1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের বন্দি হাতিদের দুর্দশা, বাড়ছে বন্যপ্রাণের মৃত্যুমিছিল

১ জুলাই ২০১৮

দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্য কেরলে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় পার্বণে হাতির ব্যবহার বহু যুগের পরম্পরা৷ প্রথা পালনের নামে কার্যত বন্দি করে রাখা হয়েছে এই বন্যপ্রাণকে৷

https://p.dw.com/p/30ZFG
Zirkus Elefant Deutschland
ছবি: picture-alliance/dpa/J. S. Peifer

মন্দিরকে কেন্দ্র করে উৎসব হোক বা ধর্মীয় শোভাযাত্রা, কেরলে প্রতি বছর হাজার দশেক এমন অনুষ্ঠান হয়ে থাকে৷ এর মধ্যে অধিকাংশতেই হাতির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়৷ হাতিকে নানা অলঙ্কারে রূপবান করে তোলা হয়৷ থাকে নানা রঙিন সাজসজ্জা৷ কোনো ভারী ধর্মীয় বিগ্রহের অধিষ্ঠান থাকে হাতির পিঠের উপর৷ এই অবস্থায় হাতিগুলিকে অনেক পথ পরিক্রমা করতে হয়৷ এর সঙ্গে থাকে বিপুল সংখ্যক মানু্য৷ ক্রমাগত হস্তীবাহিনীকে ঘিরে উচ্চগ্রামে বাজতে থাকে নানা বাদ্যযন্ত্র৷

নিঃসন্দেহে এই শোভাযাত্রা দারুণ আকর্ষণীয়৷ শুধু ভারত নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন তা উপভোগ করতে৷ এই পর্যটনের ফলে রাজ্যের কোষাগার সমৃদ্ধ হয়৷ কিন্তু, বছরের পর বছর উৎসবের নামে হাতিদের যেভাবে বন্দি করে রাখা হয়, চিন্তা তা ঘিরেই৷ 

ভারতে যত হাতিকে বন্দি করে রাখা হয়েছে, তার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই কেরলে৷ সংখ্যাটা ৫০০-র বেশি৷ এই রাজ্যে হাতির মালিক হয় মন্দির, নয় কোনো ধনী ব্যক্তি৷ সামন্ততান্ত্রিক যুগের মতো এখনও হাতি পোষা সম্মানের ব্যাপার৷ হাতির এই মর্যাদার কথা ছেড়ে দিলেও আর্থিক দিকটিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ৷ প্রতিদিন একটি হাতি থেকে তার মালিকের রোজগার হতে পারে ৫ হাজার টাকা৷ অনেক বন্দি হাতিকে আবার কাঠের ব্যবসাতেও কাজে লাগানো হয়৷

একথা বলতেই হয়, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকলেও এই হাতির দল খুবই দুর্দশাগ্রস্ত৷ এর জেরে হাতির মৃত্যুও হচ্ছে৷ গত জানুয়ারি থেকে ১৭টি বন্দি হাতি মারা পড়েছে৷ এর মধ্যে তিনটি স্ত্রী হাতি৷ প্রতিটিরই অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে৷ বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের জন্য আন্দোলনকারী সংগঠনগুলির বক্তব্য, দিনের পর দিন নির্যাতন ও অবহেলার ফলে মারা পড়েছে হাতিগুলি৷

এত মৃত্যুর পর সরকার নড়েচড়ে বসেছে৷ তারা কিছু বিধি আরোপ করেছে৷ তবে আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, যত দিন না হাতির মালিক, মাহুত ও আধিকারিকরা বন্যপ্রাণের সুরক্ষাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন, তত দিন এই সমস্যার সমাধান হবে না৷

হাতিদের চরম দুর্দশা

হেরিটেজ অ্যানিমাল টাস্ক ফোর্স-এর কর্তা ভি কে ভেঙ্কিতাচলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, হাতিদের অধিকাংশই শ্রবণশক্তি হারিয়েছে৷ কয়েক ঘণ্টা ধরে নিয়মিত এদের কানের গোড়ায় তীব্র শব্দে ড্রাম পেটানো হয় বলে এই অবস্থা৷ হাতিদের ত্বকে ক্ষত রয়েছে, অনেকে দৃষ্টিহীন৷ এসবই সুন্দর অলঙ্কার ও সাজসজ্জা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়৷ হাতিকুলের দেখভাল ঠিকঠাক হয় না বলে অধিকাংশই ফুসফুস ও অন্ত্রের গুরুতর সমস্যায় ভোগে৷ ভেঙ্কিতাচলম জানান, যে হাতিগুলির মৃত্যু হয়েছে, সেগুলির বয়স ২২ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে৷ অধিকাংশই অবহেলা ও নিপীড়নের ফলে মারা যায়৷ মূলত উৎসব চত্বরেই তাদের মৃত্যু হয়৷

