1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেমন গেলো ২০২২

ফৌজিয়া সুলতানা ঢাকা | শাকেরা আরজু ঢাকা
৩০ ডিসেম্বর ২০২২

এক বছরেরও বেশি সময় করোনার কারণে প্রায় বন্দিদশায় কাটায় পুরো বিশ্ব৷ টিকা আবিষ্কার ও দেশে দেশে সংক্রমণ কমতে থাকায় স্বাভাবিক হতে শুরু করে জীবনযাত্রা৷

https://p.dw.com/p/4LZUo
পদ্মা সেতু৷
গণমাধ্যমে এবছরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল পদ্মা সেতুর উদ্বোধন৷ ছবি: MOHAMMAD PONIR HOSSAIN/REUTERS

নতুন বছরে সব সংকট কেটে যাবে- এরকম আশা ছিল ২০২২ সালকে নিয়ে৷ তবে করোনার ছোবল থেকে মুক্তি পাওয়ার আগেই বিশ্বে নতুন অভিশাপ হিসেবে আবির্ভুত হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ৷ যুদ্ধ-আগ্রাসন-নিষেধাজ্ঞার প্রভাব, জ্বালানি সংকট, নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য, বেকারত্বসহ অর্থনৈতিক মন্দা নেমে আসে বিশ্বজুড়ে৷ বছর শেষ হওয়ার আগেই আবারও করোনা ফিরতে শুরু করেছে চীন-ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশে৷ যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনও ইঙ্গিতই যেখানে নেই, তার মধ্যে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট আতঙ্ক আরও বাড়িয়েছে৷

সংকট আর আতঙ্কের ভিড়ে সুখবর যে কিছুই ছিল না তা নয়৷ বিদায়ী বছরে করোনার মৃত্যুহার কমে এসেছিল অনেক দেশে৷ কোভিড সংক্রান্ত বিধিনিষেধও তুলে নেওয়া হয়েছিল প্রায় বিশ্বজুড়ে৷ এবারই  প্রথম কোনও আরব রাষ্ট্রে বিশ্বকাপ ফুটবলের মতো বিশাল আয়োজন হয়৷ নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে তোলা মহাবিশ্বের চোখ ধাঁধানো সব ছবি বিজ্ঞানপ্রেমী ও কৌতূহলি মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে দেয়৷

যেসব ঘটনা আলোচিত ছিল বাংলাদেশে

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংকট-অস্থিরতা যেমন ছিল, জাতিগত বেশকিছু অর্জনও ছিল এই বছর৷ পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের মতো বড় অবকাঠামো উদ্বোধন করা হয়েছে এবং জনসাধোরণে চলাচলের জন্য খুলেও দেওয়া হয়েছে৷ করোনায় মৃত্যুর হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসে৷ ক্রীড়াক্ষেত্রে মেয়েদের সাফ ফুটবল জয় দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনে৷ পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট, ঋণ খেলাপি, টাকা পাচার, নতুন জঙ্গি সংগঠনের খোঁজ, রাজনৈতিক হিংসাবিদ্বেষ নিয়ে জনসাধারণকে অস্থিরতার মধ্য দিয়েও যেতে হয়েছে৷

গণমাধ্যমে এবছরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল পদ্মা সেতুর উদ্বোধন৷ সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এই প্রকল্প পরিচালিত হয় দেশের নিজস্ব অর্থায়নে৷ ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলা সরাসরি সারাদেশের সঙ্গে যুক্ত করেছে৷ ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতু উদ্বোধন করার পরদিন থেকেই সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য তা খুলে দেওয়া হয়৷ যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার পাশাপাশি অর্থনীতিতেও এই সেতু নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে৷

বছর শেষ হওয়ার আগে আগে আরেকটি মেগা প্রকল্প মেট্রোরেল প্রকল্পের একটি অংশের উদ্বোধন করা হলো৷ দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যুক্ত হলো মেট্রোরেল৷ ৩১ হাজার কোটিরও বেশি টাকা খরচ হচ্ছে এই প্রকল্পে৷ আপাতত উত্তরা থেকে আগারগাঁও রুটের লাইন খুলে দেওয়া হলো, ফলে যানজটের শহরে ১২ মিনিটে এই দূরত্ব অতিক্রম করা সম্ভব হবে৷ আগামী ডিসেম্বর নাগাদ উত্তরা থেকে কমলাপুর পরযন্ত লাইন খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সরকার৷

করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর ধরে নানামুখি সংকটের মধ্যেও এই দুই প্রকল্প উদ্বোধনকে সরকারের বিরাট অর্জন হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও গবেষণা কেন্দ্র সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মোহাম্মদ এ আরাফাত৷ তিনি বলেন, ‘‘পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল আমরা উদ্বোধন করলাম৷ পদ্মাসেতুর ওপারে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রায় প্রস্তুত৷ পায়রা বন্দর আরও সচল হচ্ছে৷ গত ১৪ বা ১৩ বছরে যে উন্নয়নটা হয়েছে তা আমাদের খুব মজবুত একটা জায়গায় দাঁড় করিয়েছিল৷ একারণেই ২০২২ সালের সংকটগুলো আমাদের যত বড় বিপদে ফেলতে পারতো ততটা ফেলতে পারেনি৷ সংকট ও চ্যালেঞ্জ ছিল৷ কিন্তু যেহেতু ১৩ বছরের ধারাবাহিক উন্নয়ন ছিল, অর্থনীতি একটা শক্ত জায়গায় দাঁড়ানো ছিল, যে কারণে ভয়াবহ বিপদে আমরা পড়িনি৷ সংকট মোকাবিলা করতে পারাটাও একটা সফলতা৷’’

তবে ভিন্ন অভিমত দেন ঢাকার সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল৷ তিনি বলেন, ‘‘পদ্মাসেতু অনেক বড় একটা প্রজেক্ট৷ এর পেছনে অনেক ব্যয় হয়েছে৷ নিজস্ব অর্থায়নে এটা করাটা আমার মতে ঠিক ছিল না৷ কারণ গত কয়েকটা অর্থবছরে এর প্রভাব পড়েছে৷ বিশ্বের কোনও জায়গায় এরকম বড় প্রজেক্‌ট নিজের টাকায় করে না৷ তবে যেহেতু আমরা শেষ করতে পেরেছি তাই এর সুফল পাওয়া শুরু হয়েছে৷'' মেট্রোরেল প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিশালায়তনের রাজধানীতে এর সুফল বা ব্যর্থতা আছে কিনা তা বলা যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷ 

বছরের আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম আরেকটি হলো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে আসা ও ডলার সংকট৷ ২০২১ এর নভেম্বরে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৬ বিলিয়ন ডলার, ২০২২ সালের নভেম্বরে তা ৩৪ বিলিয়নে নেমে আসে৷ বিভিন্ন ব্যাংক ও খোলা বাজারে চাহিদার তুলনায় ডলার কম পাওয়া যাচ্ছে৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রেমিট্যান্স হ্রাস, রপ্তানি বাড়লেও বাণিজ্য ঘাটতির কারণে ডলারের এ সংকট তৈরি হয়েছে দেশে৷ দেশের ছোট ও মাঝারি আমদানিকারকরা ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছেন না৷ এই সুযোগে ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আমদানি পেমেন্টে (এলসি নিষ্পত্তি) ইচ্ছামতো রেট আদায় করছে এবং এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ডলার মজুত করে বলেও অভিযোগ ওঠে৷

বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারিও ছিল আগ্রহের ও আতঙ্কের বিষয়৷ ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ৯ হাজার কোটিরও বেশি টাকা তুলে নেওয়া হয়৷ শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকেই লোপাট হয় সাত হাজার কোটি টাকা৷ বাংলাদেশ ব্যাংক সেপ্টেম্বরে জানায়, ব্যাংক খাতে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকার ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে৷ আমদানি-রপ্তানির আড়ালে মোটা অংকের অর্থ পাচার হচ্ছে বলেও বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ ওঠে৷ ব্যাংকে টাকা থাকবে না- এই আতঙ্কে সাধারণ মানুষ টাকা তুলে ঘরে রাখতে শুরু করেছে বলেও খবর প্রকাশিত হয় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়৷ প্রধানমন্ত্রী নিজে বিভিন্ন ভাষণে জনগণকে অহেতুক আতঙ্কের বসে ব্যাংক থেকে টাকা না তোলার আহ্বান জানান৷

