1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তলানিতে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
২৭ এপ্রিল ২০১৮

‘‌ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম'‌ সংস্থা প্রতিবছরই বিভিন্ন দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার তালিকা প্রকাশ করে৷ দেখা যাচ্ছে, দু'বছর আগে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের স্থান ১৩৩ হলেও গত বছর সেটা এসে দাঁড়িয়েছে ১৩৬-তে৷ আর এ বছর তা আরও দু'ধাপ নেমেছে৷

https://p.dw.com/p/2wmYy
DW-Karikatur von Sergey Elkin - Pressefreiheit und Verhaftungen
ছবি: DW/S. Elkin

বিশ্বের সবচেয়এ বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারত৷ এ দেশে আইনসভা, আমলাতন্ত্র এবং বিচারব্যবস্থার পর সংবাদমাধ্যমকে বলা হয়, ‘‌গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ'‌৷ সেই স্তম্ভ এখন নড়বড়ে৷ বলছে বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকের স্বাধীনতারক্ষা সংগঠন ডাব্লিউপিএফ‌৷ গত ২৫শে এপ্রিল এই আন্তর্জাতিক সংস্থাটি তাদের সমীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে৷ রিপোর্ট বলছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় একসঙ্গে আরও দু'‌ধাপ তলিয়ে গিয়েছে ভারত৷

গত বছর পর্যন্ত স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের তালিকায় ভারতের স্থান ছিল ১৩৬ নম্বরে৷ এবার তা ১৩৮ নম্বরে গিয়ে ঠেকেছে৷ ভয় দেখানো, হুমকি দেওয়া, দাম দিয়ে কেনার চেষ্টা ছাড়াও সাংবাদিকদের প্রাণনাশের ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে৷ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স বা আরএসএফ-এর এই বার্ষিক রিপোর্টে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশের খুন হওয়ার ঘটনা৷ তালিকার সবচেয়ে নীচে স্থান পেয়েছে উত্তর কোরিয়া৷ তার ঠিক ওপরেই রয়েছে এরিট্রিয়া, তুর্কমেনিস্তান, সিরিয়া এবং চীন৷ তবে গত বছরের মতো এবারও চীন নিজেদের অপরিবর্তিত রেখেছে৷ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচকে শীর্ষস্থান পেয়েছে নরওয়ে৷ এই নিয়ে টানা দু'বছর শীর্ষস্থানে তারা৷

আরও উল্লেখযোগ্য ভাবে সংস্থাটির সমীক্ষা রিপোর্টে সংবাদমাধ্যমের এই অধঃপতনের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘‌উগ্র হিন্দুত্ব'‌ এবং ‘‌উগ্র জাতীয়তাবাদ'-‌কে দায়ী করা হয়েছে৷ অর্থাৎ আন্তর্জাতিক নজরদারি সংস্থাটি তাদের সমীক্ষায় এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দিকেও আঙুল তুলেছে৷ বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে ভারতে মহিলা সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ-‌সহ মোট তিন জন খুন হয়েছেন৷ বহু ক্ষেত্রে আইনের অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে৷ ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪-‌এ ধারায় মিত্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে৷ বলা হয়েছে, ভারতীয় জনতা পার্টির তথ্য-‌প্রযুক্তি বিভাগের কর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত সাংবাদিকদের অনুসরণ করেন৷ সেইসঙ্গে গালমন্দ করেন৷ অপমানজনক পোস্ট করেন৷ এমনকি সাংবাদিকদের প্রকাশ্যে খুনের হুমকিও দেন৷ সংবাদপত্রে‌ সরকার বা প্রধানমনত্রীর সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেই সুকৌশলে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিককে ‘‌দেশদ্রোহী'‌ বা ‘‌জাতীয়তাবাদ-‌বিরোধী'‌ তকমা সেঁটে দেওয়ার কাজ করে থাকেন শাসকদ দলের তথ্য-‌প্রযুক্তি বিভাগের কর্মীরাই৷

সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়_2018-04-26_17-10-56 - MP3-Stereo

ভারতের লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় মনে করছেন, এই সমীক্ষা রিপোর্ট দেশের গণতন্ত্রের কাছে বড়সড় ধাক্কা, ভারতাবাসীদের কাছেও লজ্জার৷ তাঁর কথায়, ‘‌‘‌এর জন্য বিভাজনের রাজনীতি অনংকাংশে দায়ী৷ বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে সংবাদমাধ্যমকে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে ফেলছেন রাজনীতিকরা৷ বিশেষ করে শাসক দলগুলি (‌কেন্দ্রে ও রাজ্যে)‌ সংবাদমাধ্যমের মালিকদের নানা ভাবে কিনে নেওয়া অথবা বশ করে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷'‌'‌

