1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টেকসই দাফনের জন্য ছত্রাকের শবাধার

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

শুধু বেঁচে থাকতে নয়, মৃত্যুর পরেও দূষণ এড়ানো কি আমাদের দায়িত্ব হতে পারে? নেদারল্যান্ডসের এক ব্যক্তি টেকসই কফিন তৈরি করে এমন পথ খুলে দিচ্ছেন৷ ছত্রাকের তৈরি সেই আধার প্রকৃতিকে সমৃদ্ধ করছে৷

https://p.dw.com/p/475F4
ছবি: Esther Verkaik/Reuters

এপ্রন, গ্লাভস, সেফটি গগলস এবং অনেক কাঠের গুঁড়া, ল্যাব থেকে নেওয়া ছত্রাকের বীজ নিয়ে কাজ৷ সবকিছু মাপ অনুযায়ী মিশিয়ে ঢেলে শুধু ধৈর্য্য ও অপেক্ষার পালা৷ কফিন গজিয়ে তুলতে বব হেন্ডরিক্সের আর কিছুরই প্রয়োজন হয় না৷ তিনি মনে করেন, ‘‘ডেভিড অ্যাটেনবরো আর গ্রেটা টুনবার্গের আমার তৈরি ছত্রাকের কফিন পছন্দ হবে৷ যে সব মানুষ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভাবেন, তাঁদের জন্যই এই আবিষ্কার৷ যারা মৃত্যুর পর আবার প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে চান এবং মাটি দুষিত করার বদলে সার হিসেবে উর্বর করতে চান৷’’

মানব সার, অবিশ্বাস নাকি অভাবনীয় আইডিয়া? তরুণ এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইনার কাকতালীয়ভাবে ছত্রাকের কফিন উদ্ভাবন করেছিলেন৷ স্থাপত্য নিয়ে উচ্চশিক্ষার সময় তিনি জীবন্ত নির্মাণ উপকরণ নিয়ে কাজ করছিলেন৷ তিনি দেখলেন, যে ছত্রাক দিয়ে প্রায় সবকিছু করা যায়৷ বব হেন্ডরিক্স বলেন, ‘‘ছত্রাক জমিতে আবার প্রাণ সঞ্চার করে৷ দ্রুত বেড়ে ওঠে৷ বিদ্যুৎ, উত্তাপ বা আলো কিছুই লাগে না৷ উলটে বেড়ে ওঠার সময় ছত্রাক কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে৷ অর্থাৎ যত বেশি মানুষকে এভাবে দাফন করা যাবে, পৃথিবীর ততই উপকার হবে৷ আমাদের প্রচলিত দাফনের রীতির সঙ্গে এর মৌলিক পার্থক্য রয়েছে৷’’

এমন কফিনের জন্য প্রয়োজনীয় ছত্রাক গজাতে মাত্র সাত দিন সময় লাগে৷ উপরের অংশ  মখমলের মতো নরম৷ তারপর জীবন্ত এই ‘কুকুন’ শুকিয়ে ফেলে বৃদ্ধি বন্ধ করা হয়৷ ছত্রাক তখন ঘুমিয়ে পড়ে৷ দেখলে স্টাইরোফোমের বাক্স মনে হলেও সেটি শতভাগ প্রাকৃতিক এক পণ্য৷ বব বলেন, ‘‘সেটি ছুঁলে মনে আবেগ-অনুভূতি জাগে, ভালো লাগে৷ উষ্ণ, নরম ও হালকা৷ তবে অত্যন্ত স্থিতিশীল৷’’

ছত্রাকের তৈরি কফিন

নেদারল্যান্ডসে ছত্রাকের তৈরি কফিন ব্যবহার করে একশোরও বেশি মৃতদেহ দাফন করা হয়েছে৷

আন্ডারটেকার হিসেবে ইয়ন ফান কাস্টেরোপ গত বছর প্রথম কফিনটি বিক্রি করেন৷ ৮২ বছরের এক বৃদ্ধাকে সেটিতে শুইয়ে দাফন করা হয়৷ ছত্রাকের কফিনের দাম দেড় হাজার ইউরো৷ সাধারণ কফিনের তুলনায় দাম যথেষ্ট কম৷ ইয়ান বলেন, ‘‘আমার মনে হয় না মানুষ অর্থনৈতিক কারণে এমন ছত্রাকের কফিন বেছে নেন৷ তারা বরং বাকি বিশ্বের জন্য কোনো অবদান রাখতে চান৷ সবাইকেই কিছু করতে হবে, যাতে পৃথিবীর বুকে তাঁদের পদচিহ্ন যতটা সম্ভব কম রাখা যায়৷’’

কারণ প্রতি দিন সারা বিশ্বে প্রায় এক লাখ ষাট হাজার মানুষ মারা যান৷ তাদের চিহ্ন শুধু প্রিয়জনের হৃদয়ে নয়, শরীরের বিষাক্ত টক্সিক পদার্থেও থেকে যায়৷ কবরখানায় প্রচলিত কফিনে মৃতদেহ পুরোপুরি মাটির সঙ্গে মিশে যেতে ১০ বছর বা আরও বেশি সময় লাগে৷ অন্যদিকে  ছত্রাকের কফিন মরদেহসহ দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে মাটিতে মিশে যায় এবং একই সঙ্গে গাছপালার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দিয়ে মাটি সমৃদ্ধ করে৷

নেদারল্যান্ডসের এই আবিষ্কারের খবর গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে৷ বিশেষ এক দিনে দেড়শোরও বেশি আন্ডারটেকার কোম্পানির প্রতিনিধি সরাসরি বব হেন্ডরিক্সের কাছ থেকে অরগ্যানিক দাফন প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি বুঝে নিচ্ছেন৷

আন্ডারটেকার হিসেবে জার্মানির ইয়োর্গ ফিভেগের মনে কোনো দ্বন্দ্ব নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার মতে, দাফন, মৃত্যু ও শোকের সময় টেকসই প্রক্রিয়া যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ গত কয়েক বছরে বিষয়টি আরও গুরুত্ব পেয়েছে৷ আমার বিশ্বাস, সেই গুরুত্ব আরও বাড়বে৷ কারণ যাঁরা আমাদের দাফন করবেন, তাঁরাও আজ গ্রেটার সঙ্গে পথে নামছেন, প্রতি শুক্রবার বিক্ষোভ দেখান৷’’

টেকসই দাফন প্রক্রিয়া এখনো হয়তো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য না হয়ে উঠলেও উদ্ভাবক হিসেবে বব হেন্ডরিক্স ও অন্যান্য আন্ডারটেকার এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশাবাদী৷ পৃথিবীর কল্যাণের তাগিদে আরও বেশি মানুষ ছত্রাকের কফিনে দাফন করবে বলে তাদের বিশ্বাস৷

গুডরুন এঙেল/এসবি