1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফের রক্তাক্ত ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
৭ এপ্রিল ২০১৮

গতকাল থেকে ফের শুরু হয়েছে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ব্যাপক প্রতিবাদ এবং সংঘর্ষ৷ কাশ্মীর উপত্যকায় হরতালের ডাক দেয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি৷ এজন্য কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নীতি কতটা দায়ী?

https://p.dw.com/p/2vcgs
ছবি: Imago/Zuma Press

গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনী এবং কাশ্মীরি ছাত্র ও যুবকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হচ্ছে৷ গত রবিবার দক্ষিণ কাশ্মীরের শোপিয়ান এবং অনন্তনাগে নিরাপত্তা বাহিনীর একাধিক অভিযানে ১৩ জন জঙ্গি এবং চারজন অসামরিক ব্যক্তি নিহত হবার প্রতিবাদে ছাত্র যুবকদের বিক্ষোভে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা উপত্যকা৷

১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা এই প্রতিবাদে অংশ নেয়৷ ভারত-বিরোধী স্লোগান দেয়৷ কাশ্মীরে ভারতের সার্বভৌম ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে৷ জঙ্গিদের সমর্থনে আওয়াজ তোলে৷

পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথরবৃষ্টি শুরু করে৷ কয়েকজন পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর পদস্থ অফিসার আহত হন৷ জ্বালিয়ে দেয়া হয় একটি পুলিশ পিকেট৷

‘সামগ্রিকভাবে কাশ্মীরি জনগণ বেশ বিভ্রান্ত’

প্রতিবাদ মিছিল করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন স্বাধীনতাকামী সংগঠন জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ) নেতা ইয়াসিন মালিক৷ হুরিয়াত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি ও মিরওয়াইজ ওমর ফারুককে গৃহবন্দি করা হয়৷

হরতাল ডাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি৷ গোলমালের আশংকায় শ্রীনগর, শোপিয়ান ও অনন্তনাগে দোকান বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি করে রাজ্য প্রশাসন৷ এক কথায় স্তব্ধ হয়ে পড়ে স্বাভাবিক জনজীবন৷

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ছররা গুলি চালায়৷ তাতে কয়েকজন ছাত্র আহত হন৷

জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি আহতদের দেখতে হাসপাতালে যান এবং বলেন যে, মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের জন্য যাঁরা দায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে৷

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে হিজবুল মুজাহিদিন কমান্ডার বুরহান ওয়ানি নিহত হবার পরে কাশ্মীরের বহু স্থানীয় যুবক এবং ছাত্র জঙ্গি সংগঠনের প্রতি আকৃষ্ট হন৷ অন্যদিকে, এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির ব্যর্থতাকেই দায়ী করেন বিরোধী নেতা ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লা৷ তাঁর মতে, কাশ্মীরি তরুণ সম্প্রদায় যেভাবে জঙ্গিদলের দিকে ঝুঁকছে, সেই স্রোত রুখতে না পারাটা মেহবুবা মুফতির নীতির চরম ব্যর্থতা৷

‘বর্তমান বিজেপি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি উগ্র-জাতীয়তাবাদী’

এক্ষেত্রে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ কাশ্মীর পরিস্থিতির অবনতির জন্য মোদী সরকার কতটা দায়ী ? এর উত্তরে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বললেন যে, কাশ্মীর সমস্যাটা ঐতিহাসিকভাবে চলে এসেছে৷ ফলে এর সমাধানে রয়েছে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি৷ ‘‘বর্তমান বিজেপি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি উগ্র-জাতীয়তাবাদী৷ তার একটা প্রভাব পড়েছে জঙ্গিপনা এবং পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণার মানসিকতায়৷ দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রের কাছে সবারই একটা প্রত্যাশা থাকে৷ সেটা পূরণ না হওয়ার ফলে রাষ্ট্রের প্রতি অসন্তোষ বাড়তে থাকে৷'' বলছিলেন তিনি৷

তাঁর মতে, কাশ্মীর সমস্যার আরেকটা দিক হলো, সংবিধানের ৩৭০নং অনুচ্ছেদ কার্যকর হবে কিনা, সে বিতর্ক৷ কারণ, ভারতীয় সংবিধান এত নমনীয় যে, সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে তা করা যায়৷

