1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খালেদার সাজা বেড়ে ১০ বছর, সংলাপ বৃহস্পতিবার

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩০ অক্টোবর ২০১৮

জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেছে হাইকোর্ট৷ ফলে তিনি নির্বাচনের অযোগ্য হতে পারেন৷ বৃহস্পতিবার নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ করবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ৷

https://p.dw.com/p/37MWN
Khaleda Zia Bangladesch
ছবি: Bdnews24.com

চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন বিশেষ আদালত জিয়া অর্ফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়৷ মামলার অন্য ৫ আসামি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ,সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, সাবেক সাংসদ ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ এবং জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমানকে দেয়া হয়েছিল ১০ বছরের কারাদণ্ড৷ এই মামলার রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার পক্ষে আপিল এবং দুদকের পক্ষে সাজা বাড়ানোর জন্য রিভিশন আবেদন করা হয়৷ মঙ্গলাবার হাইকোর্টের  বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ খালেদার আপিল খারিজ করে দুদকের রিভিশন গ্রহণ করে তাঁর সাজার মেয়াদ ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করার রায় দেয়৷ অন্যদের আগের ১০ বছরের কারাদণ্ডই বহাল রেখেছে আদালত৷

‘অন্য আসামিদের যেহেতু ১০ বছর কারাদন্ড হয়েছে, তাই হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার সাজাও বাড়িয়েছেন’

দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান জানিয়েছেন, ‘‘সংবিধান অনুযায়ী কারুর দু'বছরের কারাদণ্ড হলে তারপর ৫ বছর পার না হলে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হন৷ আপিলে খালেদা জিয়ার শাস্তি বেড়ে ১০ বছর হয়েছে৷এটা নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ৷ তিনি এখন আর নির্বাচন করতে পারবেন না৷''

তিনি বলেন, ‘‘এই মামলায় খালেদা জিয়া প্রধান আসামি৷ অন্য আসামিদের যেহেতু ১০ বছর কারাদণ্ড হয়েছে, তাই হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার সাজাও আড়িয়ে ১০ বছর করেছেন৷''

খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আদালত সাজা বাড়িয়ে দিলে আমাদের কী করার আছে৷ আমরা এখন আপিল করব৷ লিভ টু আপিল করলে  খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন৷''

‘খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় শাস্তি দেয়ার মতো জঘন্য কাজ আর কিছু হতে পারেনা’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘সংলাপ আর এটা আলাদা জিনিস৷ তারপরও সংলাপে খালেদা জিয়ার বিষয়টি উঠবে৷''

 

এর আগে সোমবার জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার ৭ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়৷

এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে সংলাপে বসবে শাসক দল আওয়ামী লীগ৷ মঙ্গলবার সকালে  আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংলাপের চিঠি ড. কামাল হোসেনের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে৷ সংলাপের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা৷ চিঠি পৌঁছানোর পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংলাপে নেতৃত্ব দেবেন৷ আলোচনা হবে খোলা মনে৷ ঐক্যফ্রন্ট নিশ্চয়ই তাদের সাত দফা নিয়ে আলোচনায় আসবে৷ আমরা কথা বলবো৷ তবে দাবিগুলোর কিছু আছে যা যৌক্তিক৷ কিন্তু সেখানে আমাদের কিছু করার নেই৷ যা করার নির্বাচন কমিশন করবে৷'' তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমরা কোনো চাপের মুখে আলোচনায় বসছি না৷''

এদিকে সংলাপের বিষয়ে খুব দ্রুত পরিস্থিতির পরিবর্তণ হয়৷ ড. কামাল হোসেন সংলাপ নিয়ে শেখ হাসিনাকে চিঠি দেয়ার পর সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর অনির্ধারিত আলেচানায় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ এরপর রাতে ওবায়দুল কাদের ফোন করে সংলাপের কথা জানান ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও গণফোরাসের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টুকে৷ আর মঙ্গলবার সকালে দেয়া হলো আনুষ্ঠানিক চিঠি৷

