‘‘বাংলাদেশে ঘুস ছাড়া সাধারণ ডায়েরি করাও অসম্ভব৷ আর যদি পুলিশ জানতে পারে সাহায্য প্রার্থী প্রবাসী, তাহলে ঘুস দ্বিগুণ’’, বাংলাদেশের পুলিশ সম্পর্কে এই ধারণা দেওয়ান মোহাম্মদ সোহাগের৷
আর পাঠক সেলিম রোকন মনে করেন, পুলিশ এক ধরনের সন্ত্রাসী৷ তিনি প্রমাণ দিতেও প্রস্তুত৷ লিখেছেন, ‘‘কয়টা প্রমাণ লাগবে?’’
সালেক মোহাম্মদ পুলিশের ওপর আরো বেশি চটে আছেন৷ তাঁর ভাষায়,‘‘পুলিশ বাহিনী বা বিভাগ যে কোনও দেশ ও জাতির একটি স্থায়ী সম্পদ৷কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের পুলিশ অভদ্র৷ শতকরা দুই একজন পুলিশ হয়ত ভালো, কিন্তু বাকিরা অত্যন্ত নিম্ন মন-মানসিকতার৷ অথচ রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা এটা৷ এর সিংহভাগই ঘুস ও দুর্নীতিতে লিপ্ত৷ জনগণের সেবা তো দূরে থাক, এরা মানুষকে আরো হয়রানি ও পেরেশানি করে ছাড়ে৷ এই বিভাগকে ভালো করতে পারে কেবল একজন যোগ্য রাজনীতিবিদ৷ যা এখনও আমাদের দেশে দেখা যাচ্ছে না৷ বলা যায়, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের জন্যই পুলিশ খারাপ৷ এটাই মূল সত্য ও কারণ৷’’
আর ‘‘পুলিশ মানেই ঘুস, আর ঘুস মানেই পুলিশ, কেননা ঘুস ছাড়া পুলিশের অস্তিত্ব কল্পনা করা অসম্ভব বাংলাদেশে৷’’ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় এই মন্তব্য পাঠক শরিফুর রহমানের৷
-
পুলিশের জানা-অজানা কয়েকটি সেবা
মোবাইল অ্যাপ
এটি পুলিশের চালু করা ‘বিডি পুলিশ হেল্পলাইন’ অ্যাপের একটি স্ক্রিনশট৷ গতবছর অ্যাপটি চালু করা হয়৷ সেখানে নাম প্রকাশ না করেও অভিযোগ বা মতামত জানানো যায়৷ এছাড়া সেখানে সব থানার সঙ্গে যোগাযোগের নম্বরও আছে৷ ১৭ নভেম্বর অ্যাপটিতে ঢুকে দেখা যায়, নাগরিকরা সাধারণ তথ্য জানতে চাওয়া থেকে শুরু করে নিজ নিজ এলাকার সমস্যার কথা জানিয়েছেন৷ সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা সেগুলোর উত্তরও দিয়েছেন৷
-
পুলিশের জানা-অজানা কয়েকটি সেবা
হ্যালো সিটি অ্যাপ
‘সিটি’ মানে হচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ‘কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম’ ইউনিট৷ তাদেরকে তথ্য দেয়ার জন্য একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে৷ এই অ্যাপ সম্পর্কে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে, ‘‘জঙ্গিবাদ/উগ্রবাদ, সাইবার ক্রাইম, বোমা/ বিস্ফোরক/ অস্ত্র/মাদক, আন্তঃদেশীয় অপরাধ/জালিয়াতি, মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তি সর্ম্পকে নিজের পরিচয় গোপন রেখে পুলিশকে তথ্য প্রদান করা যাবে৷’’
-
পুলিশের জানা-অজানা কয়েকটি সেবা
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো
পুলিশ সদরদপ্তরে স্থাপিত ‘আইজিপি’স কমপ্লেন সেল’ ২৪ ঘণ্টাই চালু থাকে৷ পুলিশ সদস্যের যে কোনো অপেশাদার ও অনৈতিক কর্মকান্ড সম্পর্কে এই সেলকে জানানো যায়৷ সরাসরি, কুরিয়ার সার্ভিস কিংবা ডাকযোগে তথ্য জানানো যায়৷ এছাড়া ০১৭৬৯-৬৯৩৫৩৫ ও ০১৭৬৯-৬৯৩৫৩৬ মোবাইল নম্বরে এবং complain@police.gov.bd এই ই-মেলেও অভিযোগ জানানো যায়৷
-
পুলিশের জানা-অজানা কয়েকটি সেবা
ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার
নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের আশ্রয় বা থাকার জন্য ঢাকার তেজগাঁও থানা চত্বরে এই সেন্টারটি স্থাপন করা হয়েছে৷ পুলিশের পাশাপাশি ১০টি বেসরকারি সংস্থা সেখানে আইনি সহায়তাসহ অন্যান্য কাজ করছে৷
-
পুলিশের জানা-অজানা কয়েকটি সেবা
অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স’ সার্টিফিকেট দেয়া শুরু করেছে পুলিশ৷ ঐ সময় পুলিশ সদর দপ্তরে থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, এখন থেকে জনগণ ঘরে বসেই অনলাইন ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স’ সেবা পাবেন৷ ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে পরে তা সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে সংগ্রহ করতে হবে৷ ফরম পেতে যেতে হবে এই ঠিকানায় http://pcc.police.gov.bd/en/৷
-
পুলিশের জানা-অজানা কয়েকটি সেবা
প্রবাসী সহায়তা সেল
বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিকরা দেশে কোনো সমস্যার সমাধানে পুলিশের সাহায্য চাইতে পারেন৷ এ জন্য পুলিশ সদরদপ্তরে ‘প্রবাসী সহায়তা সেল’ চালু আছে৷ ফোনে (+৮৮ ০১৭৬৯ ৬৯০০১৯) কিংবা ইমেলে expatriatehelp@police.gov.bd যোগাযোগ করা যাবে৷
-
পুলিশের জানা-অজানা কয়েকটি সেবা
সচেতনতা কার্যক্রম
জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে জনগণকে সচেতন করে তোলা, ট্রাফিক আইন মেনে চলতে শিক্ষার্থীসহ অন্যদের আগ্রহী করে তোলা, হেলমেট পরে মোটর সাইকেলে ওঠা – ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে পুলিশ৷
