1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অগ্নিপথ: কিছু প্রশ্ন, আশঙ্কা ও জবাব

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
১৭ জুন ২০২২

অগ্নিপথ-বিতর্কে উত্তাল পুরো দেশ। এনিয়ে উঠছে বেশ কিছু প্রশ্ন। তারই জবাব খোঁজার চেষ্টা করলো ডিডাব্লিউ।

https://p.dw.com/p/4CqL8
অগ্নিপথের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে।
অগ্নিপথের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে। ছবি: ANI/Handout/REUTERS

মোদী সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে প্রতিবাদের আগুনে জ্বলছে দেশ। বিভিন্ন রাজ্যে সাতটি ট্রেন পোড়ানো হয়েছে। ৩০টি ট্রেন আক্রান্ত। স্টেশনে ঢুকে ভাঙচুর করা হয়েছে। তেলেঙ্গানায় একের পর এক বাসের কাচ ভেঙে দেয়া হয়েছে। কিছু জায়গায় দোকানের কাচ ভেঙেছেন বিক্ষোভকারীরা। বিভিন্ন রাজ্যে রাস্তা অবরোধ হচ্ছে। রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল, হরিয়ানা, পাঞ্জাবের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে অত মানুষ সেনায় যান না। সেই পশ্চিমবঙ্গেও কয়েকটি জায়গায় রাস্তা ও রেল অবরোধ হয়েছে।

অগ্নিপথের ঘোষণা ও তারপর সহিংস বিক্ষোভ বেশ কিছু প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। যে দেশে চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে পিএইচডি-সহ লাখ লাখ মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে আবেদন করেন, সেখানে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা যুবকদের চার বছরের জন্য সেনায় চাকরির ক্ষেত্রে এমন আক্রোশ কেন তৈরি হচ্ছে? কিছুদিন পরে যারা হয়তো সেনা বা পুলিশ হবেন, তাদের কাছ থেকে এরকম সহিংস আচরণ কি প্রত্যাশিত? ভবিষ্যতে যারা দেশের জন্য লড়তে চান, তাদের মোকাবিলা করতে সশস্ত্র পুলিশ নামাতে হচ্ছে, ইন্টারনেট বন্ধ করতে হচ্ছে, ১৪৪ ধারা জারি হচ্ছে, এই পরিস্থিতি কি কাম্য?

আবার এই প্রশ্নও উঠছে, অগ্নিপথের মধ্যে কি বড় ধরনের খামতি আছে, যার জন্য এরকম বিক্ষোভ হচ্ছে? সেই খামতি কি হাজার হাজার যুবকের স্বপ্নকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে, যার জন্য এই ধরনের মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে? বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে এই সব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে চেয়েছে ডিডাব্লিউ।

চার বছরের জন্য

মোদী সরকার অগ্নিপথের যে ঘোষণা করেছে, তাতে ভারতীয় সেনায় চার বছরের জন্য অগ্নিবীরদের নেয়া হবে। অগ্নিবীর মানে যারা চার বছরের জন্য সেনায় কাজ করবেন। প্রথম ছয় মাস তারা প্রশিক্ষণ পাবেন। প্রথম বছর তাদের বেতন হবে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু তারা হাতে পাবেন ২১ হাজার। নয় হাজার টাকা তাদের সেবা নিধিতে জমা পড়বে। প্রতি বছর বেতন বাড়বে এবং চতুর্থ বছরে তা হবে ৪০ হাজার টাকা, তখন ১২ হাজার টাকা প্রতি মাসে সেবা নিধিতে যাবে। চার বছর পর তারা ১১ লাখেরও বেশি টাকা সেবা নিধি থেকে পাবেন। আর ২৫ শতাংশ অগ্নিবীরকে সেনায় নিয়ে নেয়া হবে।

সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, সেনাতে অফিসার পর্যায়েও শর্ট সার্ভিস কমিশন আছে। তারা পাঁচ বছরের জন্য চাকরিতে থাকেন। ফলে ভারতীয় সেনায় এই প্রকল্প নতুন নয়। তবে জওয়ানদের ক্ষেত্রে আগে তা ছিল না। ফলে তাদের জন্য এই প্রকল্প নতুন। উৎপল ভট্টাচার্যের বক্তব্য, এর ফলে প্রথম বছরে ৪৬ হাজার যুবক চার বছরের জন্য হলেও চাকরি পাবেন।

এয়ার কমোডর রূপন ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, প্রতি বছর সেনায় সাড়ে তিনশ থেকে চারশ চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়। তার মধ্যে কিছু চিকিৎসককে স্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু একটা বড় অংশকে পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ করা হয়। পাঁচ বছর পর তার একটা অংশকে আরো পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি বাড়ানোর সুযোগ দেয়া হয়। কিন্তু অনেককেই পাঁচ বছর পর সরে যেতে হয়। প্রথমে তারা পাঁচ বছর পর রেশন ও স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ পেতেন না। এখন পান।

আপত্তি কেন?

