শেখ কামাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ পুরস্কার পাচ্ছেন এবার কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী অধ্যাপক মালা রানী সরকার৷
বলা যায় বাংলাদেশের ফুটবল মানচিত্র অনেকটাই বদলে দিয়েছেনকলসিন্দুরের মেয়েরা৷ বাংলাদেশের ফুটবল বলতে এখন আর কেবল সোনালী অতীত বা এই শতাব্দীর ক্ষয়িষ্ণু সময়টাই নয়, বাংলাদেশের ফুটবল মানে এখন সাবিনা, সানজিদা, কৃষ্ণা, শামসুন্নাহাররাও৷
সরকার বঙ্গমাতা প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরুর পর সারা দেশের মধ্যে যে একটি স্কুল সাড়া ফেলেছিল সবচেয়ে বেশি, সেটি কলসিন্দুর৷
টুর্নামেন্টে তাদের সাফল্য, জাতীয় বয়সভিত্তিক দলগুলোতে সানজিদা, মারিয়া, মার্জিয়া, তহুরাদের একে একে উঠে আসা মেয়েদের ফুটবলটাকে এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছে যে, সাফ ফুটবলের শিরোপা নিয়ে ঘরে ফিরেছে তারা৷ ছাদ খোলা বাসে এই মেয়েদের সংবর্ধনা দিয়েছে দেশবাসী, কল্পনায় আসলে তাদের কাঁধে তুলেই নেচেছেন সবাই৷ কলসিন্দুর স্কুলের মেয়েদের সেই খেলাধুলার পরিবেশ তৈরি করে দিতে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বুঝিয়ে সমাজে এই খেলোয়াড়দের নিয়ে একটি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে সেই যে কাজ করেছিলেন মিনতি রানী শীল, মালা রানী সরকারদের মতো কয়েকজন৷ তারই স্বীকৃতি মিলছে শেখ কামাল পুরস্কারে৷ অথচ একই সময়ে আজ খুলনার বাটিয়াঘাটায় সেই নারী ফুটবলারদের রক্ষার্থেই মানবমবন্ধন করতে হচ্ছে বিভিন্ন সংগঠনকে৷ সেখানে পরোক্ষভাবে ফুটবল খেলার জন্যই মারধরের শিকার হয়েছেন একদল কিশোরী৷
এটা সত্য যে, এখনো কিছু কিছু পরিবার মেয়েদের মাঠে নামাটাকে পুরোপুরি মেনে নিতে পারেনি৷ তেতুলতলা গ্রামের সাদিয়ার পরিবারও না৷ তবে এই বাধা ডিঙ্গানোটাই এর আগে দেখিয়েছে কলসিন্দুর৷ এমন নয় যে, পরিবারের অবাধ্য হয়েছেন তহুরা, সানজিদারা৷ মেয়েদের সাফল্যে একটা সময় সেই অভিভাবকরাই খেলা দেখতে মাঠে গিয়েছেন৷ সাদিয়ার ক্ষেত্রেও হয়তো তা-ই হতো৷
কিন্তু প্রতিবেশী নুপুর খাতুন ও তার পরিবারের স্বজনরা কোন বোধে এমন সহিংস হয়ে উঠলেন, তা আজানা৷ সাদিয়া যেন খেলাধুলা করতে না পারে সেজন্য তার পরিবারকে উসকে দিতে চেয়েছিলেন তারা৷ সাদিয়া ও তার সতীর্থরা এর প্রতিবাদ করতেই হলো হামলার ঘটনা৷ খুলনা বিভাগীয় দলের খেলোয়াড় মঙ্গলী বাগচী তাতে গুরুতর আহত হলেন৷ বেশ কয়েকদিন হাসপাতালে থেকে গতকাল তিনি ফিরেছেন, তবে এখনো নিজের বাড়িতে ফিরতে পারেননি৷ তিনি উঠেছেন তাদের সুপার কুইন ফুটবল অ্যাকাডেমির সহসভাপতির বাড়িতে৷ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তারা৷
বাংলাদেশে ঘটা অপরাধগুলোর ক্ষেত্রে যেমনটা হয়ে থোকে, আসামীরা পাল্টা হুমকি দিতে থাকে, আরো বড় ক্ষতি করবে বলে শাসায়৷ তেমনটাই হচ্ছে সেখানে৷ সাদিয়া বলেছেন তারা এখন এসিড সন্ত্রাসেরও ভয় পাচ্ছেন৷
তারই প্রতিবাদে এই মুহূতে কর্মসূচি দিচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো৷ দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছেন তারা৷ এই আওয়াজটাও জোরালো হওয়া দরকার বলে মনে করছেন অনেকে৷ কারণ, মারধরের ঐ ঘটনার পর তেতুলতলা অন্য মেয়েদের খেলায়ধূলাও একরকম বন্ধ হওয়ার পথে৷ ঐ ঘটনার পরদিনই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খেলোয়াড়দের বঙ্গমাতা ফূটবল টুর্নামেন্টের ম্যাচ ছিল৷ সুপার কুইন ফুটবল একাডেমির কোচ মুশতাকুজ্জামান জানিয়েছেন, মেয়েরা সেদিন ভীত- সন্ত্রস্ত, জড়োসড়ো হয়ে ছিল৷ নিজেদের খেলাটাই খেলতে পারেনি, ম্যাচটাও তারা হেরে যায়৷ আজকের কৃষ্ণা, সানজিদারদের মতোই সাদিয়া মঙ্গলীদেরও হাতেখড়ি এই বঙ্গামাতা প্রাথমিক বিদ্যালয় টুর্নাামেন্ট দিয়ে৷ তারা এখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে, খেলছে অনূর্ধ্ব-১৭ বঙ্গমাতা আসরে৷ সাদিয়া, মঙ্গলী দুজনই খুলনা বিভাগীয় দলে এর মধ্যে খেলেছেন৷ খুব শীঘ্রই হয়তো জাতীয় দলেও কড়া নাড়বেন তারা৷ এমন সময়েই এলো এই আঘাত৷
ঘটনার পরদিনই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে৷ মহিলা উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরন অবশ্য বলেছেন, এর চেয়ে বেশি কিছু এই মুহূর্তে তারা করতে চাইছেন না৷
যদিও তেঁতুলতলার পরিস্থিতি বলছে, নারী ফুটবল বিরোধীদের এই লড়াইয়ে জিততে দেয়া যাবে না কিছুতেই৷ এ কারণেই বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন এগিয়ে এসেছে৷ ফুটবল ফেডারেশন তাদের সঙ্গে যোগ দিলে মঙ্গলীদের জয়টাই বরং ত্বরান্বিত হবে৷