ডয়চে ভেলের পাঠক আমিনুল ইসলাম শাহীন কিন্তু উল্টো করে তৈরি করা আজব এই বাড়িটিকে ‘আজব বাড়ি' বলতে রাজি নন৷ তাঁর যুক্তি, ‘‘ডিজাইন উল্টো, কিন্ত আজব নয়, কারণ ভিত্তি কাঠামো সবই মাটির নীচ থেকে তৈরি৷''
জুবায়দা চৌধুরীর অবশ্য ধারণা, বিভিন্ন দেশের মানুষের উল্টো কাজ করার প্রবণতা রয়েছে৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘জাপান, জার্মানি, চীন...এ সব দেশের মানুষের মধ্যে অনেক কাজই উল্টো করে করার প্রবণতা রয়েছে৷ গাছ জন্মায় বড়ো হওয়ার জন্যে...কিন্তু এদের চেষ্টা গাছকে ছোট রাখা৷ মানুষ জন্মায় মৃতুর জন্য৷ আর এদের চেষ্টা আজীবন বেঁচে থাকা৷ তারা সময়কে বেঁধে রাখতে চায় ‘টাইম মেশিনে'৷''
-
আজব এক উল্টো বাড়ি
উল্টো দুনিয়া
২০০৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জার্মানির মেকলেনবুর্গ ফোয়রপমার্ন রাজ্যের ট্রাসেনহাইডে-তে নির্মাণ করা হয় অদ্ভুত এই বাড়ি৷ জার্মান ভাষায় বাড়িটির নাম, ‘ডি ভেল্ট শ্টেট কপ্ফ’, অর্থাৎ ‘পৃথিবীটা মাথার ওপরে দাঁড়িয়ে’৷ সত্যিই তাই৷ বাংলায় ‘হেঁট মুণ্ডু ঊর্ধ্ব পদ’ বলে একটা কথা আছে, ঠিক সেভাবে এ বাড়ির ছাদটা নীচে, আর নীচে থাকার জিনিসগুলো সব ওপরে৷ পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে এই বাড়ি৷
-
আজব এক উল্টো বাড়ি
স্ক্রু আর আঠার কেরামতি
বাড়িটির নকশা করেছেন দুই পোলিশ স্থপতি ক্লাউডিউসৎজ গোলোস এবং সেবাস্টিয়ান মিকিচিউক৷ কেমন করে উল্টো করে সব তৈরি বা স্থাপন করা হলো? সবই স্ক্রু আর আঠার জাদু৷ ঘরের আসবাবপত্র, টেলিভিশন থেকে শুরু করে সাধারণত মেঝেতে বা ছাদের নীচে থাকে এমন সব জিনিস ওপরে লাগানো হয়েছে শুধু স্ক্রু আর আঠা দিয়ে৷
-
আজব এক উল্টো বাড়ি
অবাক তাকিয়ে রয়...
দর্শনার্থীরা গিয়ে অবাক হয়ে দেখেন সবকিছু৷ ছবিতে দেখুন, এক দর্শনার্থীর চোখের সামনে উল্টো হয়ে ঝুলছে একটা গাছের টব৷ অবাক তো লাগবেই!
-
আজব এক উল্টো বাড়ি
ভাগ্যিস সিঁড়িটা ঠিকঠাক!
উল্টো বাড়ি হলেও বাড়ির একটা জিনিস অন্তত ঠিক আছে৷ কী সেটা, জানেন? সিঁড়ি৷ সিঁড়িও যদি ওপরের দিকে থাকতো তাহলে দর্শনার্থীদের কী বিপদটাই না হতো!
-
আজব এক উল্টো বাড়ি
স্টিলের কাঠামো
ঘরের সব আসবাবপত্রের চাপটা পড়ে ছাদের ওপর৷ এমন বাড়ির কাঠামোটা একটু বেশি শক্ত না হলে কি চলে? সে কথা ভেবেই ইট-শুঁড়কির জায়গায় স্টিল ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে ‘ডি ভেল্ট শ্টেট কপ্ফ’, নির্মাণকাজে ব্যয় হয়েছে ৩ লক্ষ ইউরো!
লেখক: ভিএলজেড/এসিবি
জুবায়দা চৌধুরীর সাথে অনেকটা মিল রয়েছে পাঠক মং চাই-এর মতের৷ তাঁর মন্তব্য, ‘‘পৃথিবীতে এমন মানুষও আচ্ছেন যারা সব কিছু উল্টো করার জন্য চিন্তা-ভাবনা করেন৷''
‘‘বাড়িটি ঠিকই আছে, দুনিয়াটাই তো চলছে উল্টো পথে৷'' শফিকুল ইসলামের এই মন্তব্যে মনে হচ্ছে কোথায় যেন কিছুটা হলেও সত্য লুকিয়ে আছে, তাই না?
আজব বাড়ির ছবিগুলো দেখে ডয়চে ভেলের পাঠক ফাহমিদা আক্তার বৃষ্টির কিন্তু জোনাথান সুইফটের ব্যঙ্গধর্মী রচনা গ্যালিভার্স ট্র্যাভেলস-এর কথা মনে পড়ে গেছে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘ফাইনালি জোনাথান সুইফটের গ্যালিভার্স ট্র্যাভেলস-এর স্যাটায়ার সত্যি হলো৷''
তবে ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু নিশাত তাসনিম কিন্তু জার্মানির আজব এই উল্টো বাড়ির ছবি দেখে খুবই অবাক হয়েছেন৷ মহিন খান, বিক্রম বোস, সাদিক বাপ্পি, মো. রুহুল বোসেরও খুব ভালো লেগেছে তথ্যসহ আজব বাড়ির ছবিগুলো৷
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
-
যে সব বাড়ি তৈরিতে ৫০০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে!
উল্ম ক্যাথিড্রাল, জার্মানি
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু গির্জার চুড়া এই উল্ম ক্যাথিড্রালেই৷ গির্জাটি তৈরি হয়েছিল শুধুমাত্র স্থানীয় বাসিন্দাদের বদান্যতায়, তাই বুঝি ৫০০ বছরের বেশি সময় লেগেছে কাজ শেষ করতে৷ দ্য মাদার অফ ক্রাউডফান্ডিং প্রকল্পটির ক্রনিক অর্থাভাব ছিল, তাই জার্মানির সবচেয়ে বড় প্রটেস্টান্ট চার্চটির নির্মাণকার্য শেষ হয় ১৯৮০ সালে৷
-
যে সব বাড়ি তৈরিতে ৫০০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে!
মালবর্ক ক্যাসল, পোল্যান্ড
ইউরোপের সবচেয়ে বড় ইটের বাড়ি হলো এই মালবর্ক দুর্গ; তৈরি করতে ৭০০ বছরের বেশি সময় লেগে গেছে শুধু নকশা বদলানোর জন্যেই নয়, যুদ্ধ আর লুটতরাজের দরুণও বটে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যখন শেষ হতে চলেছে, তখন মালবর্ক দুর্গের অর্ধেকের বেশি ধ্বংস হয়ে যায়৷ আজ এটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ও পোল্যান্ডের একটি মুখ্য টুরিস্ট অ্যাট্রাকশন৷
-
যে সব বাড়ি তৈরিতে ৫০০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে!
স্ট্রাসবুর্গ ক্যাথিড্রাল, ফ্রান্স
মহাকবি ইওহান ভল্ফগাং ফন গ্যোটে ছিলেন স্ট্রাসবুর্গ ক্যাথিড্রালের একজন ভক্ত৷ তিনি যখন স্ট্রাসবুর্গে পড়াশুনো করছেন, অষ্টাদশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে, তখন ১৪২ মিটার উঁচু স্ট্রাসবুর্গ ক্যাথিড্রাল ছিল বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু গির্জে৷ তবু নির্মাণকার্য চলে আরো ১০০ বছর ধরে৷ শেষমেষ ১৯৭০ সালে দক্ষিণের চুড়োটি অসমাপ্ত রেখেই কাজ বন্ধ হয়৷
-
যে সব বাড়ি তৈরিতে ৫০০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে!
মস্কোর ক্রেমলিন
রাশিয়ায় ক্ষমতার প্রতীকই হলো এই ক্রেমলিন,তার লাল ইট আর সোনালি গম্বুজ৷ অথচ এই ক্রেমলিন তৈরির কাজ শেষ হতে ৮০০ বছরের বেশি সময় লেগে গেছে৷ ষোড়শ আর সপ্তদশ শতাব্দীতে জার ও তাঁর পরিবারবর্গ এখানেই থাকতেন৷ পরে সোভিয়েত আমলে এটাই ছিল সরকারের আসন৷ আজ এর অনেকটাই মিউজিয়াম – আর গোটা কমপ্লেক্সটাই ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট৷
-
যে সব বাড়ি তৈরিতে ৫০০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছে!
ভাভেল, পোল্যান্ড
পোল্যান্ডের ক্রাকাও শহরের ভাভেল কমপ্লেক্সটিতে কাজ চলেছে গত এক হাজার বছরের বেশি সময় ধরে! পোল্যান্ডের নৃপতিরা এখানে থাকতেন৷ প্রতি শতাব্দীতে নতুন নতুন ভবন যোগ হয়েছে ভাভেলে – এমনকি গত শতাব্দীতেও৷ কাজেই ভাভেল-এর কাহিনি আজও সমাপ্ত হয়নি এবং কোনোদিনই সমাপ্ত হবে না বলে ধরে নেওয়া যায়৷
লেখক: আন্টিয়ে বিন্ডার/এসি