1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌নির্বাচনে শামিল হ্যাম রেডিও

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৯ এপ্রিল ২০১৯

যাঁরা ব্যক্তিগত আগ্রহে অ্যামেচার রেডিও অপারেটর হয়েছেন, তাঁদের সহযোগিতা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ শখের রেডিও সংযোগ হয়ে উঠেছে প্রশাসনিক কাজের আবশ্যিক অঙ্গ৷

https://p.dw.com/p/3H4QN
Indien HAM Radio
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

অ্যামেচার রেডিও, প্রযুক্তির ভাষায় যাকে ‘‌হ্যাম রেডিও'‌ বলা হয়, নেহাতই শখের বশে তা নিয়ে কাজ করেন আগ্রহী মানুষজন৷ অনেক বিখ্যাত মানুষের এই শখ ছিল বা আছে৷ এর আগে একাধিকবার হয়েছে যে গঙ্গাসাগরের মতো বড় মেলা বা জনসমাবেশের ক্ষেত্রে যোগাযোগ রক্ষা করতে, নিখোঁজ মানুষের হদিস দিতে বা তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিতে প্রশাসনের কাজে এসেছেনশখের হ্যাম রেডিও অপারেটররা৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়, যখন স্থায়ী যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে বা অকেজো হয়ে যায়, তখনও সমান্তরাল যোগাযোগ গড়ে তোলা হয় হ্যাম রেডিও মারফত৷ সাম্প্রতিককালে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নির্বাচনের সময় প্রশাসনের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করার গুরুদায়িত্ব, যা নিঃসন্দেহে হ্যাম রেডিও অপারেটরদের জন্যে এক বড় স্বীকৃতি৷

‘রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল শ্যাডো জোন আছে’

‘‌‘‌আমাদের রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল শ্যাডো জোন আছে, যেখানে মোবাইলের টাওয়ার থাকলেও কথা বলা যায় না, অথবা টাওয়ার পাওয়া যায় না, অথবা ইন্টারনেট পাওয়া যায় না৷'‌'‌ ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন পশ্চিমবঙ্গ রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস৷ একজন শখের হ্যাম রেডিও অপারেটর এবং অন্যান্য হ্যাম রেডিও উৎসাহীদের সংগঠক হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে তিনি দীর্ঘ দিন ধরে সক্রিয়৷ তিনি জানাচ্ছেন, কথিত এই ‘‌মোবাইল শ্যাডো জোন'‌ যেমন প্রত্যন্ত এলাকায় আছে, তেমনি শহরতলীতে, এমনকি শহরেও আছে৷ এর আগে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁরা সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করেছিলেন৷ গত বিধানসভায় (‌২০১৬)‌ তাঁরা কাজ করেছিলেন মধ্যমগ্রাম শহরতলীতে, যেখানে শপিং মল, বা মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল আছে, কিন্তু মোবাইল পরিষেবা আদৌ নির্ভরযোগ্য নয়৷ কিন্তু ‌প্রিসাইডিং অফিসার বা পোলিং পার্টি নির্দিষ্ট এলাকায় ঠিকমতো পৌঁছালো কিনা, প্রশাসনিক আধিকারিকদের, জেলাশাসককে সেটা জানতে হয়৷ বা ভোট চলাকালীন ইভিএম, অর্থাৎ বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র খারাপ হতে পারে বা ভোটকর্মীদের শরীর খারাপ হতে পারে৷ সেই খবর আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রেই কাজে আসে হ্যাম রেডিও৷ কীভাবে খবর সংগ্রহ করবেন ওঁরা?‌ অম্বরীশ জানাচ্ছেন, মোট ‌৪৮ জন হ্যাম রেডিও অপারেটর ৩১টা পয়েন্টে থাকবে৷ এবং ৩১টা পয়েন্টের জন্য ভারত সরকারের তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক থেকে একটা ছাড়পত্র আনা হয়েছে, এক বিশেষ ‘‌কল সাইন'‌ ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে৷ সমস্ত লাইসেন্সধারী হ্যাম ওই কল সাইন ব্যবহার করবে৷ এই ৩১টি জায়গা বাদে ওদের যে স্থায়ী অ্যামেচার বেতার কেন্দ্রগুলি আছে, সেখান থেকেও বেতার সংকেত ধরার একটা ব্যবস্থা থাকবে৷

