1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আফগানিস্তান নিয়ে পশ্চিমা ভণ্ডামি অনেক হয়েছে

১৭ আগস্ট ২০২১

অনেকদিন ধরে ইউরোপ আফগানিস্তানে ক্রমে অবনতি হতে থাকা নিরাপত্তা পরিস্থিতি উপেক্ষা করে এসেছে৷ এখন তালেবান ক্ষমতা দখল করায় পশ্চিমা বিশ্ব হতভম্ব হচ্ছে৷ এই ভণ্ডামি বন্ধ করতে হবে, বলছেন ডিডাব্লিউর ওয়াসলাত হাসরাত-নাজিমি৷

https://p.dw.com/p/3z4Oc
কাবুল বিমানবন্দরের সামনে তালেবানের পাহারা
কাবুল বিমানবন্দরের সামনে তালেবানের পাহারাছবি: Rahmat Gul/AP Photo/picture alliance

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরে যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে পুরো দেশ দখল করে নিয়েছে তালেবান৷ এতে অনেক মানুষের হতভম্ব হওয়ার কারণ, তারা এখন বুঝতে পারছেন যে, ২০ বছর আগে তাদের সরকারগুলো মানবাধিকার রক্ষা করতে আফগানিস্তানে যায়নি, গিয়েছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে৷

কিন্তু এখন রাজনৈতিক অগ্রাধিকারে পরিবর্তন আসায় এবং খরচ-লাভের হিসাব যুক্তিসঙ্গত মনে না হওয়ায় তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরে যেতে চেয়েছেন৷

মিথ্যায় ভর করা মিশন

আফগানিস্তান মিশন একটা বড় মিথ্যা ছিল৷ জো বাইডেন চান না, যে মিশন চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের আমলে চলেছে, সেটা পঞ্চম জনের সময়ও চলুক৷ মানবাধিকার? নারী অধিকার? গণতন্ত্র? মনে হচ্ছে, এখন আর এসব পশ্চিমাদের সমস্যা নয়, হঠাৎ করে এখন এগুলো আফগানদের নিজেদের সমাধানের বিষয় হয়ে উঠেছে৷ ‘‘আফগান নেতাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে,’’ সম্প্রতি বলেছেন বাইডেন৷ ‘‘তাদের নিজেদেরই তাদের জন্য লড়তে হবে, তাদের দেশের জন্য সংগ্রাম করতে হবে৷’’

প্রতারিত  পরিত্যক্ত বোধ

কিন্তু বাইডেন তার বক্তব্যে এটা উল্লেখ করেননি যে, ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র শুধু তালেবান ও আল-কায়েদার সঙ্গে লড়তে আফগানিস্তানে যায়নি৷ আফগানদের গণতন্ত্র এনে দেয়ারও অঙ্গীকার করেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ আফগান নারীদের অধিকার রক্ষার কথাও বলেছিল তারা৷ কিন্তু এখন এটা পরিষ্কার যে, ঐ বক্তব্যগুলো শুধু ফাঁকা বুলিই ছিল; নারী অধিকার কিংবা গণতন্ত্র কোনোটাই মূল অগ্রাধিকারের বিষয় ছিল না৷

আফগানিস্তানের যে নারীরা এতদিন তাদের অধিকারের জন্য লড়ছিলেন, তাদের এই আশ্বাস দেয়া হয়েছিল যে, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সবসময় জয়ী হয়৷ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আবারও তাদের ২০০১ সালের আগের কালো সময়ে ফিরে যেতে হবে৷ এই নারীরা এখন নিজেদের প্রতারিত ও পরিত্যক্ত মনে করছেন৷ অনেক নারী অধিকার কর্মী এখন তাদের জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন৷

ওয়াসলাত হাসরাত-নাজিমি, ডয়চে ভেলের দারি-পশতু বিভাগের প্রধান
ওয়াসলাত হাসরাত-নাজিমি, ডয়চে ভেলের দারি-পশতু বিভাগের প্রধানছবি: Fahim Farooq

শরণার্থীদের গ্রহণ করতে হবে

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জার্মানির শরণার্থী নীতিও কম ভণ্ড নয়৷ সাম্প্রতিক সময়ে লাখ লাখ আফগান ঘর ছেড়ে পালিয়েছেন৷ এরপরও আফগানিস্তানকে ‘নিরাপদ দেশ’ চিহ্নিত করে ইউরোপে আশ্রয় নেয়া অনেক শরণার্থীকে দেশে পাঠানো হয়েছে৷ গ্রিস, তুরস্ক আর বলকান দেশগুলোতে অনেক আফগান করুণ অবস্থায় আছেন৷

এতদিন আফগানিস্তানের যুদ্ধবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদদের সমর্থন না করে জার্মানিসহ পশ্চিমা বিশ্বের উচিত ছিল আফগান মানুষ, সমাজ ও সংস্কৃতি বোঝার চেষ্টা করা৷ নারী অধিকার কর্মীদের অর্থহীন অঙ্গীকারের বাণী না শুনিয়ে তাদের শঙ্কার কথা শোনা উচিত ছিল৷ আরো উচিত ছিল সেনাবাহিনী গড়ে তোলায় সহায়তা না করে ভবিষ্যৎ গড়তে আফগান মানুষদের সহায়তা করা৷

এখন কী হবে? পশ্চিমা বিশ্বে আশ্রয় নেয়া আফগান শরণার্থীদের এখন যত দ্রুত সম্ভব আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়িয়ে গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে৷ যে শরণার্থীদের আশ্রয় আবেদন ঝুলে আছে সেগুলোর দ্রুত নিস্পত্তি করতে হবে৷ আগামী কয়েক মাস ও বছরে যে আফগানরা আসবেন তাদেরও গ্রহণ করতে হবে৷ এভাবে অন্তত ইউরোপ আফগানিস্তানের মানুষের ঋণ কিছুটা পরিশোধ করতে পারবে৷

ওয়াসলাত হাসরাত-নাজিমি/জেডএইচ