1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউক্রেনের মানুষের জন্য  ভালোবাসা  

৩ মার্চ ২০২২

এই মুহূর্তে ইউক্রেনের জনগণের পাশে দাড়ানো দায়িত্ব বলে মনে করছেন অনেক জার্মান৷ যুদ্ধের প্রভাব জার্মানিতে পড়বে ভেবেও তারা বিচলিত নয়৷

https://p.dw.com/p/47w1M
ইউক্রেনের মানুষের সাথে সংহতি দেখাতে কোলনবাসীর শান্তি বিক্ষোভ মিছিলছবি: Oliver Berg/dpa/picture alliance

ইউক্রেনের জন্য শান্তি বিক্ষোভ মিছিল করছেন তারা, কেউবা গরম পোশাক, লেপ কম্বল দিয়েও সাহায্য করছেন৷ ‘যুদ্ধ যে কতটা ভয়ঙ্কর আর কষ্টের তা আমার মতো যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখে বড় হয়েছে তারা খুব ভালো করেই জানে' - বললেন আমাদের জার্মান প্রতিবেশি ৮৩ বছর বয়সি মার্গারিটা৷ অত্যন্ত কর্মঠ ও সুশ্রী এই নারীর বয়স দেখে বোঝার উপায় নেই৷ সুন্দর পরিপাটি বাড়ির মালিক মার্গারিটা, ইয়োসেফ দম্পতি৷ কখনও কখনও তারা আমাকে যুদ্ধ পরবর্তী কষ্টের নানা গল্প শোনান৷ কতদিন কত রাত না খেয়ে থেকেছেন বা সামান্য খাবার পরিবারের সবাই ভাগাভাগি করে খেয়েছেন, তার হিসেব নেই৷ খসখসে কাপড়ের পতাকা কেটে দুই বোনের ফ্রক সেলাই করে দিয়েছিলেন রিটার মা৷ ইউসেফের ভাষায়, ‘এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এসব কিছুই জানে না, ওরা না চাইতেই সব পেয়ে যায়৷' তেলের দাম বাড়ে বাড়ুক! তেল, গ্যাসের ব্যবহার কিছুটা কমিয়ে দিলেই হবে৷ যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জিনিসপত্রের মূল্যবদ্ধি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার, সবাইকে হিসেব করে চলতে হবে৷ তাই বলে যুদ্ধ কখনও কাম্য নয়৷' 

প্রবীণ বা নবীন হোক, যুদ্ধ কখনও কারোই কাম্য নয়  আর তা দেখা গেলো গত সোমাবার কোলনের শান্তি বিক্ষোভ মিছিলে৷ ইউক্রেনের পক্ষে শান্তি বিক্ষোভে সমবেত হয়েছিল বিভিন্ন বয়সের দুই লাখ ৫০ হাজার মানুষ৷  কোলনের ইতিহাসে যা অন্যদের সাথে সংহতি দেখানোর সবচেয়ে বড় স্মারক৷ ইউক্রেনের সাথে সমব্যথী হতে শান্তি বিক্ষোভে গিয়েছিলেন  এক বীমা কোম্পানির কর্মী ৪৩ বছর বয়সি মাইকে অটেন৷ সাথে তার ১২ বছর বয়সি মেয়ে ফিলিপা, যার জন্ম চলন্ত গাড়িতে৷ মাইকে প্রসব যন্ত্রণায় কাতর, ফিলিপার বাবা দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন৷ হাসপাতাল খুব বেশি দূরে না হলেও সেখানে পৌঁছার আগেই পৃথিবীর আলো দেখে এই মেয়েটি৷ ঘটনাটি নিয়ে আমরা বেশ মজা করি৷ যুদ্ধ, শান্তি  আর সংহতির বিষয়গুলো মেয়েকে জানাতেই সাথে নেওয়া, জানান মাইকে৷ কোলনের শান্তি বিক্ষোভ মিছিলে আমার পরিচিত অনেকেই অংশ নিয়েছে সেদিন৷    

ইউক্রেন যুদ্ধে জার্মানি এবার তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি করে ১০০ বিলিয়ন ইউরো ব্যয়ের ঘোষণা করেছে৷ আগের নীতি ভঙ্গ করে ইউক্রেনকে অস্ত্রও পাঠাচ্ছে জার্মানি৷  এবার সংঘাতময় অঞ্চলে অস্ত্র সরবরাহ না করার নীতি থেকেও বেরিয়ে এলো৷ এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের প্রতিবেশি ডাক্তার লিংকারের সাথে কথা হয়, যিনি গত সপ্তাহেই তার ৮৫তম জন্মদিন পালন করলেন৷ বেশ অনেকদিন আগে চাকরি থেকে অবসর নিলেও পাড়া প্রতিবেশিদের সবসময় নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন তিনি৷ বিজ্ঞ এই মানুষটি  খুব সহজভাবেই বললেন, ‘ইউক্রেনের এখন জার্মানির সাহায্য প্রয়োজন তাই জার্মানি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে৷ যুদ্ধবাজ পুটিন নিজের ইচ্ছেমতো যা খুশি তাই করছে বলে তো আর অন্য দেশ হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না৷ কে জানে হয়ত কখনও পুটিন তার ভুল বুঝবে৷'  আরেক বন্ধু হাইস্কুল শিক্ষক মারিয়ানেও এ ব্যাপারে ডাক্তার লিংকারের সাথে একমত পোষণ করেন৷ করোনা মহামারি যুদ্ধের ভয়াবহতা কমলেও আতঙ্ক এখনও রয়ে গেছে৷ আর তারই মধ্যে শুরু হল মানুষের তৈরি এই যুদ্ধ ! সব মিলিয়ে আর ভালো লাগছে না৷

