মুসলমানদের যোগব্যায়ামের বিরোধিতা করার কারণ হিসেবে পাঠক রাতুল রহমান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘মুসলমানদের দিনে পাঁচবার নামাজ পড়ে ভালো ব্যায়াম হয়, তাই আর এর বেশি ব্যায়ামের প্রয়োজন নাই৷''
ফিরোজা খানম নিপারও অনেকটা একই মত৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘নামাজের মতো যোগ আসন পৃথিবীতে একটিও নেই৷'' তবে তিনি সনাতন ধর্মের একটা নিয়মকে মুসলমানদের উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়ার পক্ষে নন৷
রুশা দাস বলছেন, নামাজ পড়াটাও একা যোগ, আসলে সব ধর্মই এক৷ সৎ পথে থেকে মানুষের পেটে যা খাবার যায়, সেটাই ধর্ম৷
সারা বিশ্বেই আজ যোগাসনের কদর৷ জার্মানিসহ অন্যান্য দেশে যা আজ যোগব্যায়াম বা ‘ইয়োগা' নামেই পরিচিত৷ যদিও ফেসবুক বন্ধু মো.মামুন যোগব্যায়ামকে হিন্দু নীতি বলে মন্তব্য করেছেন৷
ফজলে মনির চৌধুরী খুবই অবাক, ‘‘ব্যায়াম নিয়ে এত হৈচৈ!''
-
যোগচর্চা নিয়ে রাজনীতি, বিতর্ক
স্বাস্থ্য সুরক্ষার দারুণ উপায়
সুস্থ, সুন্দর স্বাস্থ্যের জন্য যোগব্যায়ামের তুলনা নেই৷ তাই শিশুদের নিয়মানুবর্তিতা শেখাতে ও শারীরিকভাবে সুস্থ রাখতে যোগচর্চা যে সাহায্য করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ তার ওপর মানসিক চাপ কমাতে যোগাসনের তুলনা হয় না৷ ‘ওয়েলনেস আর ফিটনেস’-এর জগতে ‘ইয়োগা’ আজ এক অপরিহার্য অঙ্গ৷ কিন্তু তাই বলে সকলের জন্য বাধ্যতামূলক যোগশিক্ষা?
-
যোগচর্চা নিয়ে রাজনীতি, বিতর্ক
বাধ্যতামূলক যোগচর্চা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি চাইছে, যোগচর্চা বা ‘ইয়োগা’-কে ভারতের জাতীয় সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তুলে ধরার৷ তাই স্কুলগুলোর পাঠ্যক্রমে যোগব্যায়ামকে বাধ্যতামূলক করতে লবি-ও করা হচ্ছে৷ কিন্তু ভারতের কট্টর মুসলমানদের মধ্যে অনেকেই এই যোগচর্চার বিরোধী৷
-
যোগচর্চা নিয়ে রাজনীতি, বিতর্ক
সুপ্ত বিচ্ছিন্নতাবাদ?
যোগাভ্যাসের সময় সাধারণত বেশ কিছু সংস্কৃত শব্দ এবং শ্লোকের ব্যবহার করা হয়৷ সাধনার জন্য ‘ওম’ ধ্বনির প্রচলন সর্বজনসিদ্ধ৷ এছাড়া আসনগুলোর নামেও রয়েছে পৌরাণিক ছোঁয়া৷ তাই স্কুলগুলোয় যোগব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধীদের বক্তব্য স্পষ্ট: এমন কিছু করলে তা ভারতের অ-হিন্দু জনগোষ্ঠীকে বিচ্ছিন্ন করবে৷
-
যোগচর্চা নিয়ে রাজনীতি, বিতর্ক
‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়োগা ডে’
ভারতের ‘মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সদস্যরা বলছেন, স্কুলের শিশুদের যোগাসন ও সূর্যপ্রণাম করতে বাধ্য করা তাদের ধর্মবিশ্বাসের বিরোধী৷ তাই সারা দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলতে প্রস্তুত তাঁরা৷ ওদিকে, যোগশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করার লক্ষ্য নিয়ে ২১শে জুনকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়োগা ডে’ হিসেবে পালন করার পরিকল্পনা করছে সরকার৷
-
যোগচর্চা নিয়ে রাজনীতি, বিতর্ক
যোগ, তুমি কার?
যোগসাধনার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা নয়, পাঠক্রমে ‘সূর্যপ্রণাম’ থাকবে কিনা – তা নিয়ে রাজনীতির ‘টাগ অফ ওয়ার’ চলছে এখন৷ অথচ যোগচর্চাকে কি আজ আদৌ ভারতীয় বলা যায়? বিশ্বজুড়ে এক ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে যোগাভ্যাস৷ যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত দু’কোটি মানুষ যোগব্যায়াম করেন – এর মধ্যে আছেন অগণিত খ্রিষ্টান, মুসলমান, ইহুদি এবং নাস্তিকও৷
-
যোগচর্চা নিয়ে রাজনীতি, বিতর্ক
সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান
জার্মানির হাইডেলব্যার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারততত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. আক্সেল মিশায়েল যোগসাধনার নানা মার্গের সঙ্গে পরিচিত৷ তাঁর কথায়, ‘‘যোগচর্চা আজ যে রূপ নিয়েছে, তা ভারতীয়ও নয়, নয় পশ্চিমেরও৷ এ হলো বহুজাতিক, আন্তঃসাংস্কৃতিক৷ বিভিন্ন সংস্কৃতির মাঝে এর অবস্থান৷ তাই হিন্দুধর্মের ঐতিহ্য থেকে যোগসাধনাকে বের করে আনলে চলবে না৷’’
-
যোগচর্চা নিয়ে রাজনীতি, বিতর্ক
যোগসাধনা করতে হবে স্বেচ্ছায়
হলিউডের এর ‘ওয়েলনেস গুরু’ দীপক চোপরা মনে করেন, যোগ গোটা মানবজাতির উত্তরাধিকার৷ এছাড়া আধুনিক শরীরনির্ভর, পশ্চিমে জনপ্রিয় ‘হঠযোগ’ ১০০ বছরের বেশি প্রাচীন নয়৷ তাই যোগব্যায়াম নিয়ে রাজনীতি নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে এর গুণাগুণ তুলে ধরা প্রয়োজন৷ তবে সেটা গায়ের জোরে নয়, আর আইন করে তো নয়ই৷
লেখক: দেবারতি গুহ
ফেসবুক বন্ধু আবুল হাসেম ‘কট্টর' মুসলিম শব্দটি ব্যবহার করায় তিনি তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন৷ তাঁর মতে একজন অতি সাধারণ মুসলিমও এমনটি সমর্থন করবে না!
‘‘কট্টর হিন্দুদের চাপিয়ে দেওয়া যোগাসন কেন মুসলিমরা মেনে নেবে? সূর্যপ্রণামের মতো কিছু কিছু যোগব্যায়াম ইসলামবিরোধী'' ডয়চে ভেলের ফেসবুকে এই মন্তব্য রোদেলা মল্লিক নীলার৷
সরদার জামান মোহাম্মাদও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর স্কুলে যোগব্যায়াম বাধ্যতামূলক করতে চাওয়াকে সমর্থন করেন না৷
ব্যায়াম করাটা শরীরের ভালো সেকথা কম-বেশি সবাই জানে, কিন্তু এটার সাথে কোনো ধর্মকে টানা হেচড়া করাটাকে একেবারেই সমর্থন করেন না মাছুম পারভেজ আক্তার৷
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