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, তারা সেনায় পুরো সময়ের কাজের জন্য আবেদন করতে চান। সেজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চার বছরের জন্য কেন যাবেন? চার বছর পর তাদের কী হবে?

উৎপল ভট্টাচার্য মনে করেন, চার বছর পর ২৫ শতাংশ অগ্নিবীর সেনায় স্থায়ী হবেন। তাদের নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হলো চার বছর পর যে ৭৫ শতাংশ অগ্নিবীরকে সেনা ছেড়ে চলে যেতে হবে, তাদের নিয়ে। তারা সেনা-প্রশিক্ষিত। ফলে বিকল্প চাকরি না পেলে তারা বিপথগামী হতে পারেন। সে জন্য তাদের বিকল্প কর্মসংস্থান জরুরি। সেটা আধা সামরিক ও কেন্দ্রীয় বাহিনীতে হতে পারে, কেন্দ্রীয় সংস্থায় হতে পারে অথবা বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কথা বলে সেই ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। তা না হলে, সেনা থেকে বেরিয়ে হতাশাগ্রস্ত হতে পারেন অগ্নিবীররা।

রূপন ভট্টাচার্যও এবিষয়ে একমত। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, তারা আধা সামরিক বাহিনীতে নিয়োগের ব্যবস্থা করবে।

স্থায়ী নিয়োগ কি পাশাপাশি হবে?

এই বিষয়ে সরকার এখনো পর্যন্ত বলেনি। ৪৬ হাজার অগ্নিবীর নিয়োগ করার পর তারা স্থায়ী ভিত্তিতে জওয়ান নিয়োগ করবে কি না। তবে উৎপল ও রূপন দুজনেই মনে করেন, অগ্নিপথ চালু হয়ে গেলে এর বাইরে নিয়োগ সম্ভবত বন্ধ হয়ে যাবে। একবারে না হলেও বন্ধ হবে। ২৫ শতাংশ অগ্নিবীর এমনিতেই সেনার চাকরি পাবেন। তারপর প্রয়োজন হলে স্থায়ী চাকরির জন্য জওয়ানদের নেয়া হতে পারে। কিন্তু এর বাধ্যবাধকতা থাকবে না।

কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, অফিসারদের ক্ষেত্রে পরে যেমন চিকিৎসা ও রেশনের সুবিধা যুক্ত হয়েছে, অগ্নিপথের ক্ষেত্রেও হতে পারে। কোর্স কারেকশনের সুযোগ সবসময়ই থাকে।

সুবিধা কি?

উৎপল ও রূপণ দুজনেই মনে করছেন, সবচেয়ে বড় সুবিধা সেনা জওয়ানদের গড় বয়স কমবে। এটা খুবই জরুরি। উৎপল ভট্টাচার্য বলেছেন, এখন সেনার গড় বয়স হলো ৩২ বছর। সেনা জওয়ানদের কাজের চরিত্রের বিচারে তা বেশির দিকে। অগ্নিপথ চালু হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে তা কমে দাঁড়াবে ২৬ বছর। এই বয়সটাই কাম্য।

রূপন জানিয়েছেন, অনেক আলাপ-আলোচনা করে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন তিন সেনাপ্রধান, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সর্বোচ্চ সরকারি কর্মকর্তারা। বয়স কমানোর বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন ধরে আলোচনা হচ্ছিল। তারা মনে করছেন, অগ্নিপথ হলো বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে ভালো প্রকল্প। এর ফলে প্রশিক্ষিত বিপুল সংখ্যক মানুষ থাকবেন, যাদের জরুরি প্রয়োজনে কাজে লাগানো যাবে।

অসুবিধা কোথায়?

এই দুই বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্রধান অসুবিধা হলো চার বছর পর ৭৫ শতাংশ অগ্নিবীর কর্মহীন হয়ে পড়বেন। তাছাড়া উৎপল ভট্টাচার্য মনে করেন, ভারতীয় সেনায় রেজিমেন্টের বিষয়টি ২০০ বছর ধরে চলছে। গোর্খা, শিখ-সহ বিভিন্ন রেজিমেন্ট আছে। অগ্নিবীরদের নিয়োগ করার সময় রেজিমেন্টের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত। সেটাই ভারতীয় সেনার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। তাতে কোনোভাবেই আঘাত লাগা কাম্য নয়।

অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা

ইসরায়েলের মতো কিছু দেশ আছে, যেখানে সেনায় প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক। তাহলে ভারতে চুক্তির ভিত্তিতে বেতন দিয়ে অগ্নিবীর নিয়োগ নিয়ে এত হইচই হচ্ছে কেন? উৎপল ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ভারতের ভৌগলিক অবস্থান, পরিস্থিতি, ঐতিহ্য সবই আলাদা। সেনায়া চাকরি করা এখানে ইচ্ছের উপর নির্ভর করে। কাউকে জোর করা হয় না। তাই ভারতের সঙ্গে অন্য দেশের কোনো তুলনা চলে না, করা উচিতও নয়।