‘ সংলাপ সরকারের একটি কৌশল হতে পারে, দেখতে চাইছে যে সবার সঙ্গে কথা বলছে’

মোস্তফা মোহসিন মন্টু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা ১৫ সদস্যের একটি টিম সংলাপে অংশ নেবো৷ আজকের (মঙ্গলবার) মধ্যেই এই নাম প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেবো৷''

তিনি বলেন, ‘‘সংলাপের এই আমন্ত্রণকে আমরা ইতিবাচকভাবে দেখছি৷ আমরাএটাকে অভিনন্দন জানাই৷ আমরা সংলাপে আমাদের সাত দফা দাবি নিয়েই কথা বলবো৷''

ঐক্যফ্রন্টের সাত দফায় যা যা আছে:

১. (ক) বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার করতে হবে৷ একই সাথে (খ) সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার৷ (গ) নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা৷ (ঘ) পুরনো মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার না করা৷ (ঙ) কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের ন্যায্য আন্দোলন এবং সামাজিক ও গণমাধ্যমে মত প্রকাশের অভিযোগে গ্রেফতার ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তির নিশ্চয়তা আদায়৷

২. আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিতে হবে৷

 ৩. রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে৷ নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না৷

‘আমরা কোনো চাপের মুখে আলোচনায় বসছিনা’

৪. আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে৷

 ৫. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে তাদের ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ না করা৷

 ৬. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করা৷ নির্বাচনের একমাস আগে থেকে নির্বাচনের পর ১০ দিন পর্যন্ত মোট ৪০ দিন সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে৷ একইসঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে৷

 ৭. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা ও পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে৷ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর যুগোপযোগী সংশোধন করতে হবে৷

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমদে আজম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়াকে একটার পর একটা মিথ্যা মামলায় শাস্তি দেয়া হচ্ছে৷ এরচেয়ে জঘন্য কাজ আর কিছু হতে পারে না৷ তারপরও আমরা এই সংলাপকে স্বাগত জানাই৷ তবে আমাদের কথা হলো সংলাপ যেন লোক দেখানো না হয়৷ সংলাপ যেন ব্যর্থ না হয়৷ এই সংলাপ যেন কোনো নতুন চতুরতা না হয়৷ সংলাপে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিই হবে এক নাম্বার বিষয়৷''

‘আমি এই সংলাপে কোনো আশা দেখিনা’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনূ মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই সংলাপ সরকারের একটি কৌশল হতে পারে৷ সরকার এর মাধ্যমে একটা স্কোর করতে চাইছে৷ তাদের যে সাত দফা দাবি তার কোনো সুরাহা হবে বলে আমার মনে হয় না৷ সামনে তফসিল ও নির্বাচনের আগেঐক্যফ্রন্টকে একটা গুড হিউমারে রাখতে চাইছে৷ আর সবাইকে দেখাতেও চাইছে যে, সরকার সবার সঙ্গে কথা বলছে৷''

আর জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের সাবেক অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক দিলারা চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি এই সংলাপে কোনো আশা দেখি না৷ খালেদা জিয়াকে একটার পর একটা মামলায় সাজা দেয়া হচ্ছে৷ এর প্রতিবাদ হবে৷ তাহলে কি সংলাপের পরিবেশ আছে? যেদিন চিঠি, তার পরের দিন উত্তর৷ যেদিন সংলাপের প্রস্তাব প্রহণ করা হলো সেদিইন খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড হলো৷ আমার কাছে বিষয়গুলো প্রশ্নবোধক৷ ঐক্যফ্রন্টের এক নাম্বার দাবি খালেদা জিয়ার মুক্তি৷ এটা কি তাঁরা মেনে নেবেন? কোনো দাবিইতো মানবে বলে মনে হয় না৷ সংলাপ না করার জন্য অনঢ় অবস্থন থেকে হঠাৎ সংলাপে চলে আসা আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয় না৷ আমার তো মনে হয়, এই সংলাপের মাধ্যমে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিএএনপি'র দূরত্ব বাড়বে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য