1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘‌ল্যাংড়াকে ট্যাক্সিতে ওঠাই না‌’!‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৫ ডিসেম্বর ২০১৯

দুর্বল হাঁটুর কারণে চলাফেরার সমস্যায় থাকা এক মহিলা যাত্রীর সঙ্গে চূড়ান্ত দুর্ব্যবহার কলকাতা বিমানবন্দরে৷ বোঝা গেল, প্রতিবন্ধীদের প্রতি কতটা সহানুভূতিহীন এই সমাজ৷

https://p.dw.com/p/3UFpk
ফাইল ছবিছবি: AFP/Getty Images

দীর্ঘদিনের দিল্লি প্রবাসী বাঙালি জয়িতা সেন ব্যক্তিগত কাজে কলকাতা এসেছিলেন৷ কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছে তিনি অ্যাপ মারফৎ একটি উবার ট্যাক্সি বুক করেন৷ বুক করার সময় জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, তিনি হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেন৷ ‘‘‌হুইলচেয়ার ‌শব্দটা লেখাই ভুল হয়েছিল!‌’’ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন জয়িতা, কারণ, তাঁর বুক করা ট্যাক্সির চালক সম্ভবত সেটা দেখেই বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পর বুকিং বাতিল করে দেন৷ কিন্তু ততক্ষণে সেই ট্যাক্সির সামনে পৌঁছে গেছেন জয়িতা৷ তিনি জানতে চান, কেন ট্রিপ ক্যানসেল করা হচ্ছে?‌ তাতে ওই ট্যাক্সিচালক অত্যন্ত অভদ্র ভঙ্গিতে জানান, তিনি ল্যাংড়াদের ট্যাক্সিতে তোলেন না!‌ জয়িতা যেন অ্যাম্বুলেন্স ডেকে নেন!‌

হুইলচেয়ার ‌শব্দটা লেখাই ভুল হয়েছিল!‌: জয়িতা সেন

জয়িতা সেনের হেনস্থার এখানেই শেষ হয়নি৷ তাঁর ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশকর্মী, যিনি নীরবে গোটা ঘটনাটি দূর থেকে দেখছিলেন, তাঁর কাছে সাহায্য চান জয়িতা৷ ট্যাক্সি তখনও সামনেই দাঁড়িয়ে৷ কিন্তু ওই পুলিশকর্মী নির্বিকার ভঙ্গিতে বলেন, এটা তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না৷ জয়িতার সঙ্গে যিনি আছেন, তিনি যেন এসে ঝামেলাটা মিটিয়ে নেন৷ জয়িতা যখন জানান যে, তিনি একাই সফর করছেন, তখন সেই পুলিশকর্মী আরো অবহেলাভরে বলেন, ‘‘তা হলে থানায় যান!’’

এরপর জয়িতা কোনোক্রমে একটি সাধারণ প্রি-পেড ট্যাক্সিতে বাড়ি ফেরার পর একটি ভিডিও করে নিজের সেই হেনস্থার বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন৷ তাতে উবার এবং কলকাতা পুলিশ, দুই পক্ষকেই ট্যাগ করা হয়েছিল৷ দ্রুত ব্যবস্থা নেয় উবার এবং অভিযুক্ত ট্যাক্সিচালককে তৎক্ষণাৎ বরখাস্ত করে তারা৷ কিন্তু কোনো সাড়াশব্দই পাওয়া যায়নি কলকাতা পুলিশ বা রাজ্য প্রশাসনের তরফ থেকে৷ জয়িতা নিজেও আর বিষয়টি নিয়ে তদ্বির করার যুক্তি দেখছেন না৷ বরং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিনি ফিরে যেতে চাইছেন মমতাহীন এই শহর থেকে, যে শহরে তাঁর বড় হয়ে ওঠা৷

প্রতি রাজ্যে একজন করে ডিজএবিলিটি কমিশনার থাকেন: দেবজ্যোতি রায়

এরকম পরিস্থিতিতে একজন সাধারণ মানুষ কী করতে পারেন?‌ জানতে চাওয়া হয়েছিল কলকাতার ‘‌ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ প্রফেশনালস’ নামের এক বেসরকারি সেবা সংস্থার কাছে, যারা প্রতিবন্ধীদের বৃহত্তর সমাজে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে৷ সংস্থার মুখ্য কার্যনির্বাহী অফিসার দেবজ্যোতি রায় ডয়চে ভেলেকে জানালেন, এক জাতীয় ডিজএবিলিটি কমিশনের আওতায় প্রতি রাজ্যে একজন করে ডিজএবিলিটি কমিশনার থাকেন৷ তাঁর কাছে লিখিত অভিযোগ জানালে কমিশন রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করে৷ পদ্ধতিটা শুনে মনে হলো, জয়িতার মূল প্রশ্নটা উত্তরহীনই থেকে গেল৷ বিমানবন্দরের পুলিশকর্মী যখন জয়িতাকে বলেছিলেন থানায় গিয়ে অভিযোগ জানাতে, জয়িতা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘‘‌হুইলচেয়ারে চড়ে আমি থানায় যাবো কীভাবে?‌’’

আসলে প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে সবসময়ই চলে রাজনৈতিকভাবে নির্ভুল থাকার চর্চা৷ ‘‌হ্যান্ডিক্যাপড’ নয়, বলতে হবে ‘‌ডিফারেন্টলি এবল্‌ড’, বা ‘‌স্পেশালি এবল্‌ড’৷ ভারতে আবার একধাপ এগিয়ে তাতে দেবত্ব আরোপ করা হয়েছে৷ বিশেষভাবে সক্ষমও নয়, প্রতিবন্ধীদের এখন বলা হচ্ছে ‘‌দিব্যাঙ্গ'৷ কিন্তু যে নামেই ডাকা হোক, তাঁদের প্রতি সমাজ যে আগের মতোই সহানুভূতিহীন, সেটা আরো একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখালো কলকাতা বিমানবন্দরের এই নির্মম অসভ্যতা৷ আর সেটাও ঘটনাচক্রে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসের ঠিক আগের দিন!‌