দীর্ঘ কয়েক দশকের সাংবাদাকিতার অভিজ্ঞতা থেকে পুরো বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করলেন আনন্দবাজার পত্রিকার রেসিডেন্ট এডিটর জয়ন্ত ঘোষাল৷ ডাব্লিউপিএফ-‌এর এই সমীক্ষা রিপোর্ট নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন৷ জানালেন, ‘‘ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে বরাবর উদারতা ও বহুত্ববাদের ঐতিহ্য ছিল৷ কিন্তু নানা সময় শাসক দল সংবাদমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ পেতে চেয়ে তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে৷ আজ থেকে চার বছর আগে দেশে ভারতীয় জনতা পার্টি ২৮২টি আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসে৷ সেটা নরেন্দ্র মোদীর কৃতিত্ব৷ সেই জন্যই তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন৷ কিন্তু তারপর থেকেই সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করার চেষ্টা চালাতে থাকে৷ বিভিন্ন রাজ্যে সংবাদমাধ্যমের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সাংবাদিকরা আক্রান্ত হচ্ছেন৷''

জয়ন্ত ঘোষাল_2018-04-26_10-26-22 - MP3-Stereo

বিষয়টিকে তিনি রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবেই দেখছেন৷ তিনি আরও বলেন, ‘‘‌এই সমস্যা মোটেও আর্থ-‌সামাজিক নয়৷ বেশিরভাগটাই রাজনৈতিক সমস্যা৷ সাংবাদিক ও অসাংবাদিকদের একত্রিত হওয়া উচিত৷ সেইসঙ্গে মালিকপক্ষ ও সংবাদকর্মীদের মধ্যে খাদ্য-‌খাদকের সম্পর্কে পরিণত হওয়া উচিত নয়৷ শাসক দল যদি মালিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে, তাহলে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হতে হয় সাংবাদিকদের৷ তবে যত বড় সমস্যাই হোক আলোচনা করেই তার সমাধান করতে হবে৷ এখানে অন্য কোনো পথ নেই৷ প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর সময় চেয়ে আলোচনায় বসতে হবে৷''

গত সেপ্টেম্বরে একটি সংবাদপত্রের এডিটর গৌরী লঙ্কেশ গুলি করে খুন করা হয়েছে তাঁ বাড়ির সামনেই৷ কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের সমালোচনা করার পর থেকেই তাঁরে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল৷ একইভাবে কৃষক দুর্দশা, গোরক্ষক বাহিনী, নিছক জাত-‌পাত ও নারী সুরক্ষার মতো বিষয়গুলিতে সরকারের সমালোচনা করলেই ধেয়ে আসছে হুমকি৷ অনেকেই ভয় পেয়ে সিঁটিয়ে যাচ্ছেন৷ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হচ্ছেন৷ আর যাঁরা ভয় না পেয়ে নিজেদের কাজ করে চলেছেন, তাঁরা হয় খুন হচ্ছেন, নয়ত শারীরিক ভাবে নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন৷

গৌতম লাহিড়ি_2018-04-26_11-13-04 - MP3-Stereo

নতুন দিল্লির প্রেসক্লাব অফ ইন্ডিয়া-‌র প্রেসিডেন্ট গৌতম লাহিড়ি বলেন, ‘‌‘‌আন্তর্জাতিক সংস্থার সমীক্ষায় ভারতের স্থান আরও দু'ধাপ নেমে যাওয়ায় বিশ্বের দরবারে ভারতের ভাবমূর্তিকে ম্লান করবে৷ নিঃসন্দেহে বিষয়টা শোচনীয়৷ সম্প্রতি সরকার-‌স্বীকৃত সাংবাদিকদের স্বীকৃতি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি৷ দেশের তো বটেই সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক স্তরে নিন্দিত হওয়ার পরে তিনি পিছু হটেছেন৷ তবে সূচকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের স্থান নেমে যাওয়ার পেছনে সংবাদমাধ্যমের নিজের ভূমিকাও রয়েছে৷ মিডিয়া-‌হাউসগুলি সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করছে৷ কেউ কেউ প্ররোচনার ফাঁদে পড়ে ভুয়ো সংবাদ পরিবেশন করছেন৷ এগুলো বন্ধ না হলে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখা অসম্ভব৷'‌'‌

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান