1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হিন্দুরা কেন দেশত্যাগ করেন?

গোলাম মোর্তোজা
২৬ জুলাই ২০১৯

হিন্দুদের দেশ ত্যাগ মানে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে যাওয়ার প্রবণতা কখনো বন্ধ হয়নি৷ যাওয়ার হার কখনো কমেছে, কখনো বেড়েছে৷ কিছু গবেষণা ও বহু পরিসংখ্যান আছে৷

https://p.dw.com/p/3Ml0r
Bengalische Frau Sindoor
ফাইল ফটোছবি: N.Seelam/AFP/GettyImages

বাংলাদেশ সরকারের যে পরিসংখ্যান (বিবিএস) তাতেও হিন্দুদের দেশ ত্যাগের প্রমাণ রয়েছে৷ ২০০১ সালের ও ২০১১ সালের শুমারির ১৫টি জেলার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছিল, ১০ বছরে প্রায় ৯ লাখ হিন্দু কমে গেছে৷  জেলাগুলো ছিল বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, পাবনা৷ এসব জেলা থেকে হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাওয়ার নানাবিধ ব্যাখ্যা অনেকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন৷ কেউ বলেছেন হিন্দুদের মৃত্যুহারের চেয়ে জন্মহার কম৷ কেউ বলেছেন এক জেলা থেকে হয়ত অন্য জেলায় চলে গেছেন৷ এসব কোনো বক্তব্যের পক্ষে গ্রহণযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য তথ্য নেই৷ কমে যাওয়ার গ্রহণযোগ্য তথ্য আছে৷ বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলায় ১০ বছরে হিন্দু জনসংখ্যা কমেছে ৫৩ হাজার ৫৭২ জন৷ অনুসন্ধানে জানা যায়, এই সংখ্যার অধিকাংশই চলে গেছে ভারতে৷ 

বাংলাদেশ থেকে যে হিন্দুরা ভারতে চলে যায়, তা দৃশ্যমান বাস্তবতা৷ তবে সেই সংখ্যা কোনো অর্থেই ৩ কোটি ৭০ লাখ নয়৷ প্রিয়া সাহার এই তথ্য অসত্য এবং উদ্ভট৷ হিন্দুদের দেশত্যাগের কারণ বহুবিধ৷ প্রিয়া সাহার নালিশের মত সরল নয়৷ যে সব কারণে হিন্দুরা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান, মোটাদাগে তার কয়েকটি কারণ:

১.

বাংলাদেশের পাশে ভারতের মত একটি হিন্দু প্রধান বিশাল দেশ আছে৷১৯৪৭ সালে সীমান্ত নির্ধারিত হলেও, সব হিন্দু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে ভারতে চলে যাননি৷কোনো পরিবারের হয়ত এক ভাই গেছেন, দুই ভাই রয়ে গেছেন৷ অর্থাৎ ভারতে তাদের আত্মীয় পরিজন আছেন৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ভারত থেকে ফিরে আসা হিন্দুদের অনেকে বাড়ি-জায়গার দখল হারিয়েছেন৷ বাধ্য হয়ে তাদের একটি অংশ আবার ভারতে চলে গেছেন৷

২.

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের হিন্দুদের বাড়ি-জমি দখল করে নেওয়ার একটি প্রবণতা দেখা দেয়৷ সেই সময় হিন্দুরা বিশেষ করে যাদের জায়গা-জমি বেশি ছিল, তারা কম মূল্যে হলেও বিক্রি করে দিয়ে চলে যান৷

৩.

রাজনৈতিক পরিস্থিতি কখনো হিন্দুদের সুরক্ষা দেয়নি৷ হিন্দুরা বাংলাদেশে সব সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভূগেছে৷ এখনো ভূগছে৷ স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ,জাসদের রাজনীতির করুণ শিকার হতে হয়েছে হিন্দুদের৷

৪.

নিষিদ্ধ ঘোষিত সর্বহারা নাম নিয়ে যারা রাজনীতি করেছে,তাদের চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়েছে হিন্দুদের৷ 

কপোতাক্ষের তীরে সম্প্রীতির বন্ধন

৫.

জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ার সময়কালেও নির্যাতিত হয়েছে হিন্দুরা৷বিশেষ করে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের ভয়ানক নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে হিন্দুদের৷

৬.

আওয়ামী লীগের সময়ে হিন্দুরা ভালো থাকবেন,নিরাপদে থাকবেন,সাধারণভাবে এটা মনে করা হয়৷ বাস্তবতা হলো,১৯৯৬ ও ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত সময়কাল পর্যালোচনা করলে প্রমাণ মেলে না যে হিন্দুরা নিরাপদে আছেন৷ একথা সত্যি যে,২০০৯ সালের পর থেকে হিন্দুরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল হয়েছেন৷সেই সংখ্যা তুলনামূলক বিচারে অনেক৷ এই চিত্র প্রমাণ করে হিন্দুরা ভালো আছেন৷কিন্তু সারা দেশের সামগ্রিক চিত্র সন্তোষজনক নয়৷ভালো আছেন অল্প কিছু সংখ্যক, খারাপ আছেন এমন সংখ্যা বেশি৷

৭.

গত ১০ বছরে হিন্দুদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে৷ কোনো ঘটনারই প্রকৃত তদন্ত-বিচার হয়নি৷ ফরিদপুর শহরের একটি হিন্দু পরিবার বাড়ি-জমি বিক্রি করে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন৷ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও, পরিবারটিকে চলে যেতে হয়েছে৷

৮.

বাংলাদেশ থেকে মূলত অবস্থাসম্পন্ন হিন্দুরা চলে গেছেন৷ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কমবেশি সব দেশেই নিরাপত্তাহীনতা ও নিপীড়নের শিকার হন৷ ভারতে মুসলমানরাও নিপীড়ন বা নির্যাতনের শিকার হন৷ তারপরও মুসলমানরা ভারতেই থাকেন, পাকিস্তান বা বাংলাদেশে চলে আসার চষ্টা করেন না৷ কেন করেন না? কারণ পাকিস্তান বা বাংলাদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই৷ তারা ভারতেই থাকেন৷ নির্যাতিত হলে প্রতিরোধ করেন, ক্ষেত্র বিশেষে আক্রমণও করেন৷ 

Bangladesh Journalist Golam Mortoza
গোলাম মোর্তোজা, সম্পাদক ও টেলিভিশন ব্যক্তিত্বছবি: Golam Mortoza

উল্টো চিত্র বাংলাদেশের ক্ষেত্রে৷ এখানে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়ে, নিরাপত্তাহীনতায় ভূগে হিন্দুরা ভারতে চলে যান৷ কারণ ভারতে তাদের স্বজন আছেন, যাওয়ার সুযোগও আছে৷ না গিয়ে শুরু থেকে যদি প্রতিরোধ গড়ে তোলা যেত, তবে হয়ত হিন্দুদের এভাবে দেশত্যাগ করতে হতো না৷

৯. পরিশেষে বলে রাখি, বাংলাদেশের মূলধারার রাজনীতি হিন্দুদের দেশত্যাগের কারণ৷ হিন্দুদের নিপীড়ন-নির্যাতন, দখল, জ্বালাও-পোড়াও ইসলামি মৌলবাদী বা জঙ্গিরা করেনি৷ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, কোথাও কোথাও বিএনপি৷ ২০০১ সালের পর কিছু করেছে জামায়াত৷ প্রিয়া সাহা যে বাড়ি পোড়ানোর অভিযোগ ইসলামি মৌলবাদী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এনে বাংলাদেশকে মৌলবাদী রাষ্ট্রের পরিচিতি দিতে চেয়েছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই৷ কোনো গবেষণা বা পরিসংখ্যানে এমন তথ্য নেই৷

নাসিরনগর থেকে সাথিয়া সবক'টি ঘটনায় সম্পৃক্ততা ছিল ক্ষমতাসীনদের৷ অর্থাৎ দায় মূলত মূলধারার রাজনীতির৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