1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুন্নি সাহা

১২ জুলাই ২০১২

সরকারের সাথে কিছু জটিলতার প্রেক্ষিতে একুশে টেলিভিশন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ২০০৩ সালে এটিএন বাংলা’য় যোগ দেন মুন্নি সাহা৷ আর বর্তমানে এটিএন নিউজ’এর বার্তা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/15Vih
TV Reporterin Munni Saha von ATN News, Bangladesch in DW Gebäude, Bonn Bildunterschrift:  TV Reporterin Munni Saha von ATN News, Bangladesch in DW Gebäude, Bonn Text:   TV Reporterin Munni Saha von ATN News, Bangladesch in DW Gebäude, Bonn Datum: 28.04..2012 Eigentumsrecht: A H M Abdul Hai, Freelance Editor, Bengali Redaktion, Deutsche Welle Stichwort: , TV Reporterin, Munni, Saha, ATN, News, Bangladesch, DW, Bonn, Bangla, Bangladesh,
ছবি: DW/A.Hai

ডিডাব্লিউ'এর স্টুডিও'তে আলাপচারিতায় সাংবাদিকতার জগতে তাঁর দীর্ঘ সময়ের পথচলার প্রেক্ষিতে সাংবাদিকতা পেশা সম্পর্কে তাঁর অনুভূতি জানতে চাইলে মুন্নি সাহা বলেন, ‘‘আমাদের শুরুটা অনেক কষ্টের৷ তবে আমার মনে হয় আমার চেয়ে যারা আরো ২০ বছর আগে সাংবাদিকতা শুরু করেছেন তারাও হয়তো একই কথা বলবেন৷ কিংবা আমার চেয়ে ১৫ বছর পরেও যারা সাংবাদিকতা শুরু করবেন তারাও হয়তো বুড়ো হয়ে এরকম কথাই বলবেন কি না আমি জানি না৷ তবে আমার সাংবাদিকতা জীবনের শুরুতে সংবাদ কক্ষে আমিই একমাত্র মেয়ে সাংবাদিক ছিলাম বলা যায়৷ রাতের বেলায় যখন সংবাদ কক্ষে কেউ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিতে আসতো, তখন তারা আমাকে দেখে মনে করতো, হয়তো কারো স্ত্রী৷ মানে আমি যে একজন সাংবাদিক এবং আমার হাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটা দেওয়া যায়, সেটা অনেকে ভাবতেই পারতো না৷''

নারী সাংবাদিক হিসেবে বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানালেন তিনি৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমার স্মরণ আছে, ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন৷ আমি খালেদা জিয়ার কোনো একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছি সেটার উপর প্রতিবেদন করার জন্য৷ কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আমাকে সাংবাদিকদের সারি থেকে জোর করে তুলে দিচ্ছিলেন৷ আমি বললাম, আমি এখানে বসবো না কেন? কিন্তু তারা বললো, এই তুমি যাও পেছনে মেয়েরা বসছে সেখানে বসো৷ এমনকি প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য বিশেষ বাহিনী এসএসএফ'এর সদস্যরাও সেখানে ছুটে আসে৷ বেশ জটলা তৈরি হয়ে যায়৷ তারা ভাবতেই পারে না যে, মেয়েরাও আবার সাংবাদিক হতে পারে৷ যাহোক, এমন পরিস্থিতি প্রায়ই হতো৷ এছাড়া একজন মেয়ে সাংবাদিক এভাবে সংবাদ সংগ্রহ করছে এবং তার খবর আবার নিজের নামে প্রকাশ করা হচ্ছে, এটা আমার সহকর্মীরাও ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারতেন না৷ ফলে আমার কাছে প্রায়ই মনে হতো যে, এই পেশাটা আরো বেশি পুরুষ নিয়ন্ত্রিত৷''