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এই অবস্থা কেন, জানতে চাইলে সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, ‘‘ডলার ক্রাইসিসের কারণগুলো অনেকদিন ধরেই ছিল৷ এখন এসে সেটা ধরা পড়ে গেছে৷ ডলারের জন্য গার্মেন্ট শিল্পের চেয়ে রেমিট্যান্সের ওপরেই বাংলাদেশ বেশি নির্ভরশীল৷ তবে প্রবাসীদের ডলার পাঠানো কমে আসার প্রধান দুটি কারণের একটি হলো, খোলা বাজারের ডলারের দামের সঙ্গে সরকার ডলারের দামটাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে পারেনি৷ ব্যাংকে যখন ৯৬ টাকা, বাইরে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা৷ বিদেশ থেকে যিনি টাকা পাঠাবেন এই ক্ষতিটা তিনি কেন করবেন? ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে এসেছে৷ এই জায়গাটাকে সরকার নিয়ন্ত্রণ করেনি৷ আর দ্বিতীয় আরেকটি কারণ হলো, প্রবাসীদের মধ্যে সরকারের প্রতি একটা বিরূপ মনোভাব আছে, সরকারে যে দলই থাকুক না কেন৷ কারণ বাইরের দূতাবাসগুলো শ্রমিকদের কোনও মানুষই মনে করে না৷ এই তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে তারা একটা সুযোগ নিয়েছে সরকারকে ঘায়েল করার৷ সরকার যখন বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে বারবার, প্রবাসীরা তখন ইনটেনশনালি টাকা হুন্ডিতে পাঠিয়েছে৷’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘ডলার সংকটের মধ্যে শোনা গেলো কয়েকটা ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের অর্থ একটি গোষ্ঠী লুটপাট করে নিয়ে গেছে৷ এটা সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আরেকটা নেতিবাচক প্রভাব মানুষের মধ্য তৈরি করেছে৷ ঋণ নিয়ে শোধ করবো না এই মানসিকতাটাই আমাদের এখানে বড় সংকট৷’’ অর্থপাচারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘অর্থমন্ত্রী ছয় মাস আগে জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করছেন৷ এই ছয় মাসে কি একটি টাকাও দেশে ফেরত আনতে পেরেছেন?’’

তবে দেশে ডলার বা ঋণ নিয়ে কোনও সংকট নেই বলে মনে করেন এ আরাফাত৷ তার বক্তব্য, ‘‘রিজার্ভ সংকটটা বিশ্বের সব জায়গায় হচ্ছে৷ ভারত ও ব্রিটেনের মতো দেশে রিজার্ভ কমে গেছে৷ করোনার সময় অতিরিক্ত খরচ এবং করোনার পরে যে বাড়তি চাহিদার চাপ, এটা মোকবিলা করতে জন্যও রিজার্ভের ওপর বাড়তি চাপ পড়েছে৷ রিজার্ভ কোথায় কী খরচ হয়েছে এর পুরো হিসাব তো দেওয়া হয়েছে৷ এটার সঙ্গে তো দুর্নীতির কোনও সম্পর্ক নাই৷ আর ব্যাংকিং সেক্টরে ডিসিপ্লিনের যে সমস্যা, সেটা পুরো আলাদা একটা বিষয়৷ গত ৫০ বছর ধরে এটা হয়েছে৷ ব্যাংক খাতে আরও একটু ফোকাস করা দরকার৷ কিছু কিছু সংস্কার দরকার৷ আবার আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য যখন বেড়েছে বিশ্ববাজারে, সাপ্লাইয়ের যে ঘাটতি এগুলো মেটানোর জন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হয়েছে৷ ক্রাইসিসের সময় ঋণ দেওয়ায় নমনীয়তা দেখানো হয়েছে৷ অন্যান্য সময়ে যে নিয়মনীতি থাকে তা শিথিল করা হয়েছে মানুষের স্বার্থেই৷ আবার করোনার সময় যেসব প্রতিষ্ঠান ঋণের কিস্তি দিতে পারেনি, তাদের জন্য সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে তার আওতায় তাদের তিন মাসের কিস্তি মুলতবি করলো, পরে ছয় মাসের জন্য করলো৷ এটা না হলে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যেতো৷ এটাকে কি ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা-দুর্নীতি বলবো? নাকি বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত বলবো? কিছু কিছু সমস্যা অবশ্যই আছে, এর জন্য আরেকটু শৃঙ্খলা আনা উচিত বলে আমি মনে করি৷ কিন্তু তার মানে এই না যাই হচ্ছে তার পেছনে দুর্নীতি বলছি কোনোও কারণ ছাড়া৷’’

