1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুরেই অমর লতা, সামাজিক মাধ্যমে শোকে মুহ্যমান শিল্পীরা

রোশনি চক্রবর্তী
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২

সুরেই অমর তিনি৷ লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণের পর শোকপ্রকাশ শিল্পী মহলের৷ সামাজিক মাধ্যমে কেউ বাজালেন গিটার, কেউ লিখলেন কবিতা৷ একেবারে ব্যক্তিগত মুহূর্ত ভাগ করে নিলেন রুনা লায়লা৷

https://p.dw.com/p/46web
Indien I Trauer um Sängerin Lata Mangeshkar
ছবি: Debarchan Chatterjee/NurPhoto/imago images

সুরলোকে বেজে ওঠে কণ্ঠ৷ এ কথা তার জন্যই প্রযোজ্য৷ তিনি সুরসাম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর৷ তার জীবনাবসান হয়েছে সম্প্রতি৷ কিন্তু শিল্পীর তো মৃত্যু হয় না৷ শিল্পী যে সবসময় অমর৷ তাই তার মৃত্যুকে যেন অপ্রত্যাশিত বলেই মনে করেছিলেন আপামর সুররসিকরা৷ দশকের পর দশক–প্রায় সাড়ে সাত দশক ধরে তিনি অবিচ্ছেদ্য, সক্রিয় অংশ হয়ে উঠেছেন সংগীতপ্রেমীদের জীবনের৷ তাই হাওড়ার কোনো অখ্যাত যুবক তাকে নিজের মা ভেবেছেন, পালন করেছেন শেষকৃত্য৷ আবার সেলেব্রিটি মহলও শোকের বার্তা জানিয়েছেন নিজের মতো করে৷ বৈচিত্র, গভীরতায় লতা যে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন সমবেত শোকের প্রকাশ সে কথাই আবারও মনে করিয়ে দিলো৷ কেউ বাজালেন প্রিয় কোনো গান, কেউ ব্যক্তিগত শোক গোপন করতে পারলেন না, কেউ লিখলেন কবিতা৷

সংগীতশিল্পী শ্রেয়া ঘোষাল শোকবার্তায় লেখেন, ‘‘এই শোক পাথরের মতো৷ পাখিরাও যেন নীরব, গাছেদের পাতাও নড়ছে না৷ বইছে না বাতাসও৷ স্বর কোকিলা ভারত রত্নের আধ্যাত্মিক কণ্ঠের প্রতিধ্বনি শোনা যাবে নিঃসীম প্রান্ত পর্যন্ত৷''

গায়ক অরিজিৎ সিং ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘‘নিজের জগতে ফিরে গিয়েছেন মা সরস্বতী৷'' তাকে সাষ্টাঙ্গ প্রণামও জানিয়েছেন অরিজিৎ৷

প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক-সুরকার জয় সরকার গিটারে বাজিয়েছিলেন, ‘রহে না রহে হাম'–মজরুহ সুলতানপুরীর এই গান অমরত্বের প্রত্যাশা রেখেছিল হয়ত, গেয়েছিলেন লতা৷

পাশাপাশি জয় সরকার গিটারের সুরে জুড়ে দিয়েছিলেন শাহির লুধিয়ানভির লেখা, রোশনের সুরের ‘জো ওয়াদা কিয়া উয়ো নিভানা পড়েগা’৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় জয় লিখে জানিয়েছেন, সকাল থেকে কাঁদতে পারেননি, গানটা গিটারে বাজিয়ে কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি৷ টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘লতা মঙ্গেশকর আমার কাছে আক্ষরিক অর্থে ভয়েস অফ ইন্ডিয়া৷ উনি জাতীয় হয়েও আঞ্চলিক, কারণ, এত ভাষায় উনি গান গেয়েছেন৷ এত গান মারাঠি এবং বাংলায় গেয়েছেন৷ ওঁর মধ্যে ছিল প্রকৃত ভারতীয়ত্ব, যা হলো নানা ভাষা নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান৷ মিলনের জায়গাটা ওঁর কণ্ঠে পেয়েছি৷ ভারতের সব ভাষা, ধর্মের মানুষকে বেঁধেছেন উনি৷ উনি যা রেখে গেলেন আমাদের জন্য কিছু বাকি নেই৷ আমাদের দায়িত্ব গানবাজনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া৷ তবে এমন শিল্পী সারা পৃথিবীতে আর আসবে না৷ উনি চলে যাওয়ার পর বুঝতে পেরেছি উনি কতটা জায়গা জুড়ে ছিলেন৷ একজনের জীবদ্দশায় থাকা না থাকা উনি চলে যাওয়ার দিন অনুভব করেছি৷ এটা ভিতরে থেকে যাবে৷ ভারত অর্থনীতিতে তৃতীয় বিশ্বের দেশ হলেও সংগীতে প্রথম বিশ্বের দেশ, হয়তো বা প্রথম৷’’

 