তবে এখন পরিস্থিতি বেশ খানিকটা পাল্টেছে এবং মেয়ে সাংবাদিকদের জন্য কাজ আরো সহজ হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেন মুন্নি সাহা৷ নিজের সময়ের সাথে বর্তমান সময়ের কাজের তুলনা করে তিনি বলেন, ‘‘সেসময় আমরা বাইরে খবর সংগ্রহ শেষে পত্রিকা কার্যালয়েই যেতাম রাত ৮/৯ টার দিকে৷ তবে এখন প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে দেখা যাচ্ছে রাত ৮টার মধ্যে প্রতিবেদন সব তৈরি হয়ে যাচ্ছে৷ ফলে আপনার প্রতিবেদন তৈরি করে এখন আপনি সন্ধ্যা ৫/৬ টার দিকেই বাসায় চলে যেতে পারেন৷ কিন্তু তখন আমাদের হয়তো রাত ১২/১ টার দিকে বাসায় যেতে হতো৷ তখন আমাদের গাড়ি ছিল না৷ পত্রিকা অফিসেরও কোনো যানবাহন ছিল না৷ বেতনও খুব কম ছিল৷ তবুও আমরা খুব আনন্দের সাথেই কাজ করেছি৷ এমনকি দৈনিক ভোরের কাগজে আমি একবার সাত মাস কোনো বেতন পাইনি৷ তবুও তখন চলতে পেরেছিলাম কারণ একদিকে আমার উপর সংসার চালানোর ভার ছিল না৷ আর অন্যদিকে, আমরা অনেকেই তখন নিজের হাত খরচের জন্য সাংবাদিকতার পাশাপাশি প্রাইভেট পড়িয়েছি৷ তবু আমরা ভেবেছি যে, ভোরের কাগজ বেঁচে থাক৷ বেতনের জন্য চাপ দেইনি৷ অথচ সেসময় আরো কিছু নতুন পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে৷ ধরুন আমি তখন ১২ হাজার টাকা বেতন পেতাম৷ কিন্তু নতুন পত্রিকা থেকে আমাকে প্রস্তাব দেওয়া হলো ৩২ হাজার টাকা বেতনের৷ সাথে পদোন্নতির নানা সুযোগের কথাও বলা হলো৷ তাছাড়া আমি তখন রিপোটার্স ইউনিটি'র পুরস্কার এবং পরিবেশ সাংবাদিকতায় পুরস্কার পেয়েছি৷ ফলে প্রিন্ট মিডিয়ায় বেশ নাম হয়ে গেছে আমার৷ ফলে আমাকে বা আমাদেরকে অন্য পত্রিকা কেনার চেষ্টা করেছে অনেক৷ কিন্তু আমরা তখন তো কেউ নিজের পত্রিকা ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যায়নি৷ আমাদের কাছে তো ঐ টাকার হাতছানিটা খুব বড় ছিল না৷ বরং কাজ করার আনন্দ, স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ এবং কোনো দলের মুখপত্র না হয়ে বরং নিরপেক্ষ পত্রিকায় কাজ করার বিষয়টিও ছিল আমাদের কাছে গর্বের বিষয়৷ কিন্তু এখন একটি টিভি চ্যানেল চালানোর অভিজ্ঞতা থেকে দেখছি যে, এখনকার নতুন ছেলে-মেয়েরা হয়তো আজকে এক টিভিতে যোগ দিল ২০ হাজার টাকা বেতনে৷ তিন দিন পরই এসে জানালো যে, মাছারাঙ্গা বা অন্য কোনো চ্যানেল ৪০ হাজার টাকা বেতন দেবে৷ তাই এখানে কাজ ছেড়ে সেখানে যোগ দেবে৷ অথচ তাদের প্রতিবেদনগুলো যখন সম্পাদনা করি তখনও সেগুলোর মান দেখে আমাকে হতাশ হতে হয়৷ তবুও তাদের ব্যাপারে আমার কোনো খেদ নেই৷ কিন্তু কষ্ট হয় যে, এক্ষেত্রে সাংবাদিক হিসেবে নৈতিকতার ব্যাপারে যদি আমাদের সাথে পরের প্রজন্মের এতটা পার্থক্য হয় তাহলে আমরা আসলে কী ধরণের প্রজন্ম রেখে যাচ্ছি?''

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য