1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুলিশও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অংশ

৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

একের পর এক নারী নিগ্রহের ঘটনা ঘটে। পুলিশ কখনও সক্রিয় হয়, কখনও হয় না। সমস্যা আসলে পুরুষতন্ত্রে।

https://p.dw.com/p/3i6Ng
ছবি: picture-alliance/AP/O. Anand

আজ খুব সুজেট জর্ডনের কথা মনে পড়ছে। সুজেট আর বেঁচে নেই। কিন্তু একলা নারী কলকাতায় যে লড়াই চালিয়েছিলেন, তা এখনও কলকাতার কলঙ্কের ইতিহাসের একটি দৃষ্টান্তমূলক অধ্যায়।

সাংবাদিকতার সূত্রে সুজেটের একটি সাক্ষাৎকারের সুযোগ হয়েছিল। সাধারণত, কোনও ধর্ষিতা বা যৌননিগ্রহ হওয়া নারীর ছবি সংবাদে প্রকাশ করার নিয়ম নেই। সেই নিয়ম মেনেই সহকর্মী চিত্র সাংবাদিক সুজেটের মুখ ঢাকা ছবি তোলার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। বেশ রাগ করেই সুজেট উত্তর দিয়েছিলেন, ''আমার তো কোনও দোষ ছিল না, তা হলে আমার ছবি প্রকাশ পেতে অসুবিধা কী? আমি চাই, সকলে আমায় দেখুন। পরিচয় গোপন করে আমার সমস্যার কথা বলতে চাই না। প্রকাশ্যে দাঁড়িয়ে কী ঘটেছিল, তা স্পষ্ট করে বলতে চাই। সকলকে জানাতে চাই।''

পার্কস্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডে ভিকটিম বা আক্রান্ত ছিলেন সুজেট। সে কথা আজও সকলের মনে আছে। মনে আছে, কী ভাবে আক্রান্ত হওয়ার পরে পার্কস্ট্রিট থানা তাঁর এফআইার নিতে অস্বীকার করেছিল। মনে আছে, ঘটনার পরে কী ভাবে প্রশাসন এবং সরকার তাঁর বিরুদ্ধে অনৈতিক একাধিক প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিল। তৎকালীন এক নারী সাংসদ সুজেটের 'ব্যবসা' নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বলেছিলেন, টাকার রফা হয়নি বলেই সুজেট নিজেকে ভিকটিম বা আক্রান্ত 'সাজাচ্ছেন'।

কেবল সুজেট নয়, ভারতে, পশ্চিমবঙ্গে, কলকাতায় একাধিক নারীকে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। যৌন হেনস্থা, ধর্ষণের পরেও তাঁদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। পুলিশ, এফআইআর গ্রহণ করতে চায় না। সরকার চরিত্রহনন করে।

কয়েক দিন আগে কলকাতার রাস্তায় যে ঘটনা ঘটেছে, তা অবশ্য সুজেটের ঘটনার সঙ্গে তুলনীয় নয়। বাইপাসে যৌন হেনস্থার শিকার এক নারীকে উদ্ধার করেছেন আর একজন নারী। প্রায় সিনেমার মতো মাঝরাতে নিজের গাড়ি থামিয়ে আরেকটি গাড়ি থেকে যৌন হেনস্থার শিকার এক নারীকে বাঁচাতে গিয়ে তিনি নিজেও আক্রান্ত হয়েছেন। অভিযুক্ত এমন ভাবে ওই নারীর উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দিয়েছেন, যে এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন ওই নারী।

পুলিশ অবশ্য এ ক্ষেত্রে খবর পাওয়া মাত্র ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে এবং সকলকেই উদ্ধার করেছে। আহত নারীকে ভর্তি করা হয়েছে হাসপাতালে, যৌন হেনস্থার শিকার নারীর কাছ থেকে অভিযুক্তের তথ্য নেওয়া হয়েছে। তবে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা এখনও করা হয়নি।

কলকাতার রাস্তায় এখন প্রায় সর্বত্রই সিসিটিভি লাগানো আছে। নারী সুরক্ষার জন্য একটি নম্বর দেওয়া আছে। সেই নম্বরে ফোন করলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশের পৌঁছনোর কথা। কিন্তু অভিযোগ, বহু সময়ে ওই নম্বরে ফোন করে পুলিশের সাহায্য পাওয়া যায় না। কেউ ফোনই তোলেন না। ফোন তুলেও এমন সমস্ত প্রশ্ন করা হয় যে, আক্রান্ত নারী সেই মুহূর্তে সমস্ত জবাব দিতে পারেন না। ফলে যৌন হেনস্থা বা ধর্ষণের প্রাথমিক শক, তার থেকে নিস্তার পাওয়া যায় না।

সুজেট বলেছিলেন, সমস্যাটা আসলে সমাজের। নাইট ক্লাবে আক্রান্ত হওয়া একজন নারী যখন পুলিশের কাছে যান, তখন প্রথমেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, কেন তিনি নাইট ক্লাবে গিয়েছিলেন। যেন ধরেই নেওয়া হয়, নাইট ক্লাবে যাওয়া নারীর চরিত্র ভালো নয়। যেন তিনি দেহ ব্যবসায়ী। পুলিশ থেকে রাজনীতিবিদ-- সকলেই প্রকাশ্যে সে কথা বলে ফেলেন। বাইপাসের ঘটনায় আক্রান্ত নারী এক ব্যক্তির সঙ্গে ডেটে গিয়েছিলেন। ওই দিনই তাঁদের প্রথম দেখা। ফেরার সময় গাড়িতেই যৌন হেনস্থার শিকার হতে হয়। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, কেন ডেটে গিয়েছিলেন ওই নারী? কেন একজন অপরিচিত পুরুষের সঙ্গে গাড়িতে উঠতে রাজি হয়েছিলেন? সমাজের একটা বড় অংশ এখান থেকে উপসংহারেও পৌঁছে যাচ্ছেন। তার মানে ওই নারীর চরিত্র খারাপ ছিল। নিজেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন। যাঁরা এই প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা সম্ভবত ভুলে গিয়েছেন যে, দেশের আইন বলে, বিবাহের পরেও নারী ধর্ষণের অভিযোগ করতে পারেন স্বামীর বিরুদ্ধে। ইচ্ছের বিরুদ্ধে স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে পারেন না স্বামী।

Syamantak Ghosh
স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

ডেটিংয়ে যাওয়া মানেই যৌন সম্পর্কে মত দেওয়া নয়। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যত দিন সে কথা বুঝবে না, তত দিন পুলিশ এফাইআর নিতে চাইবে না। রাজনীতিবিদ চরিত্রের প্রশ্ন তুলবেন। সমাজ খাপ পঞ্চায়েত বসাবে।

আনন্দের কথা, বাইপাসে আক্রান্ত ওই তরুণীর পাশে দাঁড়ানোর সময় আর একজন নারী এত কথা ভাবেননি। তিনি ঠিক সেটাই করেছেন, যা ওই মুহূর্তে তাঁর করার কথা ছিল। প্রশাসনও যদি ওই সাহসী নারীর মতো সময়ের কাজ সময়ে করে, তা হলে সার্বিক ভাবে সমাজের কুৎসিত ছবিটা পাল্টায়।