1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশি তারকাদের প্রচার নিয়ে বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৫ এপ্রিল ২০১৯

বাংলাদেশের দুই অভিনেতার পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেয়ার খবরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷ তৃণমূলের প্রার্থীরা বলছেন, তাদের অজ্ঞাতেই প্রচারে অংশ নিয়েছেন তাঁরা৷ তবে বিরোধীদের বক্তব্য, সংখ্যালঘু ভোট প্রভাবিত করতেই এই কৌশল৷

https://p.dw.com/p/3HP38
Bangladesch TMC Kampagne
ছবি: DW/P. Samanta

জনপ্রিয় নায়ক ফেরদৌস ও অভিনেতা গাজী আবদুন নূরকে সম্প্রতি দুই তৃণমূল প্রার্থীর প্রচারে দেখা গেছে৷ রায়গঞ্জের প্রার্থী কানাইয়ালাল আগরওয়ালের প্রচারে ফেরদৌস আর দমদমের প্রার্থী সৌগত রায়ের প্রচারে উপস্থিত ছিলেন নূর৷ ফেরদৌস মঞ্চে উঠে মাইক ধরে জনতার উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন৷ অংশ নিয়েছেন রোড শো'তে৷ নূরকে দেখা গেছে প্রচারের গাড়িতে৷

এই ব্যাপারে বিজেপি অভিযোগ জানায় নির্বাচন কমিশনে৷ তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেয় ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷ দুই অভিনেতাকে ভারত ছাড়তে বলা হয়৷ তাঁরা বাংলাদেশে ফিরে গেলেও এখানে রেখে গিয়েছেন রাজনৈতিক বিতর্কের বীজ৷ প্রশ্ন উঠেছে, এই কাজ কি বেআইনি? অন্য দেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ?

‘অপদার্থ বিজেপি-কংগ্রেস-সিপিএম এসব প্রচার করছে’

ভারতের নির্বাচন সংক্রান্ত আইনে বিদেশিদের নিয়ে কিছু বলা নেই৷ আইন বিশেষজ্ঞ অরুণাভ ঘোষ বলেন, ‘‘এটা বেআইনি কাজ নয়৷ আইনগত কোনো বাধা এতে নেই৷ ধর্মপ্রচার করতে কত বিদেশিই আমাদের দেশে আসেন৷ কিন্তু, কোনও বিদেশি এমন কাজ করতে পারবে না যা ভারতের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়৷''

এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা নিল কেন? তাঁর বক্তব্য, ‘‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ভিসা বাতিল করে দিয়েছে৷ সেটা একটা দেশের সরকার করতেই পারে৷ এ দেশে এসে কেউ ভোট প্রচার করছে, এতে সরকারের আপত্তি থাকতেই পারে৷ বিষয়টা বাংলাদেশ সরকারও বুঝেছে৷''

দমদম লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী, বিদায়ী সাংসদ সৌগত রায় ডয়চে ভেলেকে জানান, তাঁর প্রচারে অংশ নেওয়া গাজী আবদুন নূরকে তিনি চিনতেনই না৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমি বাংলাদেশি অভিনেতাকে চিনিই না৷ কোন সিরিয়ালে অভিনয় করেন, সেটাও জানি না৷ ওঁকে আমি প্রচারে দেখেছি৷ এমন কত মানুষই থাকেন মিছিলে, সবাইকে চিনতে পারি না৷ পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র তারকারা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন, আমরা কেন বাংলাদেশের অভিনেতাদের প্রচারে আনতে যাব? ওঁরা কাছাকাছি ছিলেন, প্রচারে অংশ নিয়েছেন৷''

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনি সভায় বেশ কয়েকবার বিদেশি অভিনেতাদের প্রচারে অংশ নেওয়া নিয়ে কটাক্ষ করেছেন৷ দমদম কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য একে বাংলা ভাগের চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দুই হাজার কিলোমিটারের সীমান্ত৷ এখান দিয়ে লাগাতার অনুপ্রবেশ হচ্ছে৷ এবার তৃণমূল এখানে বাংলাদেশের অভিনেতাদের নিয়ে এসে প্রচার করাচ্ছে৷ এরপর হয়তো বাংলাদেশ থেকে জিহাদি নিয়ে আসবে৷ এটা আরও একবার বাংলা ভাগের চক্রান্ত৷ তৃণমূলের এই অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে আমরা মানুষকে সংঘবদ্ধ করার চেষ্টা করছি৷''

অরুণাভ ঘোষ প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক৷ তিনিও বিরোধী নেতৃত্বের সঙ্গে একসুরে বলেন, ‘‘বাংলাদেশি তারকাদের এনে প্রচারের লক্ষ্য, সংখ্যালঘু ভোটারদের কাছে সমর্থনের আবেদন জানানো৷ সেই ভোটের উপর তৃণমূলের নির্বাচনি ভাগ্য নির্ভর করছে৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া আর কোনো নেতা তৃণমূলে নেই, যিনি প্রচারের মুখ হতে পারেন৷ তাই বাংলাদেশের অভিনেতাদের কাজে লাগানো হয়েছে৷'' 

‘এরপর হয়তো বাংলাদেশ থেকে জিহাদি নিয়ে আসবে’

বিজেপি নেতা মুকুল রায় তৃণমূলকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘এ বার রাজ্যের শাসকদল পাকিস্তান থেকেও তারকাদের আনবে৷ আসানসোলের প্রার্থী মুনমুন সেনের সমর্থনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান হয়তো প্রচারে আসবেন!''

কেউ বলছেন, তৃণমূলের ভরসা নেই বাংলার মানুষের উপর৷ তাই এবার বাংলাদেশ থেকে ভোটার নিয়ে আসবে!

তৃণমূল এই ঘটনায় কিছুটা ব্যাকফুটে৷ তবে বিরোধীদের আক্রমণের জবাব দিতে ভোটের মরসুমে তারা পিছপা নয়৷ সৌগত রায় বলেন, ‘‘অপদার্থ বিজেপি-কংগ্রেস-সিপিএম এসব প্রচার করছে৷ বাংলার মানুষের কাদের উপর ভরসা আছে, সেটা ভোটের ফলেই বোঝা যাবে৷ আবারও বলছি, এর নেপথ্যে কোনো পরিকল্পনা নেই৷''

তৃণমূল নেতা আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘বিজেপির বলার মতো কিছু নেই৷ তাই এসব বলে ভোট চাইছে৷ প্রচার শুরুর আগে বাংলাদেশি অভিনেতা আমাদের নেতার বাড়িতে এসেছিলেন৷ তাঁর সঙ্গে বেরিয়েছেন, প্রচারের গাড়িতে চড়েছেন৷ এটাকে এত ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর কিছু নেই৷''

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে এই ঘটনায় কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মত অরুণাভ ঘোষের৷ তাঁর বক্তব্য, এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কে অবনতির কোনো কারণ নেই৷ মোদী ও হাসিনা সরকারের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে৷ কূটনৈতিক স্তরে এই বিষয়টির সমাধান হয়েই গিয়েছে৷ শুধু নির্বাচনের মরসুম বলে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে বিতর্কের রসদ হয়ে উঠেছেন ফেরদৌস ও গাজী আবদুন নূর৷