্ষার্থী পিয়ান মুগ্ধ নবীর কাছে ধর্ম বিষয়টা পুরোপুরি ব্যক্তিগত হলেও রাজনীতি ব্যক্তিগত বিষয় নয়৷ তবে ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে তিনি কখনোই সমর্থন করেন না৷
-
ধর্মের রাজনীতি ও তরুণ প্রজন্ম
শিবরাজ চৌধুরী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী শিবরাজ চৌধুরী৷ তার মতে, ধর্ম এবং রাজনীতি কখনোই এক হতে পারে না৷ ধর্মের মূল বিষয় মনুষত্ব বা মানুষের মধ্যকার শুভবোধ৷ তবে ধর্মের নামে যদি কখনো মৌলবাদ কিংবা চরমপন্থা চলে আসে, সেটা কখনোই গ্রহনযোগ্য নয়৷
-
ধর্মের রাজনীতি ও তরুণ প্রজন্ম
শিহাব সরকার
ঢাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শিহাব সরকার৷ তার মতে, ধর্ম ধর্মের জায়গায় আর রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়৷ বলা বাহুল্য, ধর্মের নামে রাজনীতি তিনিও সমর্থন করেন না৷
-
ধর্মের রাজনীতি ও তরুণ প্রজন্ম
আসিফ হামিদী
আসিফ হামিদীও মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন৷ তিনিও মনে করেন ধর্ম এবং রাজনীতি কখনোই এক হতে পারে না৷ তাই ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ঘোর বিরোধী তিনি৷
-
ধর্মের রাজনীতি ও তরুণ প্রজন্ম
মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর
ঢাকার একটি মাদ্রাসা থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করেছেন মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর৷ তাঁর মতেও রাজনীতি ধর্মভিত্তিক হতে পারে না৷ তবে আল্লাহ এবং রাসুলের কিংবা ইসলামের উপর কোনোরকম আঘাত আসলে তার বিরোধীতা করা সব মুসলমানের নৈতিক দ্বায়িত্ব বলে মনে করেন তিনি৷
-
ধর্মের রাজনীতি ও তরুণ প্রজন্ম
সাদমান আহমেদ সুজাত
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদমান আহমেদ সুজাত৷ তাঁরও ঐ এক কথা৷ ‘‘ধর্ম এবং রাজনীতি কখনো এক হতে পারে না৷’’ তিনি জানান, ‘‘ধর্ম আমরা সাধারণত জন্মগতভাবে পাই, কিন্তু রাজনীতিকে আমরা অনুসরণ করি৷’’
-
ধর্মের রাজনীতি ও তরুণ প্রজন্ম
সাজ্জাদ হোসেন শিশির
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন শিশির৷ তাঁর মতে, রাজনীতি সবসময়ই ধর্ম নিরপেক্ষ হওয়া উচিত৷ তাঁর বিশ্বাস, ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেললে তার ফল কখনো ভালো হয় না৷
-
ধর্মের রাজনীতি ও তরুণ প্রজন্ম
দাউদুজ্জামান তারেক
ঢাকার আরেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দাউদুজ্জামান তারেক মনে করেন, রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের কখনো মিল হতে পারে না৷ কারণ বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা একই রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসরণও করতে পারেন৷
লেখক: মুস্তাফিজ মামুন
পাঠক সাদেক হোসেন কিন্তু এত সহজেই সবকিছু মেনে নিতে রাজি নন, তাঁর চাই প্রমাণ৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘শক্তি দিয়ে সবকিছু করলেই হয়না, সরকার কেন পিস টিভি বন্ধ করেছে এবং জঙ্গি সংক্রান্ত কি তথ্য পেয়েছে তা জনগণের সামনে ব্যাখা করুক৷''
মোঃ হাসানুল হক হাসান নিশ্চিত হয়েই বলছেন যে, ‘‘ ড: জাকির নায়েকের কোনো বক্তব্যে উনি হিংসা বিদ্বেষ বা জঙ্গি উস্কানি দেননি৷ এ ব্যাপারে কোনো তথ্য প্রমাণ আজ পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারেনি৷ যেটা দেখাচ্ছে তা হলো একটি বক্তব্যের মাঝখানের একটি অংশ , যেটি তিনি একটি লজিকের অ্যান্টি লজিক হিসেবে বলেছেন৷''
পিস টিভি বন্ধ না করে স্টার জলসা, স্টার প্লাস, জি - বাংলা টিভি চ্যানেলগুলো বন্ধ করা উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন মোহাম্মদ আল- আমিন৷
অন্যদিকে পাঠক তৌহিদুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে চ্যালেঞ্জ করে বলছেন, ‘‘পিস টিভির এমন একটা বক্তব্য, অনুষ্ঠান বা ভিডিও লিংক দেখান বা প্রকাশ করুন-যা কিনা জঙ্গি তৈরিতে সহায়তা করে৷'' এই বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করেছেন পাঠক মনিরও৷
ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু ইসরাফিলও পিস টিভি বন্ধ না করার পক্ষেই মত দিয়েছেন৷ তিনি মনে করেন, ‘‘একমাত্র ইসলামকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারলেই জঙ্গিবাদ বিলুপ্ত হবে৷'' তিনি আরো বলছেন, ইসলামকে সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য পিস টিভির মতো একটি চ্যানেলের প্রয়োজন আছে৷
আর বন্ধু ওমর ফারুক তো সরাসরিই বলেছেন, ‘‘ টিভি চ্যানেল বন্ধ করে কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না৷ পিস টিভি বন্ধ করা মানে সাম্প্রদায়িকতার মাঝে আঘাত করা৷ ‘পিস টিভি দেখে জঙ্গি তৈরি হয়'- এই কথা বানানো ছাড়া আর কিছু না৷ এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি নাই৷''
‘‘জাকির নায়েকের দ্বারা প্রতিদিন হাজারো মানুষ ইসলাম গ্রহণ করছেন তাই জাকির নায়েক ষড়যন্ত্রের শিকার-'' এই মন্তব্য পাঠক তানা মিয়ার৷
সাজিদ হাসান রেজার ধারণা, পিস টিভি বন্ধ করলে জঙ্গিবাদ আরো বাড়বে৷
-
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
ঘটনার শুরু
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালালে অবস্থানরত অজ্ঞাত সংখ্যক অতিথি সেখানে আটকা পড়েন৷
-
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
দুই পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু
পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে নিহত হন বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম৷
-
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের পাশাপাশি ছ'জন হামলাকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বলেছেন, বাকি কয়েকজনকে হয়তো বাঁচানো যায়নি৷ এই জঙ্গি হামলায় জড়িত একজন ধরা পড়েছে বলেও শনিবার সকালে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন তিনি৷
-
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
এ যেন দুঃস্বপ্ন
কমান্ডো অভিযানে মুক্ত গুলশানের ক্যাফে থেকে উদ্ধার পাওয়া ব্যক্তিদের ১২ ঘণ্টার ‘দুঃস্বপ্ন’ কাটছে না৷ তাঁদের চোখে মুখে ক্লান্তি ও ভীতির ছাপ৷ তারা বলছিলেন, কয়েকজনের মৃতদেহ দেখেছেন, অনেক জায়গায় রক্তের ছাপ৷
-
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য
তাঁরা বলছেন, জিম্মিকারীরা বাংলাদেশি মুসলমানদের সুরা পড়তে বলে৷ সুরা পড়তে পারার পর তাঁদেরকে রাতে খেতেও দেওয়া হয়৷ যাঁরা হিজাব পরা ছিল, তাঁদের বাড়তি খাতির করা হয়৷
-
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
আইএস-এর দায় স্বীকার
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে বলে সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ জানিয়েছে৷ এই জঙ্গি দলের মুখপত্র আমাক নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে এ সব খবরে দাবি করা হয় যে, ‘তাদের’ এই হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৪০ জন৷
-
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
কমান্ডো অভিযান
সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটে রাতভর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রাখার পর যৌথ সেনা, নৌ, পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ কমান্ডো দল গুলশানে অভিযানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়৷ ৮ টা ১৫ মিনিটে প্রথম দফায় নারী ও শিশুসহ ৬ জনকে উদ্ধার করা হয়৷
-
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
ভবনের নিয়ন্ত্রণ ও আতঙ্কের অবসান
৮ টা ৫৫ মিনিটে ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় অভিযানকারীরা৷ গোয়েন্দা দল ভবনের ভেতর বিস্ফোরকের জন্য তল্লাশি শুরু করে৷ ৯ টা ১৫ মিনিটে ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান হয়৷
লেখক: অমৃতা পারভেজ
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী