1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অনলাইনে হয়রানি: টার্গেট তরুণীরা

সমীর কুমার দে ঢাকা
১২ ডিসেম্বর ২০২০

সাইবার বুলিংয়ের শিকার নারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অভিযোগের মধ্যে পর্নোগ্রাফি, ব্ল্যাকমেইল, ফেসবুক আইডি হ্যাক, অর্থ আদায় এবং হত্যার হুমকি উল্লেখযোগ্য।

https://p.dw.com/p/3mcRp
সিআইডির সদর দপ্তর সূত্র বলছে, এ বছরের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সাইবার পুলিশ  সেন্টারের ফেসবুক পেজে ২৯ হাজার ৪০৩টি অভিযোগ জমা পড়েছে।
সিআইডির সদর দপ্তর সূত্র বলছে, এ বছরের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সাইবার পুলিশ  সেন্টারের ফেসবুক পেজে ২৯ হাজার ৪০৩টি অভিযোগ জমা পড়েছে।ছবি: picture-alliance/dpa

সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডি মোহাম্মদ ইয়াসিন রাতুল নামে এক তরুণকে গ্রেফতার করে। এই তরুণ অন্তত ২০ জন তরুণীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে গোপনে ভিডিও ধারণ করে। পরে সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে বিশেষ করে ফেসবুকে ছেড়ে তরুনীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। অনেকের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা নিয়ে সেই ভিডিও মুছেও দিয়েছে। পরে এক তরুণীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। একই সঙ্গে গ্রেফতার হয় সফিকুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী। সফিকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তরুনীদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে অবৈধভাবে টাকা দাবি করে আসছিল।

মোস্তাফা জব্বার

ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি বিভাগের উপ-কমিশনার আ ফ ম আল কিবরিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, এদের মতো অনেককেই তারা আইনের আওতায় এনেছেন। অপরাধের গুরুত্ব বুঝে মামলা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তার মতে, পুলিশের কাছে তরুনীদের যত অভিযোগ আসে তার অধিকাংশই প্রেমঘটিত সাইবার ক্রাইম। এসব ক্ষেত্রে তরুণীদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সাইবার ক্রাইম এখন যে পর্যায়ে চলে গেছে এখন লজ্জা আর ভয় পেয়ে থাকলে চলবে না। ভুক্তভোগীদের আমি অনুরোধ করবো, সাইবার স্পেসে হয়রানির শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে অভিযোগ করবেন

সিআইডির সদর দপ্তর সূত্র বলছে, এ বছরের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সাইবার পুলিশ  সেন্টারের ফেসবুক পেজে ২৯ হাজার ৪০৩টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এছাড়া এ বছর ফোনে অভিযোগ করেছেন ৩৮ হাজার ৬১০ জন ভুক্তভোগী। এর মধ্যে হ্যারাসমেন্টের অভিযোগ ৩৬৫টি। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৮২টি। মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ১১৮টি। বাকিগুলোর তদন্ত চলছে। সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের ৬৮ শতাংশ নারী সাইবার স্পেসে নানাভাবে হয়রানির শিকার হন। সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়া এসব নারীর প্রায় সবাই তরুণী। এদের বয়স ১৪ থেকে ২৩ বছরের মধ্যে।

সাইবার অপরাধের এই অভিযোগগুলোর কিভাবে সুরাহা হচ্ছে? জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘ফেসবুক তো আমেরিকার প্রতিষ্টান। তারা তো আমাদের কথা শুনতে চায় না। শুধু আমরা না, বিশ্বের অনেক দেশই এই সংকট পার করছে। এই কারণে আমরা আইন সংশোধনের চেষ্টা করছি। যাতে তাদের বড় অংকের জরিমানা করা যায়। কারণ কেউ হয়রানির শিকার হলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে বলছে। কিন্তু ফেসবুক সঠিক সময়ে সাড়া না দিলে সেই অভিযোগের সুরাহা করা কঠিন। তারপরও চাহিদার তুলনায় শতকরা ৩০ ভাগের মতো জবাব দিচ্ছে তারা। এটাও একেবারে কম।'

ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগের তথ্য অনুযায়ি, গত চার বছরে সাইবার ক্রাইম ইউনিটে প্রায় পাঁচ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে কেবল গত ছয় মাসে প্রায় ২ হাজার লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। এতে তদন্তে নেমে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে। এর পাশাপাশি প্রতিবছরই মামলার এই সংক্রান্তে মামলার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেখানে ২০১৭ সালে মামলা বৃদ্ধির হার ছিল ১৫ শতাংশ। যা ২০১৮ সালে হয়েছে ৭ শতাংশ আর ২০১৯ সালে সেটি গিয়ে দাড়িয়েছে ২৮ শতাংশে। আর চলতি বছরের গত ১০ মাসে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৯ শতাংশ। গত ১০ মাসে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত ১৬৩৫টি মামলা হয়েছে।

সালাহউদ্দিন নানুপুরী

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কি? জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নেহাল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির উত্তরণের কোন পথ দেখি না। আসলে মূল সমস্যা সামাজিক অবক্ষয়। আমাদের স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কোথাও নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া হয় না। এমনকি পরিবারেও না। যতদিন পর্যন্ত মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ না বাড়বে ততদিন হুট করেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। নৈতিক শিক্ষা পাওয়া একজন মানুষ এই ধরনের অপরাধে কখনই যুক্ত হবে না।'

সাইবার বুলিংয়ের শিকার নারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অভিযোগের মধ্যে পর্নোগ্রাফি, ব্ল্যাকমেইল, ফেসবুক আইডি হ্যাক, অর্থ আদায় এবং হত্যার হুমকি উল্লেখযোগ্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা, তুচ্ছ ঘটনায় সম্পর্ক নষ্ট করা, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় এসব ঘটনা বারবার ঘটছে। তবে শুধু আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই এ ধরনের অনেক ঘটনা কমে যাবে বলে মনে করেন তারা।

ধর্মীয় নেতারাও বলছেন, তারা বিভিন্ন ধরনের ওয়াজ মাহফিলে নৈতিকতার বিষয়ে জ্ঞান দেন। মানুষকে সঠিকপথে চলতে উপদেশ দেন। চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা কমিটির শূরা সদস্য ও ফটিকছড়ি নানুপুরী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সালাহউদ্দিন নানুপুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে ধর্মীয় কোন বাধা নেই। তবে নারী হোক আর পুরুষ হোক কারো সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা যাবে না। ধর্ম এটাকে সমর্থন করে না। যে প্রতারণা করবে, তার জন্য তাকে আল্লাহর দরবারে জবাবদিহি করতে হবে। আজকেও আমি চট্টগ্রামে একটি মাহফিলে বয়ান দেওয়ার সময় এই সব বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি।'