আকার অনুযায়ী ৫ থেকে ১২০টি পর্যন্ত হাতি অংশ নেয় মন্দিরের একটি শোভাযাত্রায়৷ ত্রিচূড়ের একটি শোভাযাত্রায় ১০০টি হাতি অংশ নেয়৷ অভিযোগ, এই উৎসব আদতে পরিচালনা করে মাফিয়ারা৷ হাতির মালিকরা পশুটিকে একটি শোভাযাত্রায় ১২ ঘণ্টার জন্য ভাড়া দেন৷ এটি শেষ হলে ট্রাকে করে অন্য একটি উৎসবের জন্য অন্যত্র চালান করেন৷ পুরো পথটা হাতিগুলিকে দাঁড়িয়ে সফর করতে হয়৷

অবহেলিত ও নিপীড়িত

গত কয়েক বছরে হাতির মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হচ্ছে অতিরিক্ত পরিশ্রম, অপর্যাপ্ত বিশ্রাম, জল ও খাদ্যের অভাবকে৷ সরকারি বিধি অনুযায়ী, সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত হাতিদের নিয়ে শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ হলেও প্রচণ্ড গরমের মধ্যে অবলা পশুগুলিকে হাঁটানো হয়৷ নভেম্বর থেকে এপ্রিলে যৌন সঙ্গমের মরশুমেও সঙ্গীদের থেকে বঞ্চিত রাখা হয় হস্তীকুলকে৷ এই সময় পুরুষ হাতির মধ্যে হরমোনের ক্রিয়ার ফলে আগ্রাসী আচরণ দেখা যায়৷ এই সময়টায় মালিকরা হাতিকে এমন ইনজেকশন দেন যাতে ওই হরমোন শরীরে কাজ করতে না পারে৷ মৃত হাতির ময়নাতদন্তে দেখা গিয়েছে, এই ইনজেকশনের ফলে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট হয়ে গিয়েছে৷ অন্ত্রে পাওয়া গিয়েছে পোকা৷

২০১৬ ও ২০১৭ সালে কেরলে বন্দি ৪৬টি হাতির মৃত্যু হয়েছে৷ এর পর সরকার হাতির মালিকদের নোটিস পাঠিয়েছে৷ কিন্তু তাতে পরিস্থিতির আদৌ উন্নতি হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ অ্যাকশন ফর এলিফ্যান্ট ইউকে নামে সংগঠন কেরলকে হাতিদের প্রতি অত্যাচারের গ্রাউন্ড জিরো বলে আখ্যা দিয়েছে৷ তাদের মতে, কেরলের মতো বন্যপ্রাণের প্রতি অত্যাচার পৃথিবীর অন্য কোথাও হয় না৷

সরকারি উদ্যোগ

কেরল সরকার খতিয়ে দেখছে, বন্যপ্রাণ রক্ষার পক্ষে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ কতটা ঠিক৷ মৃত্যুগুলি বিচ্ছিন্ন, না একই কারণে হাতি মারা পড়ছে৷ রাজ্যের প্রধান বনপাল ও পশু সংরক্ষক পি কে কেশবন ডয়চে ভেলেকে বলেন, এখনও পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তী রিপোর্ট এসেছে৷ তবে তিনি স্বীকার করেছেন, এত হাতির পরপর মৃত্যুর মধ্যে অস্বাভাবিকত্ব রয়েছে৷ মালিকের সঙ্গে হাতির পরম্পরাগত সম্পর্ক এখন পাল্টে গিয়েছে, আর্থিক লাভ বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ সরকারকে তাই পরিস্থিতির উপর বিশেষ নজর রাখতে হবে৷ চালু বিধি কাজে না এলে নয়া কঠোরতর বিধি প্রণয়ন করতে হবে বলে মনে করেন কেশবন৷ হাতির মৃত্যু বাড়তে থাকা ও এই সংক্রান্ত প্রচারের জের কেরলের পর্যটনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷

পিএস/ডিজি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য