1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লোকসভা ভোটের আগে ভারতে চালু হয়ে গেল সিএএ

১২ মার্চ ২০২৪

সংসদে পাস হওয়ার প্রায় পাঁচ বছর পর ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন(সিএএ) চালু হয়ে গেল।

https://p.dw.com/p/4dPYx
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, লোকসভা ভোটের আগে সিএএ চালু হয়ে যাবে। সোমবার রাতে তা চালু হওয়ার ঘোষণা দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছবি: Manish Swarup/AP/picture alliance

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, লোকসভা ভোটের আগেই সিএএ চালু হয়ে যাবে। তাই হলো। ২০১৯ সালেই সংসদে সিএএ অনুমোদিত হয়েছিল। কিন্তু তারপর রুল ফ্রেম না হওয়ায় তা চালু হয়নি। সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, গোটা দেশে সিএএ চালু হয়ে গেল।

কী বলা হয়েছে সিএএ-তে?

সিএএ-তে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে মুসলিম ছাড়া সংখ্যালঘুরা যদি ভারতে নাগরিকত্ব নিতে চান, তাহলে তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। তবে তাদের ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ভারতে আসতে হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে হবে। যোগ্য ব্যক্তিদের অনলাইনে আবেদন করতে হবে।

সরকারের যুক্তি ছিল, তিনটি দেশেই মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই সেদেশের সংখ্যালঘুরা নিপীড়নের কারণে ভারতে আশ্রয় ও নাগরিকত্ব চাইলে তাদের তা দেয়া হবে। যেহেতু মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাই তাদের এই আশ্রয় দেয়ার কোনো যুক্তি নেই।

আর বিরোধীরা বলেছিল, ভারতে কখনোই ধর্মীয় ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেয়া হয়নি এবং দেয়া উচিত নয়।

সিএএ-র বিরোধিতা

২০১৯ সালে সংসদে পাস হওয়ার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সিএএ-র বিরোধিতায় মানুষ বিক্ষোভ দেখিয়েছে। দিল্লির শাহিনবাগে দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষোভ চলেছে। করোনার প্রকোপ বাড়ার পর সেই বিক্ষোভ বন্ধ হয়। কলাকাতা-সহ অনেক শহরেই সেই বিক্ষোভ ছড়িয়েছিল। কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে-সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির বক্তব্য ছিল, তারা ধর্মীয় ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেয়ার বিরোধী।

লোকসভা ভোটের আগে

আর কয়েকদিন পরেই লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যেতে পারে। তার আগে সিএএ কার্যকর করার কথা ঘোষণা করা হলো।

গত ফেব্রুয়ারিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, লোকসভা ভোটের আগেই সিএএ চালু হয়ে যাবে। সেটাই হলো।

মতুয়া নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর বলেছিলেন, ''ভোটের দিন ঘোষণার এক-দুই দিন বা তিন দিন আগেও সিএএ কার্যকর হতে পারে। দরকার হলে আদর্শ আচরণবিধি চালুর এক ঘণ্টা আগেও তা চালু হতে পারে।''

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বললেন

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তিনি কিছুতেই পশ্চিমবঙ্গে সিএএ চালু করতে দেবেন না।

মমতা বলেছেন, ‘‘যদি সাহস থাকত, তাহলে সিএএ আগে করত। লোকসভা ভোটের আগেই কেন সিএএ করতে হলো? নির্বাচনের দিন ঘোষণার দুই-তিনদিন আগে কেন সিএএ চালু করার ঘোষণা করা হচ্ছে? এটা রাজনৈতিক পরিকল্পনা।''

মমতা বলেছেন, তিনি কোনো বৈষম্য মানেন না। ধর্মীয় বৈষম্য হলেও মানেন না, বর্ণ-বৈষম্য হলেও নয়। তিনি নিয়মাবলী পড়ে বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া দেবেন বলে জানিয়েছেন।

অন্যরা কী বলছেন?

কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন, "সিএএ চালু হলো মানে এই নয় যে, মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো । বিজেপি-ও চাঁদ ধরে আনলো না । এদেশের কেউ নাগরিকত্ব হারাবেন না।'' অধীরের দাবি, ''লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি করছে । যদি সদিচ্ছা থাকত পাঁচ বছর আগেই সিএএ চালু করতে পারত ।"

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, "সকলেই তো নাগরিক। তাহলে তাঁদের নাগরিকত্বের জন্য কেন আবেদন করতে হবে? আবেদন করা মানে তো বলতে হবে, আমি নাগরিক নয়।” আইনজীবী ও বাম সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য বলেছেন, "বিজেপি-র আসল লক্ষ্য হলো ভারতকে বিভাজন করা।”

সিএএ-র ঘোষণার পরেই মতুয়া অ়ঞ্চলে শুরু হয়ে যায় উৎসব। ঢোল বাজাতে বাজাতে রাস্তায় নেমে পড়েন লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী ও বিধায়ক জগন্নাথ সরকার। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বনগাঁওয়ের সাংসদ শান্তনু ঠাকুর বিজেপি-র দপ্তরে এসে সবাইকে মিষ্টিমুখ করিয়ে বলেন, ''ইতিহাস তৈরি হলো। উদ্বাস্তু হয়ে আসা মানুষের নাগরিকত্ব নিয়ে কেউ আর প্রশ্ন তুলতে পারবে না।''

রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, ''মতুয়াদের যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল, তা রাখা হলো।''

প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''মতুয়াদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো। মতুয়া ভোট পাওয়ার কারণেই লোকসভা ভোটের আগে এই ঘোষণা করা হলো। পশ্চিমবঙ্গের অন্তত তিনটি কেন্দ্রে মতুয়ারা জয়-পরাজয় ঠিক করে দেয়। আরো কয়েকটি কেন্দ্রে তাদের যথেষ্ট পরিমাণ ভোট আছে।''

ওয়েইসির প্রতিক্রিয়া

এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি বলেছেন, ''সিএএ মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে তুলবে। কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত নেয়ায় আবার বহু মানুষ বাধ্য হয়ে প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামতে পারেন। সিএএ জাতিগত বিভাজন বাড়াবে।''

ওয়েইসি বলেছেন, নির্যাতিতদের আশ্রয় দেয়া উচিত। কিন্তু ধর্ম বা জাতীয়তার ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেয়া উচিত নয়।

কী বলেছিলেন অমিত শাহ?

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আগে বলেছিলেন,  ''ভারতে সংখ্য়ালঘু বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়কে উসকানি দেয়া হচ্ছে। সিএএ কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে পারে না। এই আইনে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই। এটা নির্যাতিত শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেয়ার  জন্য একটি আইন।''

জিএইচ/এ,জি(পিটিআই, এএনআই)