সরকার সফলতার সঙ্গে সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘‘একটা মানুষও আজ না খেয়ে নাই৷ মানুষের বিদেশে যাওয়া কমে নাই, কক্সবাজার যাওয়া কমে নাই, রাস্তায় জ্যাম কমে নাই৷ জ্বালানির দাম বেড়েছে, কিন্তু এর জন্য কি মানুষ রাস্তায় কম বেরোচ্ছে? ঠিকই তো বেরোচ্ছে৷ কারণ তারা অ্যাফোর্ড করতে পারছে৷ সব রেস্টুরেন্ট গমগম করছে৷’’

একটা মানুষও আজ না খেয়ে নাই: মোহাম্মদ এ আরাফাত

ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ, কোভিডের করাঘাত, আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিবিধির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গোটা পৃথিবীর ইকুয়েশনটা বদলে গেছে৷ ভূরাজনৈতিক অবস্থা পাল্টে গেলো৷ সেখানে বাংলাদেশ তো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ না৷ সেখানে কেউ যদি বলে বাংলাদেশে কিছুই হওয়ার কথা ছিল না, যা কিছু হয়েছে সব দুর্নীতির জন্য, এর চাইতে বোকার মতো তো কোনও কথা হতে পারে না৷ বরং উন্নয়নটা করতে পেরেছি বলেই আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পেরেছি৷        

২০২৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উত্তাপ এ বছরই টের পাওয়া যাচ্ছে৷ গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পর থেকেই জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলাপ ঘুরেফিরে সামনে আসছে৷ নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুরে সিটি করপোরেশন নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে করতে পারলেও ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম নির্বাচন কমিশনের সামর্থ নিয়ে সন্দেহ-সংশয় তৈরি করে৷  

বছরের শেষ কয়েক মাসে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক তৎপরতাও ছিল আলোচিত ইস্যু৷ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর নাগাদ রাজধানীসহ দেশের ১০ বিভাগীয় ও বড় শহরে সম্মেলন করে বিএনপি৷ সরকারের পতন ঘটানোর ডাক দিয়ে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে তাদের সমাবেশে ছিল বহুল আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম৷ তবে এই গণসমাবেশের আগে নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশি অভিযান ও প্রধান নেতাদের গ্রেফতারের ঘটনাও ব্যাপক আলোচিত হয়৷

এদিকে জাতীয় নির্বাচনকে মাথায় রেখে নভেম্বরে শেষ থেকে দলের সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন শুরু করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ৷ দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন হয় গত ২৪ ডিসেম্বর৷ কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে ৮১ সদস্যের  কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হয়৷ টানা দশম বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা৷ আর তৃতীয় বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ওবায়দুল কাদের৷ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের কমিটিতে বিশেষ কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি৷

দুই দলের নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে পরস্পরের প্রতি তিক্ততা ও আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ ছিল পত্রিকাগুলোর পাতা ভরানোর অন্যতম উপাদান৷ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত পরিস্থিতি এরকমই থাকবে বা আরও খারাপ হবে বলে মনে করেন মাসুদ কামাল৷ তাঁর অভিমত, ‘রাজনীতির ক্ষেত্রে একটা অসহিঞ্চু বছর কেটেছে৷ পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসহীনতা, পরস্পরকে শত্রু মনে করার মানসিকতা এটা সব রাজনৈতিক দলই লালন করেছে৷ অবিশ্বাসটা তারা তাদের সব কর্মীর মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে৷ এই বিশ্বাসহীনতা পুরো জাতির জন্য খুব ভয়াবহ৷ আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এটা বজায় থাকবে৷ একটা ষড়যন্ত্র তত্ত্বের মধ্যে তারা ঘুরপাক খাচ্ছে৷ এটা একটা গতিশীল সমাজের জন্য ক্ষতিকর৷'

বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে এবছর৷ গত আগসে্‌ট বাংলাদেশে ৫০ শতাংশের বেশি হারে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ে৷ একবারে এতো বেশি মূল্যবৃদ্ধি এর আগে আর কখনও হয়নি৷ ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৪২ শতাংশ বেড়ে লিটার প্রতি হয় ১১৪ টাকা, পেট্রোলের দাম ৫১ দশমিক বেড়ে লিটার ১৩০ টাকা, অকটেনের দাম ৫১ শতাংশ বেড়ে লিটার প্রতি দাম ১৩৫ টাকা হয়৷ বাস, ট্রাক, লঞ্চসহ সব ধরনের পরিবহনের ভাড়া বাড়ে৷ প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে৷

