1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনা নিয়েও দিদি-মোদী সংঘাত

২১ এপ্রিল ২০২০

করোনা নিয়েও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সংঘাত শুরু হলো। রাজ্যকে না জানিয়েই দুইটি কেন্দ্রীয় দল সোমবার পশ্চিমবঙ্গে পৌঁছে যায়। তা নিয়েই সংঘাত। 

https://p.dw.com/p/3bCT7
ছবি: UNI

করোনা ও লকডাউনের বাজারেওঅভূতপূর্ব রাজনৈতিক সংঘাত শুরু হলো। আর এই সংঘাতের কেন্দ্রে পশ্চিমবঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে আগাম কিছু না জানিয়েই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পশ্চিমবঙ্গে দুইটি দল পাঠিয়ে দেয়। সোমবার সকাল দশটা নাগাদ দুই দলের সদস্যরা একটি বিশেষ মালবাহী বিমানে করে দমদম বিমানবন্দরে এসে নামেন। তাঁরা রাজ্যে পা দেওয়ার পনেরো মিনিট পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব ফোন করে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে জানান যে, দুইটি কেন্দ্রীয় দল রাজ্যের সাতটি জেলায় করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে। একটি দল কলকাতা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর ও উত্তর ২৪ পরগনার পরিস্থিতি দেখবে। অন্য দল যাবে দার্জিলিং, কালিম্পং ও জলপাইগুড়িতে। এর তিন ঘণ্টা পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। 

গোটা ঘটনায় প্রবল ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। টুইটও করেন। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, কোনও যুক্তিসংগত কারণ ছাড়াই রাজ্যকে অন্ধকারে রেখে কেন এই ভাবে কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হলো? প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মমতা বলেছেন, ''কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যখন করোনাকে আটকাতে সব রকম চেষ্টা করে যাচ্ছে, তখন কেন্দ্রীয় সরকারের এই আচরণ একেবারেই কাঙ্খিত ছিলো না। বলা হয়েছে, কিছু জেলায় পরিস্থিতি খুব খারাপ এবং লকডাউন মানা হচ্ছে না। কিন্তু এই দাবি মানা যাচ্ছে না। এরকম কোনও তথ্যও নেই। জলপাইগুড়িতে ৪ এপ্রিলের পর আর করোনা হয়নি। কালিম্পং-এ ২ এপ্রিল ও দার্জিলিং-এ ১৬ এপ্রিলের পর থেকে করোনায় কেউ আক্রান্ত হননি। অথচ, এই জেলাগুলিতে কেন্দ্রীয় দল যাচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত খুবই দুর্জভাগ্যজনক। রাজ্য সরকার প্রথম থেকে অত্যন্ত কড়াভাবে লকডাউন কার্যকর করেছে।'' 

ঘটনা হলো, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, কেন্দ্রীয় দল মহারাষ্ট্র মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানেও গিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় আধিকারিকরা মহরাষ্ট্রের দুইটি, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের একটি করে জায়গায় যাচ্ছেন। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই সাতটি জেলার পরিস্থিতি দেখবেন তাঁরা। তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, এটা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় আঘাত ছাড়া আর কিছু নয়। রাজনৈতিক কারণে দল পাঠানো হয়েছে। লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্ধ্যোপধ্যায়ের অভিযোগ, ''করোনা রুখতে মমতা ভালো কাজ করছেন। সেটা বরদাস্ত করতে পারছে না ওঁরা। উত্তর প্রদেশ, গুজরাটে তো কেন্দ্রীয় দল যাচ্ছে না।''

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব পুণ্যসলিলা শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, ''রাজ্যকে সাহায্য করার জন্য অনেক ভেবেচিন্তে বিভিন্ন মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের নিয়ে এই দল পাঠানো হয়েছে। তারা স্বাস্থ্য ও বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষেত্রে রাজ্যকে সাহায্য করবে।'' তৃণমূলের অভিযোগ, সাহায্য করতে হলে জানিয়ে আসা যেত, রাজ্য সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে দল পাঠাতো কেন্দ্র। 

রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''কেন্দ্রীয় দল তো রাজ্যকে সাহায্য করতে এসেছে, যুদ্ধ করতে নয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছেন। কারণ, গোড়া থেকেই তিনি তথ্য় গোপন করছেন। তাঁর ভয়, কেন্দ্রীয় দল এসে সব কিছু দেখলে গোপন করা তথ্য  ফাঁস হয়ে যাবে। করোনাকে এই ভাবে চাপা দেওয়া যাবে না।'' 

আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। তাই করোনা নিয়ে দিদি-মোদী সংঘাত তীব্র হয়েছে এবং অন্য মাত্রা পেয়ে গিয়েছে। করোনার বাজারে এই প্রথম কোনও রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের এই ধরনের বিরোধ হলো। কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা রাজ্য সরকারের আতিথ্য নেননি। তাঁরা কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীর সাহায্য নিয়েই ঘুরছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুগত হাজরা ডয়চে ভেলেকে বলেছেন,''জাতীয় বিপর্যয় আইন অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকার এই ভাবে দল পাঠাতে পারে। প্রয়োজন হলে রাজ্য়কে নির্দেশ দিতে পারে। কেরালা সরকার লকডাউনের নির্দেশ না মেনে সোমবার থেকে বইয়ের দোকান, রেস্তোরাঁ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বেসরকারি গাড়ি চলাচলেও অনুমতি দিয়েছিল। কেন্দ্রের নির্দেশে তারা তা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে।'' 

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)