আধুনিক যুগে খাবার নিয়ে ‘বিধিনিষেধ' একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন পাঠক অতনু মন্ডল৷
‘‘সৃষ্টির বিধানে কোনো কিছুই কারো জন্য নিষেধ নাই, যার মন যেটা চায় সে সেটা খেতে পারে'' – বিভিন্ন ধর্মের মানুষের উপর খাবারের বিষয়ে বিধিনিষেধ সম্পর্কে এই মত পোষণ করেন ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু আমিনুল ইসলাম শাইন৷
আর পাঠক বিলাস সুরও অনেকটা আমিনুল ইসলাম শাইনের সাথে সুর মিলিয়ে বলছেন, ‘‘ খাবার নিয়ে বাড়াবাড়ি করাটা ঠিক না, কারো ইচ্ছা থাকলে খাবে, না থাকলে খাবে না৷''
তবে মোহাম্মদ মেহেদি মনে করেন যে, সৃষ্টিকর্তার বিধান একরকম আর মানুষের তৈরি বিধান অন্যরকম, কাজেই এ দু'টোর মধ্যে পার্থক্য থাকবেই৷
-
কোন ধর্মে কী খাওয়া নিষেধ?
ইসলাম ধর্মে...
ইসলাম ধর্মে শূকরের মাংস ‘হারাম’৷ এছাড়া বেওয়ারিশ পশুপাখির মাংস হারাম এবং পশুপাখির রক্তও হারাম৷
-
কোন ধর্মে কী খাওয়া নিষেধ?
হিন্দুধর্মে গরু
হিন্দুধর্মে গরুকে পবিত্র বলে মনে করা হয়, তাই গো-মাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ৷ ভেড়ার মাংস, মুরগির মাংস বা মাছ ছাড়া বস্তুত বাকি সব ধরণের মাংসই নিষিদ্ধ৷ হিন্দুদের একটি বড় অংশ নিরামিষ ভোজন করে থাকেন৷
-
কোন ধর্মে কী খাওয়া নিষেধ?
ইহুদিরা যা খান ও যা খান না
ইহুদিদের জন্য যা খাওয়া অনুমোদিত, তাকে বলা হয় কোশার ও যা খাওয়া নিষিদ্ধ, তাকে বলা হয় ত্রেফা৷ কোশার হলো সেইসব প্রাণী, যাদের পায়ের খুর পুরোপুরি চেরা এবং যারা জাবর কাটে, যেমন গরু, ছাগল কিংবা ভেড়া৷ ঘোড়া কিংবা শূকর এই কারণে কোশার নয়৷ কোশার মাছের আবার আঁশ ও পাখনা থাকা চাই৷
-
কোন ধর্মে কী খাওয়া নিষেধ?
বৌদ্ধধর্মে খাওয়া নিয়ে বিধিনিষেধ
বৌদ্ধধর্মে সব ধরণের মাংস, এমনকি মাছ ভক্ষণও নিষিদ্ধ, কেননা বৌদ্ধরা বিশ্বাস করেন যে, কোনো প্রাণিসত্তার মৃত্যুর জন্য তাদের দায়ী হওয়া উচিৎ নয়৷
-
কোন ধর্মে কী খাওয়া নিষেধ?
শিখদের ‘নিষিদ্ধ’ খাবার...
শিখরা শূকরের মাংস খান না৷ সেই সঙ্গে হালাল বা কোশার মাংসও তাদের কাছে অভক্ষ্য, কেননা অন্য কোনো ধর্মের ধর্মাচারে অংশগ্রহণ করা তাদের জন্য নিষিদ্ধ৷
-
কোন ধর্মে কী খাওয়া নিষেধ?
জৈন ধর্মাবলম্বীরা মূলত নিরামিষভোজী
জৈনধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো অহিংসা, যে কারণে অধিকাংশ জৈন নিরামিষ আহার করেন৷ তবে তারা দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যও গ্রহণ করে থাকেন৷
এদিকে পাঠক শেখ শিহাব আল মাহমুদ লিখেছেন, বৌদ্ধধর্মে সব ধরনের মাংস, এমনকি মাছ ভক্ষণও নিষিদ্ধ, কেননা, বৌদ্ধরা বিশ্বাস করেন যে, কোনো প্রাণিসত্তার মৃত্যুর জন্য তাদের দায়ী হওয়া উচিৎ নয়৷
আর নিজের রুচিতে যা খাবার যোগ্য সেটাই খাওয়া উচিত বলে বিশ্বাস করেন পাঠক রাজীব ইসলাম৷ তাঁর মতে ‘‘একজনের কাছে যা আহার্য , আরেকজনের জন্য তা নিষিদ্ধ, কাজেই এ সব ঠুনকো বিষয়ের বিচারে না যেয়ে , নিজের পছন্দ মতোই খাওয়া উচিত৷''
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী
-
রোজা বা সংযমের মাসে সুস্থ থাকার নানা কারণ
জার্মানদের রোজা রাখা বা উপোস করা
জার্মানরাও উপোস করেন তবে তা ধর্মীয় অনুভূতি থেকে নয়, তাঁরা করেন সুস্থ থাকতে, স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য৷ ত্যাগের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ কমানোসহ নানা শারিরিক সমস্যার ঝুঁকি কমানো সম্ভব৷এর উপকারিতা সম্পর্কে সমীক্ষার ফলাফলে জানা গেছে, শতকরা ৫৫ জন জার্মান একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত না খাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন৷ একটি অ্যামেরিকান গবেষণা থেকে জানা যায় যে, রোজা রাখলে তা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে৷
