1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌মমতা-ঘনিষ্ঠ প্রযোজক গ্রেপ্তার

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৫ জানুয়ারি ২০১৯

প্রতারণা এবং জালিয়াতির অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গে এই সময়ের সবথেকে বড় চলচ্চিত্র প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতাকে গ্রেপ্তার করেছে সিবিআই৷ এ খবরে শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক তরজা৷

https://p.dw.com/p/3CACQ
ছবি: Johannes Eisele/AFP/Getty Images

নাটকীয়ভাবে গ্রেপ্তার হলেন পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ছবির এখনকার সবথেকে বড় প্রযোজক এবং গোটা পূর্ব ভারতে সিনেমার বৃহত্তম পরিবেশক, ‘‌শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস্‌’, বা এসভিএফ-এর কর্ণধার শ্রীকান্ত মোহতা৷ রাজ্যের অন্যতম বড় চিট ফান্ড ‘‌রোজভ্যালি’র মালিক, বর্তমানে জেলবন্দি গৌতম কুন্ডুর অভিযোগের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা বৃহস্পতিবার তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে৷ গৌতম কুন্ডুর অভিযোগ ছিল, ছবি প্রযোজনার জন্য তাঁর কাছ থেকে ২৫ কোটি টাকা নিয়েছিলেন শ্রীকান্ত মেহতা৷ কিন্তু সেই ছবি তৈরি হয়নি৷ টাকা ফেরত চাইলে, রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠতার কথা বলে শ্রীকান্ত মেহতা হুমকি দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ করেছেন গৌতম কুন্ডু৷ অন্যদিকে সিবিআইয়ের অভিযোগ, তদন্তের প্রয়োজনে বারবার তলব করা সত্ত্বেও শ্রীকান্ত মোহতা আসেননি৷ না এসে নানাভাবে তদন্তে অসহযোগিতা করেছেন বলেও দাবি করছে সিবিআই৷ বস্তুত বৃহস্পতিবারও যখন সিবিআই গোয়েন্দারা দক্ষিণ কলকাতার কসবায় এসভিএফ-এর দপ্তরে যান জিজ্ঞাসাবাদ করতে, শ্রীকান্ত তা্ঁদের সঙ্গে কথা বলতে না চেয়ে পুলিশ ডেকেছিলেন এই বলে যে, তাঁর দপ্তরে কিছু গুন্ডা হুজ্জোতি করছে৷ শাসক-ঘনিষ্ঠ শ্রীকান্তর কথায় স্থানীয় থানার পুলিশ দৌড়ে আসে এবং সিবিআই গোয়েন্দাদের দেখে পিছিয়ে যায়৷ এরপর শ্রীকান্ত মোহতাকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় সল্ট লেকে সিজিআই কমপ্লেক্সে সিবিআই দপ্তরে এবং পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ শুক্রবারই তাঁকে ভুবনেশ্বরে বিশেষ সিবিআই আদালতে হাজির করা হবে৷

কিন্তু ঘটনা হলো, যে কারণে শ্রীকান্ত মোহতাকে গ্রেপ্তার করা হলো এবং তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির যেসব ধারা প্রযুক্ত হলো, তেমন অপরাধ, অর্থাৎ জালিয়াতি, হুমকি দেওয়া, ইত্যাদি — এমন অপরাধ ভারতে গন্ডায় গন্ডায় ঘটছে৷ ক'টা ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এত তৎপরতা দেখিয়েছে, সেই প্রশ্ন উঠছে৷ পাশাপাশি এই অভিযোগও জোরদার হচ্ছে যে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ বলেই শ্রীকান্তকে সিবিআইয়ের রোষের শিকার হতে হলো৷ ফলে প্রত্যাশিতভাবেই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে৷ তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া মুকুল রায়, যিনি একসময় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবথেকে বিশ্বস্ত ছিলেন, তিনি কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘‘‌তৃণমূলের মন্ত্রীরা রাতে ঘুমোতে পারছেন না৷ দরজায় টুং করে আওয়াজ হলেই ভাবছেন, সিবিআই এসেছে৷ বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে উঠে পড়ছেন!’’ অন্যদিকে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, শ্রীকান্ত মোহতার অনেক আগেই গ্রেপ্তার হওয়া উচিত ছিল৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চারপাশে সিনেমা-সিরিয়ালের যত তারকাকে দেখা যায়, তাঁদের পরিচালনা করেন শ্রীকান্ত৷ চিত্রতারকাদের তৃণমূলের টিকিটে ভোটে দাঁড় করানোর পেছনেও তাঁর হাত আছে বলে শোনা যায়৷

‘ভোটের আগে মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য গ্রেপ্তারি বা এ ধরনের কাজকর্ম হচ্ছে’

শ্রীভেঙ্কটেশ ফিল্মসের প্রযোজনায় সিনেমা পরিচালনা করেছেন অনিকেত চট্টোপাধ্যায়৷ তিনি মনে করছেন, কেন্দ্র সরকারের তোতাপাখি হয়ে উঠেছে সিবিআই, তাই বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে৷ ডয়চে ভেলেকে অনিকেত বললেন, ‘‌‘‌ভোটের আগে মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য গ্রেপ্তারি বা এ ধরনের কাজকর্ম হচ্ছে৷ এটা (‌গ্রেপ্তারি)‌ তার অঙ্গ কিনা জানি না৷ তবে সিবিআইয়ের কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই৷ কোনো কেসেই শাস্তি শেষ পর্যন্ত হয় না৷ ভয় দেখানো হচ্ছে এগুলো করে৷’’

কিন্তু বাংলা সিনেমার বৃহত্তম প্রযোজকের গ্রেপ্তারি কি চলচ্চিত্র শিল্পে প্রভাব ফেলবে?‌ অনিকেতের সোজাসাপ্টা কথা, ‘‌‘‌একজন ব্যক্তিকে ধরা হয়েছে বলে বাংলা সিনেমার ক্ষতি হবে, এরকমটা ভাবার কোনো কারণ নেই৷ এসভিএফ বহু পুরোনো একটা প্রতিষ্ঠান৷ তাঁর নিজের একটা চালানোর পদ্ধতি আছে৷ তাঁর এত ছবি হয়েছে, আরো ছবি নিশ্চয়ই হবে৷’’