1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে ছাত্রছাত্রীরা

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
৮ এপ্রিল ২০২০

ভারতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা করোনা রুখতে উদ্ভাবন করছেন নতুন যন্ত্র, পোশাক, মাস্ক, স্যানিটাইজার। এই প্রতিভাবানরা করোনা সংকটকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়ে তৈরি করছেন লড়াইয়ে সহায়ক জিনিস।

https://p.dw.com/p/3adNA
ছবি: cc-by-sa/Minivalley

কেউ তৈরি করছেন স্যানিটাইজার, কেউ চিকিৎসকদের জন্য সুরক্ষা-পোশাক, কেউ কম খরচের ভেন্টিলেটার ও মাস্ক, কেউ চালু করে দিয়েছেন  নতুন অ্যাপ, কেউ বানাচ্ছেন উন্নত মানের থার্মাল ক্যামেরা, যা একশ মিটার দূর থেকে লোকের গায়ের তাপমাত্রা মাপতে পারবে। এটা সম্ভব হচ্ছে দেশের বিভিন্ন আইআইটি, স্টার্ট আপ, এমনকী সরকারের উদ্যোগের ফলে।

কেরালা সরকার ইতিমধ্যে একটা রেকর্ড করে ফেলেছে। করোনার হট স্পট কাসারগোড়-এ চারদিনের মধ্যে ২০০ শয্যার হাসপাতাল বানিয়েছে তাঁরা। এই হাসপাতালটি গত সাত বছর ধরে নির্মীয়মান। মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ হয়েছিল। তারপর মামলায় ফেঁসে গিয়ে কাজ এগোয়নি। তার প্রশাসনিক ভবনটি মোটামুটি তৈরি ছিল। সেখানেই হাসপাতালের সব পরিকাঠামো চারদিনের মধ্যে তৈরি করে  ফেলা হয়েছে। ১০টি আইসিইউ বেডও আছে ওই হাসপাতালে। ১৭ জন চিকিৎসক ও নার্সদের নিয়ে এই অত্যাধুনিক  হাসপাতালে শুধু করোনা রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে।

করোনা রুখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আইআইটি-গুলি অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গুয়াহাটি আইআইটি সেখানকার মেডিকেল কলেজের জন্য স্যানিটাউজার তৈরি করছে। তারা মেডিকেল কলেজের জন্য দুইটি পিসিআর মেশিন তৈরি করে দিয়েছে। যা ১২ ঘন্টায় এক হাজার করোনার স্যাম্পেল পরীক্ষা করতে পারে। তারা এখন কম খরচে রোবট তৈরি করে তার মাধ্যমে হাসপাতালে রোগীদের কাছে খাবার ও ওষুধ পৌঁছনোর চেষ্টা করছে। তারা ইতিমধ্যেই থ্রি ডি প্রিন্টেড মাস্ক তৈরি করে ফেলেছে। অধ্যাপক টি জি সীতারাম বলেছেন, ''আমরা গোটা উত্তর পূর্বাঞ্চলের জন্য একটা স্টেট অফ আর্ট কেন্দ্র গড়ে তুলতে চাই, যেখানে বিভিন্ন সংক্রমণ প্রথম পর্যায়ে ধরে ফেলে তার চিকিৎসা করা যাবে।''

বস্তুত আইআইটির প্রতিভাবান ছাত্রছাত্রীরা এই সংকটকে চ্যালেঞ্জহিসাবে নিয়ে নানা ধরনের উদ্ধাবন করছে। কানপুর আইআইটি যেমন কম খরচে পোর্টেবল ভেন্টিলেটার বানিয়ে ফেলেছে। ভারতে এখন প্রচুর ভেন্টিলেটার দরকার। আইআইটি-র তৈরি ভেন্টিলেটার এখন পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এরপরই তার উৎপাদন শুরু হবে। পেশায় চিকিৎসক, ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন প্রধান এবং রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''ভারতে প্রতিভাবানদের অভাব নেই এবং সংকটের সময়ে যে তাঁরা অসাধারণ কাজ করেন, এটা বার বার প্রমাণ হয়েছে। হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের কথাই ধরা যাক। অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পর্যন্ত হাত পেতে এই ওষুধ নিচ্ছেন। সারা বিশ্ব করোনার বিরুদ্ধে আপাতত এই ওষুধকেহাতিয়ার করে এগোতে চাইছে, তার জন্মও ভারতে। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষকরা খুবই ভালো কাজ করছেন।''

খড়্গপুর আইআইটির প্রাক্তনী ও এইমসের এক প্রতিভাবান বানিয়ে ফেলেছেন এয়ারলেনস মাইনাস করোনা নামের একটি যন্ত্র, যা হাসপাতাল সহ শহরের বিভিন্ন এলাকাকে জীবাণুমুক্ত করে দেবে। শুধু জল ও বিদ্যুতের সাহায্যে তারা এই কাজ করবে। এই দুই উদ্ভাবকের মধ্যে একজন বাঙালি, দেবায়ন সাহা। দিল্লি সরকারের সঙ্গে তাঁদের আলোচনা চলছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও আগ্রহ দেখিয়েছে।

হায়দরাবাদ আইআইটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী স্যানিটাইজার তৈরি করে ফেলেছে। আইআইটি দিল্লি তৈরি করেছে করোনা পরীক্ষার কিট। তা পাঠানো হয়েছে পুনের ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজির কাছে। গুড়গাঁও এর একটি স্টার্ট আপ সংস্থা এমন থার্মাল ক্যামেরা বের করেছে, যা ১০০ মিটারের মধ্যে থাকা লোকেদের গায়ের তাপমাত্রা নিখুঁতভাবে বলে দিতে পারবে। রেল স্টেশন, এয়ারপোর্টের মতো জায়গার জন্য এই থার্মাল ক্যামেরা খুবই উপযোগী হবে।

এই গবেষক, ছাত্রছাত্রীরা নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধেতাঁরাও অগ্রণী সৈনিক। তাঁদের সকলের সাহায্যে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিততে চাইছে ভারত।