Nurunnahar Sattar, DW-Mitarbeiterin Bengali Programm
নুরুননাহার সাত্তার, ডয়চে ভেলেছবি: DW/A. Islam

আজকের দিনটি ভীষণ মিষ্টি, বাাইরে ঠান্ডা হলেও রোদ ঝলমলে করছে৷ পাখির কিচির মিচিরই  জানিয়ে দিচ্ছে বসন্তের আগমন৷ সুন্দর আবহাওয়ায় হাঁটতে বেরিয়ে বাড়ির কাছেই দেখা পোলিশ দম্পতি ডোরোথিয়া ও সেজারের সাথে৷ স্বাভাবিকভাবেই ওদের সাথে রয়েছে চকচকে বাদামি রঙ এর বিশাল কুকুর জারি৷ আমি আবার কুকুর ভালো চিনি না, তবে ওকে পাওয়ার জন্য নাকি অনেক আগে থেকে অর্ডার দিতে হয়েছে৷ বছর চারেক আগে জারিকে পোল্যান্ড থেকে আনা হয়েছে৷ প্রথমদিকে মানুষ দেখলেই জারি ভীষণ লাফালাফি করতো , প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে জঙ্গলে যাওয়ার আগেই বাড়ির আশে পাশেই কাজ সেরে ফেলায় অনেকে তখন অভিযোগও করেছে৷ এখন কিন্তু জারি ট্রেনিংপ্রাপ্ত পুরো দস্তুর ভদ্র কুকুর৷ বসতে বললে বসে, উঠতে বললে দাড়ায়৷ দেখা হলে কাছে এসে শব্দ করে হ্যালোর মতো কি যেন বলে আবার চলেও যায়৷ বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের দরজা খোলা দেখলে  ঢুকে পড়তে চায়৷ এ নিয়ে প্রতিবেশিরা মজা করে বলে ডরোথিয়া আর আমার চুলের রং এক বলে নাকি জারি আপন ভেবে আমাদের বাড়িতে ঢুকতে চায়৷ 

যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনের সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের পোল্যান্ড সরকার দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গন করছে,  তা এখন সকলেরই জানা৷ ইতোমধ্যে বহু বাংলাদেশিও পোল্যান্ডে ঠাঁই পেয়েছেন, এমন কি পোল্যান্ডের বৈধ ভিসা ছাড়াই৷ পোল্যান্ড সরকার এবং সে দেশের জনগণের এই উদারতায় পোলিশ হিসেবে সেজারে, ডোরেথিয়া দুজন খুবই গর্বিত৷  দেশে ওদের পরিবারও নাকি সাধ্য অনুযায়ী যুদ্ধ বিধ্বস্তদের সহযোগিতা করছে৷  আর মানুষের বিপদে একে অন্যকে সাহায্য করবে সেটাই তো  মানবতা, ওদের মন্তব্য৷

এদিকে আমাদের পাড়ার ছাত্রী লুইডিয়া হোয়াস অ্যাপ গ্রুপে জানিয়েছেন, যারা গরম জামা, জুতা, লেপ, কম্বল দিয়ে ইউক্রেনকে সাহায্য করতে চায় তারা যেন জিনিসগুলো প্যাকেটে ভরে ওর বাড়িতে পৌঁছে দেয়৷ এছাড়া কাছেই অন্য ঠিকানাও দেওয়া হয়েছে, চাইলে সেখানেও পোঁছে দিতে পারি আমরা৷ লুইডিয়া জানালেন কোলনে বেশ কিছু তরুণ দল নিজেদের উদ্যোগে এ কাজে এগিয়ে এসেছে৷  

প্রতিবেশিদের কথায় একটা বিষয় পরিষ্কার যে এরা সবাই প্রয়োজনে ইউক্রেনের জনগণকে সবাই কোনো না কোনোভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চায়৷ দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে মার্গারিটা যেমন সবসময় বলেন, কে কালো, কে সাদা, কে ধনী বা গরীব কিংবা কোন ধর্মের সেটা সৃষ্টিকর্তার দান৷ সবচেয়ে বড় কথা আমরা একই বিশ্বের মানুষ, মানবতাই বড় ধর্ম৷ আর মানুষ যে সেটা ভুলে যায়নি, বিপদে তার প্রমাণ পাওয়া যায়৷ 

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান