1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী কমছে কেন?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৬ জুলাই ২০১৯

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী যে কমেছে সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ আদমশুমারিই সেটা প্রমাণ করে৷ কত কমেছে সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে৷ এখন প্রশ্ন হচ্ছে তারা সংখ্যায় কেন কমেছে৷

https://p.dw.com/p/3Ml4Y
ফাইল ফটোছবি: DW

স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম আদমশুমারি হয় ১৯৭৪ সালে তখন মোট জনসংখ্যার ১৩.৫ ছিলো হিন্দু৷ এপর ১৯৮১ সালের ১২.১ ভাগ, ১৯৯১ সালে ১০.৫, ২০০১ সালে ৯.৩ এবং ২০১১ সালে সর্বশেষ আদমশুমারিতে ৮.৫ ভাগ হিন্দু জনগোষ্ঠীর কথা বলা হয় ৷ আর এতে স্পষ্ট যে স্বাধীন বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী ক্রমান্বয়ে কমেছে৷ আর এই সময়ে মুসলিম জনগোষ্ঠী বেড়েছে৷ ১৯৭৪ সালে শতকরা ৮৫.৪ ভাগ থেকে ২০১১ সালে ৯০.৪ ভাগে উন্নীত হয়েছে৷ তবে এই সময়কালে বৌদ্ধ ০.৬ ও খ্রিস্টান ০.৩ ভাগ ছিলো৷ অন্যন্য ধর্মাবলম্বী ০.২ থেকে ০.৩ ভাগ এর মধ্যে৷ এই হিসাবটি সরাসরি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর(বিবিএস) হিসেব থেকেই তুলে ধরা হয়েছে৷এই হিসেবে দেখা যায় বাংলাদেশে বৌদ্ধ , খ্রিস্টান এবং অন্য ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা কমেনি, একই আছে৷ 

‘প্রিয়া সাহা সেটাই হয়তো বলেছেন’

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ৷ তখন মোট মুসলমানের সংখ্যা ছিলো ৬ কোটি ১০ লাখ ৩৯ হাজার৷ আর হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিলো ৯৬ লাখ ৭৩ হাজার৷ ২০১১ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৪ হাজার৷ আর হিন্দুদের সংখ্যা হয় ১ কোটি ২৩ লাখ৷ এই সময়কালে মোট জনসংখ্যার আনুপাতিক বা শতকরা হারে মুসলিম জনগোষ্ঠী বাড়লেও হিন্দু জনগোষ্ঠী আনুপাতিক হারে না বেড়ে উল্টো কমেছে৷ আর সেটা শতকরা হিসেবে পাঁচ ভাগ৷

বাংলাদেশে সবশেষ আদমশুমারি হয়েছে ২০১১ সালে৷ প্রতি ১০ বছর পর পর আদমশুমারি হয়৷ সেই হিসেবে ২০২১ সালে ষষ্ঠ আদমশুমারি হওয়ার কথা৷

তবে আদমশুমারি ছাড়াও প্রতিবছর পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের অধীনে বিবিএস বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস প্রকাশ করে৷ তাতে ২০১৮ সালের প্রদিবেদনে বলা হয় বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার ৮৮.৪ ভাগ৷ হিন্দু এবং অন্য ধর্মাবলম্বী ১১.৬ ভাগ৷ এখানে হিন্দুদের শতকরা হার আলাদাভাবে দেওয়া হয়নি৷ এই হিসেবে দেখা যায় ২০১১ সালের পর শতকরা হিসেবে মুসলিম জনগোষ্ঠী কিছুটা কমেছে৷ হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মবলম্বী জনগোষ্ঠী শতকরা হিসেবে কিছুটা বেড়েছে৷ বৌদ্ধ ও খিস্ট্রান ধর্মের অনুসারি একই থাকায় হিসেব করে বলা যায় হিন্দু এখন মোট জনগোষ্ঠীর ১০.৫৯ ভাগ৷ মোট জনসংখ্যা বলা হয় ১৬ কোটি ৪৬ লাখ৷ সেই হিসেবে বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী এখন ১ কোটি ৭৪ লাখ৷ এই হিসেব ধরলে ২০১১ সাল ধেকে ৮ বছরে দেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী বেড়েছে ৫১ লাখ৷ তবে এই ৫১ লাখ কিভাবে বাড়ল তার কোনো ব্যাখ্যা নেই৷ আর এই সময়ে কোনো আদমশুমারিও হয়নি৷ 

বিবিএস-এর ২০১৫ সালের একই প্রতিবেদনে  মোট জনসংখ্যার ১০.৭ শতাংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী  বলে উল্লেখ করা হয়৷ আগের বছর ৯ .৯ শতাংশ৷

২০১১ সালের আদমশুমারি প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জনসংখ্যা নিয়ে ১৯১১ সাল থেকে তথ্য দেয়া হয়৷ তাতে দেখা যায় এই অঞ্চলে ১৯১১ সালে মোট জনগোষ্ঠীর ৬৭.২ ভাগ ছিলো মুসলিম৷ হিন্দু ৩১ ভাগ৷ ১৯২১ সালে৬৮.১ ভাগ মুসলিম , হিন্দু ৩০.৬৷ ১৯৩১ সালে মুসলিম ৬৮.৫, হিন্দু ১৯.৪ ভাগ, ১৯৪১ সালে মুসলিম ৭০.৩, হিন্দু ২৮৷ ১৯৫১ সালে মুসলিম ৭৬.৯, হিন্দু ২২৷ ১৯৬১ সালে মুসলিম ৮০.৪, হিন্দু ১৮.৫৷ ১৯৭৪ সালে মুসলিম ৮৫.৪, হিন্দু ১৩.৫ ভাগ৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষক ড. আবুল বারকাত তার ‘বাংলাদেশে কৃষি-ভূমি-জলা সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি' নামের গবেষণা গ্রন্থে বলেছেন ১৯৬৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল সময়কালে আনুমানিক ১ কোটি ১৩ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বী নিরুদ্দিষ্ট হয়েছেন৷
তিনি বলেন,‘ এই গবেষণার বাইরে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ আছে৷ ১৯৪১ সালের আদমশুমারীতে মোট জনসংখ্যার ২৯.৭ ভাগ ছিলো হিন্দু৷  এখনো ২৯.৭ ভাগ হিন্দু থাকার কথা৷  এখন যা জনসংখ্যা তাতে  কম বেশি ৫ কোটি হিন্দু থাকার কথা৷ কিন্তু  আছে  ১ কোটি ৪০-৫০ লাখ৷ এই দু'টি বিয়োগ করলেই ৩ কোটি ৭০ লাখ হয়৷ প্রিয়া সাহা সেটাই হয়তো বলেছেন৷ কিন্তু এভাবে সরল হিসাব করা যায় না৷ এখানে পদ্ধতিগত ভুল আছে৷ কারণ ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগ হয়েছে৷ তখন পলিটিক্যাল মাইগ্রেশন হয়েছে৷'

তিনি বলেন,‘ যেসব হিন্দু নিরুদ্দিষ্ট হয়েছেন তারা দেশ ছেড়েছেন৷ আর কমনসেন্সেই বলা যায় তারা ভারতে গেছেন৷ গরীব হিন্দুরাতো আর জার্মানি অ্যামেরিকা যেতে পারেনি৷'

তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের এই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার ছয়টি কারণ চিহ্নিত করেন৷

১. এই অঞ্চলে মুসলমানদের ফার্টেইলিটি রেট বেশি

২. ৬৪ সালের দাঙ্গা

৩. ৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ

৪. এনিমি প্রোপার্টি এ্যাক্ট

৫. ভেস্টেড প্রোপার্টি এ্যাক্ট এবং

৬. নিরপত্তাহীনতা৷

‘এটা যাদের ক্ষমতা আছে তারাই করে’

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ যোগ করেন সংবিধানে রষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামের অন্তর্র্ভূক্তিকে৷ তিনি বলেন,‘‘হিন্দুদের ওপর আক্রমনের মূল টার্গেট হলো তাদের জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল৷ এটা যাদের ক্ষমতা আছে তারাই করে৷ এই টার্গেটে ক্ষমতাহীন মুসলমানরাও আছেন৷''

প্রসঙ্গত, সিলেট বিভাগে হিন্দু জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি৷ আর সবচেয়ে কম রাজশাহীতে৷ মুসলিম সবচেয়ে বেশি ময়মনসিংহে এবং সবচেয়ে কম সিলেটে৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