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারেও তেল-গ্যাসসহ বিদ্যুৎ তৈরির উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশে ক্রমাগত লোডশেডিংয়ে নাভিশ্বাস পরিস্থিতি তৈরি হয়৷ সরকার শিডিউল করে সারাদেশে লোডশেডিং দেয়৷ জুন থেকে শুরু হয়ে নভেম্বর নাগাদ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়৷

এসবের মধ্যে ভোজ্যতেলের দামবৃদ্ধি, চাল-চিনি-গমের দাম সাম্প্রতিক বছরগুলোর তুলনায় বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি, প্রায় সব ধরনের পণ্যের মূল্যস্ফীতির বিষয়গুলোও ছিল আলোচিত৷

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য সরকারের তৎপরতাও মিডিয়ার দৃষ্টি কাড়ে৷ নভেম্বরে বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আইএমএফ৷ ২ দশমিক ২ শতাংশ সুদে সাড়ে চার বিলিয়ন (সাড়ে চারশ কোটি) ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ৷ এই সিদ্ধান্তের পর এডিবিসহ আরো বেশকিছু বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ পাওয়ার পথ প্রশস্ত হয়েছে৷

করোনার কারণে দেড় বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর এবছর ফেব্রুয়ারি ও মার্চে শিক্ষাপ্রতিষ্‌ঠানগুলো আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে৷ ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে সব মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হয়৷ প্রাথমিক স্তরে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হয় মার্চ থেকে৷ শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এটি ছিল এক সুখবর৷

করোনা মহামারির পর এবং জাতীয় নির্বাচনের যেখানে খুব বেশি দেরি নেই, এরকম সময়ে গত ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরও বেশ আলোচিত ঘটনা ছিল৷ সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের এক মন্তব্য এবং এর পরপরই সফর থেকে তার বাদ পড়ার ঘটনাও ছিল আলোচিত৷ প্রধানমন্ত্রীর সফরের তিন সপ্তাহ আগে্‌কে অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য ছিল ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে'৷ তার এই কথায় বিব্রত হয় সরকার৷ ওই সময়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতারা এর তীব্র সমালোচনা করেন৷

জাতিগত অর্জনের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল জাতীয় নারী ফুটবল টিমের প্রথমবারের মতো সাফ উইম্যান্স চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২ জয়৷ অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে পুরো দেশকে উৎসবের উপলক্ষ এনে দেয় মেয়েরা৷

এছাড়াও বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে ছিল- ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’ নামে নতুন জঙ্গি সংগঠনের খোঁজ, রাজধানীর আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনতাই, ঘুর্ণিঝড় অশনী ও সিত্রাং, পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন বেশকিছু কর্মকর্তার বাধ্যতামূলত অবসর, জাতীয় গ্রিডে বিপরযয়, চট্টগ্রামে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন৷

২০২২ সালের বিশ্ব

বছরজুড়ে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ৷ এই দুই দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পুরো বিশ্বের এই যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে৷ এছাড়া বছরজুড়ে চীনসহ বিভিন্ন দেশে করোনার সংক্রমণ হারের হ্রাস-বৃদ্ধি ও নতুন ভ্যারিয়েন্টও ছিল আলোচিত বিষয়গুলো মধ্যে অন্যতম৷ ইরানে নারী স্বাধীনতার ইস্যুতে বিক্ষোভ, ব্রিটেনে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু ও কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবলও ছিল অন্যতম আলোচিত ঘটনা৷

২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার সামরিক সমাবেশ চলছিল৷ ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে অন্তর্ভুক্ত না করা এবং ১৯৯৭ সাল থেকে পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর মোতায়েন করা সব সামরিক অবকাঠামো সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানায় রাশিয়া৷ এ নিয়ে পশ্চিমা নেতাদের সঙ্গে বেশ কিছু সময় ধরে উত্তেজনার পর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করে বসে রাশিয়া৷ পরে ইউক্রেনও পাল্টা জবাব দেয়৷ যুদ্ধে এখন পরযন্ত দুই পক্ষের অন্তত দুই লাখ সেনা নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ এছাড়া আরও অন্তত ৪০ হাজার বেসামরিক মানুষ এতে নিহত হয়েছে৷ একই সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট৷ জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, আনুমানিক ৮০ লাখ মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়েছে৷ যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সরবরাহে বাধা, জ্বালানিসহ নিত্যপণে্যর মূল্য বৃদ্ধি, খাদ্য ঘাটতির মতো সমস্যায় পড়তে হয়েছে পুরো বিশ্বকে৷

