1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বুকের দুধ খাওয়ানোও অসামাজিক!‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৩ ডিসেম্বর ২০১৮

কলকাতার এক অভিজাত শপিং মলে নিজের শিশুসন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো নিয়ে বিতর্ক৷ জোর প্রতিবাদের মুখে ক্ষমা চাইলো মল কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু বেআব্রু হলো স্তন্যদান নিয়ে সামাজিক বিকার৷

https://p.dw.com/p/39KJM
Symbolbild - Muttermilch
ছবি: Fotolia/evgenyatamanenko

মিডিয়া, সোশাল মিডিয়া থেকে শুরু করে সর্বত্র ছিছিক্কার শুরু হয়েছিল ঘটনাটা নিয়ে৷ কলকাতা শহরের এক অত্যন্ত আভিজাত এবং জনপ্রিয় শপিং মলে নিজের বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জায়গা খোঁজায় হেনস্থা করা হয় এক মা-কে৷ ওই নারী শপিং মলেরই এক কর্মচারীকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, মলে কোনো ফিডিং রুম আছে কিনা, যেখানে তিনি নিজের শিশুসন্তানকে দুধ খাওয়াতে পারবেন৷ কিন্তু তাঁকে জানানো হয়, পাঁচতলা শপিং মলে কোথাও এমন জায়গা তো বরাদ্দ নেইই, এমনকি কোথাওই শিশুকে স্তন্যপান করানোর নিয়ম নেই!‌ তা-ও যদি দুধ খাওয়াতেই হয়, মহিলাকে মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট শৌচালয়ে ঢুকে কাজটি করতে হবে৷ বিচলিত বিরক্ত মহিলা এরপর ওই শপিং মল ছেড়ে চলে যান এবং বাড়ি ফিরে ফেসবুকে ওই শপিং মলের নিজস্ব পেজে নিজের অসন্তোষের কথা জানান৷ তার যে জবাব আসে মল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে, তা এককথায় অসৌজন্য এবং অসভ্যতা, অভদ্রতার চূড়ান্ত৷ অতি রূঢ় ভাষায় মহিলাকে বলা হয়, শপিং মল বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জায়গা নয়৷ এসব ঘরের কাজ মহিলা যেন এরপর থেকে বাড়িতেই সেরে আসেন!‌ 

"বাচ্চাকে আপনি খাওয়াচ্ছেন, এটা খুব পবিত্র ব্যাপার'

ওই ফেসবুক পোস্টের পর থেকেই সমালোচনা এবং নিন্দার ঢল নামে৷ বহু লোক শপিং মল কর্তৃপক্ষের ওই দুর্বিনীত এবং অনুতাপহীন জবাবটি নিজেদের পাতায় শেয়ার করে কড়া ভাষায় ধিক্কার জানাতে থাকেন৷ তৎপর হয়ে ওঠে সংবাদ মাধ্যম এবং খবরটি আরো বেশি ছড়াতে থাকে৷ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শপিং মল কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি ক্ষমা প্রার্থনা করে নতুন একটি পোস্ট দেয় এবং ঘটনার দায় এড়ানোর জন্য বলে, যে বিজ্ঞাপন-বিপণন সংস্থা শপিং মলের হয়ে ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি থেকে পোস্ট করে, ভুলটা আসলে তাদের৷ কিন্তু কেন ওই মায়ের সঙ্গে শপিং মল কর্মীরা অসহযোগিতা করলেন, কেন গোটা মলে কোনো ফিডিং রুম নেই, সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল না৷ বরং এটাই স্পষ্ট হলো যে, সরকারি পর্যায়ে যতইনবজাতক শিশুকে স্তন্যপানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা প্রচার হোক, কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রক সেই প্রচারে যতই কোটি কোটি টাকা খরচ করুক, সামাজিকভাবে নিজের শিশুকে প্রকাশ্যে স্তন্যদান এখনো গর্হিত কাজ বলেই দেখা হয়৷ আধুনিক লোকেরাও মনে করে, ওটা বাড়ির ভেতরে, গোপনে করা উচিত৷