-
রোজা বা সংযমের মাসে সুস্থ থাকার নানা কারণ
পরামর্শ
বলা বাহুল্য, জার্মানরা উপোস করেন একটু অন্যভাবে বা অন্য নিয়মে৷ এ বিষয়ে রক্তচাপ বিশেষজ্ঞ ডা. হাউসব্যার্গ-এর পরামর্শ, ‘‘উপোস শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন৷ বিশেষ করে তাঁরা, যাঁদের ডায়বেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে৷’’ এছাড়াও উপোস বা না খাওয়ার পুরো সময়টা যেন এক নাগারে তিন সপ্তাহের বেশি যেন না হয়, জানান ডা. হাউসব্যার্গ৷
-
রোজা বা সংযমের মাসে সুস্থ থাকার নানা কারণ
দূষিত পদার্থ বের করে দেয়
ফাস্টফুড, সাদা রুটি, পিৎসা জাতীয় তৈরি খাবার শরীরের ভেতরে ঢুকে ‘টক্সিন’ বা দূষিত পদার্থে রূপান্তরিত হয়৷ এগুলি শরীর থেকে বের হওয়া জরুরি৷ আর সে ক্ষেত্রেই কাজে আসে উপোস করা৷ সারাদিন না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে জমে থাকা ফ্যাট এবং দূষিত ও ক্ষতিকারক পদার্থগুলো বিভিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে বের হয়ে যায়৷ তাছাড়া রোজা রাখলে অনেকটা সময় না খাওয়ার ফলে পাকস্থলীর অ্যাসিড নিঃসরণও কিছুটা কমে, ফলে গ্যাসট্রিকের ব্যাথাও কম হয়৷
-
রোজা বা সংযমের মাসে সুস্থ থাকার নানা কারণ
ডায়বেটিস প্রতিরোধে সহায়ক
সারাদিন না খেয়ে থাকার কারণে শরীরের ‘গ্লুকোজ’ বা শর্করা জাতীয় খাবারের দ্রুত ক্ষয় হয় এবং তা দেহের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি যোগায়৷ এর ফলেই ‘ইনসুলিন’-এর উৎপাদন কমে যায় এবং তা, প্যানক্রিয়াসকে খানিকটা বিশ্রাম দেয়৷ গ্লুকোজ ক্ষয়ের ফলে শরীরে ‘গ্লাইক্লোজেন’ তৈরি হয় এবং ‘ব্লাডসুগার’ কমে ডায়বেটিস প্রতিরোধে সহায়ক হয়৷
-
রোজা বা সংযমের মাসে সুস্থ থাকার নানা কারণ
রক্তচাপ হ্রাস করে
না খেয়ে থাকা অবস্থায় শরীরে গ্লুকোজ ও চর্বিকণাগুলোর ক্ষয় হয়ে শক্তি উৎপাদন হয় এবং ‘মেটাবলিক রেট’ কমে৷ তাছাড়া অন্যান্য হরমোনের মতো ‘স্ট্রেস হরমোন’-ও কমে, ফলে রক্তচাপও কমতে পারে৷ এছাড়াও রোজার মাসে ধূমপান কম করা হয়৷ তাই এটা ধূমপান একেবারের মতো ছেড়ে দেবারও একটা পরীক্ষা হতে পারে বলে মনে করেন অনেকে৷ সারাদিন রোজা রাখলে শরীরে ‘কোলেস্টোরল’-এর পরিমাণও কিছুটা কমে, ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে৷
-
রোজা বা সংযমের মাসে সুস্থ থাকার নানা কারণ
ওজন কমে
রোজা বা সংযমের মাসে সারাদিন না খাওয়াতে পাকস্থলী কিছুটা ছোট হয় তাই ওজন কমানো হয় সহজ৷ এই অভ্যাস রোজার পরে অব্যাহত রাখলে ওজন নিয়ে আর কোনো চিন্তাই থাকে না৷ অনেক জার্মান কোনো উৎসব বা উপলক্ষ্যে বেশি খাওয়া-দাওয়ার পর অথবা বছরে এক বা দু’বার নিয়ম করে কয়েকদিন উপোস করেন৷এই উপোসের সময় খাবারের তালিকায় থাকে সেদ্ধ শাক-সবজি, সবজির স্যুপ, গ্রিন টি, অর্থাৎ প্রচুর পানি জাতীয় খাবার৷ যা শরীরকে হালকা ও পরিষ্কার করে৷
-
রোজা বা সংযমের মাসে সুস্থ থাকার নানা কারণ
রোজার পরেও সুন্দর ও ফিট থাকুন
রোজা যেহেতু এখন গরমের সময় হচ্ছে, তাই বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে শরীরে পানিশূন্যতা না হয়৷ তাই ইফতারের সময় ভাজা, পোড়া কম খেয়ে বিভিন্ন মৌসুমি ফল, ডাবের পানি ও তরমুজ খাওয়া স্রেয়৷ তরমুজ হার্ট, ধমনী, কিডনির জন্য খুব উপকারী৷ তাছাড়া আম, কাঁঠাল, আনারস, বাঙ্গি থাকতে পারে ইফতারের টেবিলে৷ এগুলোতে রয়েছে ভিটামিন এ আর সি, যা ‘অ্যান্টি অক্সিডেন্ট’ হিসেবে কাজ করে এবং রোজার পরেও ত্বক সুন্দর ও আকর্ষণীয় রাখে৷
লেখক: নুরুননাহার সাত্তার