এদিকে ঠিকমতো হিজাব না পরায় ২২ বছর বয়সী কুর্দিশ তরুণী মাহসা আমিনিকে ১৩ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করে তেহরানের পুলিশ৷ তিন দিনের মাথায় ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়৷ এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো ইরান৷ নারীদের ওপর নিপীড়ন- দুঃশাসনের প্রতিবাদে রাস্তায় নামে লাখো মানুষ৷ বিক্ষোভ দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে৷ অনেক নারী বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিজেদের হিজাব খুলে ফেলেন৷ বিক্ষোভে পুলিশের হামলায় আড়াইশ থেকে ৩০০ জনের মৃত্যু হয়৷ ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর এই বিক্ষোভ দেশটির শাসকদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়৷

ইরানের যখন স্বাধীকার আদায়ের আন্দোলন, আফগানিস্তানে তখন তালেবান শাসদের একের পর এক নিপীড়ন আলোচনার জন্ম দেয়৷ মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া, চাকরি করা এবং বাইরে চলাফেরার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় তৈরি করেছে৷

ব্রিটেনের রাজপরিবার ও রাজনীতি দুটোই ছিল মিডিয়ার লাইমলাইটে৷ সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ব্রিটিশ সিংহাসনের অধিকারী রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ৯৬ বছর বয়সে মারা যান গত ৮ সেপ্টেম্বর৷ প্রায় ৭০ বছর ব্রিটিশ রাজত্ব শাসন করেছেন এই রানি এবং বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম রাজত্বকারী শাসক ছিলেন তিনি৷ রানির মৃত্যুর পর তাঁর বড় ছেলে তৃতীয় চার্লস ৭৪ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের নতুন রাজা হন৷

রানির মৃত্যু ছাড়াও ২০২২ সাল বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে পার করেছে ব্রিটেন৷ মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে তিন জন প্রধানমন্ত্রীর পালাবদল ঘটেছে৷ অস্থিরতার শুরু হয় বরিস জনসন সরকারের পঞ্চাশেরও বেশি সদস্যের পদত্যাগের মাধ্যমে৷ জুলাইয়ে এই ঘটনার পর একপর্যায়ে তিনিও পদত্যাগ করেন৷ এরপর ক্ষমতায় এসে মাত্র ৪৫ দিন ছিলেন কনজারভেটিভ পার্টির নেত্রী লিজ ট্রাস৷  ব্রিটেনের ইতিহাসে  সংক্ষিপ্ততম মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী তিনি৷ এরপর দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৪২ বছর বয়সী কনজারভেটিভ নেতা ঋষি সুনাক৷

রাষ্ট্রীয় পর্ায়ে আন্দোলন-বিক্ষোভের সবচেয়ে বড় ঘটনা সম্ভবত ছিল আমাদের কাছের দেশ শ্রীলঙ্কায়৷  সরকারের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা বিরুদ্ধে জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার রাস্তায় নামে লাখো মানুষ৷ বেশ কয়েক বছরের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অদূরদর্শী নীতিনির্ধারণ ও সুশাসনের অভাবে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে দেশটি৷ খাদ্য-জ্বালানিসহ জীবনধরনের সব উপকরণের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়ে৷ করোনা মহামারির কারণে অর্থনৈতিক সংকট আরও তীব্র হয় যা গণবিক্ষোভের জন্ম দেয়৷ প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন৷ এরপর দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে৷  

দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তানের টালমাটাল পরিস্থিতিও বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কেড়েছে৷ অনাস্থা ভোটে হেরে গত ১০ এপ্রিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান৷ পিএমএল-এন নেতা শাহবাজ শরিফ প্রধানমন্ত্রীর পদে আসেন৷ তবে ক্ষমতা ছেড়ে চুপ করে বসে ছিলেন না ইমরান৷ বলতে গেলে প্রায় পুরোটা বছর রাজনীতির মাঠে সরব ছিলেন তেহরিক ই ইনসাফ পাকিস্তানের (পিটিআই) এই নেতা৷ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কয়েকটি লংমার্চে অংশ নেন তিনি৷ ৩ নভেম্বর পাঞ্জাবে এক সমাবেশে তাঁর ওপর হামলা হয়, তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে বলে দাবি করেন ইমরান৷

