‘ডয়েচে ভেলের অবদানের কথা বলতে দ্বিধা নেই’ | পাঠক ভাবনা | DW | 05.03.2013
  1. Inhalt
  2. Navigation
  3. Weitere Inhalte
  4. Metanavigation
  5. Suche
  6. Choose from 30 Languages

পাঠক ভাবনা

‘ডয়েচে ভেলের অবদানের কথা বলতে দ্বিধা নেই’

প্রিয় ডয়চে ভেলে, ইদানিং আমি প্রতি চিঠিই লিখছিলাম প্রচারিত অনুষ্ঠানের উপর আমার মতামত জানিয়ে৷ কিন্তু আজ একটু ব্যতিক্রম ঘটাতে বাধ্য হলাম৷

Beschreibung: Multimediale Berichterstattung, Ausstattung eines Reporters Bild: DW/G.Degen

Symbolbild Multimedia Reporter Ausrüstung

২ তারিখে ‘ইনবক্স' অনুষ্ঠানই এর কারণ৷ ভাবতেই পারছি না যে এই ‘ইনবক্সই' শেষ ইনবক্স৷ বুকের ভিতরে এমন একটা অনুভূতি হচ্ছে, যেটাকে প্রকাশ করতে কোন ভাষাই সমর্থ নয়৷

ডয়েচে ভেলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেক পুরনো৷ আমি তখন মাধ্যমিক স্তরের ছাত্র৷ আনন্দবাজার পত্রিকায় একদিন আমি বিভিন্ন বিদেশি বেতার কেন্দ্রের বাংলা ভাষায় সম্প্রচার সম্বন্ধে একটি নিবন্ধ পড়ে কৌতূহলবশেই বিভিন্ন কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনতে শুরু করি৷ কিন্তু অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই কেন জানি না ডয়েচে ভেলের প্রতিই আমি অত্যধিক আসক্ত হয়ে পড়ি৷ তখন সকাল সাড়ে ছ'টা থেকে সাতটা কুড়ি পর্যন্ত শর্টওয়েভে অনুষ্ঠান প্রচারিত হত৷ সময়টা আমার পক্ষে খুব সুবিধাজনক ছিল৷ কিন্তু সেটা আমার আকর্ষণের কারণ ছিল বলে মনে হয় না৷

পরে বড় হয়ে ভেবে যেটা আবিষ্কার করেছি, সেটা হল প্রতিটি বেতার সম্প্রচার সংস্থারই একটা করে নিজস্ব চরিত্র থাকে, আর প্রকৃতপক্ষে ডয়েচে ভেলের চরিত্রটাই আমাকে টানত সবচেয়ে বেশি৷ কোন সংস্থা ছিল খুব বেশি প্রোপাগান্ডামুলক, কারো সংবাদ পরিবেশন পক্ষপাতপূর্ণ, কারো উপস্থাপনায় কৃত্রিমতা বড় বেশি বুকে বাজত৷ অন্যদিকে ডয়েচে ভেলের অনুষ্ঠানের সাথে আমি নিজেকে একাত্ম করতে পারতাম৷ তাই ভারত বা বিশ্বে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটলে আমি সেই সব ঘটনার বিভিন্ন দিক জানার জন্য দেশি বিদেশি বিভিন্ন বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার নিশ্চয়ই শোনার চেষ্টা করতাম৷ কিন্তু নিত্যদিনের সাথী ছিল শুধু ডয়েচে ভেলে৷ মনে হয় পাঁচ ছয় বছর নিয়মিত ডয়চে ভেলে শুনেছিলাম৷ তারপর পেশাগত জগতে প্রবেশ এবং জীবনের নানা জটিলতার কারণে সম্পর্ক হয়ে আসে ক্ষীণ৷ একসময় নেমে আসে বিচ্ছেদ৷

কিন্তু আজ স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, আজ আমি যে একটা সম্মানজনক পেশাগত ও সামাজিক অবস্থানে আসতে পেরেছি, তার পিছনে ডয়েচে ভেলের অনেকখানি অবদান আছে৷ নিয়মিত ডয়েচে ভেলের অনুষ্ঠান শোনার ফলে বার্লিন প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলা, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন, পোল্যান্ড ও রোমানিয়ায় পালাবদল, য়ুগোস্লাভিয়ার ভাঙ্গন ইত্যাদি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঘটনার খুঁটিনাটি যেমন ছিল আমার নখদর্পণে, তেমনি বিশ্বের ভূগোল ভাসত চোখের সামনে৷ দীর্ঘদিন ধরে এর সুফল আমি পেয়েছি বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায়৷ দৃষ্টিও হয়েছিল অনেক প্রশস্ত৷ তাই বিদায়লগ্নে এটুকু ঋণ স্বীকার না করলে নিজের কাছে অপরাধী থেকে যাব৷