আজকালকার মায়েরাসৌভাগ্যবশত, তেমনটা ভাবেন না এবং প্রকাশ্য স্থানে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে তাঁরা আদৌ লজ্জা পান না৷ পেশায় শিক্ষিকা এবং একটি নয় মাসের শিশুকন্যার মা সুপর্ণা মিত্র ঘোষ যেমন ডয়চে ভেলেকে পরিষ্কারই বললেন, ‘‘স্তন্যপান করানো একটা প্রয়োজনীয়তা৷ সেটা প্রকাশ্যে হবে, না ঘরের মধ্যে হবে‌.‌.‌.‌ একটা বাচ্চার যখন খিদে পাবে, তখনই সেটা হবে৷ মা যখন যে কোনো কারণেই বাইরে থাকেন, তখন সেটা বাইরেই করতে হবে৷ এটা একটা প্রয়োজনীয়তা৷ রাস্তায় খিদে পেলে আমরা তো খাই৷ সেরকম বাচ্চার খিদে পেলেও বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে৷''‌ সুপর্ণার কাছে এই যুক্তিটা এতটাই সহজ এবং সরল, এটা নিয়ে কেন এত কথা হচ্ছে, সেটাই তিনি বুঝতে পারছেন না৷ আর শপিং মলের দেওয়া ‘‌ঘরের কাজ ঘরেই সেরে আসা'‌র যুক্তি সম্পর্কে সুপর্ণার কটাক্ষ, ‌‘‘এই যুক্তিতে তো শপিং মলে শৌচালয় রাখাও উচিত নয়৷ কারণ ওটাও ঘরের কাজ!‌''‌ 

‘স্তন্যপান করানো একটা প্রয়োজনীয়তা, শিশুর খিদে পেলেই খাবে’

‘‘‌একটা বাচ্চাকে আপনি খাওয়াচ্ছেন, একটা ছোট শিশু.‌.‌.‌ এটা খুব পবিত্র একটা ব্যাপার৷ এটাকে যদি এখন নোংরা চোখে দেখেন.‌.‌.‌ ওঁরা যেভাবে বারণ করেছেন, তাতে আমার মনে হচ্ছে, ওঁরা বাচ্চাটার খিদের থেকেও শরীরের একটা অংশ দেখা যাচ্ছে, এটা ওদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ!‌''‌ বললেন পায়েল ঘোষ পূর্‌ভে৷ তিনিও একটি এক বছরের সন্তানের মা৷ স্বামীর কর্মসূত্রে এখন আফ্রিকার একটি দেশের বাসিন্দা৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে পায়েল নিজের একটি অদ্ভুত অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন৷ সম্প্রতি সন্তানকে নিয়ে বিমানে দেশে আসার সময়, আফ্রিকার গ্যাবন থেকে ভারতের মুম্বই অবধি কোনো সামাজিক ভ্রুকুটি তাঁর ওপর পড়েনি, যা পড়েছে মুম্বই থেকে কলকাতায় আসার পথে৷ কারণ কী?‌ না তাঁর শিশুটির অভ্যেস মায়ের পোশাকের কোনো একটি অংশ নিজের মুখের মধ্যে নিয়ে ঘুমনোর৷ তাতে হয়ত তাঁর পোশাক সবসময় ঠিকঠাক থাকে না৷ সেটাই নাকি কয়েকজন সহযাত্রীর বিরক্তিসূচক চাহনির কারণ হয়েছে৷

তবে গোটা ঘটনাটির একটি অন্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন শতাব্দী দাশ, যেটা ফেসবুকে শেয়ার করেছেন এই সময়ের এক বিশিষ্ট কবি, পেশায় বিজ্ঞানের গবেষক রাকা দাশগুপ্ত৷ রাকা নিজেও এক শিশুপুত্রের মা৷ শতাব্দী তাঁর পোস্টে জানিয়েছেন,কখন শিশুকে স্তন্যপান ব্যবসার জন্যে অসুবিধেজনক?‌ যখন বেবিফুডকে মায়ের দুধের বিকল্প হিসেবে তুলে ধরার প্রচার ধাক্কা খায়৷ তখনই দরকার পড়ে প্রকাশ্যে স্তন্যদানের বিপক্ষে সামাজিক প্রচার জারি রাখা, যে এটি একটি অশ্লীল এবং অসামাজিক অভ্যাস৷ এই পোস্টটি অনেক মায়ের চোখ খুলে দেবে —   

<iframe src="https://www.facebook.com/plugins/post.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2Fraka.dasgupta%2Fposts%2F10156669337422527&width=500" width="500" height="242" style="border:none;overflow:hidden" scrolling="no" frameborder="0" allowTransparency="true" allow="encrypted-media"></iframe>

প্রকাশ্যে স্তন্যপান করানো কি অপরাধ? আপনার মতামত জানান নীচের ঘরে৷