এদিকে পাকিস্তানে প্রবল মৌসুমি বৃষ্টি ও হিমবাহ গলে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত বন্যায় সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু এবং ৩০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়৷ দেশটির এক-তৃতীয়াংশ বন্যায় প্লাবিত হয় এবং দশ লাখেরও বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়৷ এদিকে দেশটির অর্থনৈতিক পতন ঠেকাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আগস্টে একটি বেলআউট প্যাকেজ অনুমোদন করে৷

করোনা মহামারি কেটে যাওয়ার আগেই ২০২২ সালের মে মাসে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব শুরু৷ পরে বিশ্বের ১১০টি দেশে এটি শনাক্ত হয়৷ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভাইরাসটিতে ৮২ হাজার ৮২৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে রেকর্ড করেছে ডব্লিউএইচও৷ এটিকে জনস্বাস্থ্যের জরুরি অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করা হয়৷

এদিকে কোভিড-১৯ এর কারণে আরোপিত লকডাউন, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ নানা বিধিনিষেধ এবছর প্রত্যাহার করে নিচ্ছিলো বিশ্ব৷ এর মধ্যেই নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে করোনার ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের নতুন উপধরন বিএফ ৭৷ এটিকে বলা হচ্ছে, অন্যান্য যেকোনও উপধরনের চেয়ে ভয়াবহ৷ এদিকে ডিসেম্বরে শুধু চীনেই ২৪ কোটিরও বেশি মানুষ কোভিড পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম দাবি করছে৷ ভারতেও দ্রুত ছড়াচ্ছে কোভিড সংক্রমণ৷

যুদ্ধ, মহামারি, সহিংসতায় প্রাণহানি  লেগে থাকলেও ২০২২ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ৮০০ কোটির মাইলফলক অতিক্রম করে৷ ১৮০৪ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ১০০ কোটি৷ ২০০ কোটি হতে সময় লাগে ১২৩ বছর৷ ১৯৮৭ সালে জনসংখ্যা হয় ৫০০ কোটি৷ ২০১০ সালের ৭০০ কোটি ছিল৷ মাত্র ১২ বছরে তা ৮০০ কোটি ছাড়িয়েছে৷

বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বড় ক্রীড়া ইভেন্ট ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হলো এবছর৷ প্রথমবারের মতো কোনও আরব রাষ্ট্রে হলো এই আয়োজন৷ আয়তনের দিক থেকে কাতারই সবচেয়ে ছোট দেশ, যাকে বিশ্বকাপ আয়োজনের অধিকার দেয় ফিফা৷ এদিকে করোনার বিধিনিষেধ না থাকায় বিশ্বকাপ মাঠে বসে উপভোগ করেছেন প্রায় ৩৪ লাখ দর্শক৷ ৩৬ বছর পর তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ নিজেদের করে নেয় লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা দল৷ 

বিশ্ব ও বাংলাদেশ- এই দুই প্রেক্ষাপটে আগামী বছর সংকট বা সম্ভাবনা-কোনটির প্রাধান্য থাকবে এমন প্রশ্নে মাসুদ কামাল বলেন, ‘‘মহামারি, ক্রাইসিস, দুর্ঘটনা যাই বলেন না কেন, এটা কার হাতে পড়লো সেটা গুরুত্বপূর্ণ৷ ধরুন একটা বাস অ্যাকসিডেন্ট হলো৷ কেউ দেখবেন হসপিটালে দৌড়াচ্ছে, কেউ তার আত্মীয়দের খুঁজছে ও অন্যদের কথা ভাবছে না, আবার কেউ মানিব্যাগ কুড়াচ্ছে৷ এটা দুর্ঘটনা ওপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে যারা কাজটা করছে তাদের ওপর৷...আমাদের দেশে সব ক্ষেত্রেই ফায়দা লোটার প্রবণতা আছে৷ ক্রাইসিসের ক্ষেত্রে ম্যানজমেন্টটা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ সিস্টেম চেঞ্জ হওয়াটাও জরুরি৷’’