এরপর অনেক দিন কেটে গেছে৷ মাঝে মাঝে চেষ্টা করেও যোগসূত্র তৈরি করতে পারিনি, যদিও আকর্ষণ ছিল যথারীতি প্রবল৷ ইতিমধ্যে বন্ধ হয়েছে শর্টওয়েভ সম্প্রচার৷ ভারতের বাঙালি শ্রোতাদের রেডিওতে অনুষ্ঠান শোনার সুযোগ গেছে থেমে৷ এমনই পরিস্থিতিতে গত জানুয়ারি মাসে ইন্টারনেটে বিশ্বভ্রমণ করতে করতে হঠাৎ করে চোখে পড়ে গেল কৈশোরের প্রিয়তম বন্ধু ডয়েচে ভেলেকে৷ আনন্দে ভরে উঠল হৃদয়, আর সেই হৃদয় ভাবল আর ‘যেতে নাহি দিব'৷ কিন্তু তখন বুঝিনি, এই কাছে আসা আসলে আরও দূরে সরে যাওয়ার জন্যই৷ ভাবতেও পারিনি, ফিরে পাওয়ার আনন্দের আয়ু মাত্র দুই মাস৷ এই দু'মাসে অনেক চিঠি লিখেছি৷ কিন্তু উত্তর পাইনি একটিও৷ সে জন্য একটু ব্যথা অনুভব করলেও আশা ছিল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরানো সম্পর্ক একদিন জোড়া লাগবেই৷ কিন্তু তা আর হল কই৷ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো সম্প্রচার বন্ধের নোটিশ৷ তারপর গত শনিবার ছিলো শেষ ইনবক্স৷

বিগত শেষ একমাসের সব সম্প্রচারের রেকর্ডিং আমার কাছে আছে৷ আট তারিখ পর্যন্ত সম্প্রচারের সব রেকর্ডিং থাকবে স্মারক হিসাবে৷ শুরু হয়েছিল ‘চিঠির ঝুলি' দিয়ে শেষ হল ‘ইনবক্সে' এসে৷ বোঝা গেল, যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তনের সাথে সাথে পুরনোকে বিদায় দিয়ে নতুনকে মেনে নিতেই হবে৷ মানিয়ে নিতে হবে নতুনের সঙ্গে৷ তাই এরপর চেষ্টা করবো পুরানো বন্ধুর নতুন চেহারার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে৷

রবীন্দ্রনাথের মিনি পারেনি, কাবুলিওয়ালাও পারে নি৷ কিন্তু আমাদেরকে তো পারতেই হবে৷ এটাই জীবন৷ তাই বুকের কষ্ট বুকে চেপে হাসি মুখেই বিদায় দিলাম৷ বিদায়লগ্নে ভিড় করে আসে কত পুরাতন স্মৃতি৷ এইসব স্মৃতি বুকে নিয়েই সুমনের ভাষায় বলি, ‘দেখা হবে তোমায় আমায় অন্য গানের ভোরে'৷

আপনারা যাঁরা ডয়েচে ভেলের সঙ্গে রয়েছেন এবং অতীতে যাঁরা ছিলেন, সবাইকে প্রীতি শুভেচ্ছা ও সশ্রদ্ধ নমস্কার জানাই৷ সবাই ভালো থাকুন৷ নমস্কারান্তে ইতি সুখময় মাজী, গঙ্গাজলঘাটী, বাঁকুড়া, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত৷