লেখক: জাহিদুল হক
অন্যদিকে সৌদি আরব প্রবাসী ময়জুর হোসেন আসাদ তাঁর নিজেরঅভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে লিখেছেন, ‘‘আমাদের দেশের পুলিশ জনগণের টাকায় চলে, কিন্তু জনগণ যখন অপারগ হয়ে পুলিশের কাছে যায়, তখন মামলা নিতে বড় অংকের টাকা দাবি করে৷ আবার অপরাধীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা চায়, যার দরুণ উভয় পক্ষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়৷ আর এ কারণে পুলিশের উপর মানুষের কোনো আস্থা নেই৷ আমি একজন সৌদি প্রবাসী, আমার জীবনে একবার মামলা দিতে গিয়ে এসব জানতে পেরেছি৷ পরে আমাদের সমস্যা গ্রামে সালিশের মধ্য দিয়ে সমাধান করেছি৷ আমার মনে হয়, বাংলাদেশের পুলিশের মধ্যে শতকরা আশি ভাগ লোক বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে জড়িত, কিন্তু পৃথিবীর অন্য দেশগুলিতে পুলিশের এরকম কিছু করার সাহস নেই৷ এখানে আমরা ভিনদেশি হলেও, যে কোনো অভিযোগ পুলিশের কাছে দেয়ার সাথে সাথে আমলে নেয়৷’’ কিন্তু নিজের দেশের অবস্হা দেখলে দুঃখ হয় বলে জানিয়েছেন ময়জুর হোসেন আসাদ৷
জয় রাজ মনে করেন, পুলিশ হচ্ছে ‘নির্দোষদের হয়রানির জন্য এক নাম্বার সরকারি প্রতিষ্ঠান’৷
ডয়চে ভেলে থেকে প্রকাশিত একটি ব্লগের শিরোনাম ‘পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’ আর এ সম্পর্কে পাঠক বিশপ লিখেছেন , কিন্তু একটু পার্থক্য আছে, জনতা ঘুস খায় না আর পুলিশ ঘুস খায়৷
সায়েম খন্দকরারে মতে পুলিশের আচরণ দেখে নাকি বোঝা যায় না যে তারাও জনতা৷
সায়েম খন্দকরারে মতো পাঠক নাহিদ হাসানেরও বাংলাদেশের পুলিশ সম্পর্কে প্রায় একই মত৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘জনতা পুলিশ হয়, কিন্তু পুলিশ কখনো জনতা হয় না৷’’
তবে মো.নুরুজ্জামান কিন্তু পুলিশ সুপারকে ‘স্যালুট, স্যার’ বলে সম্মান জানিয়েছেন৷
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী
-
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
ঘটনার শুরু
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালালে অবস্থানরত অজ্ঞাত সংখ্যক অতিথি সেখানে আটকা পড়েন৷
-
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
দুই পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু
পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে নিহত হন বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম৷
-
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের পাশাপাশি ছ'জন হামলাকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বলেছেন, বাকি কয়েকজনকে হয়তো বাঁচানো যায়নি৷ এই জঙ্গি হামলায় জড়িত একজন ধরা পড়েছে বলেও শনিবার সকালে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন তিনি৷
-
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
এ যেন দুঃস্বপ্ন
কমান্ডো অভিযানে মুক্ত গুলশানের ক্যাফে থেকে উদ্ধার পাওয়া ব্যক্তিদের ১২ ঘণ্টার ‘দুঃস্বপ্ন’ কাটছে না৷ তাঁদের চোখে মুখে ক্লান্তি ও ভীতির ছাপ৷ তারা বলছিলেন, কয়েকজনের মৃতদেহ দেখেছেন, অনেক জায়গায় রক্তের ছাপ৷
-
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য
তাঁরা বলছেন, জিম্মিকারীরা বাংলাদেশি মুসলমানদের সুরা পড়তে বলে৷ সুরা পড়তে পারার পর তাঁদেরকে রাতে খেতেও দেওয়া হয়৷ যাঁরা হিজাব পরা ছিল, তাঁদের বাড়তি খাতির করা হয়৷
-
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
আইএস-এর দায় স্বীকার
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে বলে সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ জানিয়েছে৷ এই জঙ্গি দলের মুখপত্র আমাক নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে এ সব খবরে দাবি করা হয় যে, ‘তাদের’ এই হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৪০ জন৷
-
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
কমান্ডো অভিযান
সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটে রাতভর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রাখার পর যৌথ সেনা, নৌ, পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ কমান্ডো দল গুলশানে অভিযানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়৷ ৮ টা ১৫ মিনিটে প্রথম দফায় নারী ও শিশুসহ ৬ জনকে উদ্ধার করা হয়৷
-
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
ভবনের নিয়ন্ত্রণ ও আতঙ্কের অবসান
৮ টা ৫৫ মিনিটে ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় অভিযানকারীরা৷ গোয়েন্দা দল ভবনের ভেতর বিস্ফোরকের জন্য তল্লাশি শুরু করে৷ ৯ টা ১৫ মিনিটে ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান হয়৷
লেখক: অমৃতা পারভেজ