1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মদের দোকানে তালায় বিপাকে সুরাপায়ীরা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৯ এপ্রিল ২০২০

লকডাউনে বন্ধ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সব মদের দোকান৷ যার কারণে নিয়মিত মদ্যপায়ীরা পড়েছেন বিপাকে৷ এর মধ্যে ভাইরাল বার্তা আর গুজবে ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তিও৷

https://p.dw.com/p/3ahqc
ছবি: DW/P. Samanta

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে ২১ দিনের লকডাউন চলছে ভারতে৷ অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দোকান ও বাজার খোলা৷ এছাড়া শুধু মিলছে জরুরি পরিষেবা৷ স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ রয়েছে মদের দোকান৷ এর ফলে বিপাকে পড়েছেন সুরা ভক্তরা৷ ইতিমধ্যেই রাজ্যে মদের কালোবাজারি ব্যাপক হারে বেড়েছে৷ চার-পাঁচ গুণ দামে বিক্রি হচ্ছে নামী কোম্পানির মদ৷

বাগুইআটির এক ক্রেতার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি পরিচিত ব্র্যান্ডের হুইস্কি যা ৫৪০ টাকায় বিক্রি হয়, তার জন্য এখন আড়াই হাজার টাকা দর উঠছে৷ শুধু কালোবাজারি নয়, এই সুযোগে জাল ও চোলাই মদেরও রমরমা বাড়ছে৷

এপ্রিল মাসের প্রথম দিন হঠাৎ গুজব রটে যায়, কয়েক ঘণ্টার জন্য মদের দোকান খোলা হচ্ছে৷ অনেক জায়গায় লাইন পড়ে যায় ক্রেতাদের৷ কিছুক্ষণ পরেই ভুল ভাঙে৷ বোঝা যায়, এপ্রিল ফুল করার জন্যই এই গুজব রটানো হয়েছিল৷ দ্বিতীয় ঘটনাটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ৷ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত কলকাতার কয়েকজন বাসিন্দা লকডাউনের সময় জরুরি পরিষেবা দেওয়ার জন্য একটি গ্রুপ তৈরি করেছিলেন৷ তারা যেমন প্রবীণদের ওষুধ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌছে দেয়া থেকে শুরু করে নিজের গাড়িতে রোগীকে পৌঁছে দিচ্ছিলেন হাসপাতালে৷ কিন্তু, স্রেফ মদের আর্জি জানিয়ে অজস্র ফোন আসায় কেউ কেউ নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন৷ তাদের একজন সৌরভ চক্রবর্তীর মোবাইলে মদের হোম ডেলিভারির আর্জি জানিয়ে হাজার হাজার ফোন আসছে৷ আসছে অন্যান্য নেশার সামগ্রীর আবদার৷ এর মধ্যেই অনেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন৷ এই গোষ্ঠীর সদস্য আইনজীবী অনন্যা দাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার কাছে গুটখা চেয়ে ফোন এসেছে৷ কিন্তু, এটা কি অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মধ্যে পড়ে? তবু আমরা চেষ্টা করছি জরুরি পরিষেবা দিতে৷’’

রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

মদ্যপায়ীদের তরফ থেকে কয়েকদিন ধরেই এই দাবিটি উঠে আসছে যে, নেশার সামগ্রী হোম ডেলিভারি করা হোক৷ এ নিয়ে বুধবার বিকেল থেকে ব্যাপক বিভ্রান্তি ছড়ায়৷ বিভিন্ন অনলাইন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, মদের হোম ডেলিভারি করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে৷ দোকানে ফোন করে অর্ডার দেওয়া যাবে৷ কাউকে দোকানে সশরীরে আসতে হবে না৷ দোকানের ডেলিভারি বয় তা দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বাড়িতে পৌঁছে দেবেন৷ এই খবর বিদ্যুতের গতিতে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, বার্তা ভাইরাল হয়ে যায়৷ যদিও এই বার্তা কে দিচ্ছে, তার হদিস মেলেনি৷ দ্রুত টনক নড়ে প্রশাসনের৷ কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জানা যায়, এই ধরনের কোনো নির্দেশ রাজ্যের আবগারি দপ্তর জারি করেনি৷ বস্তুত এক্ষেত্রে আইনগত বাধা রয়েছে৷

যাঁরা নিয়মিত মদ্যপান করেন, তাদের মতে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য না হওয়া সত্ত্বেও রাজ্য সরকার মিষ্টির দোকান দিনে চার ঘণ্টার জন্য খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে৷ তবে মদের দোকানের ক্ষেত্রে তা হবে না কেন? এই দোকানগুলি বন্ধ থাকায় রাজস্বের অনেক ক্ষতি হচ্ছে ঠিকই৷ কিন্তু বিশৃঙ্খলা এড়াতে এ ধরনের কোনো অনুমতি সরকার দিচ্ছে না বলে মূখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে৷

এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে সুরার ভক্ত দাবি করে সাহিত্যিক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সুর ও সুরা, দুটিই আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ মদ্যপান করে লেখার পরে আমি দেখেছি, এমন শব্দচয়ন করেছি, যা নিজে লিখেছি ভেবে পরে বিস্মিত হয়েছি৷ এই ঘটনা ঘটেছে পৃথিবীর অন্য শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদের ক্ষেত্রেও৷ কিন্তু, এখনকার পরিস্থিতি মেনে নিতেই হবে৷ আগে প্রাণ বাঁচুক, পরে প্রাণনের কথা ভাবা যাবে৷’’