প্রিয় বন্ধু সুখময় মাজী, আপনার লেখা সুন্দর চিঠিটি আমাদের হৃদয় স্পর্শ করেছে৷ আপনার লেখা সব চিঠিই খুব সুন্দরভাবে লেখা৷ আমাদের ওয়েবসাইটের ‘পাঠক ভাবনায়' আপনি নিয়মিত ঢুকে থাকলে অবশ্যই লক্ষ্য করে থাকবেন যে আপনার বেশ কয়েকটি চিঠি সেখানে স্থান পেয়েছে৷ হয়তো সময়াভাবে ইনবক্স-এ তুলে ধরা সম্ভব হয়নি, তবে প্রতিদিনের অনুষ্ঠানের মাঝে যে ছোট্ট করে বন্ধুদের মতামত নেওয়া হয় সেখানে আজসহ অন্যদিনও কিন্তু আপনার মতামত স্থান পেয়েছে৷ আপনাকে এবং অন্যবন্ধুদের অনেক অনেক ধন্যবাদ৷ আশা করছি আগামীতেও এভাবেই আমাদের সাথী হবেন৷

প্রিয় ডয়চে ভেলের বন্ধুরা, আশা করছি আমাদের কাঁদিয়ে আপনারা ভাল আছেন৷ হয়তো বা একটু বিমর্ষ আমাদের জন্যও৷

যা হোক গতকাল অপেক্ষায় ছিলাম ওয়েবসাইটে আমাদের মতামত পাতায় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের ধাঁধা বিজয়ী এবং ফ্রেব্রুয়ারি মাসের সেরা পত্র লেখকের নাম ঘোষণা করবেন, কিন্তু তা করলেন না৷ রাজশাহীর বন্ধু মামুন ফোন করেছিলেন খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য কিন্তু তাকেও জানাতে পারলামনা খবরটা৷ বললাম হয়ত আজ আপডেট করবে৷ তাই অপেক্ষায় আছি কখন কী হয়৷ আশা করছি অচিরেই সবার আশা মেটাবেন৷ নিয়মিত সবগুলো পরিবেশনা রেকর্ড করে রাখছি স্মৃতি হিসেবে৷

আমার স্ত্রী রওশন আরা লাবনী কয়েকবার শুধুমাত্র একটা প্রশ্ন করেছে, কেন ডয়চে ভেলে রেডিওর অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিচ্ছে? আমি ঠিকভাবে বুঝিয়ে বলতে পারিনি৷

যা হোক সব কথা আর বলে দিতে পারছিনা৷ কিছু কথা ক্ষোভ হিসেবে জমিয়ে রাখলাম৷ ভালো থাকবেন৷ মো.সোহেল রানা হৃদয়, ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা৷

প্রিয় বন্ধু সোহেল, গত ইনবক্স-এ আপনাদের কথা দিয়েছিলাম যে সোমবার আমাদের ওয়েবসাইটে জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসের ধাঁধা বিজয়ীদের নাম এবং ফেব্রুয়ারি মাসের শ্রেষ্ঠ পত্রলেখকের নাম জানানো হবে৷ আমাদের কথা কিন্তু আমরা রেখেছি৷ বিজয়ীদের নাম ‘আপনাদের মতামত পাতায়'ই দেওয়া হয়েছে, তবে ‘পাঠক ভাবনা' তে নয় অর্থাৎ চিঠিপত্রের সাথে নয়৷ নামগুলো যেন কিছুদিন এই পাতায় থাকে এবং সবাই দেখতে পারেন, সেজন্য এই পাতায়ই ‘জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসের ধাঁধার ফলাফল ও শ্রেষ্ঠ পত্রলেখক' শিরোনামে আলাদাভাবে দেওয়া হয়েছে৷ বন্ধুরা, নিজেরা দেখবেন ও অন্যদেরও দেখতে বলবেন৷

বিগত দুই দিনের এবং আজ ৪ঠা মার্চ তারিখে তুলে ধরা প্রতিটি বিষয়ের ওপর নির্বাচিত প্রতিবেদনগুলো আজ খুব আগ্রহ সহকারে পড়লাম৷ প্রতিটি পরিবেশনাই ছিলো উপস্থাপনা ও বৈচিত্রের গুণে আপন আপন বিষয়ে সমৃদ্ধ৷ সব মিলিয়ে বলতে হয় তথ্যের এক অফুরন্ত ভাণ্ডার আমাদের সামনে দ্বার উন্মোচন করে অপেক্ষা করে আছে আর যা দেখার এবং যা জানার জন্য আমরাও অধীর আগ্রহে বসে আছি৷ আর এর পেছনে আছে যে ডয়চে ভেলে৷ সুভাষ চক্রবর্তী, নতুন দিল্লী ৷

সবার জন্য রইলো অনেক অনেক শুভেচ্ছা৷

সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

নির্বাচিত প্রতিবেদন