প্রসঙ্গত অম্বরীশ জানাচ্ছেন, ‘‌‘‌বৈশাখ মাসে আবহাওয়া দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে৷ এই পরিবর্তনের ফলে বেতার সংযোগ যে কোনো মুহূর্তে তার চরিত্র বদলে ফেলে৷ কিন্তু ভোটের তথ্য তো আর বদলানো যাবে না, যা তথ্য সব সময় দিতে হবে৷‌ এটা একটা চ্যালেঞ্জিং কাজ৷'‌'‌ এই কারণেই ওঁদের ৪৮ জনের দলে এমন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা আছেন, যাঁরা ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব নিতে পারবেন৷ অর্থাৎ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ও হ্যাম রেডিওর সুবাদে চালু থাকবে প্রয়োজনীয় ত্রাণ এবং উদ্ধারের কাজ৷

‘এবছর মহিলার সংখ্যা আরেকটু বেশি’

২০১৬ নির্বাচনে বারাসতের জেলাশাসকের দপ্তরে হ্যাম রেডিওর যে কম্যান্ড সেন্টার বা পরিচালন কেন্দ্র, তার যৌথ দায়িত্বে ছিলেন হ্যাম রেডিও অপারেটর রিঙ্কু সেনগুপ্ত৷ এবার তাঁরা সরাসরি উত্তর ২৪ পরগণার নির্বাচনি ক্ষেত্র থেকে সরাসরি কাজ করবেন৷ তার মধ্যে এমন দুটি এলাকা আছে, যেগুলি বাংলাদেশ সীমান্তের লাগোয়া৷ এখানে মোবাইল যোগাযোগ বরাবরের সমস্যা৷ সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন এবং জেলা প্রশাসনের ভরসা হবেন রিঙ্কুর মতো হ্যাম রেডিও অপারেটররা৷ রিঙ্কু ডয়চে ভেলেকে জানাচ্ছেন, জেলাশাসক যে অঞ্চলগুলিকে চিহ্নিত করেছেন, সেগুলি হলো বসিরহাট, বনগাঁ, ব্যারাকপুরের কিছু ভোটগ্রহণ কেন্দ্র— মোট ৩৩টি ‘‌মোবাইল শ্যাডো জোন'‌, যেখানে গিয়ে ওরা কাজ করবেন৷ কিন্তু ভোটের সময় যেখানে সাধারণ পরিস্থিতিই উত্তেজনাপ্রবণ হয়ে ওঠে, সেখানে হ্যাম রেডিও অপারেটরদের, বিশেষত মহিলাদের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা কি নির্বাচন কমিশন করছে?‌ জবাবে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী শোনালো রিঙ্কুর গলা৷ বললেন, ‘‌‘‌২০১৬ সালেও আমরা কাজ করেছি৷ আমরা মেয়েরা বারাসাত জেলা শাসকের দপ্তরে ছিলাম৷ সেখানেই প্রধান পরিচালন কেন্দ্র হয়েছিল৷ সেখানেই আমরা ছিলাম৷ কিন্তু এবছর মহিলার সংখ্যা আরেকটু বেশি৷ আমরা প্রায় ৭ জন মেয়ে কাজ করব৷ খুব বেশি হলে দুজন জেলাশাসক অফিসে থাকব৷ বাকি যারা রয়েছে, তাদেরকে চলে যেতে হবে৷'‌'‌

কাজেই নিরাপত্তা নিয়ে ওঁরা ভাবছেন না৷ বরং নির্বাচনের সময় ঠিকঠাক নিজের দায়িত্বপালনই ওঁদের একমাত্র চিন্তা৷ এবং ওঁরা আত্মবিশ্বাসী, প্রতিবারের মতো এই নির্বাচনেও শখের হ্যাম রেডিওরযে পেশাদারি দক্ষতা, তার প্রমাণ ওরা রেখে আসতে পারবেন৷

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য