সুরসাম্রাজ্ঞী ছিলেন তাঁর কাছে ‘এপিটোম অফ পারফেকশন’৷ লতার গায়কী, কণ্ঠের আবেদন গায়ক শ্রীকান্ত আচার্যের কাছে আজও রহস্য তৈরি করে৷ শ্রীকান্ত ডয়চে ভেলেকে জানান, ভারতীয় সংগীতের মূল ভাবধারা ‘অধ্যাত্মবাদ’ ধরা পড়েছে লতার গায়কীতে, কারণ, লতার কাছে গানের অর্থই ছিল সাধনা৷ তাই গজল-ভজন থেকে লাস্যময়ী নায়িকার কণ্ঠে যে-কোনো প্লে-ব্যাকে সাবলীল লতাকে রীতিমতো সমীহ করতেন বড়ে গোলাম আলি খাঁ সাহেব থেকে আমির খাঁ সাহেব৷ শিল্পীর প্রয়াণে সোশ্যাল মিডিয়ায় শচীন দেববর্মণ, আর ডি বর্মণের সঙ্গে ‘জীবন্ত সরস্বতীর' একটি ছবি পোস্ট করেছেন প্রথিতযশা গায়ক৷ লিখেছেন, ঠিক এখানেই ফিরে গিয়েছেন আবার, আর কিছু হতেই পারে না৷ প্রণাম৷

কবি শ্রীজাত শব্দের মাধ্যমে, ছন্দের মাধ্যমে শ্রদ্ধার্ঘ জানিয়েছেন কিংবদন্তি গায়িকাকে৷ কলানৈপুণ্য ও প্রজ্ঞায় সমৃদ্ধ লতার কণ্ঠ মিশে গিয়েছে জনমানসে৷ কণ্ঠের মাধুর্যে মুগ্ধ কবি লতা মঙ্গেশকরের একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন ‘ভাসান' নামে একটি কবিতা৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এটুকুই তার শোকের প্রকাশ৷ এই কবিতাটি আমার একমাত্র অনুভূতি। "

রইল পড়ে শুকিয়ে যাওয়া ফুল

রইল পড়ে শুভ্র ডাকের সাজ

মৃত্যুদিনও করেনি খুব ভুল–

সরস্বতী ভাসান যাবেন আজ৷

সা থেকে সা আমার দেশের মাটি৷

পা থেকে পা মিলিয়ে চলা সুরে,

তাঁর কণ্ঠের আলোতে পথ হাঁটি৷

জিরোয় না গান৷

এমন ভবঘুরে৷

জিরোয় শুধু ক্লান্ত শরীরটুকু

সময় এলে বাজে না এস্রাজ...

আলতো হাতে আলগা করি মুকুট,

সরস্বতী ভাসান যাবেন আজ৷

প্রাণ যাবে, তাও গান যাবে না কোথাও৷

আশেপাশেই থাকবে বাতাস হয়ে

দু'ধারে থাক সুরেলা সভ্যতাও

গান-নদী তার মাঝখানে যাক বয়ে...

দেবীর চালচিত্র ছিল দেশই৷

শরীরে তার সুরের কারুকাজ৷

এবার তাকে নিঃস্ব দেখায় বেশি,সরস্বতী ভাসান যাবেন আজ...

লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিল্পী রুনা লায়লা৷ তিনি ব্যক্তিগত কথা ভাগ করে নিয়েছেন সামাজিক মাধ্যমে৷ পোস্ট করেছেন দুজনের অতীতের ছবি৷ রুনা লেখেন, তার জন্মদিনে প্রতি বছর উপহার পাঠাতেন লতা মঙ্গেশকর৷ কিন্তু গত ১৭ নভেম্বর রুনা লন্ডনে থাকার কারণে উপহারের শাড়ি পাঠাতে পারেননি৷ তবে রুনা লায়লা ঢাকায় ফিরলে সেটা পাঠানোর কথা বলেন লতা মঙ্গেশকর৷ পোস্টে ‘মা সরস্বতী' বলে লতাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এই শিল্পীও৷

গায়ক কুমার শানু লিখেছিলেন, লতা দিদি চলে গিয়েছেন৷ এ শোকপ্রকাশের ভাষা নেই তার৷ তিনি সংগীত জগতের কাছে আশীর্বাদ ছিলেন৷

 প্রায় ৩৬টি ভাষায় ৩০ হাজারের কাছাকাছি গান গেয়েছেন এবং প্রতিটি গান সম্পূর্ণ নিখুঁত৷ তার সংগীতের সুধা পান করেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম৷ লতা মঙ্গেশকরের স্থান সবার মনে৷ তার গানের পরতে পরতে কখনো বিষাদ, কখনো বা প্রেম৷ মদনমোহন, নওশাদ থেকে কাইফি আজমি সবার সঙ্গেই কাজ করেছেন তিনি অনায়াসে৷

সাধনা-শর্মিলা থেকে কাজল-ঐশ্বর্য প্রত্যেকের অভিনীত চরিত্রে নিজেকে মিশিয়ে প্লে ব্যাক করেছেন কিন্নরকণ্ঠী৷ অনায়াসে গেয়ে উঠেছেন ‘রয়না বিত যায়ে' কিংবা ‘মোহে পনঘট পে' থেকে ‘তুঝে দেখা', ‘হামকো হামি সে চুরা লো'৷ সারস্বত স্পর্শ তিনি৷ মার্গসংগীতে নিবিড় থেকেও তাই বিচরণ করেছেন সংগীতের প্রতিটি স্তরে৷ অভিনেতা, নির্মাতা, সুরকার, এমনকি দর্শকও বদলেছে৷ কিন্তু রয়ে গিয়েছে, রয়ে যাবে সেই একমেবাদ্বিতীয়ম স্বর্ণকণ্ঠ৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য