কাশ্মীরি ছাত্র ও যুবকদের জঙ্গিদলে নাম লেখাবার পেছনে রাজনৈতিক তথা সামাজিক অবক্ষয় কাজ করছে৷ শুধু কাশ্মীরে নয়, সর্বত্রই অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে অত্যন্ত হিংসাত্মকভাবে৷ বাজপেয়ির সময়ে একটা বহুত্ববাদী সংস্কৃতি ছিল, মোদীর জমানায় এখন সেটা নেই, এমনটাই মনে করেন অধ্যাপক চট্টোপাধ্যায়৷

‘‘কাশ্মীরে মোদীর বিজেপি নীতি যে কাজ করছে না, তার প্রমাণ কাশ্মীরি যুবক ও ছাত্ররা ক্রমশই জঙ্গিদের সংগে হাত মেলাচ্ছে৷ তাঁদের বিশ্বাস ফিরে পাওয়া দূর অস্ত৷ সেটা বুঝতে পারছে কেন্দ্র ও রাজ্য প্রশাসন৷ এছাড়া, জম্মু-কাশ্মীর গঠিত হয়েছে দুই বিপরীত রাজনৈতিক শক্তির জোট সরকার, অর্থাৎ বিজেপি ও পিডিপির জোট৷ বিজেপি জিতে এসেছে হিন্দু প্রধান জম্মু থেকে, এবং পিডিপি জিতে এসেছে মুসলিম প্রধান কাশ্মীর উপত্যকা থেকে৷ উভয় দলই পৃথক পৃথক এলাকার প্রতিনিধিত্ব করছে৷ এতে সামগ্রিকভাবে কাশ্মীরি জনগণ বেশ বিভ্রান্ত৷ তারা মনে করছেন, দু'টি বিরুদ্ধ শক্তির জোট-সরকার তাদের রাজনৈতিক আশা আকাংখা পূরণ করতে অক্ষম৷'' বলেন তিনি৷ 

২০১৪ সালে বিজেপির নির্বাচনি ইশতেহারে জম্মু-কাশ্মীরের সঙ্গে অবশিষ্ট ভারতের সংহতি আরও নিবিড় করার কথা বলা হয়৷ সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের পর বিজেপি এবং মৌলবাদী হিন্দু সংঘ-পরিবার সংবিধানের ৩৭০নং অনুচ্ছেদ রদ করার উদ্যোগ নেয়৷

কিন্তু ২০১৫ সালে জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্ট এই মর্মে রায় দেন যে, ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০নং অনুচ্ছেদ রদ করা যাবে না, বিলোপ করা যাবে না, এমন কি সংশোধনও করা যাবে না৷ ভারতের সুপ্রীম কোর্টও এ বছরের ৩রা এপ্রিল অনুরুপ এক রায়ে বলেন, ৩৭০নং অনুচ্ছেদ এক স্থায়ী সংস্থানে পরিণত হয়েছে৷ যেহেতু গণপরিষদ (কন্সটিটিউয়েন্ট অ্যাসেমব্লি) আর নেই, তাই ৩৭০নং অনুচ্ছেদ রদ করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিরও নেই৷

 পর্যবেক্ষকদের মতে, মোদীর আগে অটল বিহারি বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ছিল৷ তখন পরিস্থিতির এতটা অবনতি হয়নি৷ কেননা, সবাই জানে কাশ্মীরের অশান্তির পেছনে পাকিস্তানের বড় ভূমিকা আছে৷ তাই বাজপেয়ি সরকার চেষ্টা কোরে গেছেন পাকিস্তানকে নরমে গরমে বশে রাখতে, যেটা মোদী করছেন না৷ পাকিস্তানকে যেনতেন প্রকারে শায়েস্তা করতেই তিনি বেশি আগ্রহী৷ আলোচনার পথ প্রায় রুদ্ধ৷

কী বলা হয়েছে ৩৭০নং অনুচ্ছেদে ? এতে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে দেয়া হয়েছে এক বিশেষ মর্যাদা৷ সর্বভারতীয় সব আইন রাজ্যে প্রযোজ্য হবে না৷ বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ ছাড়া কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দেয়া হবে৷

আপনার কোনো মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