1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে ক্যানসার চিকিৎসা কেমন?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩১ মে ২০১৯

ক্যানসার রোগীদের অর্ধেকেরও বেশি দেশে প্রচলিত চিকিৎসা পান না৷ যাঁরা চিকিৎসা নিতে আসেন, তাঁদের অর্ধেকই মারা যান৷ ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, চিকিৎসার খরচ ইত্যাদি কারণে এরকম হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা জানান৷

https://p.dw.com/p/3JZ9g
ছবি: Benny Weber/Fotolia

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ও জাপানের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে একটি ক্যানসার হাসপাতাল স্থাপনের চুক্তি হয়েছে বেসরকারি পর্যায়ে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময় দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি সই হয়৷ এখানে দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান আইচি হসপিটাল লিমিটেড এবং এথিক্স অ্যাডভান্সড টেকনোলোজি লিমিটেড (ইএটিএল) কর্তৃপক্ষ৷  জাপান গ্রিন  হসপিটাল এই যৌথ উদ্যোগের জাপানি অংশীদার৷ আইচি হসপিটাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) উলফাৎ জামান মুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখানে সর্বাধুনিক প্রোটনথেরাপির মাধ্যমে ক্যানসার চিকিৎসা হবে৷ এটা বাংলাদেশের ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন মাত্রা যোগ করবে৷’’ ঢাকার পূর্বাচলে এই ক্যানসার হাসপাতালের সাথে একটি নার্সিং কলেজ এবং একটি মেডিকেল টেকনোলজি রিসার্চ সেন্টারও প্রতিষ্ঠা করা হবে বলে জানান তিনি৷

ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার (আইএআরসি)-র সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে এখন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৮ লাখ৷ ১ লাখ ৮ হাজার মানুষ প্রতিবছর ক্যানসারে মারা যায়৷ আর প্রতিবছর ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষ নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়৷

এটা বাংলাদেশের ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন মাত্রা যোগ করবে: উলফাৎ জামান মুন

জাতীয় ক্যানসার ইন্সটিটিউটের ২০০৬ সালে এক জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৪৫ হাজার রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে৷ ওই বছরে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২২ হাজার৷ জাতীয় ক্যানসার ইন্সটিটিউটের ক্যানসার এপিডেমোলোজি বিভাগের প্রধান ডা. হাবিবুল্লাহ তালুকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আসলে অনেক রোগীই তাঁর ক্যানসার সম্পর্কে সচেতন না৷ আবার কেউ আছেন টোটকা চিকিৎসা করান৷ আবার কেউবা জানতেই পারেন না যে, তিনি ক্যানসারের রোগী৷’’

তিনি আরো জানান, ‘‘বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে ক্যানসারের মূল চিকিৎসা খরচ এক লাখ টাকার বেশি নয়৷ তবে বেসরকারি হাসপাতালে ওই চিকিৎসা নিতে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা খরচ হয়৷ তাই ক্যানসার চিকিৎসার আধুনিক হাসপাতাল যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন চিৎিসা সহজলভ্য করা৷’’

বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে ক্যানসার চিকিৎসার পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্যানসার ইন্সটিটিউট৷ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালসহ বিভাগীয় পর্যায়ের বড় বড় সরকারি হাসপাতালে আলাদা ক্যানসার বিভাগ আছে৷ জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ক্যানসার ইউনিট আছে৷ তবে এর কোনোটিই পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার চিকিৎসা কেন্দ্র নয়৷ দেশের  মাত্র ১৫টি সরকারি মেডিকেল কলেজে রেডিওথেরাপি বিভাগ থাকলেও রেডিওথেরাপি মেশিন আছে মাত্র ৯টিতে৷

সরকারি পর্যায়ে ক্যানসারের মূল চিকিৎসা খরচ এক লাখ টাকার বেশি নয়: ডা. তালুকদার

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিয়েশন অনকোলোজি বিভাগের সাবেক প্রধান ও ক্যানসার সোসাইটির যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দেশে ১৬০টি রেডিওথেরাপি সেন্টারের প্রয়োজন৷ আছে মোটে ২৮টি৷  আবার ওইসব সেন্টারের মেশিনগুলো চালানোর জন্য পর্যাপ্ত ও দক্ষ জনবল নেই৷’’

তিনি বলেন, ‘‘ক্যানসার চিকিৎসার তিনটি পদ্ধতি সার্জারি, কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপি৷ রেডিওথেরাপিরই আধুনিক পদ্ধতি হলো প্রোটনথেরাপি৷ জাপানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে যে হাসপাতাল বাংলাদেশে হবে, সেটা নিশ্চয়ই প্রোটনথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দিলে ক্যানসার চিকিৎসায় আমরা আরো এগিয়ে যাবো৷ তবে এটা হতে তো সময় লাগবে৷ ওই সময়ে আমাদের ক্যানসার চিকিৎসায় যে প্রয়োজন, তা মেটাতে হবে৷ তা না হলে পরিস্থতির উন্নতি কষ্টকর৷’’

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে এখন ৫০ হাজারের কিছু বেশি ক্যানসার রোগী চিকিৎসা নেন৷ বাকিরা আমাদের হেলথ সিস্টেমের মধ্যেই নেই৷ আর এই যাঁরা চিকিৎসা নিতে আসেন, তাঁদের অর্ধেকই শেষ পর্যন্ত বাঁচেন না৷ এর প্রধান কারণ হলো সঠিক সময় ক্যানসার বুঝতে না পারা, চিকিৎসা শুরু না করা৷’’

দেশে ১৬০টি রেডিওথেরাপি সেন্টারের প্রয়োজন, আছে মোটে ২৮টি: ডা. ফারুক

তারপরও বাংলাদেশে ক্যানসার চিকিৎসায় উন্নতি করছে বলে তিনি মনে করেন৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক রেডিওথেরাপি চালু হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘মানুষের শরীরে প্রায় ৩০০ রকমের ক্যানসার হয়৷ এরমধ্যে ৯০ ভাগেরই চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব৷’’ তিনি মনে করেন, দিন দিন বাংলাদেশের ক্যানসার রোগীদের বিদেশে চিকিৎসার প্রবণতা কমছে৷ এখন শতকরা ৫ ভাগের বেশি ক্যানসার রোগী চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যান না৷ আর এখন ক্যানসারের ৯০ ভাগ ওষুধই বাংলাদেশের স্থানীয় ওষুধ কোম্পাগিুলো বানাচ্ছে৷ ফলে দামও কম পড়ছে৷ তবে তিনি বলেন, ‘‘এর মান কেমন, সে প্রশ্নের জবাব আমার কাছে নেই৷’’

বাংলাদেশে বেসকারি পর্যায়েও ক্যানসার চিকিৎসার উন্নতি হচ্ছে৷ তবে তা ব্যয়বহুল৷ আইচি হসপিটাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উলফাৎ জামান মুন জানান, জাপানের এই একই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের আরেক প্রকল্প প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল করছি আশুলিয়া কামারপাড়া এলাকায়৷ এখানে ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে৷ ৪-৫ মাসের মধ্যেই সেটা অপারেশনে যাবে৷ এখানে ২০ ভাগ বেড আমরা বিনামূল্যে রাখছি৷ ক্যানসার হাসপাতালেও সাধারণ মানুষ যাতে কম খরচে আধুনিক এই প্রোটনথেরাপি নিতে পারেন, তার ব্যবস্থা করব৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং আনবিক শক্তি কমিশনও এই প্রোটনথেরাপি নিয়ে কাজ শুরু করেছে৷’’