1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্য

করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় আলাদা হাসপাতাল

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

চীনের উহান থেকে ফিরিয়ে আনা ৩১২ জন বাংলাদেশি নাগরিক চীনেই ভালো পরিবেশে ছিলেন বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক৷ তবে বাংলাদেশে এই ভাইরাস মোকাবেলায় যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/3XQ9P
ছবি: Privat

পয়লা ফেব্রুয়ারি চীনের উহান থেকে বিশেষ বিমানে ৩১২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়৷ যাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী৷ আশকোনা হজ ক্যাম্পে তাদের আটটি গণরুমে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে৷ সেখানে কমপক্ষে ১৪ দিন থাকতে হবে৷ সেখানে দেখাশোনার মূল দায়িত্বে আছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)৷ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর জানান, ‘‘এখন পর্যন্ত তাদের কেউই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হননি৷ তারা সবাই সুস্থ৷''

নয়জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিলো জ্বর দেখে৷ কিন্তু পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া গেছে তারা করোনা আক্রান্ত নন৷ 

‘‘আমাদের প্রস্তুতি যথেষ্ট ভালো’’

আশকোনা হজ ক্যাম্পে অবস্থানরত অন্তত দু'জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে ডয়চে ভেলের কথা হয়েছে৷ তারা জানান, চিকিৎসকরা সেখানে আন্তরিক৷ টিভি, ইন্টারনেট ছাড়াও তাদের বিনোদনের জন্য সেখানে খেলাধুলার সরঞ্জামও দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু গণরুম নিয়ে তারা আতঙ্কে রয়েছেন৷ কেউ যদি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন তাহলে অন্যদের মধ্যেও তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে বলে মনে করেন তারা৷

তবে আইইডিসিআর বলছে গণরুমে রাখা হলেও তাদের বিছানাগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনেই এক মিটার দূরত্বে স্থাপন করা হয়েছে৷ নেয়া হয়েছে সতর্কতামূলক সব ব্যবস্থা৷ ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘‘কোয়ারেন্টাইনতো গণরুমেই হবে৷ আপনি খেয়াল করবেন জাপানে একটি জাহাজ কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে৷ তিন হাজার ৭০০ লোক ঐ জাহাজে আছে৷ ইউএসএ যাদের নিয়ে গেছে তাদের সবাইকে একটা আর্মি বেজে রাখা হয়েছে৷ তারা সেখানে সবাই ফুটবল খেলছে, বাস্কেটবল খেলছে৷ তাহলে আমরা আশকোনায় কী সমস্যা করলাম! আমরা যথেষ্ট খেয়াল রাখছি৷ তারাতো কেউ রোগাক্রান্ত নন৷ সাধারণ মানুষ আইসোলেশন এবং কোয়ারেন্টাইনের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না৷ কোয়ারেন্টাইন সুস্থ মানুষকে পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য৷ আর আক্রান্ত হলে আইসোলেশন৷ এখানেতো সবাই সুস্থ৷

তিনি বলেন, ‘‘৩০০ জনকে ৩০০ জায়গায় ফলোআপ করা সম্ভব না৷ তাই তাদের এক জায়গায় রাখা হয়েছে৷''

তারা উহানেই ভালো পরিবেশে ছিলেন

অনেকেই মনে করেন উহান থেকে নাগরিকদের ঢাকায় ফিরিয়ে আনা উচিত হয়নি৷ তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তারা মানবিক বিষয়টিকেই এখানে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে৷ 

করোনা ভাইরাস শনাক্ত, সতর্কতা, নিরাপত্তা ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সব প্রস্তুতি আছে বলেও আশ্বস্ত করে আসছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ তবে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ মনে করেন সার্বিক বিবেচনায় চীন ফেরতরা উহানেই ভালো পরিবেশে ছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা অবশ্যই বলবো চীনে তারা যে পরিবেশে ছিলো, এখানকার চেয়ে সেখানে রাখা ভালো ছিলো৷ কিন্তু এখানে একটা মানবিক দিক আছে৷ তারা দেশে আসতে চাইছিলেন৷ তাদের পরিবার চাইছিলেন তারা দেশে আসুক৷ আমরা তাদের এই আকুতিকে সম্মান জানিয়েছি, শ্রদ্ধা জানিয়েছি৷'' 

তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন. ‘‘চীনে ভালো ছিল এই কারণে বলছি ওখানে তারা হোস্টেলে ছিল, নিজেদের রুমে ছিল, কেউ বাড়িতে ছিল৷ তাদের বলা হয়েছিলো তুমি ঘরের বাইরে যাবে না৷ ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে পারবে না৷ যদি একান্তই যেতে হয় মাস্ক পরে যাবে এবং কাজ শেষে দ্রুত ফিরে  আসবে৷ ওখানে কেউ যদি সংক্রমিত হতো নিজের ঘরের মধ্যেই থাকত৷ নিজের রুমের মধ্যেই থাকতো৷ কিন্তু এখানে ৩০০ মানুষকে আমরা একটা ক্যাম্পের মধ্যে রেখেছি৷ একদম একা থাকা অথবা দুই-তিনজন একসাথে থাকার সঙ্গে ৩০০ জন একসাথে থাকার মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য আছে৷''

তাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে একটি ভুল বোঝাবুঝি আছে বলে মনে করন ডা. আলমগীর৷ তার মতে, ‘‘তাদেরকে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা আমাদের জানানো দরকার ছিল৷ তারা এখানে আসলে কোথায় থাকবে, কিভাবে রাখা হবে৷ আবার উহানে তারা খাবারের অভাবের কথা বলছিল, কিন্তু সেটা ঠিক না৷ চীনা নাগরিকরা যেভাবে সরকারের ব্যবস্থাপনায় খাবার পায় তাদের জন্যও সেই ব্যবস্থা৷ তবে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন ছিলেন৷ তাদের নিয়ে আসায় উদ্বেগ অনেকটা কমেছে৷ আবার অনেকে তো আসেননি৷ আসতে চান না৷''

আশকোনায় যেভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়

হজ ক্যাম্পে যারা আছেন তাদের জন্য সেনাবাহিনীর একটি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চারটি দলের পাশাপাশি কাজ করছে আইইডিসিআর৷ প্রতি শিফটে সেখানে চিকিৎসক ও নার্সসহ ২০ থেকে ২২ জন দায়িত্ব পালন করেন৷ সেখানে অবস্থানরতদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন তারা৷

দায়িত্বরত চিকিৎসক-নার্সদের জন্যেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ ডা. আলমগীর জানান, ‘‘এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে কাজ করার সময় বাংলাদেশে চিকিৎসক ও নার্সদের একটি প্রশিক্ষিত গ্রুপ তৈরি করা হয়৷ তারা ‘ওয়েল ইকুইপড'৷ এই গ্রুপটিই মূলত ক্রাইসিস রেসপন্স টিম হিসেবে কাজ করে৷ এর বাইরে একটি প্রশিক্ষণ দল আছে৷ তারা প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন

সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও প্রস্তুতি

একটি পুরো হাসপাতালকে করোনা ভাইরাসের রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে বাংলাদেশে৷ ডা. আলমগীর জানান, ‘‘উত্তরার ২৫০ বেডের কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালটি এখন পুরোপুরি প্রস্তুত৷ ওখানে ৩০ জন রোগী ছিলেন৷ তাদের অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে৷ এখন এই হাসপাতালটি শুধুই করোনা ভাইরাসের জন্য৷ হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদেরও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে৷'' 

‘‘তারা সবাই সুস্থ’’

ঢাকায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে সবচেয়ে বড় ‘আইসোলেশন ইউনিট' করা হয়েছে৷ সিএমএইচে ৩০ টি বেড নিয়ে আলাদা ইউনিট কাজ করছে৷ এছাড়া বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলা এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে ৫টি করে বেড আলাদা করে ‘আইসোলেশন ইউনিট' করা হয়েছে৷ ডা. আলমগীর জানান, ‘‘করোনা ভাইরাস শনাক্ত করার জন্য আমাদের যথেষ্ট ব্যবস্থা আছে৷ আমরা যে উপায়ে করি থাইল্যান্ড, সিংগাপুর, ভারত একইভাবে করে৷ আরও একটা আধুনিক পদ্ধতি আছে৷ সেটা আমরা দুই-একদিনের মধ্যে পাব৷''

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘‘আমরা জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য একটি পরিকল্পনা করছি৷ তার মধ্যে স্থায়ী কোয়েরেন্টাইনের আলাদা ব্যবস্থার বিষয়টি রাখব৷ কিন্তু সেটা ঠিক এই মুহূর্তে হচ্ছে না৷''

তিনি বলেন, ‘‘এখানে দুইটি বিষয়, রোগীকে শনাক্ত করা এবং রোগীর সংস্পর্শে যারা আসবে তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা৷ এই দুইটি বিবেচনায় আমাদের প্রস্তুতি যথেষ্ট ভালো বলে আমরা মনে করি৷''

আরো ১৭১ জন দেশে ফিরতে চান

গত ২১ জানুয়ারির পর চীন থেকে যারা এসেছেন তাদের মধ্যে সাত হাজার ৯৯৩ জনকে স্ক্রিনিং এর আওতায় আনা হয়েছে৷ ৭৯৩ জন আইইডিসিআর-এর হট লাইনে কল করে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন৷ ৪৭ জন সেবা নিয়েছেন৷ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৫০ জনের৷ তবে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে বা চীনে অবস্থানরত দেশি কোনো নাগরিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হননি বলে আইইডিসিআর জানিয়েছে৷

এদিকে চীন থেকে আরো ১৭১ জন বাংলাদেশি ফিরে আসার জন্য নাম তালিকাভুক্ত করেছেন৷ কিন্তু তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য কোনো উড়োজাহাজের ব্যবস্থা এখনো হয়নি৷ পয়লা ফেব্রুয়ারি ৩১২ জনকে বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজে করে আনা হলেও এবার আর বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ ব্যবহার করা হবে না৷ কারণ সেগুলোর পাইলট ও ক্রুরা ফ্লাই করার জন্য কোনো দেশের ভিসা পাচ্ছেন না৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